Home নাটিকা ওরা তিনজন মূল গল্প : হযরত ইমাম গায্যালী রহ: -নাট্যরূপ...

ওরা তিনজন মূল গল্প : হযরত ইমাম গায্যালী রহ: -নাট্যরূপ : শেখ আবুল কাশেম মিঠুন

দৃশ্য-১
জঙ্গলময় রাস্তা।
হযরত ঈসা আ:-এর সময়ের ঘটনা- সেই ধরনের পোশাক।
তিন ব্যক্তি যাচ্ছে। হঠাৎ তাদের চোখে একটা কি যেন আলোকচ্ছটা এসে পড়লো। চোখ কুঁচকে দ্যাখে।

১ম জন : এ যে স্বর্ণ!… সাব্বাশ! না চাইতেই বৃষ্টি!
২য় জন : নিশ্চয়ই সবাই ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছ?
৩য় জন : তা আর বলতে!
১ম জন : চলো এটা বাজারে বিক্রি করে প্রথমে কিছু খাবার কিনে খাই। তারপর বাকি টাকা ভাগবাটোয়ারা করা যাবে।
২য় জন : কিন্তু বাজার তো অনেক দূরে- ক্ষুধায় যা কষ্ট পাচ্ছি- বাজার পর্যন্ত যেতে পারবো না।
৩য় জন : (১ম জনকে) এক কাজ করো- তুমি যাও। দেখো বিক্রি করে কিছু খাবার কিনতে পারো কি না।
২য় জন : হ্যাঁ… তুমি যাও- আমরা বরং এখানে অপেক্ষা করি।
১ম জন : দাও… যাই দেখি-

(১ম জন স্বর্ণপিন্ড নিয়ে চলে যায়। বাকি দু’জন একটা ঝোপের কাছে বসে।)

দৃশ্য-২
বাজার। ১ম জন স্বর্ণকারের দোকানে স্বর্ণ দিয়েছে। স্বর্ণকার মাপে এবং টাকা দেয়।
১ম জন ভাবে…
১ম জন : খাদ্য কিনে তার মধ্যে যদি একটু বিষ মিশিয়ে দিইÑ তবে ঐ দুই বন্ধু মারা যাবে। তখন এ-স-ব টাকার মালিক হবো আমি একাই।

(সে একটি খাবারের দোকানের দিকে এগিয়ে যায়।)

দৃশ্য-৩
জঙ্গল।
২য় ও ৩য় জন পরামর্শ করছে।
হতাশ কণ্ঠে বলে-

২য় জন : স্বর্ণপিন্ড বিক্রি করে যা টাকা পাওয়া যাবে- তা তিন ভাগ করলে- এক এক ভাগে আর কত পড়বে!
৩য় জন : আমাদের ভাগ্যই মন্দ- সারা জীবন কষ্টই করে গেলাম, সম্পদের মালিক হতে পারলাম না।
২য় জন : আচ্ছা ধরো আমাদের বন্ধু বাজার থেকে খাদ্য নিয়ে আসতে গিয়ে পথে সাপে দংশন করলো- তখন তো সব টাকা আমাদের দু’জনের হবে!
৩য় জন : হ্যাঁ- তাহলে ভাগে তো বেশ বড় অংশ পড়বে।
২য় জন : তাহলে চলো আমরা দোয়া করি- আমাদের বন্ধুকে যেন সাপে কাটে।
৩য় জন : ধুর! ধেড়ের অভিশাপে কি আর নদী শুকায়! শুকায়!
২য় জন : তাহলে!
৩য় জন : আচ্ছা- দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে হলেতো যারা শক্তিমান তারা দুর্বলকে মেরেই তবে বাঁচে। যেমন ধরো- বাঘে হরিণ মারে, বিড়ালে ঈঁদুর মারে…
২য় জন : ঠিকই বলেছ। এই যেমন গরিবদের মেরে মানুষ বড়লোক হয়। এইভাবেই তো দুনিয়া চলছে।
৩য় জন : তাহলে আমরা আমাদের বন্ধুকে মেরে বড়লোক হচ্ছি না কেন?
২য় জন : ও তো খুব শক্তিশালী…
৩য় জন : আরে রাখো! আমরা হলাম দু’জন- তাছাড়া কিছু বলার আগেই… এ… এই যে কাঠের গুঁড়ি… এ… এই যে পাথর… তুমি আমি মিলে ওর মাথায় আঘাত করলে-
২য় জন : এক্কেবারে কেল্লা ফতে…
৩য় জন : তাহলে যেই কথা সেই কাজ!
২য় জন : প্রস্তুত হও…

(দু’জনে গাছের গুঁড়ি ও পাথর নিয়ে প্রস্তুত হয়।)

দৃশ্য-৪
(জঙ্গল।
দূরে ১ম জন খাবার নিয়ে আসতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।
স্বগত: বলে-)

১ম জন : এবার বিষটা মিশিয়ে দিই। ওরা দু’জন মরলে সব টাকা আমার একার- আমি হবো এলাকার সবচেয়ে ধনী-

(প্র্রথমজন একটু আড়ালে গিয়ে সঙ্গে আনা খাদ্যের মধ্যে বিষ মিশায় এবং এগিয়ে যায়।)

দৃশ্য-৫

(জঙ্গল।
২য় ও ৩য় জন… সহজ সরল ভাবে বসে আছে, একজন কাঠের গুঁড়ির ওপর ও একজন পাথরের ওপর।

১ম জন হৈ হৈ করে আসে-)

১ম জন : ওহে বন্ধু! স্বর্ণপিন্ডের দাম বেশ ভালো পেয়েছি। আগামী পাঁচ বছর বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে আমাদের দিন কেটে যাবে। এই নাওÑ সুস্বাদু খাবারও এনেছি। নাও খাও… খাবার পর টাকা ভাগ হবে।

(আচমকা ২য় ও ৩য় জন পাথর কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তাকে আঘাত করে।)
১ম জন লুটিয়ে পড়ে-
(২য় ও ৩য় জন তাকে ধরে টেনে নিয়ে একটা ঝোপের  ভেতর রাখে এবং টাকার থলিতে চুমু খায় ও খেতে বসে।)

২য় জন : যা-ক বাঁচা গেল! এবার সব টাকা আমাদের।
৩য় জন : এসো… আগে খেয়ে নিই- বড় ক্ষুধা!

(দু’জনে খেতে থাকে।
হঠাৎ যন্ত্রণায় দু’জনে গলা বুক চেপে ধরে এবং ছটফট করতে করতে মারা যায়।)

(এই সময় হযরত ঈসা আ: এই পথে যাচ্ছিলেন- বিষয়টি অনুধাবন করে তিনি বললেন)

নেপথ্য :
এরই নাম দুনিয়া। কি করুণভাবে তিনটি লোককে মেরে ফেললো অথচ সে নিজে অক্ষুণ্ন রয়ে গেল। আফসোস… দুনিয়া অন্বেষণকারীদের ওপর- আফসোস!!

SHARE

Leave a Reply