সুন্দরবন নাকি কেওক্রাডাং এ নিয়ে চরম বিতর্ক এরপর ইনফরমেশন কালেকশন, প্ল্যানিং। সুন্দরবনে যাওয়ার খরচ শুনে সবার মাথায় হাত! আর কেওক্রাডাং এই গরমে গেলে মাথায় আইস ব্যাগ দিয়ে রাখতে হবে! শেষ পর্যন্ত নতুন প্ল্যান আমরা সাজেক যাচ্ছি খাগড়াছড়ি হয়ে, সাথে ফ্রি ট্যুর চট্টগ্রাম।
যাত্রার সঙ্গী, টিপু, জিসান আর কবি আব্দুল গফফার। টিপু হলো আমাদের ম্যানেজার, আমি ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট আর বাকি দু’জন কোন পদ পায়নি!
এই পদগুলো সম্পূর্ণ যোগ্যতার ভিত্তিতে জোর করে নেয়া, অন্য দু’জনের আপত্তির তোয়াক্কা করা হয়নি! এমনিতেই আমরা চারজন চার প্রকারের ফাজিল ডিগ্রি সম্পূর্ণ করা, পূর্ব দিকে রাস্তা হলে টিপু যাবে উত্তর দিকে, কবি গাফফার দক্ষিণ দিকে, আমি পশ্চিম দিকে, জিসান অসহায় হয়ে জায়গায় বসে থাকবে, এ হলো আমাদের অনন্য এক বৈশিষ্ট্যের নমুনা।
আমি চরম অনিশ্চয়তার মাঝেও মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছি, অফিস ম্যানেজ করে ছুটি নিয়ে যেতে হবে, টিকিট হয়ে গেছে এক সপ্তাহ আগে, তারপরও আমি কেন জানি অনিশ্চয়তায় ভুগছি। চাইলেই এখন আর ট্যুর-মুরে যেতে পারি না, তাও ৩ দিনের জন্য, কেমন জানি নিজের থেকেই অসম্ভব মনে হচ্ছে। যাই হোক, অফিস থেকে রাত ৮টায় বের হয়ে ১০টার বাসে সিটে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম, মনে হয় যেতে পারছি, আলহামদুলিল্লাহ। সবাই মিলে একটা সেলফি দিয়ে ছবি তোলার শুভ-উদ্বোধন ঘোষণা করা হলো, ওই দিকে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাসও ছাড়লাম, ‘কথা ছিল হারিয়ে যাবো’ শিরোনামে।
“বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ” মনে মনে আরও দোয়া দরুদ পড়ে নিলাম। ঘণ্টা দু-এক বাস চলার পর অনেকের নাক ডাকার শব্দই বলে দিচ্ছে তারা কত গভীর স্বপ্নে আছে। আমি গরিব হলেও আমার ঘুমটা বেশ বড় লোকের। মানে ঘুম সহজেই আসতে চায় না। জানতাম, আজকে আর ৯৯ থেকে উল্টো দিকে গুনেও ঘুমকে ভাগে আনা যাবে না। রাস্তার গাড়িগুলো যেতে থাকল শাঁ শাঁ করে, আমি জেগে থাকলাম আর সাথে রাস্তার গাড়িগুলো, মাঝে মাঝে দূরের কোন বাতির মিট মিট আলোর সাথে কানে গুঁজে দেয়া ইয়ারফোনের স্লো ভলিউমের গান বেশ ভালোই লাগছে। খাগড়াছড়ি পৌঁছলাম ভোর ৭টায়, পেটের হালুম ডাকে জানান দিল পেটেও কিছু খাওয়ার হক আছে। ঢুকে পড়লাম এক হোটেলে, টিপু কল দিল তার বন্ধুসুলভ মামাকে, মামা মিজানুর রহমান খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের টিচার, ওনিতো আমাদের পেয়ে ভীষণ খুশি, চার পাশের সবকিছু বোঝাতে লাগলেন একজন পাক্কা ট্যুর গাইডের মতো, ওনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে, এত সহজ-সরল আর সাবলীল ভাষার মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ওনার এখানে একটু রেস্ট করে চলে গেলাম বাসস্ট্যান্ডে, যেখান থেকে সাজেকের দূরত্ব এখনো প্রায় ৭০ কিলোমিটার। তাও তিন জায়গায় গাড়ি পরিবর্তন করে যেতে হবে। খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-বাঘাইহাট-কাসালং-মাসালং-সাজেক এই হলো সাজেকের রোডম্যাপ।
খাগড়াছড়ি থেকে উঠলাম এক বাসে, দীঘিনালা পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টা লাগবে। বাসের অবস্থা অনেকটা ঢাকার ৬ নম্বর বাসের মতো। সাথে নিলাম কাঁচা বাদাম, কলা ও কমলা। বাসে বসে এসব খেয়ে মুখের ব্যায়ামটা সেরে নিলাম। এই কি! টিপু আর জিসান এই পাহাড়ি রাস্তায়ও ঘুমাচ্ছে! ওরা কি ঘুরতে এসেছে নাকি ঘুমাতে, ঠিক মিলাতে পারলাম না, ওদের দেখে মনে হচ্ছে তিন দিন-তিন রাত ঘুমায়নি, অথচ আমি নিজেও ঢাকা থেকে আসা বাসে ঘুমাইনি, আর আগের রাতেও আমি অফিস করেছি রাত ২টা পর্যন্ত। কার ঘুম কে যায়! ওদের ঘুম দেখে সত্যিই আমার হিংসা হচ্ছে।
পৌঁছলাম দীঘিনালা। এখান থেকে চান্দের গাড়িতে যেতে হবে বাঘাইহাট, লোকাল চান্দের গাড়িতে উঠলাম, পেছনে বাদুড়ঝোলা মানুষ আর ছাদেও কোন সিট খালি নেই। টিপুকে অনেক বারণ করা সত্ত্বেও সে উঠে পড়ল পাহাড়িদের সাথে চান্দের গাড়ির ছাদে। বোঝাই যাচ্ছে, ম্যানেজারেরই এই অবস্থা, বাকিদের কে কন্ট্রোল করবে! কেন, আমি আছি না! অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার! এবারের যাত্রাই প্রায় এক ঘণ্টা পর পৌঁছলাম বাঘাইহাট। এখান থেকে যেতে হবে আরেক লোকালে মাসালং অথবা রিজার্ভ নিয়ে সোজা সাজেক। এর আগে দীঘিনালাতে পরিচয় হলো পাঁচজনের একটা গ্রুপ রাকিব ভাই, আর শামীম ভাইদের সাথে। তাদের সাথে চুক্তিতে একটা চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ করলাম সোজা সাজেক পর্যন্ত।
এখানকার রাস্তা হলো সব চেয়ে ভয়ানক আর আঁকাবাঁকা, ড্রাইবার ভাই আলমগীর, যা দেখালেন! মনে হচ্ছে উনি কম্পিউটারে ভিডিও গেমস খেলতে বসেছেন, কোন কিছু হলেই আবার লেবেল ওয়ান থেকে শুরু করবেন। অনেকটা ‘কুচ পরোয়া নেহি’ স্টাইলে আর আমাদের মনে হলো রোলার কোস্টারের যাত্রী। মনে পড়ে গেল ফ্যান্টাসি কিংডমের রোলার কোস্টারের কথা যার সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘শিশু ও হার্টের রোগীদের ওঠা নিষেধ’, তারপর রোলার কোস্টারে চোখ বন্ধ করা সেই বাঁক নেয়ার কথা। এই রাস্তা-গুলোও কম কিসের সেই বাঁক, সেই রকম উঁচু, ওই যে অনেক উঁচু পাহাড় আমরা নাকি ওই খানে উঠবো, আলমগীর ভাই তাই বললেন। উনি তেমন কোন ব্রেক-ট্রেক ধরার ধার ধারছেন না। মনে হচ্ছে উনি আমাদের ওপর রেগে-মেগে চালাচ্ছেন, ওনার কাছে এটা মামুলি ব্যাপার, ওই দিকে আমাদের তো তেরোটা, আমি তেমন ভয় পাচ্ছি না, এর আগেও আমি এই রকম রাস্তায় অনেক এসেছি (মনে মনে এটাই একটা সান্ত¡না)। তবে গাড়ির ভেতরে সবাই গল্প করছি এতে রাস্তার দূরত্ব শেষ হচ্ছে, রাস্তা শেষ হওয়ার দরকার কি, এসব দেখার জন্যই তো এসেছি।
হুম, একদম পাক্কা দেড় ঘণ্টা পর পৌঁছলাম সাজেক। প্রথমেই নেমে ভিক্টরি চিহ্ন দেখিয়ে একটা ছবি, ওদিকে আম্মা ফোন দিয়ে বললেন, ‘ওই জায়গায় কেন গেছোস, ওই খানে পাহাড় ছাড়া আর কি দেখার আছে!’ আরে এখানে- তো সবাই পাহাড় দেখার জন্যই আসে। আমরা এখন ২ হাজার ফিট ওপরে আকাশের অনেক কাছাকাছি, একটা প্যারাস্যুট থাকলে ভালো হতো, এক জাম্প দিতাম, তারপর ঘুরে ঘুরে সব দেখতাম, তারপর এদিক-ওদিক ঘুরে রিসোর্ট ঠিক করতে হবে, অনেক হয়েছে এখন একটু রেস্ট দরকার, কিন্তু কোন রিসোর্ট খালি নেই, আলো রিসোর্ট নামে রিসোর্টে গিয়ে চাপা-টাপা মেরে নিলাম একটা রুম।
ওমা! এখানে তো থাকার চেয়ে খাবারের দাম বেশি, প্যাকেজ খাবার একবেলা ২০০-৩০০ টাকা। কোন উপায় না পেয়ে ২০০ টাকার প্যাকেজ নিলাম, আনা গরিবুন, গরিব মানুষ আর কিছু করার নেই। মেনু বন-মুরগি, আলুভর্তা, ডিম আর সাথে ফ্রি ডাল। খেলাম সবাই খুব পেট পুরে মনে হচ্ছে ২০০ টাকার খাবার, কম খেলে পয়সা উসুল হবে না, আর খিদে তো আছেই, তবে ওই পাহাড়িদের রান্না যে এত ভালো, তা না খেলে বুঝতাম না। টিপু চিকনা-চাকনা হলেও খায় ভালো। মনে হয় গলা পর্যন্ত পেট। টিপু আর জিসান প্রতিযোগিতা করে খেলো। কবি গফফার আবার খাবার সময় তেমন কথা বলে না, খুব মনোযোগী হয়ে খায়, কেন এভাবে খায় এটা একটা রহস্য, এখনো উদ্ঘাটন হয়নি। আর আমিতো খাওয়ার চেয়ে কথা বলি বেশি। আমিও অনেক খেলাম, অন্য দিনের চেয়ে বেশি। খেয়ে দেয়ে যত বিপত্তি, সবারই ঘুম চোখের সাথে আঠা দিয়ে লাগানো। আমি দুপুরে ঘুমানোর পক্ষে ছিলাম না, সবাই দেখছি ঘুমানোর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিছানায়, মনে হয় হোটেল ভাড়া করে এখানে শান্তির ঘুম দিতে এসেছে, ঘণ্টাখানিক ঘুম দেয়ার পর এবার যাবো কংলাম পাড়ায়, এখান থেকে প্রায় ২-৩ কিলোমিটার। যেতে হবে হেঁটে, আর পুরোটাই খাঁড়া পাহাড়। যেতে যেতে দেখলাম সূর্য ডোবার সেই অপরূপ দৃশ্য। কংলাম পাড়ায় উঠে সবাই হাঁপিয়ে গেলাম, আনা মারিজুন খাতিমুন, সবার অবস্থা কেরোসিন! একটু রেস্ট নিয়ে এক ছড়ি কলা চারজনে সাবাড় করে দিলাম। এই জায়গাও মানুষ বাস করে আসলে অবাক হওয়ার মত, সবকিছুই ছবির মত মনে হচ্ছে, এই পাড়ার পরে আর কোন ঘরবাড়ি নেই, এরপর পাহাড় আর পাহাড়, এই পাহাড়ের পর ভারতের পাহাড় আর মিজোরাম রাজ্য। ওইখান থেকে উঠলাম আরও একটা টিলাতে যেখান থেকে পশ্চিমের আকাশকে কত কাছে মনে হচ্ছে। দুই হাত প্রসারিত করে ছবিও তুললাম। সূর্য ডোবার সময় আকাশ যে রঙ ধারণ করে আছে এতে ছবি তুললে নিশ্চিত সবাই ভাববে, এটা ফটোশপে ইফেক্ট দেয়া ছবি। মাগরিবের নামাজ পড়লাম একটা পাথরের উপরে, খুব তৃপ্তি সহ নামাজ পড়লাম, নামাজে আল্লাহর এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এত অপরূপ লীলার কথাও স্মরণে এসে গেল।
চারিদিকে খুব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে এখন কংলাক থেকে ফিরতে হবে। সাজেক এসে অনেকক্ষণ আড্ডা, এই আড্ডায় কেউ গান গাইলে ভালোই জমতো, কিন্তু কেউ গান জানে না, জিসান মাঝে মাঝে বাংলা ছায়াছবির গান টান দেয়, তাও ওই দৌড় প্রথম দুই লাইন পর্যন্ত। আর আমাদের টিটকারিতে এর বেশি গাওয়া সম্ভব নয়। রাতে খেলাম ঠিক দুপুরের মত, একদম পেট পুরে, পয়সা উসুল করে। চোখও আর মানতে চাচ্ছে না। আর কত! রাতও অনেক, ১১টা। মেলে দিলাম অলস দেহ বিছানায়, কম্বল নিয়ে কবি গফফারের সাথে টানাটানির অভ্যাস সেই পুরনো হল থেকে। রাতে ঘুমালাম প্রায় অজ্ঞান হয়ে, ঠিক ফজরের আগে উঠে নামাজ পড়ে বের হলাম সূর্যোদয় দেখব বলে।
পাহাড়ের মেঘের মাঝে সূর্য উদয় দেখার অনুভূতি সেটা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, মুহূর্তের মধ্যেই সূর্য কত রঙ পরিবর্তন করে। তাকিয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ মনে হচ্ছে দেয়ালে বাঁধানো কোন ছবির দিকে তাকিয়ে আছি। এত কোমল আর হিমহিম বাতাস কত জনম গায়ে মাখিনি। ফেরার গাড়ির টাইম সকাল ৯টায়, চেনা পথে খাগড়াছড়ি আসতে আসতে দুপুর ১২টা। খাগড়াছড়িতে উঠলাম হোটেলে, জুমার নামাজ, খাওয়া-দাওয়া, এরপর আবার রুটিন মাফিক ঘুম, কিন্তু এইবার এত লম্বা ঘুম দিল সবাই একদম বিকেল হয়ে গেল, আর কোথাও যাওয়ার সময়ও নেই, সবাই খুব আফসোসও করল, কিন্তু আর কোন উপায় নেই, সব দোষ চাপানো হলো আমাদের কবি গফফারের ওপর, তার আবার দুপুরে খেয়ে ঘুম না গেলেই নয়। এই ঘুম নাকি স্বাস্থ্য ও চেহারার জন্য ভালো। আমি কালা-চালা মানুষ এত কিছু বুঝি না! কোথাও না যেতে পেরে, বিকেলে ঘুরলাম ক্যান্টনমেন্টের চার পাশ, সাথে সেই বন্ধু-মামা আর মামার বন্ধু মোস্তাফিজ ভাই।
পরদিন সকাল ১১টায় চট্টগ্রামের বাসের টিকিট, ওই দিন ভোর ৬টায় যাবো আলু-টিলা, আর রিছাং ঝর্ণা, আলু-টিলায় আলু খুঁজে লাভ নেই, আছে একটা গুহা, গুহাতে যেতে হয় মশাল নিয়ে, পাহাড়ি গাইড দাদা একটা মশাল হাতে ধরিয়ে দিলেন যার বিনিময় ১০ টাকা। গুহার সুড়ঙ্গ পথ ধরে পার হতে টাইম লাগবে ১২-১৫ মিনিট, এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হতে হয়, এই পথটা অনেক অ্যাডভেঞ্চারমূলক, পার হওয়ার পর অনেক ভালো অনুভূতি সৃষ্টি হয়, মনে হয় এইমাত্র কোন দুর্জয়কে জয় করে এলাম, এখন যাবো রিছাং ঝর্ণা, আলুটিলা থেকে বাসে একটু গিয়ে আরও ২-৩ কিলোমিটার হাঁটতে হবে। হাঁটলাম ঘড়ির টাইম ধরে ঠিক ৩০ মিনিট লাগলো পৌঁছতে, ঝর্ণার নিছে খুব পিচ্ছিল জায়গা, একবার পিছলে পড়লে, ওই যে দেখা যায়, একদম নিচে! এবং কোমরসহ হাড়গোড় ভেঙে কিছুদিন রেস্টে থাকার সুযোগ পাওয়া যাবে। গোসল করার দুঃসাহস দেখিয়েছে আমাদের মেয়েলী জিসান, আমিতো দেখেই অবাক! অমন ছেলে! ওই জায়গাই গিয়ে গোসল করছে আর আমরা, ছি! ছি! আমরা যদি ওই জায়গাই না নামি তাহলে আজীবন জিসান এই দুঃসাহসের খোঁটা দেবে, ঝর্ণায় না নেমে উপায় নেই, ঝর্ণায় গোসল দিয়ে খুব ভালো লাগলো, সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। আর ছবিও তুললাম খুব মজা করে।
আবার এখন ঢাল বেয়ে উপরে উঠতে হবে এমন কথা মনে হতেই পা যেন আর চলতে চাচ্ছিল না, কিছুই করার নেই ফিরতে যে হবেই, ১১টার বাস, আমাদেরকে আলুটিলা থেকে তুলবে। এবার গন্তব্য চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সি-বিচ। ওখানে আমাদের সাথে যোগ দিলো তাজউদ্দীন! উনি পিডিবির ইঞ্জিনিয়ার, উনি বললাম সম্মান দেখিয়ে! আসলে সে আমাদের তাজু, দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করলাম, কি তাজু, পিডিবির ক্যাবল বিক্রি করে ইনকাম কেমন! এরপর হো-হো করে হাসি। সি-বিচ স্পিড-বোট আর ঘোড়ায় উঠলাম, ঘোড়ায় উঠে প্রতি ছবি তোলা ১০ টাকা, কিন্তু অনেক ছবি উঠে গেলো, ঘোড়াওয়ালা তো প্রতি ক্লিক হিসাব করে রেখেছে, পরে টাকা দিতে গিয়ে আমরা ‘থ’, এইত ক্লিকে-ক্লিকে টাকা!
সি-বিচ থেকে ফিরতে উঠলাম সিএনজি-তে আর জিসান বলতে লাগলো আমরা সফলতার সাথে আমাদের ট্যুর শেষ করতে যাচ্ছি, একটু পর কি ঘটতে যাচ্ছে, তা বুঝলে কি আর সে এ কথা বলতো! নামলাম আমাদের হালিশহর বাদামতলিতে উদ্দেশ্য কিছু ফল-মূল কিনব, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমাদের দলের সম্মানিত ম্যানেজারের স্মরণ হলো ওনার ব্যাগ সিএনজির ড্রাইভারের জন্য রেখে এসেছেন, আমিতো শুনেই আবার ‘থ’, দৌড় দিলাম বাসস্ট্যান্ডের দিকে খুঁজলাম এগাড়ি ওগাড়ি, কই হারানো জিনিস কি আর ফেরত পাওয়া যায়। বাসায় ২ ঘণ্টা মধ্যে খাওয়া দাওয়া সেরে রওনা দিলাম তূর্ণা নিশি ট্রেন ধরার জন্য।
টিপুর হারিয়ে যাওয়া ব্যাগের ভেতর ঝর্ণায় গোসল করা ভেজা কাপড়চোপড় দেখে ওই সিএনজিওয়ালা লোক কি ভাববে সেটা নিয়ে সবাই হাসা-হাসি করলাম। যাওয়ার আগের আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস ‘কথা ছিল হারিয়ে যাবো’, এর কথা মনে পড়ে আরও হাসি পেলো। আল্লাহর কি রহমত আমরা হারালাম না ঠিকই, যা কিছু গেল টিপুর ওই ব্যাগের ওপর দিয়ে।
রাত ১১টার ট্রেনে সোজা ঢাকার উদ্দেশে, ট্রেনে কারও মুখে হাসি নেই, সবার মন খারাপ, ট্যুর থেকে ফিরছি এই জন্য না, কাল থেকে আবার অফিস এই ভেবে। অফিসে এলাম অফিসও করলাম, কই অফিসে মন নেই, অফিসের মন পড়ে রইল ওই পাহাড় আর ঝর্ণায়…।