মিঠুন সাহেবের এখন অখন্ড অবসর। চিত্রপরিচালক ও চিত্রনায়ক হিসেবে অনেক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এসব ছেড়ে নতুন জগতে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন এখন তিনি। সিনেমা-নাটক একটি শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম। এ দিয়ে শুধু অশ্লীলতা, বেহায়াপনাই নয়, নৈতিক মূল্যবোধ, আদর্শও প্রচার করা যায়। বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন মিঠুন সাহেব।
আল্লাহপাক কতকিছুই করতে পারেন। করেছেনও। জমিন উল্টিয়ে দিয়েছেন। মানুষকে বানর বানিয়েছেন। অগ্নিকুন্ডে ফুলবাগান করেছেন। মাছের পেট থেকে মানুষ জীবন্ত বের করেছেন। সাগরের মাঝখানে পানি সরিয়ে ১২ লেনের হাইওয়ে সাজিয়েছেন।
শনিবার মাছ ধরার অপরাধে হযরত দাউদ (আ)-এর জাতিকে এত বড় ক্যাপিট্যাল পানিশমেন্ট হলে আজকের ডিজিটাল যুগে যারা মুক্তিপণের জন্য নিষ্পাপ শিশু খুন করে, মানুষের শরীর গরু-খাসির গোশতের মত পিস পিস করে, তাদের পানিশমেন্ট কী হওয়া উচিত একবার ভেবে দেখা দরকার। বিগত কয়েক হাজার বছরে আল্লাহ কাউকে এমন কোনো শাস্তি দিয়ে থাকলে ইতিহাসে নিশ্চয়ই রেকর্ড থাকত। দুনিয়াতে না ঘটলেও আখিরাতে নিশ্চিত, এমন বিশ্বাস নিয়েই মানুষ নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, পর্দা মেনে চলে, হারাম-হালাল বেছে চলে। অতীতের অবিশ্বাস্য ঘটনাবলির চেয়ে অনেক সাংঘাতিক ঘটনা ঘটবে আখিরাতে।
দুনিয়ায় আগুনের চেয়ে লক্ষ গুণ দাহিকাশক্তিসম্পন্ন কালো আগুনের জাহান্নামে বন্দী থাকবে অপরাধীরা। দুনিয়ার কোনো চোখ যে দৃশ্য দেখেনি, কোনো কান যার বর্ণনা শোনেনি, কোনো অন্তর কখনো যা কল্পনা করেনি এমন সব ঘটনাই ঘটবে তখন। কান শোনেনি, চোখ দেখেনি বলে কি অন্তর দিয়ে চিন্তাও করা যাবে না? চিন্তা করতে তো শক্তি লাগে না, টাকাও লাগে না।
চিন্তার বিষয় ঠিক করে ফেলেন মিঠুন অল্প চিন্তাতেই। ‘সেদিন তোমার মুখ সিলগালা করে দেয়া হবে। হাত, পা, চোখ, কান, চামড়া কথা বলবে। তোমার সকল অপকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ সিনেমার স্ক্রিপ্ট তৈরিতে অভিজ্ঞ মিঠুনের মাথায় ঘুরপাক খায় একটি অন্যরকম নাটক। টিভি চ্যানেলগুলোতে সপ্তাহব্যাপী ঈদ উৎসব বিনোদন অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয় বিচিত্র ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। একটি ব্যতিমধর্মী নাটক হতে পারে এভাবে :
ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে একটা লোক। সাথে কিছু ঈদ উপহার। মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান, ভাইবোনের সাথে ছুটির দিনগুলো কিভাবে কাটাবেন তার রঙিন পরিকল্পনা মনের মাঝে। গ্রামের মেঠোপথে হাঁটছেন লোকটি। সামনে একটি বন। বনের ভেতর আবছা অন্ধকার। একটু সামনে যেতেই ফোঁস করে একটি শব্দ।
– কান তুমি কোথায়?
– এইতো আমি। আপনার মাথার নিচে দু’পাশে।
– কিছু কি শুনতে পাচ্ছ?
– হ্যাঁ, একটা ফোঁস শব্দ শুনতে পেয়েছি। কিন্তু এটা কিসের শব্দ তা আমি জানি না। আমার কাজ শুধু শোনা। আমি আমার নিকটতম প্রতিবেশী চোখকে রিপোর্ট করেছি।
– চোখ, তুমি কোথায়? তুমি কি কিছু দেখছ?
– হ্যাঁ দেখছি। দেখার যোগ্যতা ও দায়িত্ব দিয়েই আমাকে পাঠানো হয়েছে। আমি দেখতে পাচ্ছি, একটি সাপ ফণা তুলে তোমার সামনে দাঁড়ানো।
– আমাকে এখন কী করতে হবে?
– তাতো জানি না। আমি শুধু দেখি। আমার ওপরে আছে মাথা। তার ভেতর বসা ব্রেন। আমি তাকে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।
– ব্রেন, তুমি কি চোখের রিপোর্ট পেয়েছ?
– রিপোর্ট রিসিভ করতে আমার বিলম্ব হয় না। আপনার সামনে ফণা তুলে রয়েছে বিষধর গোখরা সাপ। ত্বরিত অ্যাকশনে না গেলে ভয়ানক দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
– তবে ত্বরিত অ্যাকশনে যাচ্ছ না কেন?
– অ্যাকশনে যাওয়ার কোনো ক্ষমতা আমাকে দেয়া হয়নি। অ্যাকশনের দায়িত্ব হাত ও পায়ের। আমি জরুরি এসএমএস করে দিয়েছি। পা, তুমি ব্যাক গিয়ারে লাফ দাও। কমপক্ষে দুই পা পেছনে। হাত তুমি লাঠি নাও, মাথায় আঘাত কর, হত্যা করো ভয়ঙ্কর ঐ ঘাতককে।
– হাত-পা, তোমরা এখন কোথায়? কী ডিউটি তোমাদের?
– আমরা জরুরি অ্যাকশন প্রোগ্রামে আছি। ডাইরেক্ট অ্যাকশন। গোখরা সাপের মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছি। আপনি আশঙ্কামুক্ত।
এইতো সুন্দর স্ক্রিপ্ট। এতে সময় নেবে কত? সাপ হত্যা কাহিনীর ফাইল যাবে প্রথমে কানের ডেস্কে। সেখান থেকে চোখের টেবিলে। তারপর ব্রেন অধিদফতরে। সেখান থেকে গ্যাজেট নোটিশ যাবে পা ও হাত মন্ত্রণালয়ে। পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা হলে তিন ঘন্টা, স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটক হলে এক ঘন্টা। পঞ্চাশ বছরের কাহিনী অনায়াসে এক-দুই ঘন্টার প্যাকেজে ধারণ করা যায়।
সচেতন মানুষ সাপ দেখার এক সেকেন্ডের মধ্যেই লাফ দেয়। লাঠি দিয়ে আঘাত হানতে লাগে বড়জোর এক মিনিট। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার পরিচালনায় প্রতিনিয়ত সম্প্রচারিত এমন বাস্তব চলচ্চিত্র। মানুষের দায়িত্বে ছেড়ে দিলে চিত্রটি কেমন হবে? তারও একটি স্ক্রিপ্ট জন্ম নেয় মিঠুনের মাথায় :
– কান, তুমি কি কিছু শুনতে পেয়েছ?
– সাউন্ড ক্লিয়ার নয়। বুঝতে পারছি না।
– আবার চেষ্টা কর। কত সময় লাগবে বুঝতে?
– এক সপ্তাহ পর খোঁজ নেবেন?
এক সপ্তাহ পর-
– সাউন্ড কি ক্লিয়ার হয়েছে? শব্দটা কি শনাক্ত করতে পেরেছ?
– হ্যাঁ পেরেছি, শব্দটা ফোঁস। রিপোর্ট রেডি করতে বলেছি পিএসকে। এক মাসের মধ্যে পৌঁছে যাবে তথ্য মন্ত্রণালয়ে।
এক মাস পর-
– চোখ, ফোঁস ফাইলের খবর কী?
– একটি সাপের সন্ধান পাওয়া গেছে। কেস হিস্ট্রি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ শিগগিরই প্রতিবেদন পৌঁছানো যাবে মিনিস্ট্রি অব রিসার্চ অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ে।
– কত সময় লাগতে পারে?
– চিন্তা করবেন না। তিন মাসের মধ্যে ফাইনাল রিপোর্ট পেয়ে যাবেন।
তিন মাস পর-
– হ্যালো মিনিস্ট্রি অব রিসার্চ অ্যান্ড প্ল্যানিং? মন্ত্রী মহোদয় কি আছেন?
– আমি তার পিএস বলছি। কী জানতে চান?
– সর্পাতঙ্ক ফাইলটার অগ্রগতি কতদূর?
– রিপোর্ট ফাইনাল। ছয় মাসের মধ্যেই গ্যাজেট নোটিফিকেশন প্রিন্ট হয়ে যাবে। তারপর সার্কুলার চলে যাবে মিনিস্ট্রি অব ওয়ার্কসে।
– কত সময় লাগতে পারে?
– নয় মাসের মধ্যে অ্যাকশন প্রোগ্রাম শুরু করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত-পা। লাঠি ক্রয়ের জন্য টেন্ডার কল করা হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতা সাপ্লাইয়ার্স কোম্পানিকে লাঠি সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়া হবে। লাঠি পেলেই হাত অ্যাকশনে যাবে।
এক বছর পর-
– মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, দয়া করে অ্যাকশন প্রোগ্রামের আপডেট রিপোর্ট বলুন। হাত-পা বাহিনীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে সাংবাদিক বন্ধুরাও রয়েছেন। শিগগিরই চ্যানেলে লাইভ দেখবেন।
চ্যানেলে লাইভ অনুষ্ঠান-
সম্মানিত দর্শক-শ্রোতা, এটি একটি সর্পদংশনে মৃত ব্যক্তির কবর। এক বছর আগে মারা গেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে কবর থেকে লাশ তুলে মর্গে পাঠানো হবে।
পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পর গঠিত হবে তদন্ত কমিটি। তখন জানা যাবে সব কিছু।