ঐ তো সেদিন আমার অন্তরঙ্গ নতুন এক কবির সাথে দেখা করতে গেলাম। গিয়ে দেখি তার বইয়ের ভেতরে ভেতরে, বালিশের নিচে কিশোরকণ্ঠরা হাসছে। চা-কফির পর্ব সেরে তার সাথে বেশ আলাপ জুড়িয়ে দিলাম। আমি প্রথমে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। কিভাবে তোমার হৃদয় মাঝে কবিত্বের উদ্ভব ঘটল?
উত্তরে অন্তরঙ্গ কবি আব্দুল্লাহিল মামুন বিন হারুন বলল, আসলে আমার হৃদয়ে কিভাবে যে কবিত্বের উদ্ভব ঘটল তা বলা কঠিন। অনেক আগ থেকেই যখন বিকেলে প্রকৃতির পরিবেশে একটু নীরব নির্জন হয়ে যায় তখন আমার মনে হতো আমি কেমন জানি এক ভিন গ্রহের লোক। আর মাঝে মাঝে অনুভব করতাম আমার কী যেন নেই, কী যেন পাওয়ার আছে। আমি কবিতা পড়তাম, ভালো লাগত। এই ভালা লাগা থেকেই লিখতে শুরু করি। তারপর মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম- তুমি কোথা থেকে কবিতা পড়তে?
সে বললো, আমি কবিতা পড়তাম পাঠ্যবই, কিশোরকণ্ঠ এবং অন্যান্য পত্রিকা থেকে। তবে কিশোরকণ্ঠে ছড়া কবিতা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি পড়তে খুবই ভালো লাগত। আমার এক কবিতায় আছে-
গল্পের বইয়ে গল্প থাকে
ছড়ার বইয়ে ছড়া
আমার কিশোরকণ্ঠে
সবকিছুতেই ভরা।
উপন্যাসের বইয়ে থাকে
শুধুই উপন্যাস
আমার কিশোরকণ্ঠে
সবকিছুই বসবাস
মস্ত ভাল লাগে আমার
পড়তে তোমার লেখা
তোমার থেকে অনেক কিছু
হয় যে আমার শেখা।
এরপর আমি তাকে বললাম, তুমি তো কবি। অন্য কোন কবির কাব্যে কি তুমি উঠেছ?
উত্তরে সে বলল, আসলে আমি কবি, বিষয়টা এমন নয়; আমি কবি হতে চাই। ২০১৪ সালে যখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি তখন গ্রামের মাটির পথ দিয়ে চলতাম। প্রকৃতিকে উপভোগ করতাম আর শত শত কল্পনা মাথায় এসে ঘুরাফেরা করত। একদিন একজন সাহিত্য সাধকের সাথে দেখা হয়ে গেল। তার নাম বুলবুল ইসলাম। তিনি আমার সম্পর্কে বলছিলেন,
“লেখালেখি করে সে যে রাতে আর দিনে
কবি মামুন নামে সবে তারে চিনে।
কেউ বলে পাগল তারে, কেউ বলে কবি,
এই পাগলই একদিন
হয়ে উঠবে রবি।”
আমি তাকে বললাম, তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায়?
সে বলল, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানাধীন দক্ষিণ পাড়া গ্রামে।
দু’জনে আলাপ করতে করতে শরবত, আঙ্গুর, আপেল টেবিলে এসে জমা হলো। আমি আর কবি মামুন বিন হারুন দু-গ্লাস শরবত পান করে দুটো আপেল হাতে নিলাম। এবার তাকে শেষ প্রশ্নটা করলাম, তুমি কি কোন উপাধি পেয়েছ কখনো? যেমন চুরুলিয়া গ্রামের দুরন্ত ছেলে দুখু মিয়া পেলেন ‘বিদ্রোহী কবি’ উপাধি।
মামুন একটা হাসি দিয়ে বলল, আমি কি আর কবি-টবি নাকি? তারপরও শুনে অবাক হবে যে ছেলেরা দুষ্টুমি করে আমাকে ‘আইনস্টাইন’ বলে ডাকে।
আমরা জানি মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন বিজ্ঞানমনস্ক থাকায় বাড়ির পথ চিনতেন না। এ রকম আমিও গাজীপুর বা একটু দূর থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথ প্রায়ই ভুলে যেতাম। একা একা বাড়ি যেতে পারতাম না।
তাই সেই সূত্র ধরেই দুষ্ট ছেলেরা উপাধি দিয়েছে ‘আইনস্টাইন’।