Home ফিচার শাওয়ালের ওই চাঁদ এনেছে আনন্দেরই ঈদ -মঈনুল হক চৌধুর্রী

শাওয়ালের ওই চাঁদ এনেছে আনন্দেরই ঈদ -মঈনুল হক চৌধুর্রী

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। এই আনন্দ সবার জন্য। ঈদ হলো ছোট-বড় ভেদাভেদহীন একটি মিলনের দিন। মনে মনে একাকার হয়ে যাওয়ার দিন। বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে ফিরে এলো সেই খুশির দিন, আনন্দের দিন। পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই ঈদুল ফিতরের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে সারা মুসলিমবিশ্ব। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ঈদের এই আনন্দ বেশি দেখা যায়, ছোটদের মধ্যে। বছরের এই বিশেষ দিনটির জন্য তারা দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকে। ঈদের আগের দিন সাঁঝবেলায় পশ্চিম আকাশে কাঁচির মত এক ফালি চাঁদ ওঠে। শিশু-কিশোররা হাত তালি দিয়ে অভিনন্দন জানায় তাকে। তারপর শুরু হয় মেহেদি লাগানোর ধুম। পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে ঈদের খুশি। ঈদ আরবি শব্দ। ঈদ মানে আনন্দ।
বন্ধুরা, তোমাদের মনে কি কখনো প্রশ্ন জাগে, এ কিসের আনন্দ? তাহলে বলছি শোন। মনিব তার ভৃত্যকে কোন কাজ সম্পাদনের নির্দেশ দিলে তা সে যথাযথভাবে পালন করলে একদিকে মনিব সন্তুষ্ট হন, আবার অন্যদিকে মনিবের সন্তুষ্টিতে ভৃত্যের মনেও যে আনন্দ আসে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তেমনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তার বান্দাদের রোজা পালনের নির্দেশ করেছেন। সে অনুযায়ী বান্দারা এক মাস রোজা পালন করলে পরে, আল্লাহ রোজাদারদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যে উপহারটি দেন, তা হলো শাওয়াল মাসের পয়লা তারিখে ‘ঈদ উৎসব’। কিন্তু এই ঈদ নামের উৎসবটি এলো কোথা থেকে? যতদূর জানা যায়, ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের রমজান মাসে প্রথম রোজা পালিত হয়।
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নির্দেশেই ঈদের এই মহা সম্মেলনের দিন প্রবর্তন করেন। তিনি নিজেই এই আনন্দে অংশ নিতেন। কিভাবে তিনি ঈদ পালন করতেন এবং কিভাবে ঈদের দিন সময় কাটাতেন, সেদিকে তাকালেই তা পরিষ্কার হয়ে যায়। নবীজি (সা) দিনে বের হয়ে দুই রাকাত ঈদের সালাত আদায় করেছেন। (সহীহ বুখারি : ৯৮৯) ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করাকেও নবীজি (সা) গুরুত্ব দিতেন।
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন : ‘রাসূলুল্লাহ (সা) ঈদের দিন আমার ঘরে আগমন করলেন, তখন আমার নিকট দু’টি ছোট মেয়ে গান গাইছিল, বুয়াস যুদ্ধের বীরদের স্মরণে। তারা পেশাদার গায়িকা ছিল না। ইতোমধ্যে আবু বকর (রা) ঘরে প্রবেশ করে এই বলে আমাকে ধমকাতে লাগলেন যে, নবীজির ঘরে শয়তানের বাঁশি? রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর কথা শুনে বললেন, ‘মেয়ে দুটিকে গাইতে দাও হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতির ঈদ আছে, আর এটি আমাদের ঈদের দিন।’ (সহিহ বুখারি)। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, একবার তিনি ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে যাচ্ছিলেন। পথে এক শিশুকে দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। শিশুটির কাছে গিয়ে তিনি তাকে আদর করলেন।
তাকে বুকে জড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কাঁদছো কেন? শিশুটি বলল- আমার বাবা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা গেছেন। আমার মাও নেই। পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। শিশুটির কথা শুনে আমাদের প্রিয় নবীর মন কেঁদে উঠলো। তিনি আর ঈদগাহে গেলেন না। শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী হজরত আয়েশাকে বললেন, তোমার জন্য একটি পুত্র এনেছি। নাও তোমার ছেলেকে। তাকে ভালো জামা কাপড় দাও, খাবার দাও। হযরত আয়েশা (রা) গভীর মমতায় ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, নিজের ছেলের মত। তারপর তাকে গোসল করালেন। নতুন জামা কাপড় পরিয়ে দিলেন তার গায়ে। নতুন জামা কাপড় পেয়ে ছেলেটির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে তার বাবা-মা হারানোর দুঃখ ভুলে গেল। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে পেট ভরে খাওয়ালেন। ঈদগাহে অন্যান্য শিশুরা তাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। তারা বলল, এসব তুমি কোথায় পেলে? শিশুটি রাসূলুল্লাহর কথা বলল। তখন শিশুরা বলল, ইস আমরা যদি রাসূলুল্লাহর আদর পেতাম আর এরকম সুন্দর জামা কাপড় পেতাম। সত্যি বলতে কি! এসব ঘটনাই আমাদের শিক্ষা দেয় যে, কোন খুশিকে সমানভাবে ভাগ করে নেয়ার। উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগেই গরিব মিসকিনদের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে দান করতে হয়। এই দানকে বলে ফিতরা। ধনীদের ওপর এ্ ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব বা অবশ্যই পালনীয়। ফিতরা সম্পর্কে আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ফিতরা যে দান করেন, আল্লাহ তাকে পবিত্র করেন, বরং দরিদ্রকে যা দেয়া হয়, আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি তাকে দান করেন। বছর ঘুরে ঈদ আসে বার বার। কিন্তু সবার ভাগ্যে কি আনন্দ করার সুযোগ রয়েছে? কত লোক রয়েছে, যাদের রমজান মাসে সেহেরি ও ইফতার খাওয়ার সামর্থ্য নেই। ফুটপাথে না খেয়ে পড়ে আছে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ। এসো বন্ধুরা, আমরা তাদের সেবায় এগিয়ে যাই। যাদের অন্ন বস্ত্র চিকিৎসার সুযোগ নেই, তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে ঈদের আনন্দ সমানভাবে ভাগ করে নিই। ব্যয় সংকোচ করে, পয়সা বাঁচিয়ে দুস্থ মানবতার সেবায় ব্যয় সম্প্রসারণ করি। ঈদের আনন্দ যেন একটি দিনের মাঝে সীমিত না থাকে, সারাটা বছর, সারাটা জগৎ যেন ঈদগাহে পরিণত হয়, আমাদের লক্ষ্য হোক মানুষের সেবা। এবারের ঈদ উৎসব অর্থাৎ ঈদুল ফিতরকে আমরা একটু ব্যতিক্রম আঙ্গিকে বরণ করি। স্বাগতম ঈদুল ফিতর, ঈদ মোবারক।

SHARE

Leave a Reply