[প্রবেশক : ‘মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব’- ইরশাদ করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। সুন্দরতম অবয়ব, বুদ্ধি-বিবেচনা ও গুণাবলিতে সৃষ্টিকুলের মাঝে মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন : ‘আমিতো সৃষ্টি করিয়াছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে’ (সূরা আতত্বীন : ৪)। সমগ্র জীবনে এই শ্রেষ্ঠ অবস্থান বজায় রাখতে এবং উত্তম মানুষ হতে হলে তাকে অনেক বিশ্বাস ও প্রমিত জীবনাচারের অনুশীলন করে যেতে হয়। তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক বিষয় হলো শিষ্টাচার, শালীনতা ও নম্র ব্যবহার। শিষ্টাচার একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। শান্ত, ভদ্র, সুশীল, সুবোধ, শিক্ষিত, মার্জিত, বিনয়, নীতিবান গুণাবলিকে শিষ্টাচার গণ্য করা হয়। শালীন বলতে বুঝি সলজ্জ, লজ্জাশীল, রুচিকর, শোভন ও সুন্দর। শিষ্টাচারের ঘাটতি থাকলে মানুষ বিরূপ আলোচনার সম্মুখীন হয়, অন্য মানুষ তাকে এড়িয়ে চলে। সুন্দর শিষ্টাচারী মানুষ অপরের কাছে সহজেই গ্রাহ্যতা পেয়ে যায়। সামাজিক সহ-অবস্থানের ক্ষেত্রে শিষ্টাচার অন্যতম যোগ্যতা বলে বিবেচিত হয়। শিষ্টাচার, শালীনতা, নম্র ব্যবহার ইসলাম ধর্মের অন্যতম অনুষঙ্গ এবং ঈমানের অংশ। মানুষের শিষ্টাচারহীনতা সমাজে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয় ডেকে আনে। আল্লাহ বলেন : ‘সেই সফলকাম হবে, যে নিজেকে পবিত্র করিবে। সেই ব্যর্থ হবে, যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করিবে।’ (সূরা আশ-শাম্্স : ৯-১০)। ইসলাম ধর্ম এক আল্লাহতে বিশ্বাস ও ন্যায়, শান্তি, সাম্য, মৈত্রী স্থাপনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। বিদ্বেষ আর অনৈক্য ঈমানের পরিপন্থী। আমাদের ধর্মের প্রতিটি ইবাদতই মানুষকে মন্দ ব্যবহার, মন্দ কাজ, মন্দ কথা, অশিক্ষা, লজ্জাহীনতা, রুচিহীনতা পরিহার করে সর্বতোভাবে মার্জিত সুশীল হতে প্রাণিত করে। ধার্মিক মানুষের সকল আচরণ হতে হবে মুগ্ধতাপূর্ণ অনুসরণযোগ্য আদর্শ। আল্লাহ তায়ালা শিষ্টাচারের মাধ্যমে মানুষকে ধর্মের পথে আহ্বানের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা)-কে নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ছিলেন সর্বাপেক্ষা উত্তম, শিষ্টাচারী, শালীন ও নম্র ব্যবহারকারী। আল্লাহ কুরআনুল করীমে বলেন :
১. ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলে, যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং কাজেকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর, অতঃপর তুমি কোন সঙ্কল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে, যারা নির্ভর করে আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।’
(সূরা আলে ইমরান : ১৫৯)
২. ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা কর সদ্ভাবে। তোমার প্রতিপালক, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কে সৎপথে আছে তাও তিনি সবিশেষ অবহিত।’
(সূরা নাহ্ল : ১২৫)
৩. ‘আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বল। শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উসকানি দেয়, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’
(সূরা বনি ইসরাইল : ৫৩)
পবিত্র কুরআনুল করীমে তো বটেই হাদিস শরীফেও শিষ্টাচার, শালীনতা ও নম্র ব্যবহার সম্পর্কে অজস্র সতর্ক বাণী রয়েছে।
হাদিসসমূহ
১. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) ইরশাদ করেন : ঈমানের শাখা রয়েছে ষাটের কিছু বেশি। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।
(বুখারী শরীফ, প্রথম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৮, ইফাবা)
২. আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন: প্রকৃত মুসলিম সেই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে এবং প্রকৃত মুহাজির সেই, যে আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে।
(বুখারী শরীফ, প্রথম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৯, ইফাবা)
৩. আবু মুসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইসলামে কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন : যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে।
(বুখারী শরীফ, প্রথম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ১০, ইফাবা)
৪. আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেন : চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে সে হবে প্রকৃত মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায় : আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে, কথা বললে মিথ্যা বলে, চুক্তি করলে ভঙ্গ করে, বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়।
(বুখারী শরীফ, প্রথম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৩৩, ইফাবা)
৫. জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যে ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় এবং পাওনা তাগাদায় নম্র ব্যবহার করে, আল্লাহ তা’আলা তার ওপর রহম করেন।
(বুখারী শরীফ, প্রথম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-১৯৪৬, ইফাবা)
৬. আবদুল আযিয ইব্ন আবদুল্লাহ (র) নবী করীম (সা)-এর সহধর্মিণী হযরত উম্মু সালামা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একদিন তিনি (রাসূলুল্লাহ সা) তাঁর ঘরের দরজার নিকটে ঝগড়ার শব্দ শুনতে পেয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে এলেন। তাঁর কাছে বিচার চাওয়া হলে তিনি বললেন : আমি তো একজন মানুষ, আমার কাছে কোন কোন সময় ঝগড়াকারীরা আসে। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যের চেয়ে অধিক বাকপটু। তখন আমি মনে করি যে, সে সত্য বলছে। তাই আমি তার পক্ষে রায় দিই। বিচারে যদি আমি ভুলবশত অন্য কোন মুসলমানের হক তাকে দিয়ে থাকি তবে তা দোজখের টুকরা। এখন সে তা গ্রহণ করুক বা ত্যাগ করুক।
(বুখারী শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা ২২৯৬, ইফাবা)
৭. আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সা)কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? তিনি বললেন : সময়মত সালাত আদায় করা। আবদুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন : তারপর কোনটি? তিনি বললেন : পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। আবদুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন : তারপর কোনটি? তিনি বললেন : আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। আবদুল্লাহ বললেন, নবী (সা) এগুলো সম্পর্কে আমাকে বলেছেন। আমি যদি তাঁকে আরো বেশি প্রশ্ন করতাম তিনি আমাকে অধিক জানাতেন।
(বুখারী শরীফ, নবম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৫৫৪৫, ইফাবা)
৮. জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট এমন কোন জিনিসই চাওয়া হয়নি যার উত্তরে তিনি ‘না’ বলেছেন।
(বুখারী শরীফ, নবম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৫৬০৮, ইফাবা)
৯. আবু মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন : আগেকার নবীদের বক্তব্য থেকে মানুষ যা বর্জন করেছে তার একটি হলো, যদি তুমি লজ্জাই ছেড়ে দাও, তবে তুমি যা চাও তা করতে পারবে।
(বুখারী শরীফ, নবম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৫৬৯০, ইফাবা)
১০. আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। একবার নবী করীম (সা) বললেন : তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকো। তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমাদের রাস্তায় বসা ছাড়া গত্যন্তর নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। তখন তিনি বললেন : যদি তোমাদের রাস্তায় মজলিস করা ছাড়া উপায় না থাকে তবে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, ইয়া রাসূলল্লাহ! রাস্তার দাবি কী? তিনি বললেন : তা হলো চোখ অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয়া এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেয়া আর অসৎ কাজে নিষেধ করা।
(বুখারী শরীফ, নবম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৫৭৯৬, ইফাবা)
১১. আনাস ইব্ন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : তোমরা নম্র ব্যবহার করো এবং কঠোর ব্যবহার করো না, আর মানুষকে শান্তি দাও এবং মানুষের মনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না।
(বুখারী শরীফ, নবম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৫৬৯৪, ইফাবা)
১২. ইব্ন উমর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেছেন : কোন ব্যক্তি অপর কাউকে তার বসার জায়গা থেকে তুলে দিয়ে সে সেখানে বসবে না।
(বুখারী শরীফ, নবম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৫৮৩৫, ইফাবা)
১৩. জারির (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেছেন : যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।
(মুসলিম শরীফ, সপ্তম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৬৩৬২, ইফাবা)
১৪. হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেছেন : নম্রতা যে কোন বিষয়কে সৌন্দর্যমন্ডিত করে। আর যে কোন বিষয় থেকে নম্রতা বিদূরিত হলে তাকে কলুষিত করে।
(মুসলিম শরীফ, সপ্তম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৬৩৬৬, ইফাবা)
১৫. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি মুশরিকদের বদ্ধ দো’আ করুন। তিনি বললেন : আমি তো লা’নতকারী রূপে প্রেরিত হইনি বরং প্রেরিত হয়েছি রহমতস্বরূপ।
(মুসলিম শরীফ, সপ্তম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৬৩৭৬, ইফাবা)
১৬. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : হে আল্লাহ! মুহাম্মদ তো একজন মানুষ। তিনি রাগান্বিত হন যেভাবে একজন মানুষ রাগান্বিত হয়। আর আমি আপনার কাছ থেকে যে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছি আপনি কখনো তার খেলাফ করবেন না। সুতরাং কোন মু’মিনকে আমি কষ্ট দিলে কিংবা তাকে কটু কথা বললে অথবা তাকে কোড়া লাগালে তা আপনি তার কাফফারা ও নৈকট্য লাভের অসিলা বানিয়ে দিন, যার দ্বারা কিয়ামত দিবসে সে আপনার নৈকট্য লাভ করতে পারে।
(মুসলিম শরীফ, সপ্তম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৬৩৮৫, ইফাবা)
১৭. আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) আমাকে বলেছেন : কোন কিছু দান করাকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না, এমনকি অপারগতায় তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাকেও।
(মুসলিম শরীফ, সপ্তম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৬৪৫১, ইফাবা)
১৮. আবু যার গিফারি (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আরজ করা হলো, সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কী অভিমত, যে নেক আমল করে এবং লোকেরা তার প্রশংসা করে? তিনি বললেন, এতো মু’মিন ব্যক্তির জন্য তাৎক্ষণিক সুসংবাদ।
(মুসলিম শরীফ, সপ্তম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৬৪৮০, ইফাবা)
১৯. জারির ইব্ন সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : সন্তানকে আদব শিক্ষা দেয়া এক সা পরিমাণ বস্তু সাদাকা করা অপেক্ষা ভালো।
(তিরমিযি শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা-১৯৫৭, ইফাবা)
২০. আইয়ুব ইব্ন মুসা তার পিতা তার পিতামহ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : পিতা তার সন্তানকে ভালো আদব শিক্ষা দেয়া অপেক্ষা মর্যাদাবান আর কোন জিনিস দান করতে পারে না।
(তিরমিযি শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা-১৯৫৮, ইফাবা)
২১. আবু র্য্ া(রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : তোমার ভাইয়ের সামনে তোমার হাসি তোমার জন্য সাদাকাস্বরূপ। সৎ কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজের নিষেধ করাও সাদাকা। পথ হারানো ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেয়াও সাদাকা। দৃষ্টিহীনকে পথ দেখানো সাদাকা। রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা, হাড্ডি বিদূরিত করাও তোমার জন্য সাদাকা। তোমার বালতি থেকে তোমার দ্বীনি ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেয়া তোমার জন্য সাদাকাস্বরূপ।
(তিরমিযি শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা ১৯৬২, ইফাবা)
২২. আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বলেছেন : যেখানেই থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে, মন্দ কাজের অনুবর্তীতে কোন নেক কাজ করে ফেলবে তাতে মন্দ অপসৃত হয়ে যাবে, মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করবে।
(তিরমিযি শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা-১৯৯৩, ইফাবা)
২৩. আবদুল্লাহ ইব্ন মুবারক (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) সদাচারিতার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন : তা হলো হাস্য বিকশিত চেহারা, উত্তম জিনিস দান এবং ক্লেশ প্রদানে বিরত থাকা।
(তিরমিযী শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা-২০১১, ইফাবা)
৪. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, ঈমানের স্থান হলো জান্নাতে, অশ্লীলতা হলো অবাধ্যতা ও অন্যায় আচরণের অঙ্গ, অন্যায় আচরণের স্থান হলো জাহান্নামে।
(তিরমিযী শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা ২০১৫, ইফাবা)
২৫. আবদুল্লাহ ইব্ন সারজিস মুযানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : সুন্দর আচরণ, ধৈর্য এবং মধ্যপন্থা হলো নবুওয়াতের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
(তিরমিযি শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা ২০১৬, ইফাবা)
২৬. সাহল ইব্ন সাদ সাঈদী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ধৈর্য আল্লাহ থেকে এবং তাড়াহুড়া শয়তান থেকে।
(তিরমিযী শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা-২০১৮, ইফাবা)
২৭. আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যাকে নম্রতার হিস্যা দেয়া হয়েছে তাকে কল্যাণের হিস্যা প্রদান করা হয়েছে, আর যে ব্যক্তি নম্রতার হিস্যা থেকে বঞ্চিত সে কল্যাণের হিস্যা থেকেও বঞ্চিত।
(তিরমিযি শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা-২০১৯, ইফাবা)
২৮. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দশ বছর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খিদমত করেছি, তিনি কখনও আমাকে ‘উফ’ শব্দ পর্যন্ত বলেননি। কোন কিছু করে ফেললে সে সম্পর্কে কখনও বলেননি কেন তুমি তা করলে? কোন কাজ না করলেও কখনো বলেননি, কেন তা করলে না? রাসূলুল্লাহ (সা) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের মানুষ। রেশম বা খাজ (রেশম মিশ্রিত কাপড়) বা অন্য যাই হোক রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাতের তালু অপেক্ষা কোমল কিছু আমি কখনো স্পর্শ করিনি। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ঘাম অপেক্ষা সুঘ্রাণযুক্ত কোন মিশ্্ক আম্বর বা আতরের গন্ধ কখনো নেইনি আমি।
(তিরমিযি শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা ২০২১, ইফাবা)
২৯. জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র ও ব্যবহার ভালো সে ব্যক্তি আমার নিকট তোমাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে প্রিয় এবং কিয়ামত দিবসে সে আমার সবচেয়ে নিকটে অবস্থান করবে। আর আমার নিকট তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে যারা আমার থেকে দূরে থাকবে সেই ব্যক্তিরা হলো : ‘সারসারুন’ যারা অনর্থক বকবক করে এবং ‘মুতাশাদ্দিকুন’ যারা উপহাস করে এবং ‘মুতাফায়হিকুন’ যারা অহঙ্কার প্রদর্শন করে।
(তিরমিযি শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা-২০২৪, ইফাবা)
৩০. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে এসে বলল, আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন, আমার জন্য যেন তা বেশি না হয়ে যায়, আমি যেন তা আত্মস্থ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : রাগ করবে না। লোকটি তার প্রশ্নের কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করল। প্রতিবারই রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : রাগ করবে না।
(তিরমিযি শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা-২০২৬, ইফাবা)
৩১. আনাস ইব্ন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : কোন যুবক যদি বয়সের কারণে কোন বয়স্ক ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করে তবে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তার বৃদ্ধবয়সে তার জন্য এমন লোক নিয়োগ করে দেবেন যারা তাকে সম্মান প্রদর্শন করবে।
(তিরমিযি শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা ২০২৮, ইফাবা)
৩২. হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা) কখনো ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় কোন প্রকার অশোভন কথা বলতেন না। বাজারে গিয়েও তিনি উচ্চস্বরে কথা বলতেন না। মন্দের প্রতিকার মন্দ দ্বারা করতেন না, বরং মাফ করে দিতেন। কখনো তা আলোচনাও করতেন না।
(তিরমিযি শরীফ, ষষ্ঠ খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৪২৮৮, ইফাবা)
৩৩. হযরত মুয়াবিয়া (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা) কাউকে ধোঁকায় ফেলতে নিষেধ করেছেন।
(আবু দাউদ শরীফ, চতুর্থ খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৩৬১৪, ইফাবা)
৩৪. আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের বললেন : যদি তোমাদের কেউ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাগান্বিত হয় তবে সে যেন বসে পড়ে, যদি এতে রাগ চলে যায় তবে ভালো, নয়তো সে শুয়ে পড়বে।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৪৭০৭, ইফাবা)
৩৫. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : মুমিন ব্যক্তি ভদ্র ও মনভোলা হয় এবং পাপী ব্যক্তি ধোঁকাবাজ ও হীন প্রকৃতির হয়।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৪৭১৫, ইফাবা)
৩৬. হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এরূপ বলতে শুনেছি : মু’মিন ব্যক্তি তার সদাচারের জন্য রোজাদার ও সালাত আদায়কারী ব্যক্তির সমান মর্যাদা লাভ করে থাকে।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৪৭২৩, ইফাবা)
৩৭. আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন : মিযানে (পাল্লায়) ওজনের সময় সদাচারের চেয়ে অধিক ওজন বিশিষ্ট আর কিছু হবে না।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৪৭২৪, ইফাবা)
৩৮. আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আমি সে ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী ঘরের জিম্মাদার, যে হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করে। আর যে ব্যক্তি হাসি তামাশার মধ্যেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের উঁচুস্থানে একটি জিম্মাদার হবো। আর যে ব্যক্তি সদ্ব্যবহার করে তার জন্য আমি জান্নাতের উচ্চতম স্থানে একটি ঘরের জিম্মাদার।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৪৭২৫, ইফাবা)
৩৯. হারিস ইব্ন ওয়াহাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ধোঁকাবাজ, কৃপণ, অনর্থক বাক্যালাপকারী, বিদ্রোহী, অহঙ্কারী এবং অসৎ চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৪৭২৬, ইফাবা)
৪০. আবু বকর ইব্ন আবু শায়বা (র.) … … হাম্মাম (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : একদা এক ব্যক্তি এসে হযরত উসমান (রা)-এর সামনে তার প্রশংসা করতে থাকেন। তখন মিকদাদ ইব্ন আসওয়াদ (রা) এক মুঠো মাটি নিয়ে তার মুখে নিক্ষেপ করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যখন তুমি প্রশংসাকারীর সাথে মিলিত হবে (অর্থাৎ কেউ যখন তোমার প্রশংসা করবে) তখন তুমি তার মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৪৭২৯, ইফাবা)
৪১. মুসআব ইব্ন সা’দ (র) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আখিরাতের কাজ ব্যতীত অন্যান্য কাজের জন্য তাড়াহুড়া না করাই উত্তম।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৪৭৩৫, ইফাবা)
৪২. আবু মুসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : যখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবাদের কাউকে কোথাও কোন কাজের জন্য পাঠাতেন, তখন তিনি বলতেন, তোমরা সুসংবাদ দেবে এবং তাদের মাঝে ঘৃণার সঞ্চার করবে না, আর লোকদের সাথে নরম ব্যবহার করবে, কঠোর হবে না।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৪৭৬০, ইফাবা)
৪৩. ইয়ায ইব্ন হিমার (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর ওহি নাজিল করেছেন যে, তোমরা পরস্পর বিনয় প্রদর্শন করবে, যাতে কেউ কারো ওপর বাড়াবাড়ি ও গৌরব প্রকাশ না করে।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৪৮১৫, ইফাবা)
৪৪. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : তোমরা হিংসা পরিহার কর, কেননা হিংসা ভালো কাজকে সেরূপ গ্রাস করে যেরূপ আগুন কাঠকে গ্রাস করে।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৪৮২৩, ইফাবা)
৪৫. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ভালো ধারণা পোষণ করা হলো উত্তম ইবাদাত।
(আবু দাউদ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৪৯০৯, ইফাবা)
৪৬. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ঈমানের শাখা সত্তরটিরও অধিক, লজ্জা-শরমও ঈমানের একটি অংশ।
(সুনানু নাসাঈ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৫০০৪, ইফাবা)
৪৭. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : সত্তরটির ওপরে ঈমানের শাখা রয়েছে। এর সর্বোত্তমটি হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, বলা আর এর সর্বনি¤œটি হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা, আর লজ্জাও ঈমানের অংশ।
(সুনানু নাসাঈ শরীফ, পঞ্চম খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৫০০৫, ইফাবা)
৪৮. মুয়াবিয়া ইব্ন আবু সুফয়ান (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : কল্যাণ একটি সুঅভ্যাস, পক্ষান্তরে মন্দ ও অকল্যাণ প্রবৃত্তির তাড়না থেকে উদ্ভূত, আর আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।
(সুনানু ইবনে মাজাহ্্, প্রথম খন্ড, হাদিস সংখ্যা-২২১, ইফাবা)
৪৯. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আল্লাহ কোমল তাই তিনি কোমলতা পছন্দ করেন এবং কোমল আচরণের ওপর এত বিনিময় দান করেন যা কঠোর আচরণের ওপর দান করেন না।
(সুনানু ইবনে মাজাহ্্, তৃতীয় খন্ড, হাদিস সংখ্যা ৩৬৮৮, ইফাবা)
৫০. হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : মানুষের নামে অপবাদ রটানোর দিক থেকে সবচেয়ে ঘৃণ্য হলো সেই ব্যক্তি, যে কোন লোকের বিরুদ্ধে নিন্দা কবিতা বলতে গিয়ে গোটা গোত্রের নিন্দা শুরু করে। আর সেই লোক, যে নিজের বাবাকে অস্বীকার করে অন্যকে বাবা বলে, নিজের মাকে ব্যভিচারিণী সাব্যস্ত করে।
(সুনানু ইবনে মাজাহ্্, তৃতীয় খন্ড, হাদিস সংখ্যা-৩৭৬১, ইফাবা)
(শিষ্টাচার, শালীনতা, নম্র ব্যবহার বিষয়ে হাদিসের মূলতত্ত্ব : শিষ্টাচার, শালীনতা ও নম্র ব্যবহার সম্পর্কিত হাদিসগুলো থেকে আমরা যে মূল শিক্ষা পাই তা হলো:
১. ঈমানের শাখা রয়েছে ষাটের কিছু বেশি, আর লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। ঈমানের স্থান জান্নাতে। অশ্লীলতা হলো অবাধ্যতা ও অন্যায় আচরণের অঙ্গ। অন্যায় আচরণ ও অশ্লীলতার স্থান জাহান্নামে।
২. যার জিহ্বা ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে সে প্রকৃত মুসলিম। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে সে প্রকৃত মুজাহিদ।
৩. মিথ্যা বলা, বিবাদে লিপ্ত হয়ে অশ্লীল গালি দেয়া, আমানত খেয়ানত করা ও চুক্তি ভঙ্গ করা মুনাফিকি আচরণ।
৪. নম্র ব্যবহারকারীর ওপর আল্লাহ রহমত দান করেন।
৫. অন্যায়কারীরা ঝগড়া ও বাকপটুতার আশ্রয় নিয়ে অনেক সময় বিচারের রায় তাদের পক্ষে নিয়ে নেয় এর পরিণাম দোজখ।
৬. সময়মত সালাত আদায় করা, পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দের আমল।
৭. কোন জিনিস চাওয়া হলে তার উত্তরে সরাসরি না বলা অশোভন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে কিছু চাওয়া হলে তিনি না বলতেন না।
৮. লজ্জাহীন ব্যক্তির পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব।
৯. রাস্তায় না বসা উত্তম। বাধ্য হয়ে বসতে হলে চোখ নিচু রাখতে হবে, কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না, সালামের জবাব দিতে হবে, সৎ কাজের নির্দেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে হবে।
১০. নম্র ব্যবহার করতে হবে, কঠোর ব্যবহার নিষেধ। মানুষের মনে বিদ্বেষ তৈরি করা যাবে না, মানুষকে শান্তি দিতে হবে।
১১. কাউকে বসার স্থান থেকে তুলে দিয়ে সেখানে বসা যাবে না।
১২. নম্রতার মাঝে কল্যাণ আছে। নম্রতা সকল বিষয়কে সৌন্দর্যমন্ডিত করে, নম্রতা না থাকলে তা কলুষিত হয়ে পড়ে।
১৩. বদদোয়া বা অভিশাপ দেয়া থেকে দূরে থাকা উত্তম। রাসূল (সা) কাউকে বদদোয়া দিতেন না, তিনি রহমতরূপে প্রেরিত হয়েছিলেন।
১৪. কোন দানকে তুচ্ছ ভাবা উচিত নয়। অপারগতায় কারো সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও এক রকমের সাদাকা বা দান।
১৫. নেক আমল করার কারণে মানুষের প্রশংসা পাওয়া মুমিন ব্যক্তির জন্য তাৎক্ষণিক সুসংবাদ।
১৬. সন্তানকে আদব কায়দা শিক্ষা দেয়া দান সমতুল্য। পিতা মর্যাদাবান যে জিনিস সন্তানকে দান করেন তা হলো ভালো আদব কায়দা শিক্ষা দেয়া।
১৭. ভাইয়ের প্রতি হাসি দেয়া, সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ করা, পথিককে পথ দেখানো, দৃষ্টিহীনকে পথ বলে দেয়া, রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা সরিয়ে ফেলা, অপরের বালতিতে পানি ভরে দেয়া সাদাকা সমতুল্য।
১৮. আল্লাহকে ভয় করতে হবে। ভুলবশত কোন মন্দ কাজ করে ফেললে যত দ্রুত সম্ভব নেক কাজ করতে হবে এবং মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতে হবে।
১৯. সদাচার হলো : হাস্য বিকশিত চেহারা, উত্তম জিনিস দান এবং কাউকে কষ্ট না দেয়া।
২০. সুন্দর আচরণ, ধৈর্য এবং মধ্যপন্থা হলো নবুওয়তের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
২১. ধৈর্য আল্লাহর কাছ থেকে আসে এবং তাড়াহুড়া শয়তানের কাছ থেকে আসে।
২২. নম্র স্বভাবের ব্যক্তি কল্যাণ লাভ করে। কঠোর স্বভাবের ব্যক্তি কল্যাণ বঞ্চিত হয়।
২৩. যার চরিত্র ও ব্যবহার ভালো তিনি রাসূল (সা)-এর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, আর যে ব্যক্তি অনর্থক বকবক করে, উপহাস করে ও অহঙ্কার করে সে ঘৃণ্য ব্যক্তি।
২৪. রাসূল (সা)-এর স্বভাব ছিল নম্র। তিনি ব্যবহার, চরিত্র ও সহ্যের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম আদর্শের ছিলেন।
২৫. রাগ করা যাবে না। রাগ সকল বিবেচনায় ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। রাগ অবশ্যই দমন করতে হবে।
২৬. নিজের চেয়ে বয়স্ক লোকদের সম্মান করলে বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহ তার সম্মানের জন্য লোক নিয়োগ করে দেবেন।
২৭. অশোভন আচরণ করা যাবে না, উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না, মন্দের প্রতিকার মন্দ দিয়ে করা যাবে না, মাফ করে দিতে হবে।
২৮. মানুষকে ধোঁকা দেয়া যাবে না। কাউকে ধোঁকায় ফেলা নিষেধ।
২৯. মুমিন ব্যক্তিরা ভদ্র ও উত্তম স্বভাবের হয়, পাপী ব্যক্তি ধোঁকাবাজ ও নিচু স্বভাবের হয়।
৩০. মুমিন ব্যক্তি তার শিষ্টাচারের কারণে নামাজ-রোজাদারের সমান মর্যাদা লাভ করবে। আল্লাহর মিজানে বান্দার সদাচার সবচেয়ে ভারী বস্তু।
৩১. ন্যায়ের পথে থাকার পরও যে ঝগড়া পরিহার করে আর যে হাসি তামাশার মধ্যেও মিথ্যা না বলে সে জান্নাতের উঁচুস্থানে বাস করবে, আর যে সদ্ব্যবহার করে সে জান্নাতের উচ্চতম স্থানে থাকবে।
৩২. ধোঁকাবাজ, কৃপণ, অর্থহীন বাক্যালাপকারী, বিদ্রোহী, অহঙ্কারী ও অসৎ চরিত্রের লোক জান্নাতে যাবে না।
৩৩. কারো তোষামোদ ও অতি প্রশংসা করা যাবে না। কারো প্রতি অন্ধপ্রেম ও অন্ধবিদ্বেষ পোষণ করা ক্ষতিকর।
৩৪. আখিরাতের কাজ ছাড়া কোন কাজে তাড়াহুড়া না করা উত্তম।
৩৫. মানুষকে সুসংবাদ দিতে হবে, নরম ব্যবহার করতে হবে ও ঘৃণার সঞ্চার করা যাবে না।
৩৬. পরস্পর বিনয় প্রদর্শন করতে হবে, কারো ওপর বাড়াবাড়ি ও গৌরব করা যাবে না।
৩৭. হিংসা ভালো কাজকে জ¦ালিয়ে ছাই করে দেয়।
৩৮. ভালো ধারণা পোষণ করা উত্তম ইবাদত।
৩৯. ঈমানের শাখা সত্তরটির বেশি। লজ্জা-শরমও ঈমানের একটি অংশ। সর্বোত্তম ঈমান হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। সর্বনিম্নটি হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূরে ফেলে দেয়া।
৪০. কল্যাণ চিন্তা করা একটি সু-অভ্যাস। মন্দ ও অকল্যাণ চিন্তা প্রবৃত্তির তাড়না থেকে উদ্ভূত। আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি ধর্মীয় জ্ঞান দান করেন।
৪১. আল্লাহ কোমল তাই তিনি বান্দার কোমলতা পছন্দ করেন। বান্দার কোমল আচরণের ওপর তিনি উত্তম সাওয়াব দান করেন।
৪২. মানুষের বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো এবং পিতাকে অস্বীকার করে অন্যকে পিতা বলা, মাতাকে ব্যভিচারিণী বলা ঘৃণ্য ব্যক্তির কাজ।
৪৩. রাসূল (সা) আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন, একজন মানুষ হিসেবে রাসূল (সা) যদি অন্য কোন মানুষকে কষ্ট দিয়ে থাকেন তা যেন ঐ ব্যক্তির আল্লাহর নৈকট্য লাভের অসিলা হিসেবে কবুল করা হয়।