Home তোমাদের গল্প মায়াবী

মায়াবী

মোহম্মদ শরিফুল্লাহ মাজহার #

গ্রামের নাম শিমুলতলী। সেই গ্রামে বাস করত মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি। মোহাম্মদ আলীর স্ত্রীর নাম রাবেয়া। তার একটি ছেলে এবং চারটি মেয়ে ছিল। ছেলেটি সবার বড়। তার নাম রাশেদ। বড় মেয়ে মুনিরা, মেজো মেয়ে মায়াবী, সেজো মেয়ে সোহনা এবং সবচেয়ে ছোট মেয়ের নাম মারিয়া।
মোহাম্মদ আলীর সংসারটা তেমন সচ্ছল ছিল না। সে ছোট একটা ব্যবসা করত। তা থেকে উপার্জিত টাকা দিয়েই সংসারটা কোনো রকম চলত।
অভাবের সংসার থাকায় রাশেদা ও মুনিরা খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারেনি। রাশেদ শহরে ছোট একটা কাজ করত। তার আয় ছিল একদম নগণ্য, যা দিয়ে সে নিজের খরচ চালাতেই হিমশিম খেত। ফলে সে বাড়িতে কোনো টাকা পয়সা দিতে পারত না। আর মুনিরা মাকে বাড়ির কাজে সহায়তা করত। বাকি তিন মেয়ের মধ্যে মায়াবী নবম শ্রেণী এবং মোহনা ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ত। মারিয়ার তখনো স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। মায়াবী ছিল খুবই ভালো একটা মেয়ে। সে নিয়মিত লেখাপড়া ও নামাজ আদায় করত। সে সবসময় হাসি খুশি থাকত। মায়াবী, সত্যিই সে মায়াবী। কারণ মায়াবীর ওপর কারো রাগ হলে যখন রাগী ব্যক্তি মায়াবীর সামনে যেত তখন তার সকল রাগ চলে যেত। একদিন মায়াবীর এক বন্ধু তার ওপর রাগ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার সাথে আর কথা বলবে না। কিন্তু যখন সে মায়াবীর সামনে পড়ল, তখন আপনা আপনিই সকল রাগ চলে গেল এবং তারা উভয়ে কথাবার্তা বলল। মায়াবীর স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। তার জীবনের লক্ষ্য ছিল একজন আদর্শ শিক্ষিকা হয়ে দরিদ্র ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানো। কারণ সে লক্ষ্য করেছিল, আমাদের দেশের দরিদ্র ছেলেমেয়েরা খুব একটা বেশি লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। মায়াবী আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। অভাবের সংসারের কথা চিন্তা করে মোহাম্মদ আলী একদিন গ্রামের মোড়লের কাছ থেকে মুনাফা দেয়ার শর্তে কিছু টাকা আনল। টাকাগুলো দিয়ে সে একটা মনোহারীর দোকান দিল। তার দোকানে অনেক বেচাকেনা হতো। দোকান থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে সংসার চালাত ও মোড়লকে মুনাফা দিতো। দিন দিন তার দোকানের উন্নতি হতে লাগল। কিন্তু হঠাৎ একদিন তার দোকানে আগুন লেগে সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেল। মোহাম্মদ আলী দুঃখে ভেঙে পড়ল।
এখন তার আর আয়ের কোনো উৎস রইল না।
এ দিকে মোড়ল সাহেবের মুনাফা না দেয়াতে সে টাকার জন্য মোহাম্মদ আলীর ওপর চাপ সৃষ্টি করল। মোহাম্মদ আলী মোড়ল সাহেবের কাছ থেকে কিছুদিন সময় চেয়ে নিল। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো না। কোনো অবস্থাতেই সে টাকার কোনো ব্যবস্থা করতে পারল না। মোহাম্মদ আলী অনেক চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করল যে, পরিবারের সবাইকে নিয়ে এ গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যাবে। সেখানে গিয়ে সবাই মিলে রোজগার করে মোড়ল সাহেবের টাকা দেবে।
যা হোক সে একদিন রাতে কাউকে কিছু না বলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে শহরে চলে গেল। কিন্তু মায়াবীর কী হলো? তার স্বপ্ন কি বাস্তবে পরিণত হবে? সে কি এখন লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে? বুকের মাঝে কষ্ট চেপে ধরে শুধুই ডুকরে কাঁদে মেয়েটি।

SHARE

Leave a Reply