দৃশ্য : ১
(ফুটবল খেলার মাঠ। মাঠের ফসলি জমি। জমির ঠিক মাঝখানটায় একটি কাকতাড়ুয়া। মাঠে একদল কিশোর ফুটবল খেলা নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত।)
রাসেল : আমি ঠিকই বলছি। তুই শফিককে ল্যাং মেরেছিস। ফাউল করেছিস। নতুবা শফিক বল নিয়ে যেভাবে যাচ্ছিলো নিশ্চিত গোল হতো। এখন পেনাল্টি কিক হবে।
মুর্তজা : বললেই হলো পেনাল্টি কিক হবে। আমি ল্যাং মারিনি। ও নিজে নিজে পড়ে গেছে, এখন ভান করছে পেনাল্টি নেয়ার জন্য।
আসাদ : ভানের কিছু নেই। ডি বক্সে ফাউল অইছে, পেনাল্টি শট অইবো। কোনো কথা নাই।
রাইসুল : ঠিক আছে পেনাল্টি শট কর। আমরা উইঠা গেলাম। পেনাল্টি শট কর। খালি মাঠে গোল দে।
আসাদ : ল্যাং মাইরা ফাউল না করলে ভরা মাঠেই গোল দিতাম।
খবিরুল : ঠিক আছে শফিককে জিজ্ঞাসা কর। কসম খেয়ে শফিক বলুক, ওরে ল্যাং মারছে, ল্যাং খাইয়া ও পইড়া গেছে, তাইলে পেনাল্টি দিবো। সমস্যা নাই ১-১ সমতা, কিন্তু শফিককে কসম কইরা বলতে হবে।
রাসেল : এই শফিক সামনে আয়। কসম কর। কসম কইরা বল, মুর্তজা তুরে ল্যাং মারছে।
শফিক : ইয়ে মানে, আমি তো আর নিজে নিজে পইড়া যাইনি। আর ইচ্ছে করে পড়বো কেন। আমি তো বল নিয়া ঢুকেই গিয়েছিলাম। পড়ে না গেলে নিশ্চিত গোল হতো।
মুর্তজা : অতো ধানাই ফানাই না কইরা সোজাসোজি কসম কর। কসম খাইয়া ক।
রাসেল : হ কসম কর। কসম কইরা বল।
শফিক : আল্লাহর কসম। মুর্তজা আমারে ল্যাং মারছে। আ….থাপ্পড় মারলি কেন, এই থাপ্পড় মারলি কেন?
মুর্তজা : কে থাপ্পড় মারলো?
শফিক : তুই থাপ্পড় মেরেছিস।
মুর্তজা : আমি আবার কখন থাপ্পড় মারলাম?
রাসেল : শফিক তুর কী হয়েছে? কে তোকে থাপ্পড় মারছে?
শফিক : ঠিক আছে আমি আর খেলবো না, আমি চললাম।
(শফিকের এরূপ অদ্ভুত আচরণে সবাই অবাক হয়। খেলা বন্ধ হয়ে যায়। যে যার মতো চলে যায়।)
দৃশ্য : ২
(ক্লাসরুম। আগের দিনের ফুটবল খেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবাই কানাঘুষা করছে।)
ছাত্র-২ : কী বলছিস, শফিক পাগল হতে যাবে কেন। কালকেও আমার সাথে সে কথা বললো, দিব্যি ভালো মানুষ।
ছাত্র-১ : আরে কাল আর আজ এক নয়। ওই দেখ, ক্লাস শুরু হতে বাকি নেই অথচ চুপচাপ মাঠের কোণে বসে আছে। জিনে ধরলে নাকি এরকম চুপচাপ থাকে প্রথম কয়েকদিন। তারপর আসল পাগলামি শুরু হয়।
ছাত্র-৩ : আরে ধ্যাৎ, জিন টিন কিছুই না। খোঁজ নিয়ে দেখ, আজকের হোমওয়ার্ক করেনি শফিক। তাই এরকম ভাব ধরছে।
দৃশ্য : ৩
(খেলার মাঠের এক কোণে বসে আছে শফিক। মাঠ ঘেঁষা ফসলি ক্ষেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা কাকতাড়–য়া যেন তাকিয়ে আছে শফিকের দিকে।)
কাকতাড়ুয়া : কী হে বালক! কী ভাবছ বসে বসে?
শফিক : (চমকে ওঠে) কে, কে কথা বলছে?
কাকতাড়–য়া : আমি, তোমার বন্ধু। কাকতাড়–য়া। আচ্ছা বলতো, তোমরা আমার নামটা কাকতাড়–য়া দিলে কেন? আমি কি শুধু কাকই তাড়াই। এই যে মুরগির ছানাগুলো পোকামাকড় খেতে আসে, তখন ইয়া বড় বড় পাখাওয়ালা চিল এসে তাদের ছোবল মেরে নিয়ে যেতে চায়। ভয়ে মুরগির ছানাগুলো আমার কাছে আশ্রয় নেয়। আমাকে দেখে চিলওতো তখন পালায়। তাহলে কেন আমার নাম কাকতাড়–য়া। চিল তাড়–য়াওতো হতে পারতো।
শফিক : (কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে) হে..হে.. তাহলে তো কাকবেচারা আবার রাগ করবে। আসলে তোমার নাম হওয়া উচিত পাখিতাড়–য়া।
কাকতাড়ুয়া : তোমার এই নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আমাকে দেখেতো ইঁদুরসহ আরো অনেকে ভয় পায়। মূলত তোমাদের জমির ফসল নষ্ট করতে আসে এরকম অনেক প্রাণীই আমাকে ভয় পায়। ভয়ে পালায়। কিন্তু ওরা জানেই না আমার কোনো শক্তি নেই। হ্যাঁ….হ্যাঁ…হ্যাঁ..।
আচ্ছা বলতো, তুমি কী ভাবছ বসে বসে?
শফিক : আমার ভাবনার কথা শুনে তোমার লাভ কী?
কাকতাড়–য়া : লাভ নেই, তবে আমি জানি তুমি কী ভাবছ।
শফিক : জানো কিভাবে?
কাকতাড়ুয়া : তুমি ভাবছ, গতকাল ফুটবল খেলার সময় তোমার মাথায় কে থাপ্পড় দিয়েছে। আর এই ভাবনাই তোমাকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আর আমি এটাও জানি, তোমাকে কেউ ফাউল করেনি, তুমি নিজেই পড়ে গিয়ে ফাউলের ভান করেছ, পেনাল্টি পাবার আসায়।
শফিক : কিন্তু তুমি এতসব জানলে কী করে? তুমি কি চোখে দেখ?
কাকতাড়ুয়া : দেখো শফিক। প্রত্যেক মানুষের ভেতরেই আরেকটি মানুষ থাকে। ভালো মানুষ। যেটাকে বিবেকও বলতে পারো। তুমি যত কাজই করো না কেন, ভেতরের ঐ মানুষটিকে প্রশ্ন করলেই উত্তর পেয়ে যাবে, কাজটি ভালো না খারাপ।
তুমি যখন জেনেশুনে কোনো খারাপ কাজ কর, তখন তোমার ভেতরের ভালো মানুষটি তোমাকে চপেটাঘাত করে। সে তোমার এ চতুরতা সহ্য করতে পারে না।
শফিক : সে-ই কি আমাকে থাপ্পড় মেরেছে।
কাকতাড়–য়া : হয়তো বা, আবার নাও হতে পারে। এখন থেকে এই মাঠে খেলতে এসে যারাই এরূপ চতুরতার আশ্রয় নেবে তারাই থাপ্পড় খাবে। নতুবা আজ বিকেলে তুমি দেখ, কারা ভণিতার আশ্রয় নেয়, তখন প্রমাণ পাবে।
শফিক : সত্যিই! কাকতাড়–য়া, না না পাখিতাড়ুয়া, বন্ধু আমার। তোমার কথায় আমি একটা নতুন দিগন্তের সন্ধান পেলাম। আমি আর কখনো মিথ্যা বলবো না। কোনো কাজে চতুরতার আশ্রয় নেবো না।