এক.
মহাজাগতিক বিজ্ঞান নিয়ে মেতে আছেন মেধাবী বিজ্ঞানী ফারদিন আনসার। টগবগে তারুণ্যদ্বীপ্ত এক মানববিজ্ঞানী। তিনি বাংলাদেশের মহাকাশ বিজ্ঞানে অবদান রেখে চলেছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি এখন ইউএফও এবং এলিয়নগবেষক হিসেবে বেশ খ্যাতিও কুড়াচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি মহাজগতের অদৃশ্য বিষয়াদি এবং হঠাৎ হঠাৎ দৃশ্যমান বিষয়বস্তু নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে বেশ আলোড়ন তুলেছেন।
বিজ্ঞানী ফারদিন আনসার গবেষণার একপর্যায়ে একটা মাধ্যম থেকে একটা বিস্ময়কর তথ্য পেয়েছেন যা হঠাৎ প্রকাশ করার মতো নয়। বিষয়টি নিয়ে তার মাঝে খুব উত্তেজনা চলছে। তিনি সূত্র খুঁজে পাচ্ছেন না তথ্যটি গবেষণালব্ধ তত্ত্ব হিসেবে কিভাবে জার্নালে প্রকাশ করবেন! এ নিয়ে তার ভাবনারও শেষ নেই।
গবেষণাজীবনে তিনি মহাকাশে অনেক ইউএফওর সন্ধান পেয়েছেন। পৃথিবীতে নেমে এসেছে এমন ইউএফও এবং এলিয়নেরও সাক্ষাৎ পেয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু এবারের মত এমন ডকুমেন্টারি তথ্য আর কখনও উদ্ধার করতে পারেননি।
তিনি জানতে পেরেছেন, মহাজাগতিক ডিবেরন সাম্রাজ্যের এলিয়ন সেনাটা ও এলিয়ন রেনিয়া কোহেকাফ সাম্রাজ্য থেকে ঘুরে এসেছে। আর এসেই একটা সতর্কবাণী দিয়েছে। সতর্কবাণী মানে রীতিমত একটা ভীতিকর সংবাদ। সংবাদটি সোসালিস্ট ডিবেরন স্টেটে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেছে কঠোর নিরাপত্তার প্রস্তুতি। এলিয়নদের বুরুজে বুরুজে সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন এবং দ্রুত আক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম এন্টি-মিসাইল ‘বারবাকডিং-৩৩৩’ মোতায়েন করা হয়ে গেছে। তারপরও উদ্বেগ কাটছে না।
বেবি এলিয়নদের স্কুলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু কি তাই? স্টেটের সকল প্রভিন্সের প্রত্যেক এলিয়ন পরিবারের জন্য একটা করে ইনডিভিজুয়াল ইগলুর বরাদ্দ করা হয়েছে। যাতে ইগলুতে ভরে এলিয়ন মায়েদের সাথে বেবি এলিয়নদের কোন এক অজ্ঞাত ব্ল্যাকহোলে লুকিয়ে রাখা যায়।
সেসব হোল কি যেমন তেমন হোল! একেকটা হোলের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ প্রায় পৃথিবীর সমান। কিন্তু হোলের মাঝে প্রবেশের পথটুকু কেবল একটা বড়মাপের সাটেলস্পেস ঢুকে পড়ার মত স্থান মাত্র। ফলে ওই প্রবেশপথ ছাড়া হোলে প্রবেশ করা একেবারেই অসম্ভব। তাই প্রবেশপথ ছাড়া আর কোথাও রক্ষাব্যূহ তৈরি না করলেও এলিয়নদের দিব্যি চলে যায়।
এলিয়ন বেবিরা বুঝতে না পারলেও তাদের মায়েরা কেবল জানতে পেরেছে এতসব ব্যবস্থার সারমর্ম। তারা জেনে গেছে, খুব শিগগিরই ফেইথফুল কোহেকাফ সরকার সোসালিস্ট ডিবেরন স্টেটে আক্রমণ চালাবে।
তাই প্রত্যেক এলিয়ন মা যার যার বেবি এলিয়ন ও নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও পোশাক নিয়ে প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ দেয়া ইগলুতে ঢুকে পড়েছে। সেখানে যাবতীয় আরাম আয়েশের ব্যবস্থা আছে। আর বেবি এলিয়নদের জন্য আছে বিভিন্ন রকম খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা। সঙ্কট না কাটা পর্যন্ত ওরা দিব্যি ইগলুতেই বসবাস করবে।
দুই.
এলিয়ন সেনাটা ও এলিয়ন রেনিয়ার গোপন সংবাদকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি এলিয়নদের রাজ্য সোসালিস্ট ডিবেরন স্টেটে চলছে যুদ্ধের সাজ সাজ রব। যেভাবেই হোক, কোহেকাফের জিনলিয়নদের আক্রমণ ঠেকাতেই হবে। ওদের সাথে যুদ্ধে জয়লাভ মুখ্য নয়। কোনমতে আক্রমণ প্রতিহত করে ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী পরাশক্তি জিনলিয়নদের সাথে একটা সমঝোতায় যেতে পারলেই হয়।
মহাজগতের অন্যতম উন্নয়নশীল দেশ সোসালিস্ট ডিবেরন স্টেট। আদর্শগতভাবে দু’টি জিনরাজ্য একই বলয়ের। একই কারণে তারা পৃথিবীতে মানুষের সাম্রাজ্য বিরোধী এবং মানুষের শ্রেষ্ঠত্বকে মেনে নিতে অপ্রস্তুত ও মানুষের জন্য অনিষ্টকর। কিন্তু এলিয়ন নামধারী এসব জিনের গোষ্ঠী মানুষবিরোধী হলে হবে কী, গত শতকে হঠাৎ করেই কোহেকাফ ডিবেরনের সাথে বৈরী আচরণ শুরু করে দিয়েছে।
তাদের এই বৈরিতা দিনান্তে দিন বেড়েই চলেছে এবং যে কোনো মুহূর্তে উভয় সাম্রাজ্যের মাঝে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।
তিন হাজার বছর আগে একবার কোহেকাফ অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ডিবেরনকে পর্যুদস্ত করেছে। তারা মহাজগতের নিজেদের অবস্থান থেকে ডিবেরনদের হটিয়ে দেয় এবং তানিজিং গ্রহে অবস্থিত ডিবেরনের সাগরদ্বীপ চেইনমারং ও প্যারাসেলসকট দখল করে নেয়। তারপর থেকে বিগত তিন হাজার বছর ধরে তাদের সম্পর্ক ক্রমশ উত্তেজনার দিকেই এগিয়ে চলেছে।
এরই মধ্যে কোহেকাফের শত্রুভাবাপন্ন আচরণের কারণে গত আড়াই হাজার বছর আগে সীমান্ত নিয়ে আবারও ঘটে যায় কোহেকাফ ও ডিবেরনের মাঝে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। সে যুদ্ধেও বলতে গেলে কোহেকাফই জয়ী হয়। সে যুদ্ধের উত্তেজনা কমতে না কমতেই আবার দুই হাজার বছর আগে দক্ষিণ তানিজিং সাগর নিয়ে কোহেকাফের সাথে ডিবেরনের আরও এক ভয়াবহ যুদ্ধ বেধে যায়। কিন্তু মহাজগতের অন্যতম ক্ষমতাধর পরাশক্তি কোহেকাফের কাছে এবারও তারা টিকে থাকতে পারেনি। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে তানিজিং সাগর ছেড়ে পালিয়ে যায় ডিবেরন সেনারা। যুদ্ধে পরাজয়ের এই গ্লানি ডিবেরনকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
তিন.
অপর দিকে কোহেকাফও তানিজিং সাগরে নিজেদের কর্তৃত্ব বহাল রাখতে যারপরনাই মরিয়া। তারাও তানিজিং সাগরে যে কোন মুহূর্তে ডিবেরনের আক্রমণের ভয়ে তটস্থ। তাই বরাবরের মত মাঝে মধ্যেই কোহেকাফ এখানে শক্তির প্রদর্শনী করে চলেছে।
সবসময় ডিবেরনের এলিয়নরা তাদের সাগরদ্বীপ চেইনমারং ও প্যারাসেলসকট দখলের প্রতিবাদ করেছে এবং তা সসম্মানে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে এসেছে। কিন্তু হঠাৎ করে ডিবেরনের সাগরসীমানায় কোহেকাফ একটি তরলস্বর্ণ অনুসন্ধানের রিগ বসিয়েছে। ফলে উভয় এলিয়ন বা বদজিনরাজ্যের মাঝে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এই কারণে কেউই এখন আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ইতোমধ্যেই উভয় সাম্রাজ্য গোপনে গোপনে যুদ্ধের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। মহাজাগতিক মিডিয়াগুলোর কল্যাণে ইতোমধ্যেই বিষয়টি এখন জমে উঠেছে। তাদের প্রকাশিত ও প্রচারিত খবরাখবর অনুসারে দুই সাম্রাজ্যের গোয়েন্দারাও খুব তৎপর। ডিবেরন একের পর এক মার খেয়ে এবার তার পূর্ণ প্রতিশোধ নেবার জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধ পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।
এরই প্রেক্ষিতে তিনশ বছর আগে কোহেকাফের অগ্নিসেনারা বিরোধপূর্ণ তানিজিং সাগরে সামরিক মহড়া পরিচালনা করে। এই মহড়া দুই সাম্রাজ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও চাঙ্গা করে তুলেছে।
কোহেকাফের সরকারি এলিয়ন আর্মি ডেইলি এ মহড়ার কথা ফলাও করে প্রকাশও করেছে। তাতে বলা হয়েছে, উক্ত মহড়ায় মিসাইলসমৃদ্ধ রণতরী, আগুনবর্ষী সাবমেরিন এবং বহুসংখ্যক যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া মহড়ায় রণতরীর বিরুদ্ধে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার দৃশ্যও কম্পিউটারের সাহায্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মহড়ায় অংশ নেয়া কোহেকাফের অগ্নিসেনাদলকে লাল ও নীল এ দু’টি দলে বিভক্ত করে এই মহড়া পরিচালনা করা হয়েছে। সেনা কমান্ডাররা যুদ্ধকালীন নানা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের এই ভয়াল অবস্থার মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে।
মহড়ায় তৃতীয় পক্ষের জাহাজে ভুলক্রমে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কল্পিত পরিস্থিতিও সৃষ্টি করা হয়েছে। মহড়ার রণতরীগুলোকে জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে এবং এ জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে হয়েছে। এ ছাড়া সাবমেরিন এবং যুদ্ধবিমানের সাথে একযোগে হামলার অনুশীলনও করতে হয়েছে। এই মহড়ার ভেতর দিয়ে মূলত সমগ্র তানিজিং সাগরের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করেছে কোহেকাফ সরকার। যা কিনা ডিবেরনের জন্য গায়ে জ্বালার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চার.
এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ডিবেরনও হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। সাম্রাজ্যটি বিগত এক হাজার বছর ধরে তাদের সেনাবাহিনীকে আধুনিকীকরণের যে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল- তা আরও দ্রুতগতিতে উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করেছে। সর্বশেষ যুদ্ধের পর এযাবৎকালের সর্বাধিক অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলেছে ডিবেরন। একইসাথে তারা তাদের প্রধান সামরিক ইউনিটগুলোকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত রেখেছে। এমনকি হঠাৎ করে আসা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তাদের এলিট অ্যাটাক ডিভিশন ৯৯৯-কেও প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই তার কিছুটা নমুনা তারা দেখিয়েছে। আর তা দেখিয়েছে বিতর্কিত সাগরসীমায় কোহেকাফ কর্তৃক তরলস্বর্ণের রিগ বসানোর সময়। তারা সেসময় কোহেকাফের জাহাজ মোকাবেলা করতে ডিবেরনের বহু বেসামরিক নৌযান সেখানে পাঠায়। যদি ওই পরিস্থিতিতে কোহেকাফ ডিবেরনের কোনো বেসামরিক নৌযানকে ভুলক্রমেও আক্রমণ করে বসতো- তাহলে নেপথ্য থেকে ডিবেরনের সেনা হামলা থেকে কোহেকাফ কিছুতেই রেহাই পেতো না। কিন্তু কোহেকাফ তখন ধৈর্য ও কৌশলের সাথে সে পরিস্থিতি কাটিয়ে নিয়েছে।
তবে এখন সর্বশেষ উত্তর নেবুলা সাগরের বিতর্কিত সীমানায় কোহেকাফ কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ স্পার্টলিং ও প্যারাব্রাসেল বানাতে শুরু করেছে। এই নিয়ে আবার উত্তেজনা বিরাজ করছে নেবুলার সাগর এলাকায়। আর একে কেন্দ্র করেই নতুন করে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে উভয় সাম্রাজ্যের মাঝে। এ ব্যাপারে ডিবেরনের একজন এলিয়নকর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা ডিবেরনের সাথে যুদ্ধে জড়াতে চাই না। কূটনৈতিকভাবেই সমস্যার সমাধান করতে চাই। কিন্তু আমরা জানি, আমাদের সর্বোচ্চ খারাপ পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে।’
এ দিকে ডিবেরনের গোয়েন্দারা বলেছে, ডিবেরনের ক্ষমতাসীনরা অস্ত্র মজুদ করার মাধ্যমে তাদের প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ প্রতিবেশ কোহেকাফকে মূলত আতঙ্কিত করে বিবদমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চাইছে।
পাঁচ.
ওদিকে কোহেকাফের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ‘দু’টি দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সামরিক এবং বন্ধুসুলভ সম্পর্ক রয়েছে। তারা আরও বলেছেন, আঞ্চলিক শান্তির জন্য আমরা তাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।’ তবে ভেতরে ভেতরে তাদের যুদ্ধপ্রস্তুতির বিষয়টি কেউই অস্বীকার করতে পারছেন না।
কেননা, গত এক শ’ বছর ধরে ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির কারণে কোহেকাফের নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং সেনাবাহিনী বিশাল ও অধিকতর উন্নত সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়েছে।
এ দিকে ডিবেরনের জেনারেলরা মঙ্গলগ্রহের পর্যটকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে, তারা তাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তবে যুদ্ধের মোকাবেলায় যুদ্ধ ছাড়া আর যে কোনো উপায় নেই।
ওদিকে গোপনে গোপনে তানিজিং সাগরে প্রতিবন্ধক তৈরির জন্য ডিবেরন এবার কোহেসাজিক সাম্রাজ্যের কাছ থেকে আধুনিক প্রযুক্তির ৬০টি সাবমেরিন কিনেছে। এ ছাড়া কিছুদিন ধরেই ডিবেরনের প্রথম সাবমেরিনটি তানিজিং সাগরের বিতর্কিত সাগরসীমার আশপাশে সতর্ক নজরদারি করে যাচ্ছে।
রণপ্রস্তুতির পাশাপাশি ডিবেরনের একসময়ের নির্ভরযোগ্য জেনারেলরা এখন বৃহত্তর কৌশলগত সম্পর্ক তৈরির দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ, উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং গোয়েন্দা সহযোগিতার জন্য তাদের প্রধান উৎস কোহেসাজিক ও কোহেতুর সাম্রাজ্যের সাথে বন্ধুত্ব জোরদার করেছে। এ ছাড়া আদর্শিক শত্রু হলেও কোহেকামারুক, কোহেকামারাক্ষা, কোহেমিয়াজারাং ইত্যাদি মহাজাগতিক রাজ্যসমূহের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে ডিবেরন।
তারা আর প্রয়োজনীয় যুদ্ধসরঞ্জাম সংগ্রহের ক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে রাজি নয়। এরই মধ্যে তারা কোহেসাজিক থেকে আরও জঙ্গি ও বোমারু বিমান, সমুদ্রসীমানা পাহারা দেয়ার সাউন্ডসনিকভ বিমান ও সার্ভেইল্যান্স ড্রোন কেনার চেষ্টা করছে।
পাশাপাশি তারা বিমান প্রতিরক্ষার আধুনিকায়নও সম্পন্ন করেছে। এরই মধ্যে কোহেজারজালিমস থেকে গোয়েন্দা রাডার এবং মহাকাশে নিক্ষেপযোগ্য অত্যাধুনিক এসবিসি-৭৫৭ মিসাইল ব্যাটারি কিনেছে। ডিবেরনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ সব সাম্রাজ্যেরই একটি মানসম্মত প্রক্রিয়া। আমরাও তাতে বিশ্বাস করি।
ছয়.
বিজ্ঞানী ফারদিন হট কেকের মতো এতোসব তথ্য পেয়ে এবং এলিয়নদের দু’টি সাম্রাজ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনায় ব্যস্ত থেকেও যখন কোনো কূলকিনারা করতে পারছিলেন না, তখন হঠাৎ করেই তিনি একটা সূত্র পেয়ে যান। মাইক্রওয়েভ ডাটাবেজ সংগ্রহকালে হঠাৎই তার হাতে ধরা দেয় একটা অজ্ঞাত ইনটেনসিটি। তিনি তখন-তখনই সংকেতটি অনুসরণ করে ঢুকে পড়েন একটা সাইটে। কিন্তু মুশকিলে পড়ে যান ভাষাগত সমস্যায়।
শেষে একজন প্রাচীন-আরব ভাষাবিশারদের সহযোগিতায় ইনটেনসিটির পাঠও উদ্ধার করেন। সাইট থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্যের সাথে দেয়া একটা কোড অনুসরণ করে অবিশ্বাস্যভাবে পেয়ে যান আরেকটি কোড নাম্বার। ব্যাস, আর দেরি নয়- কৌশলে হ্যাক করে নিয়ে আসেন একটা পূর্ণাঙ্গ ওয়েভসাইট ডাটাবেজ।
তখন তিনি তো রীতিমত উত্তেজনায় কাঁপছেন। বহু কষ্টে উত্তেজনা দমিয়ে সাইটের হোল্ডার বরাবর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। আর দেখতে দেখতেই চ্যালেঞ্জে সাড়া পেয়ে যান। ডিবেরন-এর বাদশাহ সাবাকজিন স্বয়ং মাইক্রওয়েভ ভিডিও যোগে আবেদন জানিয়েছেন আপসরফার জন্য। আবার একইসাথে সাহায্যও চেয়েছে কোহেকাফ বনাম ডিবেরন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিরসনের।
আবেদন দেখে ফারদিন আনসার একগাল হেসে নিলেন। তারপর ঠান্ডা মাথায় তথ্য বিনিময় শুরু করলেন সাবাকজিনের সাথে। অবশেষে তিনি বুঝাতে সক্ষম হলেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি কোহেকাফ-ডিবেরন যুদ্ধ শুরু হয়েই যায়, তাহলে কোহেকাফকে পরাজিত করা নয় বরং ডিবেরনের লক্ষ্য হওয়া উচিত তানিজিং সাগরে কোহেকাফের পতাকাবাহী কনটেইনার ও মালবাহী জাহাজগুলোকে ধ্বংস করে তাদেরকে আলোচনার টেবিলে বসানো।
পাশাপাশি কোহেকাফ কর্তৃক দখল হয়ে যাওয়া সাগরদ্বীপ চেইনমারং ও প্যারাসেলসকট ফেরত পাবার পাশাপাশি বিতর্কিত সাগরসীমায় কোহেকাফের গড়ে তোলা কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ স্পার্টলিং ও প্যারাব্রাসেল-এর উচ্ছেদ অথবা অংশীদারিত্ব।
বিজ্ঞানী ফারদিন এ কথাও বলতে ভুল করলেন না যে, এই যুদ্ধে ডিবেরনের টার্গেট অর্জিত না হলে যুদ্ধের ভয়াবহতা ডিবেরনকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিতে পারে। সেখানে কোহেকাফের চিরশত্রু মহাজগতের আরেক পরাশক্তি শনি গ্রহের ব্রহ্মভারাং সাম্রাজ্য যদি ডিবেরনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলেই বেধে যাবে বড় বিপত্তি। তখন মহাজগতের আরেক পরাশক্তি শুক্র গ্রহের পাকজিয়াং নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই কোহেকাফের পাশে না দাঁড়িয়ে পারবে না।
স্বাভাবিকভাবেই তখন ডিবেরনের মিত্ররা কোনো না কোনোভাবে ডিবেরনের পাশেই দাঁড়াতে সচেষ্ট হবে। তাদের মাঝে মহাজগতের অন্যতম ক্ষমতাধর পরাশক্তি কোহেসাজিক-এর ভূমিকা তখন কী হবে- এই নিয়ে মাথা ঘামানোর যথেষ্ট কারণ আছে। এই যুদ্ধাবস্থাকালীন অশান্তির সুবাদে মঙ্গল গ্রহের এলিয়ন বা বদজিনের সাম্রাজ্যগুলো এবং তাদের নেতৃত্বে ইতোমধ্যেই মহাজগতে যে ভয়াল যুদ্ধাংদেহি সমরজোট গড়ে উঠেছে তাদের ভূমিকার ওপর কঠোর দৃষ্টি ফেলবে কোহেসাজিক।
ফলে যুদ্ধটা লেজেগোবরে জড়িয়ে গোটা মহাজগতে একটা ভয়াল বিপর্যয় ডেকে আনবে। লন্ডভন্ড হয়ে যাবে এলিয়নদের সাধের সকল রাজ্যপাট।
সাত.
বিজ্ঞানী ফারদিনের যুক্তির কাছে অসহায় হয়ে ডিবরনের বাদশাহ সাবাকজিন জানতে চায়- তাহলে উপায়?
ফারদিন এবার শক্ত হয়ে জানতে চান- উপায় তো একটা আছেই। তা তোমাকে বলবো, কিন্তু তোমাকে উপদেশ দেয়ার আগে ‘মানুষই যে জ্ঞানে-গুণে, শান্তি ও সহমর্মিতায় সর্বশ্রেষ্ঠ’ তা তোমাকে সবার আগে নিঃশর্তে স্বীকার করে নিতে হবে।
বিজ্ঞানী ফারদিনের প্রস্তাবে সাবাকজিন ভীষণ বেকায়দায় পড়ে যান। কিন্তু কোহেকাফ আক্রমণ চালালে তারা যে বরাবরের মতো এবার একটা শক্ত ধোলাই খাবে অথবা এবারের যুদ্ধে ডিবেরন সাম্রাজ্য বেদখলও হয়ে যেতে পারে তা বুঝতে পেরে সে মাথা নত করে। সে বলে- বিনাশর্তে আমি স্বীকার করে নিচ্ছি যে, মানুষই প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানে-গুণে, শান্তি ও সহমর্মিতায় সৃষ্টি জগতের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ। এবার বলো হে মানববিজ্ঞানী আমরা কোহেকাফের হামলা থেকে কিভাবে রেহাই পেতে পারি?
বিজ্ঞানী ফারদিন আনসার এবার আয়েশ করে একগাল হেসে মাইক্রওয়েভ ভিডিও যোগে জবাব দিলেন- আরে আহাম্মক বদজিনের বাদশাহ! তুমি কোহেকাফের সম্রাটের কাছে আজই শান্তির দূত পাঠিয়ে আপসরফার প্রস্তাব দাও। আর নিজেদের সব ধরনের যুদ্ধ প্রস্তুতি ত্যাগ করো। দেখবে ব্যাপারটা কতো সহজ হয়ে যায়। এটুকু বলতেই মাইক্রওয়েভ যোগাযোগ এমনভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারিয়ে যায়, ফারদিন এক সপ্তাহকাল সার্চ দিয়েও তার কোনো সন্ধান করতে পারেন না।