Home তোমাদের গল্প ক্যাম্পেইন -তোফায়েল সিপু

ক্যাম্পেইন -তোফায়েল সিপু

রুমেল গ্রামের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পরিবারের সবাই গ্রামে থাকে বলে তাকে প্রায়ই একা থাকতে হয়। মেসে থাকার কিছু অসুবিধা থাকলেও সুবিধাই বেশি মনে হয় রুমেলের। মেসে থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ইচ্ছেমতো চলাফেরা করা যায়। কেউ বারণ করে না। বাড়িতে থাকতে তো আব্বু-আম্মু সারাক্ষণ আঠার মতো লেগে থাকতেন। এটা করিস না, এখন বাইরে যাওয়া চলবে না, এটা খেতে হবে, ওটা খাওয়া যাবে না।
অনেকটা ঘরকোনো ছিল বলে দেশ ও সমাজ নিয়ে তার তেমন চিন্তাভাবনাও ছিল না। কিভাবে বা কি কাজ করলে দেশের মানুষের কল্যাণ হবে তা সে বুঝত না। তবে দেশের প্রতি তার খুব ভালোবাসা ছিল। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর তার চিন্তার পরিধি বেড়েছে। সে এখন একটা সামাজিক সংগঠনের সদস্য। তাদের সংগঠনের কাজ হচ্ছে মানুষের প্রয়োজনে রক্ত সংগ্রহ করে দেয়া। মুমূর্ষু রোগীরা রক্তের প্রয়োজনে তাদেরকে ফোন করে। সে ও তার বন্ধুরা মিলে এই রক্ত সংগ্রহ করে দেয়। মাঝে মাঝে তারা বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে ‘রক্ত দিন, জীবন বাঁচান’ নামে তাদের একটা ফেসবুক গ্রুপও আছে। এ গ্রুপের মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষকেও রক্তদানে উৎসাহিত করে।
রুমেল তার পড়াশোনার খরচ নিজেই জোগাড় করে। তিনটা টিউশনি করে সে। পড়াশোনা আর টিউশনির পরে যে অবসর সময়টুকু আছে তা রক্ত সংগ্রহের কাজ করেই চলে যায়। কিন্তু তার অনেক বন্ধু আছে যারা আড্ডা দিয়ে ও ধূমপান করে সময় কাটায়। রুমেল মাঝে মধ্যেই তাদের কথা ভাবে। তখন তার খুবই কষ্ট হয়। সে চিন্তা করে, কিভাবে তাদেরকেও সমাজের কল্যাণমূলক কাজে উৎসাহিত করা যায়। তাদেরকে ধূমপানের মতো বিষপান করানো থেকে বিরত রাখার উপায় খুঁজে রুমেল।
রুমেলের খুব কাছের বন্ধু সায়েম। উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে। সে সিগারেট খায়। রুমেল তাকে অনেকবার বারণ করলেও সে তার কথা শুনেনি। উল্টো রুমেলকে ধূমপান করার কথা বলেছে। ধূমপান করলে নাকি কষ্ট দূর হয়, স্মার্ট হওয়া যায়। কি হাস্যকর কথা!
একবার ভার্সিটির ক্লাস শেষে তারা দুই বন্ধু হাঁটছে। হঠাৎ এক শিশু তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়। সে তাদের কাছে কান্নাকাটি করে বলল, তাদের ঘরে দুই দিন কিছু রান্না হয়নি। সে এবং তার ছোট বোন দুই দিন থেকে উপোস। তাদেরকে কিছু খাবার কিনে দিতে।
রুমেল ছেলেটির কথা শুনে পাশের দোকান থেকে দুটো কলা ও রুটি কিনে দিলো। রুটি ও কলা পেয়ে ছেলেটির মুখ হাসিতে ভরে উঠলো। ছেলেটি চলে গেলে রুমেল সায়েমকে বলল, দেখ বন্ধু, আমরা দরিদ্র দেশে বাস করি। এই ছেলেটির মতো হাজারো ছেলে আমাদের দেশে না খেয়ে থাকে। অথচ আমাদের দেশে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার সিগারেট জ্বলে ছাই হয়। আমরা যদি শুধু সিগারেটের টাকা দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য খাবার কিনে দিতাম, আমার মনে হয় আমাদের দেশে কোন শিশুকেই আর না খেয়ে দিন কাটাতে হতো না। সেই সাথে আমরাও আমাদের পরবর্তী জেনারেশনের কাছে ইতিহাস হয়ে বেঁচে থাকতাম।
রুমেলের এমন কথা শুনে সায়েম খুব ভাবনায় পড়ে গেল। তার মনে পড়তে লাগলো এই একটা সিগারেটের জন্য তাকে কতজনের কাছে অপমানিত হতে হয়েছে। তার কত ভালো বন্ধু তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে তার বাবার কতগুলো টাকা নষ্ট করেছে। অথচ এই টাকা দিয়ে গরিব এসব শিশুকে সাহায্য করলে তার মা-বাবা কতই না খুশি হতেন। সেই সাথে অসহায় শিশুদেরকেও না খেয়ে দিন কাটাতে হতো না।
সে রুমেলকে বলল, বন্ধু আমি প্রতিজ্ঞা করলাম আজ থেকে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেবো। এই টাকা দিয়ে আমি দু’জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর লেখাপড়ার খরচ চালাবো।
রুমেল তার কথায় খুশি হয়ে বলল, তাহলে চল বন্ধু আমরা ক্যাম্পেইন শুরু করি। আমাদের স্লোগান হবে-
‘ধূমপান বর্জন করি
সকল শিশুর অধিকার নিশ্চিত করি।’

SHARE

Leave a Reply