বিশ্বকাপে চমকপ্রদ সাফল্য। অনেকে এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের জন্য জবাব ছিল টি-টোয়েন্টি ও ওডিআইতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ। তখন কেউ কেউ বলছিলেন, পাকিস্তান জাতীয় দল হলেও পূর্ণ শক্তির ছিল না। সংশয় অবসানের জন্য পূর্ণ শক্তির ভারতকে হারানো দরকার ছিল, সেটাও হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যে ক্রিকেটে একটি শক্তি সেটার স্বীকৃতি পাওয়া গেছে।
তারপর? তারপর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার (এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দু’টি টি-টোয়েন্টি এবং দু’টি ওডিআইতে)। হ্যাঁ, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও জয় পেল। যদি সিরিজটাই জিতে যায়, জিতে যায় টেস্টেও। বাংলাদেশ কোন পর্যায়ে পৌঁছাত? পরাশক্তির স্বীকৃতি পাওয়া যেত? অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা এখন ক্রিকেটবিশ্বের সেরা দুই শক্তি। কিন্তু বাংলাদেশ তো নিজেদের পরাশক্তি দাবি করে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি হয়েছে, সেটার প্রমাণ পাওয়া গেছে পাকিস্তান ও ভারতকে হারানোর মাধ্যমে। এ সময় অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া আর কোনো দলই বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতে পারত না। এত দিন বাংলাদেশ ছিল র্যাংকিংয়ের মতোই নিচের দিকে। এখন মধ্যম পর্যায়ে উঠে গেছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মতো দলের মর্যাদা পেতে পারে। বিশেষ করে উপমহাদেশের অন্য তিন দলের চেয়ে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই, সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
এর আগে বাংলাদেশ হারিয়েছে নিউজিল্যান্ডের মতো দলকেও। তবে সেই ধারাবাহিকতা থাকেনি। কিন্তু এখন সবাই মনে করছে, এ ধারাবাহিকতা থাকবে। অবশ্য সাফল্য-রেখা সবসময় ঊর্ধ্বগামী হবে না। মাঝে মাঝে নিম্নগামীও হতে পারে। সব দলেরই হয়। অস্ট্রেলিায়া, দক্ষিণ আফ্রিকাও হারে।
এখন যে পর্যায়ে এসেছে বাংলাদেশ, সেটা কিন্তু দীর্ঘ প্রয়াসের ফল। সেই ১৯৮০-এর দশক থেকে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে আসছে বাংলাদেশ। একটা সময় খেলত স্রেফ খেলার জন্য, একটু অভিজ্ঞতা অর্জনই অনেক পাওনা বিবেচিত হতো। আন্তর্জাতিক তারকাদের সাথে খেলা যাচ্ছে, সেটাই তো যথেষ্ট।
প্রথম জয়টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে সেই ১৯৯৮ সালে। সেটি ছিল কেনিয়ার বিপক্ষে। তখন কেনিয়ার কাছেও নিয়মিত হারত বাংলাদেশ। এমনকি টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পরও অনেকবার শোচনীয়ভাবে তাদের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। তারপর একটা দুটো জয় পাওয়া মানে বিরাট উন্মাদনা। সেই উন্মাদনায় ফুটবলসহ অন্যসব খেলা গেল ভেসে। যদিও একের পর এক পরাজয়ের গ্লানি আরো অসহ্য মনে হতো তীব্র সমালোচনায়। এমন সমালোচনা সহ্য করাও ছিল কঠিন।
পরের পর্বটি ছিল একটু শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয়। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষেও জয় পাওয়া যেতে লাগল। তবে নিয়মিত নয়, কালেভদ্রে। এবারের বিশ্বকাপ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতিই চলছিল।
অবশ্য বাংলাদেশের এই সাফল্য একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। টেস্ট কিংবা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাফল্য সেই তুলনায় অনেক কম। এই দুই ফরম্যাটে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় আসতে আরো সময় লাগতে পারে। তবে আসবে তা নিশ্চিত।
বিশ্বকাপই দৃশ্যত বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে। নতুন মাত্রা পেয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এখন লক্ষ্য এই স্থানটি সুসংহত করা। এই পর্যায়ে আসতে কয়েকটি প্রজন্ম লেগেছে। পরাশক্তির মর্যাদা পেতে হয়তো আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।