Home গল্প অনুবাদ গল্প রাবার নিয়ে যত কথা -আবদাল মাহবুব কোরেশী

রাবার নিয়ে যত কথা -আবদাল মাহবুব কোরেশী

রাবার চেনে না, জানে না এমন মানুষ কি পৃথিবীতে কেউ আছে? আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে এবং আধুনিক সভ্যতা বিকাশে রাবারের ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বন্ধুরা, তোমরা কি জানো? রাবার জিনিসটা আসলে কী? কোত্থেকে এর জন্ম? কিভাবে রাবার তৈরি করা হয়? সত্যি কথা বলতে কি জানো-রাবার জিনিসটা হলো মহান স্রষ্টার সৃষ্টির এক আশ্চর্য নেয়ামত। পৃথিবীর মানুষ বিভিন্নভাবে রাবারকে কাজে লাগিয়ে তোমাদের খেলার সামগ্রী থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৪৬ হাজার পণ্যসামগ্রী তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে। এবং তাতে আয় করছে কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাড়ছে রাবার চাষের ব্যাপকতা। বিশেষ করে ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ আরো অনেক দেশে ব্যাপক হারে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে রাবারের চাষ। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশ বাংলাদেশও পিছিয়ে নয়। অর্থকরী ফসল হিসেবে বাংলাদেশ সরকার রাবার চাষের ব্যাপকতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বন্ধুরা, আজ তোমাদের বলবো রাবার কী জিনিস? রাবার কোথা থেকে এবং কিভাবে সংগ্রহ করা হয় এবং রাবার চাষের গুরুত্বই-বা কি। অর্থাৎ রাবারের সার্বিক বিষয় নিয়ে মোটামুটি আলোচনা রাখতে চাই। তোমরা তৈরি আছো তো?
রাবারের ইতিবৃত্ত-উদ্ভিদ জগতের বিস্ময়কর নাম আর প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি মহামূল্যবান রাবার গাছ। উঁচু উঁচু পাহাড়-টিলা এবং সমতল ভূমিতে প্রায় ২০-২৫ ফুট লম্বা এ গাছগুলো সারিবদ্ধভাবে লাগানো থাকে যা দেখলেই মন ভরে ওঠে। একটি রাবার গাছ সাধারণত ৩২-৩৪ বছর বয়সে তার উৎপাদন আয়ু শেষ করে। আয়ু অতিক্রান্ত গাছগুলো কেটে পুনরায় বাগান তৈরি করা হয়। এ সকল গাছ থেকে গড়ে ৫-৮ ঘনফুট গোল কাঠ পাওয়া যায়। ইতিহাস থেকে জানা যায়-দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান উপত্যকার প্রাকৃতিক বনাঞ্চল হচ্ছে রাবার গাছের আদি নিবাস। ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম রাবার আবিষ্কারক হিসেবে গণ্য করা হয়। জানা যায় ১৪৯৬ সালে তার দ্বিতীয় যাত্রার পর তিনি কিছু রাবার বল নিয়ে আসেন, যা এক ধরনের গাছের আঠা থেকে তৈরি। হাইতির লোকেরা খেলার জন্য উক্ত বল ব্যবহার করতো। ১৮৭৩-১৮৭৬ সালের মধ্যে ব্রিটিশ নাগরিকের একটি উৎসাহী দল আদি বাসস্থান ব্রাজিল থেকে কিছু রাবার বীজ এনে পরীক্ষামূলকভাবে লন্ডনের কিউগার্ডেনে রোপণ করেন। এখান থেকে প্রায় ২০০০ চারা বর্তমান শ্রীলঙ্কাতে প্রেরণ করা হয় এবং সেখান থেকে কিছু সংখ্যক চারা মালয়েশিয়া, জাভা দ্বীপপুঞ্জ, সিঙ্গাপুর এবং পরবর্তীতে কিছু চারা ভারত ও অন্যান্য দেশে পাঠানো হয়। এ চারাগুলো হতেই প্রাচ্যে রাবার চাষের গোড়াপত্তন হয়।

রাবার কী
রাবার হলো প্রাকৃতিক উপায়ে সংগৃহীত একটি জৈব পদার্থ। সহজ করে বলতে গেলে রাবার গাছের কষই হচ্ছে রাবার। গাছ থেকে আহরিত কষ যা নিয়মমাফিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘনীভূত হয়ে শক্ত হয়। সেই কষ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক রাবারকে ব্যবহার উপযোগী করে মানুষের বিভিন্ন চাহিদা মেটানো হয়।
মূলত এ কষ সংগ্রহ করতে রাবারচাষিদের দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে গাছের কষ সংগ্রহ করতে গাছের সাথে বাটি বেঁধে একটি পাইপ লাগিয়ে (অনেকটা খেজুর গাছ থেকে খেজুর রস তোলার আদলে) সাদা আঠালো কষ রাবার চাষিরা গাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। পরিপক্ব রাবার গাছ হতে নিয়ন্ত্রিত কাটার মাধ্যমে কষ সংগ্রহ করার পদ্ধতিকে টেপিং বলে। রাবার বাগান থেকে এ কষ আহরণই বাগান বনায়ন করার মূল উদ্দেশ্য। সঠিক টেপিংয়ের মাধ্যমে রাবার গাছ হতে সর্বাধিক পরিমাণ কষ আহরণ করা সম্ভব। কিন্তু ভুল পদ্ধতিতে টেপিংয়ের ফলে গাছের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ সমস্ত কারণে সঠিক পদ্ধতিতে টেপিং করে কষ আহরণ করা রাবার উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই টেপিং সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী শ্িরমকদের সতর্ক থেকে সঠিক পদ্ধতিতে কষ আহরণের জন্য দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়। গাছের ছাল হচ্ছে রাবারের একমাত্র উৎপাদনশীল অংশ। ছালের ভেতরের অংশে রয়েছে লেটেক্স ভেসেল বা রাবার উৎপাদনকারী কষনালী। এই কষনালীগুলোতেই দুধের মতো সাদা রাবার কষ সঞ্চিত থাকে। টেপিং করার সময় ছালের বাইরের দু’টি স্তর ভেদ করে এই কষনালীর স্তর কেটেই রাবার কষ সংগ্রহ করা হয়।

রাবার গাছ টেপিংয়ের সময়,
নিয়ম ও পদ্ধতি
একটি পরিপক্ব রাবার গাছ থেকে বেশি কষ সংগ্রহ করতে হলে টেপিং কাজটা সূর্য ওঠার আগে অর্থাৎ খুব ভোরে করা উচিত। এ সময় সূর্যের আলো পর্যাপ্ত না থাকায় গাছে প্রস্বেদন ক্রিয়া শুরু না হওয়ায় কষনালীতে কষপ্রবাহ চালু থাকে। সূর্যের তাপ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কষনালীসমূহ সঙ্কুচিত হয়ে যায় ফলে কষপ্রবাহে তার স্বাভাবিক গতির ব্যাঘাত ঘটে। চারা রোপণ থেকে ৬ বছর পর সাধারণত রাবার গাছ টেপিং উপযোগী হয়ে থাকে, এ ক্ষেত্রে রাবার গাছ টেপিংয়ের সময় নি¤েœাক্ত নিয়মপদ্ধতি অনুসরণ করা একান্ত আবশ্যক।
১.    গাছ বড় না হওয়া পর্যন্ত টেপিং করা উচিত নয়। কলম করা গাছের ক্ষেত্রে কলমের সংযোগস্থল থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় এবং গাছের বেড় ৪৫ সেন্টিমিটার হলে টেপিং করা উচিত।
২.    টেপিং কাটা বাম পাশের ওপরের দিক হতে ক্রমশ ঢালু হয়ে ডান পাশের নিচের দিকে হওয়া উচিত।
৩.    যথাসম্ভব টেপিং কাজটি ফ্ল্যাট রাখা উচিত।
৪.    প্রতি মাসে ১৫ মি:মি: এর অধিক পুরো ছাল কোনভাবেই কাটা উচিত নয়। বেশি ছাল কাটলেই কষ উৎপাদন বাড়বে না সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
৫.    সূর্য ওঠার আগেই অর্থাৎ আবছা আঁধারে টেপিংয়ের কাজ শুরু করা উচিত।
৬.    টেপিং করার অস্ত্র খুবই ধারালো হওয়া আবশ্যক।
৭.    টেপিং করার পূর্বে টেপিং স্থান ও বাটি পরিষ্কার করে নেয়া দরকার। এতে কষ দূষিত হবে না।
৮.    টেপিংয়ের সময় সব কিছুতেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা উচিত।
৯.    কারখানায় নিয়ে জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া শুরু না করা পর্যন্ত কষে তরল অবস্থা বজায় রাখা দরকার। প্রয়োজনে এন্টি কোয়াগুলেন্ট (অ্যামোনিয়া) ব্যবহার করা উচিত।
১০.    টেপিংয়ের প্রতিটি কাজ আন্তরিক ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা উচিত।

বাংলাদেশে রাবার চাষ ও আবহাওয়া
বাংলাদেশে রাবার চাষের প্রাপ্ত তথ্যাবলিতে জানা যায় কলকাতা বোটানিক্যাল থেকে ১৯১০ সালে কিছু চারা এনে চট্টগ্রামের বারমাসিয় ও সিলেটের আমু চা বাগানে রোপণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে বনবিভাগ টাঙ্গাইলের মধুপুর, চট্টগ্রামের হাজেরিখিল ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পরীক্ষামূলক কিছু গাছ রোপণ করে। ১৯৫৯ সনে জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বিশেষজ্ঞ মি. লয়েড এ দেশের জলবায়ু ও মাটি রাবার চাষের উপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে রাবার চাষের সুপারিশ করেন। ১৯৬০ সালে বন বিভাগ ৭১০ একরের একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রামের রাউজানে ১০ একর এবং কক্সবাজারের রামুতে ৩০ একর বাগান সৃষ্টির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এ দেশে রাবার চাষের যাত্রা শুরু হয়। রাবার চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) ওপর রাবার চাষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ন্যস্ত করে। বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন বাংলাদেশ সরকার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৭টি, সিলেট অঞ্চলে ৪টি এবং টাঙ্গাইল-শেরপুর অঞ্চলে ৫টিসহ মোট ১৬টি বাগানে সর্বমোট ৪৩৬৩৫ একর এলাকায় রাবার বাগান সৃষ্টি করেছে।

রাবার গাছ পরিবেশবান্ধব
প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি রাবার গাছ পরিবেশের একান্ত বন্ধু হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় এ গাছের অবদান অন্য যেকোনো পদ্ধতির চেয়ে উল্লেখ করার মতো। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রাবার গাছ গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এ গাছ অন্য যেকোনো গাছের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন এবং কার্বন শোষণ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি হেক্টর রাবার বাগান (যেখানে প্রায় ৪১৫টি উৎপাদনশীল রাবার গাছ রয়েছে) বায়ুমন্ডল থেকে বার্ষিক ৩৯.০২ টন কার্বন শোষণ করে, যা উষ্ণতা রোধে ও পরিবেশ রক্ষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং রাবার গাছ যেমন আমাদের অর্থনীতি বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে ঠিক তেমনি পরিবেশ রক্ষায় সে সমান অবদান রেখে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি ও মানুষের কর্মসংস্থানে রাবার চাষের ভূমিকা : দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে রাবারের ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। গ্রামীণ এলাকায় মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে রাবার চাষ। উৎপাদিত রাবার কাঁচামাল হিসেবে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার উপযোগী করতে এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিপণনের জন্য অনেক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। রাবার দেশের প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম তাই বাণিজ্যিকভাবে রাবার চাষ করা এখন সময়ের দাবি। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ হাজার টন। আন্তর্জাতিক বাজারে যার মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় বাজারে এক কেজি কাঁচা রাবারের দাম ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। আর আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম ২৩৮ থেকে ২৪০ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি বছর প্রায় ১২ মিলিয়ন টন প্রাকৃতিক রাবারের চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার ৯৪ শতাংশ পূরণ করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। এর মধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে ৭২ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে। গড়ে প্রতি বছর থাইল্যান্ডে ৩০ লাখ টন, ভিয়েতনামে ৮ লাখ টন এবং ভারতে ৬ লাখ টন প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদন হয়। বিশ্বে রাবারের চাহিদা বিবেচনা করে বাংলাদেশে আরো ব্যাপকভাবে রাবারের চাষকে গতিশীল করতে হবে। বর্তমানে দেশে ৭০ হাজার একর জমিতে রাবার চাষ করা হচ্ছে। এর মাঝে ৩১ হাজার একর জমিতে সরকারি বাগান এবং বাকি ৩৯ হাজার একর জমিতে বেসরকারি উদ্যোগে রাবার চাষ হয়। বছরে প্রায় ১৫ হাজার টন রাবার দেশে উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৪ হাজার টন রাবার বিদেশে রফতানি করা হয়। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২০ সাল নাগাদ দেশে কাঁচা রাবারের চাহিদা হবে ১ লাখ টন। এ জন্য ১ লাখ ৮৫ হাজার একর জমি রাবার চাষের আওতায় আনার পরার্মশ দেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে সরকার ২০২০ সালের মধ্যে দেশে কাঁচা রাবার উৎপাদন বৃদ্ধি ও রাবারজাত দ্রব্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এতে রাবার চাষযোগ্য এলাকা হিসেবে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বৃহত্তর সিলটে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসংিহ, জামালপুর, শেরপুর, বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও বগুড়াকে বেছে নেওয়া হয়েছে এবং বেসরকারিভাবে সরকারের পক্ষ থেকে রাবার চাষে নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

রাবার থেকে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী
স্বাধীনতার পূর্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১০-১৫টি রাবারভিত্তিক ছোট ছোট কারখানা ছিল। স্বাধীনতাত্তোর সময়ে পর্যায়ক্রমে রাবারের উৎপাদন ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বেসরকারি মালিকানায় বিভিন্ন সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রায় ৪০০টির মতো রাবারভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানা থেকে তৈরি হচ্ছে নানা প্রকারের রাবার সামগ্রী। বাংলাদেশে বিএফআইডিসি’র উৎপাদিত কাঁচা রাবার মিনিবাস, প্রাইভেটকার, বেবিট্যাক্সি, মোটরসাইকেল, রিক্সা, বাইসাইকেলের টায়ার-টিউব, চপ্পল, হোস পাইপ, রাবার সোল, বাকেট, গ্যাসকেট, অয়েলসিল, পাট ও বস্ত্রশিল্পের ব্যবসায়ী বিএফআইডিসি’র রাবার টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করে বিদেশে রফতানি করে থাকে। ইতঃপূর্বে রাবার জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে বিএফআইডিসির শিল্প ইউনিটগুলোতে ট্রিটমেন্ট ও সিজনিং করে বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের আসবাবপত্র যেমন সোফাসেট, খাট, দরজা-জানালা, ডাউনিং টেবিল, চেয়ার ইত্যাদি তৈরি করে দেশে বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। ট্রিটমেন্ট ও সিজনিং করা রাবার কাঠের গুণগতমান সেগুনকাঠের সমপর্যায়ের যা অতিশয় টেকসই ও সুন্দর।

শেষকথা
সব দিক বিবেচনা করে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, রাবার শিল্প বাংলাদেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। রাবার চাষের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তারা মনে করেন রাবার চাষকে সম্প্রসারণ করতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ শিল্পকে কোনোভাবে গতিশীল রাখা সম্ভব নয়। আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে রাবার চাষিদের বিশেষ রফতানি ও ভর্তুকি সুবিধাসহ সহজ শর্তে ঋণ, অনুদান ও রাবার বোর্ড গঠনের মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। সেটাকে দৃষ্টান্ত রেখে আমাদের দেশের রাবার চাষিরাও যদি আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সে রকম সুযোগ-সুবিধা ও সহযোগিতা পায় তবে রাবার শিল্প বাংলাদেশের এক অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারবে।
তা ছাড়া দেশের বেকারত্ব দূর করতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে রাবার শিল্পকে একটি টেকসই অবকাঠামো দেয়া প্রয়োজন।

SHARE

Leave a Reply