Home প্রবন্ধ মুসলমানদের জাতীয় উৎসব -ড. এম এ সবুর

মুসলমানদের জাতীয় উৎসব -ড. এম এ সবুর

ঈদ মুসলমানদের জাতীয় উৎসব। বিশ্বের সব দেশের ও সব পেশার মুসলমানের সমান অধিকার আছে ঈদের আনন্দ উপভোগের। নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের জন্য ঈদের আনন্দ সীমাবদ্ধ নয়। সব মুসলমান ঈদের আনন্দ উপভোগ করে থাকেন নিজস্বভাবে। ধনীর অট্টালিকায় ও দরিদ্রের জীর্ণ কুঠিরে ঈদের আনন্দ প্রবাহিত হয় সমভাবে। কালের প্ররিক্রমায় প্রতি বছর আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে এ উৎসবের আগমন ঘটে। মুসলমানদের মহাসম্মিলন ঘটে পুণ্যময় ঈদ উৎসবে। জেলে-কুমার, তাঁতী-কৃষক, ধোপা-মুচি কোন ভেদাভেদ নাই এ মহাসম্মিলনে। ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা সব মুসলমানই সমবেত হয় ঈদের ময়দানে। এক কাতারে সারিবদ্ধ হয়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে অবনত মস্তকে। হাতে হাত, বুকে বুক রেখে পরস্পর কোলাকুলি করে পরম মমতা নিয়ে। পুরনো দিনের হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে মুসলমানরা পরস্পরে আবদ্ধ হন ভালোবাসার বন্ধনে। ঐক্য, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ সুসংহত হয় ঈদের উৎসবে।
‘ঈদ’ উৎসবের সূচনা হয় হিজরি দ্বিতীয় সন অর্থাৎ মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছর থেকে। জাহেলিয়া যুগে আরবের মক্কায় ‘উকাজ মেলা’ এবং মদিনায় ‘নিরোজ’ ও ‘মিহিরগান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। আর সে সব অনুষ্ঠানে অশ্লীল আনন্দ-উল্লাস করা হতো। মদিনায় আগমনের পর মহানবী সা: এসব ক্ষতিকর ও অশ্লীল বিনোদনমুক্ত মুসলমানদের জন্য আলাদা  আনন্দ-উৎসবের প্রয়োজন মনে করলেন। এ জন্য তিনি মুসলমানদের নির্মল আনন্দ উৎসব করতে বছরে দু’টি ‘ঈদ’ উৎসবের প্রর্বতন করেন। একটি ‘ঈদুল ফিতর’ বা রোজার ঈদ অন্যটি ‘ঈদুল আজহা’ বা  কোরবানির ঈদ। রমজান মাসের দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর সাওয়াল মাসের পয়লা তারিখে উদযাপন করা হয় ‘ঈদুল ফিতর’ এবং জিলহাজ মাসের দশ তারিখে পালন করা হয় ‘ঈদুল আজহা’। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুসলমানদের  ধৈর্য-ত্যাগ ও নৈতিক-আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধিত হয়। এতে তাদের মনে এক স্বর্গীয় সুখ-আনন্দ বিরাজ করে। এ মহান সুখানুভূতি উৎসবে রূপ লাভ করে পবিত্র ঈদুল ফিতরে। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে মানুষের পরিবর্তে পশু কোরবানি করার বিধান করায় মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশিত হয় পবিত্র ঈদুল আজহার উৎসবে।
১৩৯৩ বছর আগে অর্থাৎ ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় ঈদ উৎসবের শুরু হয়ে কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের রূপ ধারণ করেছে। তবে কালপরিক্রমায়, ভৌগোলিক ব্যবধান ও সাংস্কৃতিক রূপান্তরের কারণে ঈদ উৎসবের ধরন পরিবর্তিত হলেও এর মৌলিক বিধানাবলি ও মূল চেতনা অপরিবর্তিত আছে।
ভ্রাতৃত্ববোধ ও জাতীয় ঐক্য সুসংহত করা ঈদের প্রধান দীক্ষা। সহমর্মিতা-সহানুভূতি জাগ্রত করা ঈদের বিশেষ শিক্ষা। ধনীর পাশাপাশি দরিদ্ররাও যাতে ঈদের আনন্দে অংশ নিতে পারে সেজন্য ধনীদের ওপর ‘সদকাতুল ফিতর’ আদায় করা অপরিহার্য।
প্রকৃতপক্ষে ঈদ ইসলামি আদর্শ ও নৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় উৎসব। আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ এর উদ্দেশ্য। তাই বিশ্ব সভ্যতায় ঈদ উৎসব অনন্য। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল-ন্যায়ভিত্তিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলামের আবির্ভাব। সাদা-কালো, উঁচু-নিচু ভেদাভেদ নাই ইসলামে। বিশ্বের সব মুসলমান মনে-প্রাণে, কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে ভেদাভেদ ভুলে যান পবিত্র ঈদের দিনে। তাই এ দিনে ইসলামি সমাজের প্রকৃত রূপ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। আর মুসলমানের ‘প্রতিটি দিন হোক ঈদের দিন’ আমাদের এ প্রত্যাশা সবার কাছে।

SHARE

Leave a Reply