Home মুখোমুখি মনের পরিশুদ্ধতাই উজ্জ্বল আলোকিত মানুষ গড়ে তোলে -ছটকু আহমেদ

মনের পরিশুদ্ধতাই উজ্জ্বল আলোকিত মানুষ গড়ে তোলে -ছটকু আহমেদ

প্রশ্ন : আপনার নির্মিত শিশু-কিশোর চলচ্চিত্র কী কী এবং কোন বিষয়ের ওপর নির্মিত?
ফয়সল হোসেন
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ
ছটকু আহমেদ : বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রযোজিত দুটো ছবি ‘মুক্তিযুদ্ধ ও জীবন’ এবং ‘জন্মজয়ন্তী’। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও জীবন’ মুক্তিযুদ্ধের সময় ছেলেমেয়ে, দাদী ও বউকে নিয়ে একটি পরিবার ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে কিভাবে আশ্রয়ের সন্ধানে গিয়েছিলো এবং পরে ওই পরিবারের ছেলেমেয়েরা কী করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো তার ওপর লেখা। আর ‘জন্মজয়ন্তী’ নির্মিত হয়েছিলো একটি শিশু স্কুলে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী পালন উপলক্ষে গান আবৃত্তি, নাচ, ছড়া ও অভিনয়কে কেন্দ্র করে।
প্রশ্ন : আপনার স্কুলজীবনের একটি স্মরণীয় দিনের কথা বলুন?
মো: আকবর হোসেন, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর
ছটকু আহমেদ : নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়তাম। বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমি একটা কবিতা আবৃত্তি করছিলাম। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘চল চল চল’। যখন মঞ্চে ওঠে সামনে দর্শকের সারির দিকে চোখ গেলো তখন ভয়ে আমার পা কাঁপতে লাগলো। আর সেই ভয়ে এত দ্রুত কবিতাটা পড়েছিলাম যে আমার স্যাররা হেসে উঠেছিলেন। আর সেই লজ্জাটাই আমাকে পরে সাহসী হতে শিক্ষা দিয়েছিলো। তোমরাও যেকোনো ভালো কাজে লজ্জা পেয়ে না, থেমে সাহস নিয়ে এগিয়ে যেও, জয় তোমাদের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।
প্রশ্ন : বর্তমান আমাদের চলচ্চিত্রে অশ্লীল প্রদর্শনী যে হারে বাড়ছে তাতে বিশেষত কিশোররা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা কি জাতিকে শালীনতাপূর্ণ চলচ্চিত্র উপহার দিতে পারি না?
বায়েজিদ হোসাইন
ছটকু আহমেদ : অবশ্যই পারি। তোমরা সবাই যদি হলে ছবি দেখতে এসে সেই সব অশ্লীল ছবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করো তাহলেই শালীনতাপূর্ণ ছবি নির্মাণ করতে ওরা বাধ্য হবে।
প্রশ্ন : আপনার জীবনের স্মরণীয় একটি ঘটনা জানতে চাই।
রুমান হাফিজ, কানাইঘাট, সিলেট
ছটকু আহমেদ : তখন আমি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ি, ১৯৬৮তে পূর্ব পাকিস্তান (এখন বাংলাদেশ) ইন্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট টেবিল টেনিস সিঙ্গেলস প্রতিযোগিতার ফাইনাল। ফাইনালে আমার অপোনেন্ট ছিলো রাজশাহীর এক ছাত্র। বেস্ট অব ফাইভ খেলা। প্রথম দুটোতে আমি খুব সহজেই জিতলাম এবং পরের দুটোতে আমি খুব সহজেই হেরে গেলাম। আর একটা বাকি। যে জিতবে সে চ্যাম্পিয়ন। জয়ের ধারাবাহিকতায় আমার অপোনেন্ট তখন উজ্জীবিত। খুব টেনশনে আমি। এর মধ্যে প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে আড়ালে ডেকে বললেন, তোমাকে জিততে হবে নইলে ঢাকার মান থাকবে না। আমার মনোবল বেড়ে গেলো। টেনশনকে দূরে সরিয়ে মনোবল নিয়ে খেলে ৫ম খেলায় আমি ২১-১৮তে গেমটা জিতে চাম্পিয়ন হলাম। প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে আনন্দে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এটা আমার জীবনের অনেক স্মরণীয় ঘটনার মধ্যে একটা। তোমরাও চেষ্টা করবে টেনশনকে দূরে সরিয়ে মনোবলকে দৃঢ় করলে তবে আকাক্সিক্ষত ফল পেয়ে যাবে।
প্রশ্ন : ছাত্র অবস্থায় জীবনে আপনার লক্ষ্য কী ছিল?
মো: সোলায়মান সুমন
পাপুয়া, সোনাইমুড়ি, নোয়াখালী
ছটকু আহমেদ : সাত্যি বলতে কি কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিলো না। আমি সব কিছু হতে চাইতাম। ভালো ক্রিকেট খেলতাম, ব্যাডমিন্টন ও দাবা খেলতাম, টেবিল টেনিস খেলতাম, আবৃত্তি ও অভিনয় করতাম, নাটক পরিচালনা করতাম, নাটক লিখতাম এবং সবগুলোতে আমি অনেক অনেক পুরস্কার পেয়েছি।
প্রশ্ন : সৃজনশীল ক্যারিয়ার গড়ার জন্য শিল্প-সাহিত্যের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?
ইয়াকুব আল মাহমুদ
সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী
ছটকু আহমেদ : অবশ্যই গঠনমূূলক এবং উপদেশমূলক, যা তোমাকে সাহায্য করবে ক্যরিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে।
প্রশ্ন : ছোটবেলায় আপনি কি খুব শান্তশিষ্ট ছিলেন নাকি দুষ্টু ছিলেন?
এস এম শাহীন
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ছটকু আহমেদ : দুটোর একটাও না। শান্ততো ছিলাম না, আর দুষ্টতো নই। আমি কোন গোলমাল পছন্দ করতাম না। ভালো কাজে এগিয়ে যেতাম, খারাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতাম।
প্রশ্ন : বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণসমাজের ভূমিকা কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
এ জে তালহা
রাজিবপুর ডিগ্রি কলেজ, জামালপুর
ছটকু আহমেদ : ডিজিটাল মানেই তারুণ্যনির্ভর প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির সার্থকতা নির্ভর করছে সম্পূর্ণরূপে তরুণদের ওপর। তাদেরই অগ্রণী ভূমিকা থাকবে বাংলাদেশ বিনির্মাণে। তবে প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকে অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে। নইলে প্রযুক্তি টেকসই হবে না।
প্রশ্ন : চলচ্চিত্রে আপনার শুরুটা কিভাবে?
মো: নুরুল্লাহ হোসেন, রোনগর, মহম্মদপুর, মাগুরা
ছটকু আহমেদ : আমি তখন দিনাজপুর ইরিগেশন বিভাগে উপসহকারী প্রকৌশলী-কাম-সেকশন অফিসার। সরকারি চাকরি। এই সময় আমার বাল্যবন্ধু হাবিব (হাবিবুর রহমান খান) ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিটি নির্মাণ করার জন্য ভারতের বিখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক কুমার ঘটককে বাংলাদেশে নিয়ে এলেন। দৈনিক ইত্তেফাকে একটা নিউজ করে জানালেন তার সহকারী পরিচালক হিসেবে অনেকের সাথে আমি থাকবো। তারপরই তার ফোন পেয়ে চলে এলাম ঢাকায়। শুরু হলো চলচ্চিত্রে পথচলা।
প্রশ্ন : নৈতিকতাসমৃদ্ধ সমাজগঠনে তরুণরা কী করবে বা তাদের দায়িত্ব কী?
আজমাইন মাহতাব
রাহাত্তার পুল, চট্টগ্রাম
ছটকু আহমেদ : তরুণরা সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে। তাদের দায়িত্ব নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে মানুষকে সচেতন করা। অনৈতিক কর্মকান্ডের কুফল এবং নৈতিক কর্মের সুফল তাদের বোঝাতে হবে। কিছু ঢেকে রাখলে চলবে না।
প্রশ্ন : এ পর্যন্ত কয়টি সিনেমার কাহিনী-চিত্রনাট্য-সংলাপ নির্মাণ করেছেন? বিখ্যাত কয়েকটি সিনেমার নাম জানতে চাই।
মু: আশরাফুল চৌধুরী
ছোটশালঘর, দেবিদ্বার, কুমিল্লা
ছটকু আহমেদ : প্রায় তিন শতাধিক। সত্যের মৃত্যু নেই, বুকভরা ভালোবাসা, বুকের ভিতর আগুন, মিথ্যার মৃত্যু, সত্যমিথ্যা, বাংলার বধূ, পিতা-মাতা সন্তান, ঘাতক, চেতনা, স্বামী কেন আসামী, মেয়েরাও মানুষ, জবাবদিহি, শেষযুদ্ধ, নাত বৌ ইত্যাদি।
প্রশ্ন : বর্তমানে সারা বিশ্ব অপসংস্কৃতিতে নিমজ্জিতপ্রায়। এ থেকে কিভাবে ছাত্রসমাজকে রক্ষা করা যায়?
সাইফুল্লাহ হাসান, জুড়ী, মৌলভীবাজার
ছটকু আহমেদ : ঢালাওভাবে সব অপসংস্কৃতি বলা যাবে না। কারণ আমাদের সংস্কৃতিতে যা খারাপ তা হলিউডে বা বলিউডে খারাপ না। আবার ওদের ওখানে যা খারাপ তা আফ্রিকানদের কাছে খারাপ না। অপসংস্কৃতি রোধ করতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ছাত্রসমাজ সচেতন হলে নিজেই তাকে বয়কট করবে।
প্রশ্ন : একটি সফল সিনেমা নির্মাণের জন্য কী কী উপকরণ প্রয়োজন?
মুহাম্মদ শাহাদাত হুসাইন
সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী
ছটকু আহমেদ : একটা ভালো গল্প। একজন ভালো পরিচালক, একজন ভালো ক্যামেরাম্যান, একজন ভালো এডিটর, একজন ভালো সঙ্গীত পরিচালকের কিছু শ্রুতিমধুর গান। ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী।
প্রশ্ন : আমরা কিভাবে উজ্জ্বল আলোকিত মানুষ হতে পারি?
মো: জাবেদ ইকবাল
হাজিরহাট মিল্লাত একাডেমি, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর
ছটকু আহমেদ : উজ্জ্বল আলোকিত মানুষ হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট ব্যাকরণ নেই। এটা কোন মেশিনের সাহায্যেও হবে না। এর জন্য চাই তোমার দেহের ভেতর যে মন আছে তার পরিশুদ্ধতা। তোমার মন যেন অসহায় দুঃখী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যায়। তোমার মন যাতে দেশের কাজে এগিয়ে আসে, আর্তমানবতার সেবা করতে উদ্বুদ্ধ হয়। মনকে সততার সাথে নিষ্ঠার সাথে, দৃঢ়তার সাথে, একাগ্রতার সাথে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারলেই তুমি উজ্জ্বল আলোকিত মানুষ হতে পারবে।
প্রশ্ন : আপনার জন্ম কবে কোথায়? আপনি কোন স্কুলে পড়ালেখা করেছেন?
সাজিয়া রহমান
কচুয়া, চাঁদপুর
ছটকু আহমেদ : আমার জন্ম ১৯৪৬ সালে ৬ অক্টোবর, রোববার, ঢাকায়। স্কুলজীবন কেটেছে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে। চট্টগ্রাম মিউনিসিপাল হাইস্কুলে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়েছি, ফাইভ থেকে এসএসসি পাস করেছি নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল থেকে। মাঝখানে এক বছর ক্লাস নাইনে পড়েছি নারায়ণগঞ্জ জয়গোবিন্দ হাইস্কুলে।
প্রশ্ন : ছোটবেলায় কী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন আর সেই স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করার জন্য কতটুকু পরিশ্রম করতেন?
কলিমুল্লাহ, বরিশাল
ছটকু আহমেদ : আমি কোন একটা কিছু নিয়ে কখনো স্বপ্ন দেখিনি। আমি অনেক কিছুই হতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেট প্লেয়ার, দাবারু, টেবিল টেনিস প্লেয়ার, নাট্যকার, নাট্য পরিচালক, আবৃত্তিকার, লেখক এবং ছোটবেলায় এসব কিছুতেই আমি পরিশ্রম করে সফলতা অর্জন করে পুরস্কৃত হয়েছি। আমাদের তখন গাইড করার কেউ ছিলেন না। তাই একটা কিছুতে মনোনিবেশ করা হয়ে ওঠেনি।
প্রশ্ন : কী ধরনের চলচ্চিত্র ছাত্রদের জন্য উপযোগী বলে আপনি মনে করেন?
শরীফ উদ্দীন, চট্টগ্রাম মুহসীন কলেজ
ছটকু আহমেদ : আগে হলে বলতাম শিক্ষণীয় চলচ্চিত্র। কিন্তু এখন বলবো সব ধরনের চলচ্চিত্রই ছাত্রদের দেখা উচিত। কারণ সব চলচ্চিত্রে শিক্ষণীয় কিছু থাকে। খারাপের মধ্যে ভালো কিছু লুকিয়ে থাকে। ছাত্রদের আহরিত শিক্ষা দিয়ে সেই ভালোটা খুঁজে নিতে হবে। নইলে সার্থক ছাত্র হওয়া যাবে না।
প্রশ্ন : আপনার সন্তান কয়জন এবং তারা কে কী করেন?
মু: আবু নাঈম, হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
ছটকু আহমেদ : আমার চার মেয়ে। বড় মেয়ে সাদিয়া আহমেদস্নিগ্ধা। এমকম ম্যানেজমেন্ট। মেজ মেয়ে ফারিয়া আহমেদ স্থীরা। এমবিএ ফাইন্যান্স। সেজ মেয়ে শাহরিয়া আহমেদ স্রতা। এমএসসি ফার্মাসি। ছোট মেয়ে নাজিয়া আহমেদ শ্বেতা। ছাত্রী। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে তৃতীয় বর্ষ অনার্স (পদার্থ) ফাইনাল দিচ্ছে। সেজ মেয়ে ¯œাতা বিদেশী ওষুধ কোম্পানির এমএসটি (ম্যানুফ্যাকচারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি) অফিসার। বড় ও মেজ মেয়ে আগে চাকরি করতো এখন সংসার করছে।
প্রশ্ন : আপনি এই পর্যন্ত কতটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন?
বৃষ্টি, সাভার, ঢাকা
ছটকু আহমেদ : আমি ১৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছি আর ৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি।
পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবিগুলি হচ্ছেÑ ১. নাত বৌ (১১ নভেম্বর, ১৯৮২) ২. রাজদন্ড (১৯৮৪) ৩. গৃহবিবাদ (২৬ জুলাই ১৯৮৬। মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রেরিত ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির (বাচসাস) তিনটি পুরস্কার লাভ) ৪. অত্যাচার (২৩ এপ্রিল ১৯৮৭। কায়রো চলচ্চিত্র উৎসবে প্রেরিত) ৫. চেতনা (৫ জানুয়ারি ১৯৯০। গানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন) ৬. মায়া মমতা (২৯ জানুয়ারি ১৯৯৪) ৭. সত্যের মৃত্যু নেই (১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত) ৮. বুকের ভিতর আগুন (৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭) ৯. মিথ্যার মৃত্যু (৮ মে ১৯৯৮) ১০. বুকভরা ভালোবাসা (৩০ এপ্রিল ১৯৯৯) ১১. বর্ষা বাদল (৭ জুলাই ২০০০) ১২. শেষ যুদ্ধ (২৯ মার্চ ২০০২। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার ছবি) ১৩. মহা তান্ডব (২৭ সেপ্টেম্বর ২০০২) ১৪. আজকের রূপবান (১১ এপ্রিল ২০০৫। চ্যানেল আই প্রযোজিত) ১৫. প্রতিবাদী মাস্টার (৯ ডিসেম্বর ২০০৫)
স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি হচ্ছেÑ ১. আমার সংসার (পরিবার পরিকল্পনা সমিতি প্রযোজিত) ২. ঘোড়ার ডিম (এফডিসি প্রযোজিত) ৩. মুক্তিযুদ্ধ ও জীবন (বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রযোজিত) ৪. জন্মজয়ন্তী (বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রযোজিত)
প্রশ্ন : বিখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটক আপনার সিনেমা পরিচালনার ক্ষেত্রে কিভাবে প্রভাব ফেলেছেন?
রিজিয়া পারভিন
কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ
ছটকু আহমেদ : স্যরি, উনার কোনো প্রভাব আমার ছবির ওপর নেই। কারণ উনি যে ধরনের ছবি বানান সেই ধরনের ছবি বানানোর মত প্রযোজক আমি পাইনি। ভালো ছবির পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা লস করতে কেউ আমাদের কাছে এগিয়ে আসেনি। তবে এখন একজন এসেছেন। যদি ইনি শেষ পর্যন্ত থাকেন তবে আমার এই নির্মিতব্য ছবি ‘দলিল’-এর ওপর ঋত্মিক ঘটকের প্রভাব আপনারা দেখতে পাবেন।
প্রশ্ন : বর্তমানে সিনেমার ক্ষুদ্র ভার্সন কি শর্ট ফিল্ম? আপনি কী মনে করেন?
সাইফুল ইসলাম, ঢাকা কলেজ
ছটকু আহমেদ : না। শর্ট ফিল্মের নিজস্ব একটা ভাষা আছে, যার গঠনপ্রণালী আলাদা। অল্প পরিসরে বিরাট একটা ভাবনার বিষয়কে শর্ট ফিল্ম তুলে ধরে।
প্রশ্ন : কিভাবে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব?
আফসানা
আশুলিয়া মডেল টাউন, ঢাকা
ছটকু আহমেদ : চলচ্চিত্রকে বলা হয় সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম। আর গণ মানে হচ্ছে মানুষ। সোজা কথায় মানুষের মাধ্যম হচ্ছে চলচ্চিত্র। গল্প-কবিতা পড়ে, বক্তৃতা শুনে, আর চলচ্চিত্রে একসাথে দেখে ও শুনে। মানুষের সাথে চলচ্চিত্রের সরাসরি যোগাযোগ হয়। সুতরাং চলচ্চিত্র দিয়ে মানুষের মনের যত কাছাকাছি যাওয়া যায় আর কোন কিছুতেই তা সম্ভব নয়। আর এই জন্যই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে যে ধরনের চলচ্চিত্র বর্তমানে তৈরি হচ্ছে তাতে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট?
তালহা
ইলিয়টগঞ্জ রা.বি উচ্চবিদ্যালয়, দাউদকান্দি, কুমিল্লা
ছটকু আহমেদ : না আমি মোটেই সন্তুষ্ট না। এখন ডিজিটালের নাম করে চলচ্চিত্রকে প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলেছে। চলচ্চিত্রের প্রাণ গল্পকে ওরা দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি যা চলচ্চিত্রের জন্য আশীর্বাদ তাকে এরা অভিশাপে রূপান্তরিত করে তুলেছে। তাই বিগত বছরে ৬৮ চলচ্চিত্রের মধ্যে ৬৬টি মুখ থুবড়ে পড়েছে। দর্শক কমছে। হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চোখধাঁধানো রঙ আর কান ফাটানো শব্দ দিয়ে মানুষের মনের গহিনে যাওয়া যায় না। তার সাথে একটা গল্পের সফল চিত্রায়ণ চাই। বাঙালি দর্শক গল্পপ্রিয়। আর সেই গল্পই এখনকার চলচ্চিত্রে নেই বললেই চলে। অনেকেতো আবার টেলিফিল্মকে চলচ্চিত্র বানিয়ে চালিয়ে দিচ্ছে। সুতরাং সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে এখনকার তরুণ মেধাবীদের দ্বারা এই চেহারা বদলে ফেলা সম্ভব।
প্রশ্ন : চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
রাসেল আহমেদ, ব্রাহ্মন্ধি, নরসিংদী
ছটকু আহমেদ: আমার বয়স হয়ে গেছে। সত্তরে পা দিয়েছি। এই বয়সে কোন পরিকল্পনা করে সাকসেস হওয়ার সুযোগ কম। আর আমি সেই রকম কোন পরিকল্পনা করি না যা শুধু পরীদের কল্পনায় থেকে যাবে বাস্তবে কোনদিন হবে না। কাজ না করে বড় বড় কথা দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করার মধ্যে আমি নেই। আমি এখন ‘দলিল’ নামে একটা ভালো ছবি করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আর আমি বিশ্বাস করি সবাই যদি একটা করে ভালো ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করে তবে দেশের চলচ্চিত্রের চেহারা বদলে যাবে।
প্রশ্ন : তরুণ নির্মাতাদের প্রতি আপনার উপদেশ কী?
রাজিয়া বানু
বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট
ছটকু আহমেদ : একটাই উপদেশ। তোমরা শুধু বিদেশী কালচারের ছবি বানিয়ে নিজেদের বড় বলে জাহির করতে চেষ্টা না করে নিজের দেশের সংস্কৃতি নিয়ে নিজের মাটির গল্প নিয়ে ছবি বানাও। কারণ তোমরা হলিউড, বলিউড এবং মাদ্রাজের ছবির বাজেট দিতে পারবে না। সুতরাং তার অনুকরণ করতে গিয়ে ছবি হবেÑ না ঘরকা না ঘাটকা। আর বিদেশী সংস্কৃতি লালন করা কোনো শিক্ষিত সমাজের পক্ষে ঠিক না।

SHARE

Leave a Reply