Home ক্যারিয়ার গাইড লাইন মোরা বড় হতে চাই -আহসান হাবীব ইমরোজ

মোরা বড় হতে চাই -আহসান হাবীব ইমরোজ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। বন্ধুরা, আশা করি ভালো আছো। অনিয়মিত লেখার জন্য হামেশা মাফ চেয়েছি; কতবার আর চাওয়া? তবু আশা, তোমরা হামদর্দি হয়ে আমার অবস্থান বুঝতে এবং ক্ষমা করতে কসুর করবে না। বোধ হয় তোমাদের আগেই বলেছিলাম, আমি আসলে লেখক নই, মূলত পাঠক। এই যেমন ধরো লিখছি নিউটন নিয়ে; তার জন্মের বছরই গ্যালিলিও মারা যান, তাই সেটি পড়তে গিয়ে পাওয়া গেল মজার তথ্য আজকের মুক্তচিন্তার সবচেয়ে বড় প্রবক্তা সেদিনের খ্রিষ্টান পোপরা পৃথিবী নয়, সূর্য সৌরজগতের মাঝখানে বলার অপরাধে (!) এমনকি মৃত গ্যালিলিওর একটি দাঁত ও তিনটি আঙুল তুলে নেয়। পড়লাম, দেখলাম সেগুলো যা আজও সংরক্ষিত আছে। এরপর পড়লাম কোন কোন বিখ্যাত মানুষের দেহের কী কী সংরক্ষিত আছে ইত্যাদি। লিখতে গিয়ে কখন যেন পড়ায় ডুবে যাই। ওই দিকে সকাল গিয়ে সন্ধ্যা হলো অবস্থা। কিশোরকণ্ঠের চাপে পড়েই এই লেখালেখির দুঃসাহস। তাই হাজারও কাজের চাপে অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলি। অনেকটা চিঁড়েচেপ্টা।
অদ্ভুত! বিস্ময়কর!! অলৌকিক!!! এক ঘটনা ঘটলো সেদিন; এক বন্ধু ও তার ১০ বছর বয়সী ছেলেকে সমাদর করতে সেই ‘সূর্যি মামা ওঠার আগে…’ সকালে চা বানাচ্ছি। টগবগে পানিতে চায়ের পাতি ঢেলে টর্নেডোর মত চামচ নাড়ছি কিন্তু পাতিতো মিশছে না, এমনকি চায়ের কোন রঙও বোঝা যাচ্ছে না। পরিষ্কার পানিতে কালো পাতিগুলো নির্দয়ভাবে হাসছে।
কিন্তু কেন? একটু শানে নজুল বলতেই হয়; বিশেষ করে বাসায় স্ত্রী-সন্তানরা না থাকলে নানা আবিষ্কারের মেজাজে ‘কিচেনরুম-সায়েনটিস্ট’ সাজার চেষ্টা করি। খুব বেশি না পারলেও, চাতো বানাতে পারি। সেই আত্মবিশ্বাসেই এই চেষ্টা। একদিকে চা বানাচ্ছি ওই দিকে এক মস্তবড় প্রফেসর সাহেবকে নিয়ে গাড়ি আসছে, যেতে হবে মোমেনশাহী। কখন এসে পড়ে এই শঙ্কা মাথায়। তাই তাড়াহুড়োয় অন্যমনস্কভাবে চায়ের পাতির বদলে কালিজিরার বয়ামটি হাতে নিই আর তাতেই এই বিপত্তি। নিজেকে সান্ত্বনা দেই আজকে তো কমই হয়েছে, গত দুই বছর আগে আম্মার অপারেশনের সময় চিনির বদলে লবণ দিয়েছিলাম। আহ! মুখে দিতেই …ওয়াক থু।
যাকগে মূল প্রসঙ্গে যাই। প্রায় ৬৬ বছর আগের একটি ঘটনা; তৎকালীন রাজবাড়ী জেলার কোন এক নিভৃত গ্রাম। এক নববধূ প্রাত্যহিক কাজে দুয়ারের এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছিলেন। মাঝেই বেলগাছ, হঠাৎ মাথার ওপর একটি ছোটখাটো আকারের বেল পড়লো, কী ভয়ঙ্কর ঘটনা! তবে রক্ষা, বেলটি আকারে ছোট হওয়ায় হয়তো এ যাত্রা বেঁচে গেলেন। তবে সমস্যা বাধলো অন্য জায়গায়, নববধূর শ্বশুর সাহেব গেলেন ভীষণ ক্ষেপে। হুঙ্কার ছাড়লেন- ওহে সবাই দা-কুড়াল নিয়ে আয় এ গাছ আর রাখবো না। নিজেই রেগেমেগে দা দিয়ে সেই বেলগাছের গোড়ায় দু-তিন ঘা বসিয়ে দিলেন। আশপাশের সদাশয় সবাই দৌড়ে এলো- আরে, বেলগাছের কী দোষ? হ্যাঁ, বলে নিই, সেই সময় সেই নববধূ মায়ের পেটে যে শিশুসন্তান ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামী পদার্থবিজ্ঞানবিষয়ক অধ্যাপক হয়েছিলেন।
এ ঘটনার প্রায় তিন শ’ বছর আগে ১৬৬৬ সালে ইংল্যান্ডের নিজবাড়িতে গ্রীষ্মের শেষ সময় লাঞ্চের পর এক কাপ ধূমায়িত চা নিয়ে এক আপেল গাছের নিচে বসেছিলেন ২৩ বছরের এক তরুণ। হঠাৎ একটি আপেল টুপ করে তার গর্ভধারিণী মা নয়, বরং সরাসরি তার মাথায় পড়লো আর সাথে সাথেই সে মাথায় ঝিলিক দিয়ে উঠলো সেই বিখ্যাত অভিকর্ষের ফর্মুলা। তিনি হচ্ছেন বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ‘কি ফিগার’ স্যার আইজ্যাক নিউটন।
১৬৪২ সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ইতালির ফ্লোরেন্সে মারা যাওয়ার একই বছর প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশাওয়ার কাউন্টির (উপজেলা) ওলস্টরপ মেনর নামক গ্রামে স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্ম হয়। বাবা ছিলেন (তার নামও আইজ্যাক নিউটন) একজন অশিক্ষিত ও দরিদ্র কৃষক, নিউটনের জন্মের তিন মাস আগে বাবার মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন অপরিপূর্ণ ক্ষুদ্রাকৃতির এক শিশু, তার মা হানার ভাষায় তাকে এক লিটারের একটি মগের ভেতরই রাখা যেত। কেউ ভাবেনি সে বাঁচবে। নিউটনের বয়স যখন কেবল তিন, তখন মা বিয়ে করেন এক ধনাঢ্য লোককে। শিশু নিউটনকে তার নানুর কাছে রেখে স্বামীর বাড়িতে চলে যান। জন্মের আগেই পিতা হারানো এবং তিন বছর বয়স থেকেই মায়ের স্নেহবঞ্চিত, দারিদ্র্য ও অপুষ্টির শিকার এ শিশুটি প্রবল সংগ্রাম করেই বড় হন। তাই শিশু নিউটন তার সৎপিতা এমনকি নিজের মায়ের প্রতিও যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ছিলেন। আর এই বেদনাবোধ থেকে তিনি জীবনে বিয়েই করেননি। ৭ বছর পর তার সৎপিতা মারা গেলে মা আবার তার কাছে চলে আসেন এবং রীতিমতো তাকে একজন কৃষক বানানোর ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নিউটন কষ্ট করে লজিং থেকে এবং ইউনিভার্সিটিতে ছোটখাটো নানা পার্টটাইম কাজ করে ক্যামব্রিজের বিখ্যাত ট্রিনিটি কলেজে তার পড়ালেখার কাজ চালিয়ে যান। এ কলেজটি কতটা ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত তা বোঝা যায় এর সাবেক ছাত্রদের ভেতর এ পর্যন্ত ৬ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এবং ৩৬ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। লর্ডবায়রন, নিলস বোর এমনকি বার্ট্রার্ন্ড রাসেল এখানকার ছাত্র ছিলেন। ১৬৬৫ সালে এখান থেকে নিউটন একটি সাদামাটা গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি পান। ছিল না কোনো অনার্স কিংবা ডিস্টিংশন মার্কস।
এ সময় শুরু হয় লন্ডনের সেই ভয়াল গ্রেট প্লেগ (১৬৬৫-৬৬)। লন্ডন শহরেই এক লাখ অর্থাৎ প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ মারা যায়। ইউনিভার্সিটি বন্ধ হয়ে যায়। নিউটন তার নিজগ্রামে চলে আসেন এবং প্রায় ১৮ মাস গ্রামের অবারিত প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান। আর এ সময়ই তার বিখ্যাত আবিষ্কারসমূহ অভিকর্ষ, অপটিকস এবং ক্যালকুলাসের বিখ্যাত আবিষ্কারসমূহ সম্পন্ন করেন। নিউটন তার পরবর্তী স্মৃতিমূলক লেখাসমূহে এই দুই বছরের প্রকৃতির মাঝে অবারিত অবস্থান ও পর্যবেক্ষণকে তার আবিষ্কারসমূহের জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব দেন। আর আমরাও বুঝতে পারি ছোটবেলায় তার একাকিত্ব, দরিদ্রতা ও শারীরিক দুর্বলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। ছাত্রজীবনে ভালো প্রতিষ্ঠানসমূহে পড়ালেখা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যৌবনে প্রকৃতিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও সতত প্রশ্ন করার মতো মনন যা তাকে সত্যিকার নিউটন হিসেবে তৈরি করে, যাকে সর্বকালের সবচেয়ে সেরা প্রভাব বিস্তারকারী বৈজ্ঞানিক বলা হয়।

আমরা আজকাল ‘পড়া’ বলতে শুধু বই পড়াই বুঝি। কিন্তু নিউটনের মাথায় আপেল পড়া কিংবা আর্কিমিডিসের পানির চৌবাচ্চায় পড়াও কিন্তু এক ধরনের পড়া। বানানতো একই। আসলে এ হচ্ছে প্রকৃতির মাঝে সন্তরণ এবং প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারসমূহ এমনকি শ্রেষ্ঠ ছবি, নাটক, উপন্যাস সবই হয়েছে প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু হায়! আজ প্রকৃতি থেকে আমরা কত দূরে। প্রকৃতি আমাদের ঘরে আজ বনসাই হয়ে আছে কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় ডিজিটাল ফরম্যাটে। কিভাবে আমাদের ভেতর আর্কিমিডিস আর নিউটন তৈরি হবে!
লিঙ্কনশাওয়ার নামক যে কাউন্টিতে (উপজেলা) জন্মেছিলেন আইজ্যাক নিউটন, সেখানেই তার জন্মের প্রায় তিনশত বছর পর ১৯৪৬ সালে জন্ম নেয় সব থেকে প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ আইকিউ সোসাইটি (intelligence quotient-IQ)  মেনসা(Mensa is the largest and oldest high IQ society in the world). . গত মাসেরই মেনসার একটি চমৎকার তথ্য দিচ্ছি, তোমাদের কাজে লাগতেও পারে।

আইনস্টাইন, হকিংকেও ছাড়িয়ে
১২ বছরের নিকোলা

মেয়েটির বয়স মাত্র ১২ বছর। অথচ এই বয়সেই বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, ইংলিশ কিংবদন্তি স্টিফেন হকিং বা সবচেয়ে ধনীব্যক্তি বিল গেটসকে মেধায় ছাড়িয়ে গেছে নিকোলাবার। ইংল্যান্ডের এসেক্সের হার্লোয়ারের এই মেয়ে মেনসার আইকিউ টেস্টে (১৯৪৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত সংগঠন মেনসা) স্কোর করেছে ১৬২-এর মধ্যে ১৬২! আইনস্টাইন, হকিং আর বিল গেটসের স্কোর ১৬০। নিকোলাকে নিয়ে তাই মাতামাতি চলছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে। গত সপ্তাহে আইকিউ টেস্টের ফল পাওয়ার পর নিজের চোখকেই নাকি বিশ্বাস হচ্ছিল না নিকোলার।
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে এই বিস্ময়বালিকা ইংলিশ দৈনিক মিররকে বলেছে, ‘১৬২-এর মধ্যে ১৬২, সত্যিই অবিশ্বাস্য। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম কিছুক্ষণ।’ এই বিস্ময়বালিকাকে বলা যায় গোবরে পদ্মফুল। কেননা তার বাবা ৩৬ বছর বয়সী জেমস নর্দমা পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
জীবিকার তাগিদে কাজ করেন বাড়ি মেরামতেরও। মেয়ের কৃতিত্বে গর্বিত জেমস বললেন, ‘আমার মেয়ের সাফল্যই বলছে মেধাবীরা আসতে পারে সমাজের যেকোনো পর্যায় থেকে।’ জেমসের সঙ্গে অবশ্য ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে নিকোলার মা ডলিবাক ল্যান্ডের। মেয়ের সাফল্যে জেমসের মতো খুশি ডলি বললেন, ‘সেই ছোট্টটি থেকে ম্যাগাজিন বা বইয়ের ভুল ধরত ও। মেয়েটা ভীষণ পরিশ্রমী। স্কুল শেষে হোমওয়ার্ক ক্লাবে মিস করেনি একটা দিনও। বিশ্বজুড়ে মেনসার সদস্য এক লাখ ১০ হাজার। ইংল্যান্ডে সংখ্যাটা ২০,০০০-এর মতো। মাত্র ৮ শতাংশ সদস্যের বয়স ১৬ বছর। গড়ে একজন মানুষের আইকিউ স্কোর থাকে ১০০। সেটা ১৪০ হলে বলা হয় ‘জিনিয়াস।’ অথচ নিকোলার স্কোর ১৬২-এর মধ্যে ১৬২! তাকে কী নামে ডাকবে?
সূত্র : মিরর

SHARE

Leave a Reply