দৃশ্য ১
রাজা, উজির, প্রহরী কয়েকজন, ঘোড়ার গাড়ি ও অন্যান্য লোকজন। রাজা শিকার শেষে বাড়ি ফিরছেন। ঢোল পিটিয়ে ঘোষক অ্যালান অ্যালার্ট জানাচ্ছে। রাজা দরবারের গালিচায় নামবেন। সবাই কুর্নিশ করবে। রাজা সোজা দরবারের দিকে যেতে থাকবেন। বিউগল ও মিউজিক বাজতে থাকবে। রাজা, উজির, মন্ত্রীরা, কোতোয়ালসহ সবাই রাজদরবারে প্রবেশ করছেন। সকলেই দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করছেÑ রাজা সোজা সিংহাসনে আরোহণ করবেন।
ঘোষক : উজির, নাজির, পাইক-পেয়াদা হুঁশিয়ারÑ হুঁশিয়ারÑ মহাবিক্রম মহামান্য রাজা দরবারে আসছেনÑ।
রাজা : রাজ্যের অবস্থা কী? আমার প্রজাসাধারণ ঠিকমত খাজনা আদায় করছে কি না।
উজির : জু হুকুম জাঁহাপনা, রাজ্যের প্রজাদের অবস্থা ভালো না। এরা ঠিকমত কেউ খাজনা আদায় করছে না। একেক জন একেক ধরনের কথা বলছে।
রাজা : কী রকম?
উজির : কেউ বলছে বন্যায় বেশ ক্ষতি হয়েছে, এবার দেয়া সম্ভব নয়। খাজনা দিতে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। আবার কেউ বলছে এবার নাকি আবাদ হয়নি।
রাজা : এসব শোনার জন্য কি আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি। আমি জানতে চাই, খাজনা ঠিকভাবে আদয় হচ্ছে কি না। মন্ত্রী..।
মন্ত্রী : জাঁহাপনা।
রাজা : মন্ত্রী, আমার কথা একটাই- সেটা হলো যেভাবেই পারো খাজনা আদায় করো। প্রয়োজনে যা ব্যবস্থা নেয়া দরকার শিগগিরই ব্যবস্থা নাও। যাও…
মন্ত্রী : আজ্ঞে জাঁহাপনা।
দৃশ্য ২
কয়েকটি মাঝির বাড়ি। রাজকর্মচারী ২ জনসহ অন্যান্য কয়েকজন একটি পথ দিয়ে হেঁটে আসছে। আসতে আসেত একটি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াবেÑ খাজনা আদায় করতে। মাঝির বাড়ি। মাঝি ও মাঝির বউ ঘরের মধ্যে।
কোতোয়াল : মাঝি! ও মাঝি। বের হয়ে এসো। আমরা রাজদবার থেকে এসেছি।
মাঝি : আজ্ঞে কোতোয়াল মহাশয়! হঠাৎ কি জরুরি তলব করেছেনÑ কইগো একটা বসার ব্যবস্থা করো।
কোতোয়াল : আমরা বসতে আসিনি। এবার খাজনাটা দিয়ে দাও সহসা দরবারে ফিরবোÑ যাও দেরি না করে খাজনাটা নিয়ে এসো।
মাঝি : মশায়, নদীতে তেমন মাছ পাই না, যা দুই একটা পাই তা দিয়ে কোনো মতো সংসার চলে। গত মাসে মেজো ছেলেটার অসুখ ছিলো, কবিরাজের দাওয়াই কিনতে সব পয়সা শেষ। কি করে খাজনা দেবো। এবারের মতো একটু মাফ করা যায় না গো কর্তা।
কোতোয়াল : বলে কি মাফ! আরে মাফ করার জন্য অনেক জায়গা আছেÑ খামুখা সময় নষ্ট না করে খাজনাটা দিয়ে দাও।
মাঝি : হুজুর এবারের মতো মাফ করুন, দোহাই আপনাদের।
কোতোয়াল : বুঝেছি এদেরকে প্রশ্রয় দিলে মাথায় উঠেÑ ঠান্ডা মাথায় কথাগুলো বলেছিতো তাই তোমাদের কানে লাগেনি।
অন্য সেপাই : দু-চার ঘা দিলেই দেখবেন সুর সুর করে বের করে দিচ্ছে।
কোতোয়াল : এই পা ছাড়। যা বলছি, তাই কর। তা না হলে যা করার দরকার তাই করবো।
মাঝি : হুজুর ক্ষমা করবেন, ক্ষমা করবেন এবারের মতো। আগামীতে সব পরিশোধ করে দেবো। ক্ষমা করবেন হুজুরÑ
কোতোয়াল : এই চাবুক দে…।
(কোতোয়াল চাবুক দিয়ে মারতে থাকবেÑ চিৎকার দিয়ে মাঝি মেঝেতে লুটিয়ে পড়বে। আর অন্যরা ঘর থেকে হাঁড়ি-পাতিল ইত্যাদি বাইরে ছুড়ে মারবে।)
দৃশ্য ৩
দুর্গ। পুরনো একটি বাড়িÑ সামরিক প্রশিক্ষণ জায়গা। কিছু ঢাল-তলোয়ার বিভিন্ন জায়গায় রাখা, সৈন্যদের পানপাত্র, মশক, খান্দানি জগ, গ্লাস। কথোপকথন চলছেÑ কেউ কুরআন পড়ছেÑ কেউবা সামষ্টিক আলোচনা করছেÑ কেউ যুদ্ধ সম্পর্কে নির্দেশনা দিচ্ছে।
সাঈদ : বন্ধুরা আমরা এক মহান ব্রত নিয়ে এই শিবিরে এসেছি।
ইসহাক : তাতো আমাদের সবার জানা।
একজন : কিন্তু আমাদের এই অল্প প্রস্তুতিতে বিশাল বাহিনীর সামনে লড়াই করবো কেমন করে?
সাঈদ : লড়াইয়ের ময়দান মানেই জীবন মরণের ঝুঁকি নেয়া। জীবনকে এক হাতে এবং কুরআন আরেক হাতে নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লে তাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।
অন্যান্যরা : যথার্থ বলেছেন নেতা। আমরা আপনার নির্দেশের অপেক্ষায়।
সাঈদ : মুসাকে দেখছি না যেÑ
একজন : মুসা কুরআন শরীফ পড়ছে।
সাঈদ: বন্ধুরা, আমাদের উদ্দেশ্য একটাই- তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তবে দ্বীনকে সমস্ত মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র দেশ বিজয় কিংবা লড়াই আমাদের মুখ্য বিষয় নয়। নিজেদের ঈমানকে মজবুত রাখার জন্য একদিকে যেমন লড়াই করতে হবে অপর দিকে ইসলামকে বুঝতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের আদর্শ হবে মুখ্য বিষয়। এ ক্ষেত্রে আমরা দূত মারফত রাজাকে ইসলামের আহবান পৌঁছিয়ে দিতে পারি। যদি রাজা স্বেচ্ছায় ইসলামের আহবানে রাজি থাকে, তাহলে তো আর সমস্যাই নেই।
ইসহাক : আমাদের উচিত তার সাথে সন্ধি করে ফেলা।
সাঈদ : হ্যাঁ, আর যদি স্বেচ্ছায় রাজি না থাকে। তবে তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়া বিপল্প কোনো পথ দেখছি না। অন্যজন : তবে আজই একজন দূত পাঠানোর প্রস্তাব করছি।
সাঈদ : এ ক্ষেত্রে মুসাকে আমি দূত হিসেবে প্রেরণ করছি।
দৃশ্য ৪
দরবারে উজিরসহ অন্যান্য সকলেই বসে আছে। এরই মাঝে দূতের প্রবেশ। সঙ্গে দু’জন প্রহরীর প্রবেশ। জু হুকুম বলে সম্মুখভাগ হতে কুর্নিশ করতে করতে পিছিয়ে যাবে।
দরবারি : জো হুকুম জাঁহাপনা। জাঁহাপনা, একজন বিদেশী মুসলিম দূত এসেছে বার্তা নিয়ে।
রাজা : মুসলিম দূত! আমার দরবারে! যাও ওকে হত্যা করো। আর সবাই জেনে রাখুক, আমি মুসলমানদের ঘৃণা করি।
উজির : গোস্তাকি মাফ করবেন জাঁহাপনা। অনুমতি দিলে একটা কথা বলতে পারি।
রাজা : ঠিক আছে বলো।
উজির : যেহেতু এখনো আমাদের অজানা। দূতকে দরবারে আসার অনুমতি দিন। যদি ছলচাতুরী করে তবে আপনার ফয়সালা হবে ওর জন্য যোগ্য প্রাপ্য।
রাজা : ঠিক আছে। দূতকে দরবারে নিয়ে আসা হোক…
উজির : জু হুকুম! দূতকে দরবারে হাজির করা হোক।
রাজা : বলো হে দূত। কী বার্তা নিয়ে এসেছ।
সিপাহি : জাঁহাপনা ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমরা শান্তির প্রত্যাশী। তাই শান্তির জন্য ইসলামের বার্তা নিয়ে এসেছি। ইসলামের মহান বাণী আপনাকে শোনাতে চাই।
রাজা : খামোশ! চুপ করো! ঐ ইসলাম সম্পর্কে আর একটা কথাও বলবে না। আমি তোমাদের ধর্মকে ঘৃণা করি। যাও দরবার থেকে বেরিয়ে যাও। তা না হলে তোমাকে হত্যা করবো। তুমি আমার মেহমান, তাই তোমাকে প্রাণ ভিক্ষা দিলাম। যাও, তোমার নেতাকে বলে দিও- যুদ্ধই এর একমাত্র ফয়সালা, বেরিয়ে যাও।
সেনাপতি! উজির! সভাসদ আমি মুসলমানদের খুব ভালো করে চিনি। এরা যেখানে একবার প্রবেশ করে সেখান থেকে শত সহ¯্র বছরেও তাদেরকে আর তাড়ানো যায় না। সেনাপতি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো। শক্ত হাতে প্রতিরোধ করো মুসলমানদের।
সেনাপতি : জু হুকুম জাঁহাপনা…
দৃশ্য ৫
সাঈদের বৈঠকখানা। সবাই একত্রে বসে আছে। বিভিন্ন রকমের কাজ করছে। কেউ তলোয়ার শান দেবে। কেউ বা ঢাল ঠিক করবে, বর্ম দিয়ে যুদ্ধের মহড়া করছে কেউ কেউ।
ইসহাক : ভাই সাঈদ, দূতের মুখে সবইতো শুনলে। এবার বলো কী করা যায়।
সাঈদ : বন্ধু! সত্যের জন্য, মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামের বিজয় নিশান উড়ানো ছাড়াতো অন্য কোনো ব্রত আমাদের নেই। হতাশাগ্রস্ত মানুষের কাছে এই ইসলাম হবে শান্তির পথ প্রদর্শক।
অন্যজন : তাহলে যুদ্ধ ছাড়া যে আমাদের আর কোনো গতি নেই।
ইসহাক : ভাই, আমিও তো যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো পথ দেখছি না।
সাঈদ : হ্যাঁ ভাইয়েরা! এখন যুদ্ধই হবে আমাদের একমাত্র ফয়সালা। সবাইকে যদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলো।
ইসহাক : তা হলে সময় নষ্ট না করে আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেই।
দৃশ্য ৬
সভাসদরা বসে আছে। রাজা পায়চারি করছেন। ধীরে ধীরে উজির প্রবেশ করে রাজাকে কুর্নিশ করে। রাজা উজিরের দিকে তাকায়Ñ উজির কোনো কথা বলবে নাÑ সিপাহিরা কুর্নিশ করতে করতে পেছনের দিকে চলে যাবে। রাজা খুবই উত্তেজিত।
রাজা : উজির কী সংবাদ নিয়ে এলে। যুদ্ধ ক্ষেত্রের অবস্থা কী? কি ব্যাপার আমার প্রশ্নে তোমার মস্তক নত হলো কেন? (রাগান্বিত হয়ে) শুনেছি কোনো মুসলিম নওজোয়ান নাকি একাই আমাদের শতাধিক সৈন্যকে হত্যা করেছে, কি তার নাম, কি তার পরিচয়?
উজির : গোস্তাকি মাফ করবেন জাঁহাপনাÑ যুদ্ধে আমরা পরাজিত হয়েছি।
রাজা : খামোশ! গুটিকয়েক মুসলিম সৈন্যের কাছে আমার সুশিক্ষিত সৈন্যবাহিনী একেবারে নাস্তানাবুদ।
উজির : গোস্তাকি মাফ করবেন জাঁহাপনা। তবে একটি কাজ আমরা করেছি- যে মুসলিম নওজোয়ান একাই শত শত সৈন্য কচুকাটার মতো হত্যা করেছে, তাকে আমরা বন্দী করেছি।
রাজা : কী তার নাম।
উজির : জাঁহাপনা তার নাম সাঈদ- আর তার সঙ্গী ইসহাককেও আমরা বন্দী করেছি।
রাজা : যাও, এক্ষুনি দরবারে হাজির করো। তাকে আমি দেখতে চাই। কতো বড় বীর সে। যাও বন্দীদের দরবারে নিয়ে এসো।
উজির : যাও বন্দীদের দরবারে নিয়ে এসো।
(সৈন্যরা সাঈদ ও ইসহাককে নিয়ে দরবারে প্রবেশ করবে)
রাজা : দাঁড়াও! বন্দী- রাজদরবারে দাঁড়িয়ে কী রকম আচরণ করা বিধেয় তাও কি তোমাদের শিক্ষা দেয়া হয়নি।
ইসহাক : জাঁহাপনার কথা আমরা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
উজির : বন্দী রাজদরবারে দাঁড়িয়ে। মহামান্য রাজাকে কুর্নিশ করার শিক্ষা কি তোমাদের জানা নেই। শুনেছি তোমাদের ইসলামে একটা পিঁপড়ের কথাও উল্লেখ রয়েছে। তবে এই শিক্ষা কি তোমাদের জানা নেই।
সাঈদ : বেয়াদবি মাফ করবেন জাঁহাপনা, আমরা মুসলমান আর মুসলমানরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো নিকট মাথা নত করে না।
রাজা : খামোশ! তোমার এতো বড় স্পর্ধা! রাজদরবারে দাঁড়িয়ে রাজার মুখের সামনে তর্ক। তুমি আমার বহু সিপাহিকে হত্যা করেছ।
সাঈদ : জাঁহাপনা যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছি। দেশ রক্ষার খাতিরে ঈমান রক্ষার খাতিরে। যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যা করা এতো যুদ্ধনীতিরই অংশ।
রাজা : খামোশ! উজির…
উজির : জু হুকুম জাঁহাপনা।
রাজা : নিয়ে যাও এদের! আর আগামীকাল সূর্য ওঠার পরপরই এদের গর্দান নেবার ব্যবস্থা করো। যাও।
দৃশ্য ৭
বলিদানের স্থান। জল্লাদ তার খড়গ সাঈদের মাথার ওপর ওঠায়, ঠিক সেই মুহূর্তে-
রাজা : খামোশ! মস্তক উন্নত করো বন্দী। তোমাকে কোথায় দেখেছি বলে মনে হচ্ছে।
সাঈদ : হ্যাঁ জাঁহাপনা। একদিন তায়েফের ময়দানে আপনি শিকারে বের হয়েছিলেন। আর তখন ছিলো রমজান মাস। বনের মধ্যে একটি ঘোড়ায় ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পানি পিপাসায় ছটফট করছিলেন। আমি মশক হাতে পানির পেয়ালা নিয়ে মুনাজাত করছিলাম- আপনি কাতরাতে কাতরাতে ঘোড়া থেকে মাটিতে পড়ে যান। শুধু পানি পানি বলে কাতরাচ্ছিলেন। আমি তখন পানির মশক এগিয়ে দিয়েছিলাম আপনার মুখে। আমার ইফতারের পানিটুকু আপনাকে পান করিয়ে সুস্থ করে তুলেছিলাম।
রাজা : হ্যাঁ হ্যাঁ বন্দী মনে পড়েছে। তুমিই আমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছিলে। আমি কথা দিয়েছিলাম তোমার বিপদে আমি তোমাকে রক্ষা করবো। কিন্তু তুমি আমার বহু সিপাহিকে হত্যা করেছো- তাই তোমাকে আমি প্রাণভিক্ষা দিতে পারি না। হ্যাঁ বন্দী, তোমার কোনো শেষ ইচ্ছা থাকলে তুমি তা বলতে পারো।
সাঈদ : জাঁহাপনা যুদ্ধের ময়দানে এসে শুনতে পেলাম, আমার একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। যদি অনুমতি দেন তো একনজর আমার পুত্রসন্তানের মুখখানা দেখেই আমি ফিরে আসবো।
রাজা : না না বন্দী এ হয় না। তোমাকে আমি মুক্ত করে দিলেই তুমি আর কখনোই ফিরে আসবে না। এতো বড় ভুল আমি করতে পারি না। কারণ তুমি আমার বহু সিপাহিকে হত্যা করেছো।
উজির : জাঁহাপনা, বন্দী ছলচাতুরী করে আপনার করুণাকে তার মুক্তির জন্য ব্যবহার করছে।
রাজা : না না এ হয় না। অন্য কোনো আরজি থাকলে তুমি তা ব্যক্ত করতে পার।
সাঈদ : না জাঁহাপনা, আমার আর কোনো আরজি নেই।
রাজা : তাহলে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।
ইসহাক : জাঁহাপনা আমাকে অনুমতি দিলে একটি কথা বলতে পারি।
রাজা : অনুমতি দেয়া হলো। বলো বন্দী।
ইসহাক : সাঈদকে বাড়ি যাবার অনুমতি দিন, এ ক্ষেত্রে আমি হবো তার জিম্মাদার।
উজির : বন্দী তুমি যা বলছো। তা কি ভেবে চিন্তে বলছো?
ইসহাক : হ্যাঁ জাঁহাপনা, সাঈদ যদি যথাসময়ে ফিরে না আসে সে ক্ষেত্রে আমি হবো তার জিম্মাদার।
রাজা : ঠিক আছে। সাঈদকে মুক্ত করে দাও আর সে ক্ষেত্রে ইসহাককে বন্দী করো। আজ সূর্যাস্তের পূর্বে যদি না পৌঁছাতে পারো সে ক্ষেত্রে তোমার বন্ধু ইসহাককে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হবে।
ইসহাক : জাঁহাপনা অনুমতি দিলে আমার আরেকটি আরজি ছিলো।
রাজা : ব্যক্ত করতে পারো।
ইসহাক : জাঁহাপনা, সাঈদকে একটি দ্রুতগামী ঘোড়া প্রদান করা হোক যেনো সে যথা সময়ে ফিরে আসতে পারে।
রাজা : উজির !
উজির : জু হুকুম জাঁহাপনা।
ইসহাক : সাঈদকে একটি দ্রুতগামী ঘোড়া প্রদান করার ব্যবস্থা করো।
রাজা : আর রাজ্যের সবাইকে জানিয়ে দাও, এর মৃত্যুদন্ড হবে জনসম্মুখে।
উজির : জু হুকুম জাঁহাপনা।
সাঈদ : আসি ভাই ইসহাক। আল্লাহ হাফেজ।
ইসহাক : ফি আমানিল্লাহ।
দৃশ্য ৮
গঞ্জের মাঠ। ঢোল বাজিয়ে, চোঙায় ফুঁ দিয়ে ঘোষক রাজ অ্যালান করছে। জনমানুষের ভিড়ে। রাস্তার পাশে। মন্দিরের পাশে ঘোষক তার ঘোষণা প্রচার করবে।
ঘোষক : রাজ অ্যালান, রাজ অ্যালান। আজ সূর্যাস্তের সময় মুসলিম নওজোয়ান সাঈদকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হবে। যারা এই মৃত্যুদন্ড দেখতে প্রত্যাশী সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য মহারাজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
প্রহরী-১ : দাদা এমন বেয়াকুব তো আর কখখনো দেখিনি। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মানুষকে মুক্তি দিয়ে নিজেরই মৃত্যুদন্ড নিজ হাতে নিয়ে নিলো।
প্রহরী-২ : ওহে তোমার কি বিবি বাল-বাচ্চা নেই, অন্তত তাদের মায়ায় তো জীবনটা ফিরে পেতে পারতে।
প্রহরী-১ : দাদা যে ঘুঘু একবার ফাঁদ থেকে বের হয়ে যায়। সে কি কখনো সে ফাঁদে পা দেয়।
প্রহরী-২ : হ্যাঁ দাদা, সাঈদ একবার এখান থেকে চালাকি করে বের হয়েছে। সেকি কখনো আর ফিরে আসবে।
প্রহরী-১ : অজগন্ডমূর্খ, তুমি মস্ত বড় ভুল করেছো।
ঘোষক : উজির-নাজির, পাইক-পেয়াদা সাধারণ জনগণ হুঁশিয়ার, সাবধান। মহামান্য রাজা আসছেন।
রাজা : হতভাগাটা কি ফিরে এলো।
উজির : না জাঁহাপনা। ও একবার এখান থেকে বের হয়েছে আর কখনো এখানে ফিরে আসবে না।
রাজা : এ দিকে সময় তো প্রায় শেষ হয়ে এলো।
উজির : হ্যাঁ জাঁহাপনা সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু। অনেক মানুষ অপেক্ষা করছে মৃত্যুদন্ড দেখার জন্য। চলুন জাঁহাপনা।
সিপাহি-১ : আহা হা বেচারা আহাম্মক!
সিপাহি-২ : আহাম্মক না হলে কি এমন হয়।
উজির : জাঁহাপনা, এক্ষুনি সূর্য ডুবে যাবে। আপনার অনুমতি পেলে…
রাজা : জল্লাদ তুমি তোমার কার্য সম্পাদন করো।
জল্লাদ : বন্দী তুমি তোমার ইস্ট মন্ত্র জপ করো।
ইসহাক : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:।
সাঈদ : লাব্বাইক, লাব্বাইক, হাজির, আমি হাজির জাঁহাপনা। আমি হাজির হয়েছি।
রাজা : খামোশ! জল্লাদ খড়গ নামাও।
সাঈদ : জাঁহাপনা আমি হাজির হয়েছি। বিশ্বাস করুন আমি শুধু একনজর আমার পুত্রসন্তানকে দেখেই চলে এসেছি। যতটুকু দেরি হয়েছে তা শুধু পথের দূরত্বের কারণে। জাঁহাপনা, এবার আমার ভাই ইসহাককে মুক্তি দিন। আমার মৃত্যুদন্ড কার্যকরের নির্দেশ দিন। জল্লাদ, এবার আমার মৃত্যুদন্ডের ব্যবস্থা করো। আমি চাই না, মহারাজ এতগুলো মানুষের মাঝে অপমানিত হোক।
জল্লাদ : তুমি তোমার ইষ্ট মন্ত্র জপ করো।
সাঈদ : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:।
রাজা : খামোশ! রাখো জল্লাদ। সাঈদ! মাথা উন্নত করো। এ যে আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। এ যে কল্পনাও ছাড়িয়ে গেলো।
উজির : জাঁহাপনা, এ দৃষ্টান্ত বিরল- আমি জীবনেও এরকমটি দেখিনি।
রাজা : বলো কোথায় পেলে এমন শিক্ষা।
সাঈদ : জাঁহাপনা, আমরা মুসলমান। যে ইসলামকে আপনি পছন্দ করতেন না কিন্তু সেই ইসলামই দিয়েছে আমাকে এমন মহান শিক্ষা।
রাজা : উজির যে ইসলামের জন্য সামান্য একজন সৈনিক এতো বিশ্বাসী, সেই ইসলাম নিশ্চয়ই আরো অনেক বেশি বিশ্বাসী। আরো বেশি সুন্দর। সাঈদ কিভাবে আমি এ শিক্ষা নিতে পারি। আজ তোমাদের কাছে আমার মস্তক নত হয়ে গেলো। আমাকে নিয়ে চলো সেই সুন্দরের দিকে।
সাঈদ : জাঁহাপনা, পড়–ন- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:।
রাজা : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:।
(সবাই রাজার সাথে সাথে ইসলামের সুবিমল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে।)