আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আগামী দিনের এক নতুন পৃথিবীর কারিগর আজকের শিশু-কিশোররা। এক নির্মল, সুন্দর, সুশৃঙ্খল, ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবী গড়তে প্রয়োজন সুন্দর মনের একদল মানুষ। ঠিক যেমনি সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে একদল মানুষ এক চমৎকার পৃথিবী উপহার দিয়েছিলেন। বর্র্তমান পৃথিবীর সকল দুঃখ কষ্টের তিমির রাত কাটিয়ে একটি আলোকিত ভোর আনতে তোমাকেও হতে হবে তেমনই একজন মানুষ। প্রথমে তোমাকে জেনে নিতে হবে কী তোমার পরিচয়? এই পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে পাঠানোর উদ্দেশ্য কী? কে তোমাকে পাঠালেন আর তার সাথে তোমার সম্পর্ক-ই বা কী? এ প্রশ্নের জবাবে পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, আমরা অর্থাৎ সকল মানুষ তার পক্ষ থেকে প্রেরিত খলিফা বা প্রতিনিধি। দুনিয়ার সকল অন্যায়-জুলুমকে দূরীভূত করে দ্বীন ইসলামকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠা করে একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলাই আমাদের দায়িত্ব। মহান রাব্বুল আলামিনের ইবাদতের উদ্দেশ্যেই আমাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ আমরা প্রত্যেকটি মানুষ একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার মহৎ উদ্দেশ্যে প্রেরিত। সেই রাব্বুল আলামিন আমাদের সকল কিছুরই মালিক যিনি গোটা বিশ্বজাহানকে সৃষ্টি করেছেন এবং দেখাশোনা করছেন। একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের একমাত্র কাজ হলো তার মালিকের প্রতিনিধিত্ব করা। যখন সেই কাজ না করে সে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করে তখন তার সেই প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা অর্পিত দায়িত্ব আর থাকে না। এবার জেনে নাও তোমার প্রভু কেমন প্রতিনিধি বান্দাকে ভালোবাসেন। আমাদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা তার পবিত্র গ্রন্থে সব পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছেন। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন কেমন চরিত্রের মানুষ তিনি ভালোবাসেন, কাদেরকে অপছন্দ করেন। তিনি সন্তুষ্ট হলে কেমন পুরস্কার দেবেন আর অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞদের তিনি কেমন শাস্তি দেবেন। তাই তোমার জীবনের পরিকল্পনা সাজাতে হবে তেমনি করে। আল্লাহ যেমন ব্যক্তিকে ভালোবাসেন তোমার জীবনকে এখন থেকেই তেমন করে সাজানোর পরিকল্পনা নিতে হবে। তোমার জীবনের আদর্শ তোমার সামনে রাখতে হবে। সেই আলোকে জীবনকে সাজাতে হবে। আমাদের জীবনাদর্শ আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সা)। তাকে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন আমাদের জীবনের সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি উম্মতের জন্য রাহমাতুল্লিল আলামিন। উসওয়াতুন হাসানা। তাই তিনি যেমন করে কুরআনকে বাস্তবায়ন করেছেন তারই পথ ধরে আমরা চলতে থাকবো সেই সাথে তার সঙ্গী-সাথীরা যেভাবে তাকে অনুসরণ করেছেন আমরাও তেমনি করে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো। তোমার প্রতিটি সময় এখন অনেক মূল্যবান। এই সময়কে সুন্দরভাবে ও যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। জ্ঞানের সমুদ্রে সাঁতারে সাঁতারে মণি, মুক্তা, প্রবালের মতোই মূল্যবান সবকিছু সংগ্রহ করতে হবে। দ্বীনের যথাযথ জ্ঞান, সমসাময়িক জ্ঞান, কর্মমুখী জ্ঞান, সেই সাথে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনায় সর্বোচ্চ অবস্থানে যাওয়ার জন্য তোমার সময়গুুলোকে ব্যস্ত রাখতে হবে। তোমার প্রতিটি সময় এর সদ্ব্যবহার করতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী সময় বেহুদা নষ্ট করাকে একদম পছন্দ করতেন না। তাই প্রতিটি সময়কে সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে হবে, তোমাদের বন্ধুদেরকেও তেমনি করে ভালো কাজে ব্যস্ত থাকার আহবান জানাতে হবে। তোমার চরিত্রকে গড়ে তুলতে হবে সুবাসিত ফুলের মতো, যা সবাইকে তোমার জীবনাদর্শের দিকে আকৃষ্ট করবে। তোমার মতোই জীবনগঠনে সবাইকে উৎসাহিত করবে। যে আচরণগুলো খারাপ সেগুলো চরিত্র থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। আল্লাহ্র রাসূল (সা)-এর যে আচরণগুলো সবাইকে- মুশরিকদেরকেও মুগ্ধ করতো সেগুলো ছিল সত্যবাদিতা, সততা, আমানতদারিতা, ওয়াদা রক্ষা করা, অন্যের বিপদে সহযোগিতা। এ কারণে তাকে জাদুকর, গণক, কবি বলা সত্ত্বেও মানুষ দলে দলে তার দিকে মুগ্ধ হয়ে ছুটে আসতো। তেমনি গুণাবলিগুলোকে নিজের চরিত্রে বিকশিত করে ফুলের মতো সুবাসিত হয়ে উঠতে হবে। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা)-এর দাওয়াত দানের শুরুতে যে চারজন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মাত্র ১০ বছর বয়সের একটি কিশোর। খোঁড়া পা নিয়ে যখন তিনি কুরাইশদের আসর সভায় আল্লাহর কথা, রাসূলের কথা বলতে শুরু করলেন তখন সবাই রীতিমতো অবাক হয়ে গেল । কিন্তু দেখো এমন সাহসিকতার কারণেই এই চারজনের পর দীনের পথ হাজার হাজার মানুষ কবুল করে নিলো। জাহেলি সঙ্ঘাতপূর্ণ একটা সমাজ এমন একটা সুসভ্য সমাজে পরিণত হলো যেখানে একাকী একজন নারী নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতেন, যেখানে জাকাত দেয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যেতো না। যেখানে মদ্যপান, অশ্লীলতার পরিবর্তে নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, পারস্পরিক সুসম্পর্কগুলো সার্থক রূপ পেয়েছিল। বর্র্তমান এই ঘুণে ধরা সমাজকে পরিবর্তন করতে তাই তোমাকেও তোমার বন্ধু ও আশপাশ সবাইকে ভালো কাজের দিকে আহবান করতে হবে। এবং মন্দ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। সত্য ও ন্যায়ের পথে আমাদের এই একসাথে চলাফেরা করতে করতেই একটা সময় আমাদের হাত ধরে আমাদের অন্য বন্ধুরাও হাঁটতে শুরু করবে। আমাদের প্রতিযোগিতা হবে ভালো কাজের। ভালো কাজের সফলতা অর্জনের, ঠিক যেমনি করে সাহাবীরা সর্বদা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকতেন। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে এমন কাজের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন আর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তেন। একবার হযরত উমর (রা) এক বৃদ্ধা মহিলার অসহায়ত্ব দেখে ভাবলেন তিনি প্রতিদিন তার কাজ করে দিয়ে যাবেন। কিন্তু যত সকালেই আসেন দেখেন কে যেন তার কাজ করে দিয়ে যায়। একদিন খুব ভোরে এসে দেখলেন হযরত আবু বকর (রা:) একেবারে নিভৃতে সেই মহিলার কাজ করে দিয়ে যান যেন কেউ জানতে না পারে। এমনি করে দানের ক্ষেত্রেও উমর (রা) যতই দান করতেন, দেখতেন আবু বকর (রা) তার চেয়ে এগিয়ে আছেন। এভাবে সুন্দর প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতেন দু’জন। আজ থেকে তোমারও প্রতিযোগিতাগুলো হোক সওয়াব অর্জনের নেক কাজে পুণ্য হাসিলের। সেই সাথ তোমার স্বপ্নকে সাজাতে হবে সম্ভাবনাময়ী এই দেশের ভবিষ্যৎকে ঘিরে। এই দেশের এত সম্পদ, তেল, গ্যাস, দক্ষ জনশক্তি, কয়লা আরও জানা-অজানা প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। কিন্তু সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী, গবেষক, কিংবা ইঞ্জিনিয়ারদের অভাবে এ সকল সম্পদ দেশের মানুষের কোন কল্যাণে আসছে না। যার কারণে এখনো বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির তীব্র সঙ্কট সারাদেশে। মেধাবী ছাত্রদের বিদেশে পাড়ি জমানোতে মেধাশূন্যতায় পড়ছে দেশ। কিন্তু আমাদেরকে দেশের কল্যাণে হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলতে হবে। নিজের মেধার উৎকর্ষ সাধন করে স্রোষ্টাপ্রদত্ত এসকল সম্পদকে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানোর উপায় আমাদেরকেই বের করতে হবে। তোমাকে মনে রাখতে হবে তোমার এই কচি কাদার মতো নরম হৃদয়ে তুমি যেমন আদর্শের ছাপ ফেলবে সেই ছাপ-ই তোমার সারা জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তোমার হৃদয়ে যেমন বীজ তুমি বপন করবে তেমনি ফসলেই সুশোভিত হবে তোমার জীবন। তাই, আত্মপ্রত্যয়, দৃঢ়চিত্ত, আর প্রভুর রহমতে সিক্ত এক অধ্যবসায়ী, সময়নিষ্ঠ পথচলা দিয়ে সাফল্যমন্ডিত হোক তোমার জীবন। তোমার হাত ধরে এক নতুন আগামীর স্বপ্ন সত্যি হোক তেমনটাই প্রত্যাশা রইল।
[email protected]m
pura kishorkantha nai keno