ভাষাসৈনিক অধ্যাপক চেমন আরা। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের সময় ইডেন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রেখেছেন প্রচুর অবদান। লিখেছেন গল্প, স্মৃতিকথা, জীবনীগ্রন্থ, কাব্যগ্রন্থ, ভ্রমণকাহিনীসহ চমৎকার সব লেখা। কিশোরকণ্ঠ ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কারসহ পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। শিশু-কিশোরদের জন্য তাঁর ভাবনাগুলো চমৎকার।
হ্যাঁ বন্ধুরা, ‘মুখোমুখি’ মে ২০১৬ সংখ্যায় তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যাপক চেমন আরা।
প্রশ্ন : জীবনে বড় হতে হলে কোন বিষয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে?
মো: নুর উল্যা, হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ
অধ্যাপক চেমন আরা : জীবনে বড় হতে হলে আমার যা মনে হয় ধর্মীয় আচরণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের নীতিবোধ, আমাদের পারিবারিক শিক্ষা এগুলোকে বেশি করে মূল্য দিতে হবে।
প্রশ্ন: আপনার লেখক হওয়ার অনুপ্রেরণা জাগে কিভাবে?
মো: আসাদুজ্জামান
মশজিদ মিশন একাডেমি, রাজশাহী
অধ্যাপক চেমন আরা : আমি লেখক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি মূলত আমাদের বাড়ি থেকেই। আমার বাবা, দাদা ওনারা লেখালেখি করতেন। তাদের দেখাদেখি আমারও লেখালেখির অনুপ্রেরণা জাগে। আমাদের বাড়িতে বই পড়ার অভ্যাস সবারই ছিল। এই ধরো, ১৯৪১-৪২ সালের কথা, যখন ক্লাস টুতে পড়ি। ‘আনোয়ারা’ নামে একটি বিখ্যাত উপন্যাস, যার লেখক ছিলেন নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন। সেই উপন্যাস আমরা সবাই পড়তাম, আমাদের পরিবারের সবাই সেই উপন্যাসের সমঝদার ছিলাম। এরপর নজরুল এর ‘সঞ্চিতা’ পড়ে আমি আরো বেশি অনুপ্রেরণা পাই। সঞ্চিতার ‘নারী’ কবিতাটি আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছিল। আর এভাবেই মূলত লেখালেখিতে আসা।
প্রশ্ন: আপনার জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত কী?
মো: লাবীব মোর্শেদ
হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
অধ্যাপক চেমন আরা : স্মরণীয় মুহূর্ত বলতে ১৯৪৭ সালের কথা খুব মনে পড়ে। যখন দেশ ভাগ হয়। এটা স্মরণীয় এই কারণে যে, ঐ দিন আমরা কলকাতা থেকে ঢাকায় আসি। তখন ফুলবাড়িয়া স্টেশনে এসে আমরা নামি। এতো মানুষের ভিড়, অনেক উল্লাস, সবাইকে ট্রেন থেকে নামার পর আদর আপ্যায়ন করছে। একে অপরকে সাহায্য করছে। মানুষ নিজের দেশে অবস্থান করার সেই আনন্দ-উল্লাসের কথা আজও আমার মনে পড়ে।
প্রশ্ন : ছাত্রজীবন বলতে কি শুধু অধ্যয়নই বোঝায়?
কাশপিয়া, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
অধ্যাপক চেমন আরা : না, ছাত্রজীবন বলতে শুধু অধ্যয়নকেই বোঝায় না। শিক্ষণীয় সব বিষয়কেই ছাত্রজীবনের অংশ হিসেবে ধরা হয়। যেমন ধরো একটি শিশু জন্মের পর তার বাবা-মার কাছ থেকে বাবা ডাক, মা ডাক শিখে। এটিও একটি শিক্ষা। এরপর সে যখন স্কুলের গন্ডিতে পা রাখে। সেখানকার পরিবেশ, পারিবারিক পরিবেশ, সামাজিক পরিবেশ, এগুলো তাকে প্রভাবিত করে। পড়াশুনার পাশাপাশি এগুলোও বড় একটি শিক্ষার অংশ। তবে পরিবারের শিক্ষাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, পরিবার যদি ভালো কিছু শিক্ষা দেয়, তাহলে সে ভালো কিছু শিখবে, ভালোভাবে চলবে। আর যদি খারাপ শিক্ষা দেয় তাহলে সে সেরকমইভাবেই চলবে। এ জন্য অধ্যয়নের পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পরিবার উভয়কেই ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রশ্ন: আপনার জীবনে কী অপূর্ণ আছে বলে আপনি মনে করেন?
ফয়সল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যাপক চেমন আরা : জীবনে তো অনেক কিছুই অপূর্ণ রয়ে গেল। তোমার মধ্যে যদি সাহিত্যসাধনা থাকে, চেষ্টা থাকে, অধ্যবসায় থাকে, আকাক্সক্ষা থাকে তাহলে তুমি জীবনটাকে নানাভাবে পূর্ণ করতে পারো। অনেকে মনে করে যে সে একজন ভালো সাহিত্যিক হবে। যদি হতে পারে তাহলে সে পূর্ণ। শুধু লেখাপড়ায় পূর্ণ হলেই হবে না, নৈতিকতাপূর্ণ জীবন অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে ধর্মীয় বা ইসলামী আদর্শ মেনে চলতে হবে। আসলে পূর্ণতা বলতে তো আর গাড়ি-বাড়ি করাকে বুঝায় না, দু’হাতে টাকা খরচ করাকে বুঝায় না। নিজের আখলাক ও আমলকে ঠিক রেখে জীবন পরিচালনা করাই হলো পূর্ণতা।
প্রশ্ন : একজন ছাত্রের পড়াশুনার পাশাপাশি আর কী কী কাজ করা উচিত?
রায়হানা, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ
অধ্যাপক চেমন আরা : একজন ছাত্রের পড়াশোনার পাশাপাশি সবকিছুই করা উচিত। বাড়িতে মুরুব্বি যারা আছেন, তাদের দায়িত্ব পালন করা। মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী সবার প্রতি দৃষ্টি রাখা, তাদের কাজ-কর্মে সাহায্য করা, যারা অভাবী এবং গরিব তাদের সাধ্যমত সাহায্য করা। আমাদের ধর্মীয় আচার অনুযায়ী এ কাজগুলো সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেয়া উচিত।
প্রশ্ন: আপনার আব্বুর সাথে ছোটবেলার কোনো স্মৃতি মনে পড়ে কি?
শামছুদ্দীন সজিব, সেনবাগ, নোয়াখালী
অধ্যাপক চেমন আরা : আমার বাবা ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের উকিল। বাবা খুব কড়া লোক ছিলেন। সেই সময় অর্থাৎ ১৯২০-২১ সালে তিনি বিএ পাস করেন। তখন ছিল মাইকেল মধুসূদনের যুগ। সেই যুগে একটা মানুষ এতদূর পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে, এটা অনেক পরিশ্রম ও সাধনার ব্যাপার। তিনি মধুসূদনের মতোই টাই পরতেন, কোট পরতেন কিন্তু এগুলো পরলেও ইসলামী অনুশাসন বা রীতিনীতি থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি। আমাদের লেখাপড়ার প্রতি তাগিদ দিতেন। যেহেতু উনি উকিল ছিলেন আর কোর্টে তো প্রায় সব উকিলই ছিল হিন্দু, তাদের প্রতি তার সহানুভূতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা ছিল।
প্রশ্ন: কাকে বেশি ভয় পেতেন?
নজরুল ইসলাম, সিলেট
অধ্যাপক চেমন আরা : বাবাকে খুব ভয় পেতাম, তখনতো মোবাইল ফোন ছিল না, ল্যান্ডফোন ছিল। সেই ল্যান্ডফোনে কথা বলতেও ভয় পেতাম। মুরুব্বির সাথে ফোনে কিভাবে কথা বলব, বেয়াদবি হয়ে যায় কি না এই ভেবে আমরা কথাই বলতাম না। বাবার প্রতি ছিল আমাদের গভীর শ্রদ্ধাবোধ।
প্রশ্ন : ছাত্রদের অধ্যয়ন সম্বন্ধে কিছু বলুন?
অমিত বড়ুয়া, রায়েরবাগ, ঢাকা
অধ্যাপক চেমন আরা : ছাত্রদের অধ্যয়ন করতে হবে প্রচুর। পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি সাহিত্য, বিজ্ঞান নিয়েও চর্চা করতে হবে। আমাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, বন্দে আলী মিয়ার লেখা বইসহ ভালো ভালো লেখা, কবিতা পড়তে হবে। খুবই জীবনঘনিষ্ঠ এবং জীবন চলার পথে কাজে লাগবে- এই ধরনের সাহিত্য চর্চা করতে হবে। ডা: লুৎফর রহমানের লেখা তো অসাধারণ, তার ‘মানব জীবন’, ‘উন্নত জীবন’ এই ধরনের বইগুলো পড়লেই বোঝা যায় কত চমৎকার লেখা। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য ডা: লুৎফর রহমানের বইগুলো আদর্শ। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রেই উনার লেখা প্রযোজ্য। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা। শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য এই বইগুলো বেশি বেশি পড়া দরকার। সুতরাং ছাত্রদের অধ্যয়ন করতে হবে আদর্শভিত্তিক সাহিত্য। ন্যায়-নীতিহীন অধ্যয়ন ধ্বংস ছাড়া আর কিইবা দিতে পারে।
প্রশ্ন : ছাত্রজীবনে সবচেয়ে আনন্দকর জিনিস কী?
সাফায়াত ইসলাম
ফকিরহাট, মিঠাপুকুর, রংপুর
অধ্যাপক চেমন আরা : ছাত্রজীবনের সবকিছুই আনন্দের। এই যে আমি ছাত্রজীবন পার করে শিক্ষকতা জীবনে গেছি, এটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আনন্দের। ইডেন কলেজে যখন শিক্ষকতা শুরু করি, বেশ স্বাচ্ছন্দ্যচিত্তে তা করেছি। আমার স্টুডেন্টরাও খুব ভালো ছিল। আমাকে খুব সম্মান করতো। তখনকার ছেলেমেয়েরা এখনকার ছেলেমেয়েদের মতো ছিল না। আমার ছাত্রীরা অনেক বড় বড় জায়গায় আছে, জাতিসংঘেও আছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমান, মতিয়া চৌধুরী তারা আমার ছাত্রী ছিল। ইডেন কলেজে অধ্যাপনার জীবনের মতো এতো সুখের জীবন আর পাইনি। মনে হয় যেনো বেহেশতে ছিলাম!
প্রশ্ন: সফল মানুষ কাকে বলা যায়?
মু: আবু নাঈম
নূরুন আলা নূর কামিল মাদরাসা, পঞ্চগড়
অধ্যাপক চেমন আরা : সফল মানুষ বলতে এখন তো আমি ড. ইউনূসকেই বুঝি। একটা মানুষ ক্ষুদ্র পর্যায় থেকে এত বড় একটা জায়গায় গেছেন। যে নিজের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন এবং দেশের মানুষেরও উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, এই রকম মানুষকেই তো সফল মানুষ বলা যায়।
প্রশ্ন : আপনি কোথায় পড়াশোনা করেছেন? এবং আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা কত?
মো: হাসান আলী, হরিপুর, ঠাকুরগাঁও;
মইনুদ্দিন, বিয়ানী বাজার, সিলেট ও
জয়নব ফাতেমা, দাগনভূইয়া, ফেনী
অধ্যাপক চেমন আরা : আমার পড়ালেখা শুরু ১৯৪০ সালে, চট্টগ্রাম থেকে। সেটা ছিল গোলেজার বেগম হাইস্কুল। জায়গাটার নাম চন্দনপুরা। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত ওখানে পড়াশোনা করি। এরপর বাবা যখন কলকাতায় চাকরি নেন তখন সেখানে পড়াশোনা করি। সেটা ছিল ১৯৪৬ সাল। সেখানে এক বছর থাকার পর আবার সেই গোলেজার বেগম হাইস্কুলে ভর্তি হই। তারপর কামরুন্নেসা স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হই এবং সেখান থেকেই মেট্রিক পাস করি। এরপর ইন্টারমেডিয়েটে ভর্তি হলাম ইডেন কলেজে। সেখান থেকে উচ্চম্যাধমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আর আমার পরিবারের সদস্যসংখ্যা এখন ছয় ছেলেমেয়ে। তাদের বিয়েশাদি হয়েছে এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।
প্রশ্ন : আপনি তো একজন ভাষাসৈনিক, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিগুলো আপনার মনে পড়ে কি?
এমদাদুল হক, হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
অধ্যাপক চেমন আরা : ভাষা আন্দোলনের কথা বলতে গেলে তখন তো আমরা ছোট। কাশেম নামে চট্টগ্রামের একজন ছিলেন। উনি ছিলেন চট্টগ্রাম সমিতির সেক্রেটারি। আর আমার বাবা ছিলেন সভাপতি। তো কাশেম ভাই কলকাতা থেকে তমদ্দুন মজলিস প্রতিষ্ঠা করলেন। উনার চিন্তা ছিল, যে উদ্দেশ্যে পাকিস্তান হলে আমাদের ছেলেমেয়েরাও যেনো সেই আদর্শ অনুসরণ করে। আমরা তখন ক্লস সেভেন-এইটে পড়ি। কাশেম ভাই তমদ্দুন মজলিস করার পর আমাদের বললেন- তোমরা তো আর বাইরে যেতে পারবে না। তোমরা পোস্টার লিখ। বাংলাভাষা আমাদের মাতৃভাষা, এর মধ্যে রুচিবোধ থাকবে, অনুপ্রেরণা থাকবে, এইসব বিষয় নিয়ে পোস্টার লিখতে বললেন। এরপর জিন্নাহ সাহেব এখানে এলেন। তখন তো হইচই শুরু হয়েছে। উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, এমন কথায় মানুষজনের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এরপর তো বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন শুরু হলো। কিন্তু কথা হলো, ভাষার জন্য এই যে এতো প্রাণ গেলো, সেই বাংলাভাষাকে আমরা কতটুকু ভালোবাসি? ব্যবহারিক জীবনে কতটুকু বাংলা আমরা ব্যবহার করছি সেটা এখন বিবেচ্য বিষয়।
প্রশ্ন : শিশু-কিশোরদের নিয়ে আপনার ভাবনাগুলো কি জানতে পারি?
মু. আবু নাঈম, হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
অধ্যাপক চেমন আরা : শিশু-কিশোরদের নিয়ে তো আমার অনেক ভাবনা। সেই ছোটবেলায় সবুজসেনা নামে একটি সংগঠন করেছিলাম আজিমপুরে। সেখানকার ছেলেরা এটা পরিচালনা করতো। শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য আর্ট, আবৃত্তি, ধর্মীয় শিক্ষা- এগুলো আমরা বাচ্চাদের শেখাতাম। তাদের সুস্থ মানসিকতা বিকাশে এটা বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলো। কবি নজরুল, ফররুখ তাদের কবিতা এ ক্ষেত্রে ব্যাপক উপকারে এসেছে। এখন শিশু-কিশোররা আকাশ-সংস্কৃতির বলয়ে পড়ে দিকভ্রান্ত। আমাদের মুসলিমসমাজে শিশু-কিশোরদের জন্য যে শিক্ষা যে পরিবেশ দরকার তা এখন নেই।
প্রশ্ন : সুস্থ সংস্কৃতি কিভাবে বিস্তার করতে পারি?
মো: সাইফুল ইসলাম
তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা
অধ্যাপক চেমন আরা : তোমাদের মনে যদি ঈমান থাকে, জাতীয় বিশ্বাস থাকে, নিজেদের আদর্শের প্রতি যদি আনুগত্য থাকে, তাহলে সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশ করা খুব সহজ হবে। ছাত্রছাত্রীদেরকে এই বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। আমরা যদি আমাদের মনমানসিকতাকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারি, ইসলামী আকিদা ও বিশ্বাস যদি লালন করতে পারি। নৈতিক চিন্তা চেতনা যদি ধারণ করতে পারি, তাহলে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবেই। কিশোরকণ্ঠের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। এখনো আমাকে মানুষ চেনে কিশোরকণ্ঠে লেখালেখি করার কারণে। এই পত্রিকাটি বহু ছেলেমেয়েকে সুস্থ সংস্কৃৃতির পথে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : জাতিগঠনে সাহিত্য এবং সাহিত্যিকের ভূমিকা কতটুকু বলে আপনি মনে করেন?
মাহমুদুল হাসান মারুফ, সুনামগঞ্জ
অধ্যাপক চেমন আরা : জাতিগঠনে সাহিত্য এবং সাহিত্যিকের ভূমিকা অনেক বেশি। সাহিত্য একটি জাতীয় দর্পণ বা সমাজের আয়না। যেমন ধরো, ডা: লুৎফর রহমানের বইগুলো এই ধরনের সাহিত্য যদি আমরা সর্বত্র চর্চা করতে পারতাম তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরা আরো অনেক সুস্থ সংস্কৃতি পেত এবং এই ধরনের লেখা যদি এখন লেখা যেত তাহলে জাতিকে আমরা অনেক কিছুই দিতে পারতাম। বর্তমানে যে সাহিত্য আমরা দেখছি সেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা নেই, নবী-রাসূলদের কথা নেই, নৈতিক আদর্শের কথা নেই, তাহলে সাহিত্য দিয়ে কী হবে? আরব্য রজনীর সেই গল্পগুলোতো এখন আর নেই। এগুলোতো অনেক দামি বা উচ্চমানের সাহিত্য।
প্রশ্ন : ছাত্র অবস্থায় পড়ালেখায় কেমন ফাঁকি দিতেন?
টুম্পা, বরিশাল
অধ্যাপক চেমন আরা : না, পড়ালেখায় তেমন ফাঁকি দিতে পারিনি। ছোটবেলা থেকেই পড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও অনেক বই পড়তাম। এমনকি চলার পথে যদি কোনো কাগজের টুকরো পড়ে থাকতে দেখতাম সেটাও তুলে পড়তাম। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ফররুখ, জসীমউদ্দীন, শরৎচন্দ্র এগুলো যে কতবার পড়েছি, তার ঠিক নেই। স্কুলে পড়ার সময়ই বড় বড় সাহিত্যিকের অনেক বই পড়ে ফেলেছি। আমাদের বাড়িতে অনেক জায়গা ছিল। পুকুরপাড়ে কিংবা গাছের নিচে বসে বই পড়তাম।
প্রশ্ন : আপনার সফলতার পেছনে কার ভূমিকা মুখ্য?
এইচ এম হাবিবুর রহমান
অধ্যাপক চেমন আরা : সফলতা কতটুকু পেয়েছি জানি না। তবে যতটুকু হয়েছে তার জন্য আমাদের পারিবারিক পরিবেশের ভূমিকা অগ্রগণ্য। বাড়ির যে পরিবেশ ছিল সেটা অনেক কাজে এসেছে। এ ছাড়াও কবি ফররুখ আহমদ, ড. দীন মুহাম্মদ, সানাউল্লাহ নূরী আমাদের চট্টগ্রামের কাশেম ভাই তাদেরও অবদান আছে।
প্রশ্ন : ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?
তাসনিয়া খানম
ইমাম গাজ্জালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাবনা
অধ্যাপক চেমন আরা : ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই, আসলে বাংলাদেশ তো পৃথিবীর সেরা একটা দেশ। প্রাকৃতিকভাবে আমাদের দেশ অনেক সুন্দর, আল্লাহ আমাদের অনেক দিয়েছেন। আমাদের দেশে সবই আছে, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, পাথর, খনিজপদার্থ ইত্যাদি অনেক কিছুই আছে। শুধু আমাদের সদিচ্ছা থাকা দরকার, তাহলেই আমরা সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে পাবো।
প্রশ্ন : আপনার শখ কী?
অজয় কুমার, বি. বাড়িয়া
অধ্যাপক চেমন আরা : আমার প্রিয় শখ ভ্রমণ করা, লেখালেখি করা। এখন অবশ্য লেখালেখি তেমন একটা করি না, তবে পড়তে চেষ্টা করি।