ইঞ্জিনিয়ার মুনতাসির মামুন
কার্টুন শিক্ষার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে ছোটদের কচি মনে অত্যন্ত সফলভাবে বিভিন্ন শিক্ষণীয় দিক গেঁথে দেয়া যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইসলামী আদর্শের চেতনায় অনেক কার্টুন তৈরি করা হয়েছে। ইসলামের সুমহান আদর্শকে তুলে ধরার একটি অনন্য প্রয়াস এই সুন্দর কার্টুনটি।
মুসলমানরা এক সময় স্পেন বিজয় করে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও অন্যান্য দিক থেকে বিপ্লব সাধন করে। কিন্তু এরপর মুসলিম নেতাদের মতপার্থক্য, দুর্বলতার ও অন্যান্য কারণে ইউরোপিয়ানরা আধিপত্য বিস্তার করে এবং মুসলমানদের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিতে সক্ষম হয়। গ্রানাডা তখনো মুসলমানদের দখলে ছিলো। আন্দালুসিয়ার এই বাকি অংশ সম্রাট ফার্ডিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলা দখল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছিলো। তারা কর্ডোভার শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা ‘রড্রিক’কে পাঠায় গ্রানাডার প্রতিরক্ষার দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত ম্যাপ নিতে যাতে তা সহজেই দখল করা যায়।
এই ম্যাপ নেয়ার জন্য রড্রিকের আগমনের খবর ‘আন্দালুসিয়ার অশ্বারোহী’ (বদর) এর চাচাকে এনে দেয় এক বোবা কিন্তু চৌকস গুপ্তচর ‘আমর’। সেই গোয়েন্দা রড্রিককে ঐ ম্যাপ তার প্রভুদের কাছে পৌঁছানো ঠেকাতে বদরকে প্রস্তুতি নিতে বলেন তার চাচা এবং বদরের পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য পিতার পোশাক ও অস্ত্র ধরিয়ে দেন। এরপর বদর সেই পোশাক ও অস্ত্র পরিধান করে ও তার সহযোগী ‘মুহাব’ কে সাথে নিয়ে সেই গোয়েন্দাকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
এদিকে গ্রানাডার বিশ্বাসঘাতক এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ম্যাপ নেয়ার জন্য রড্রিক তার কাছে পৌঁছে যায় এবং তাকে ভবিষ্যতে গ্রানাডার বাদশা বানানোর এক মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক চুক্তির বিনিময়ে ম্যাপটি হাতিয়ে নেয়। বদর ও মুহাব ঐ ব্যবসায়ীকে সতর্ক করতে যায় কিন্তু তারা দেরি করে ফেলে এবং ব্যবসায়ীর লোকজন তাদের হত্যা করতে চায়। কিন্তু বদর তার অপ্রতিদ্বন্দ্বী রণকৌশল দিয়ে তাদের হত্যা না করেই পরাজিত করে।
রড্রিক ঐ ম্যাপ নিয়ে চলে গেলেও সেই বোবা মুসলিম গুপ্তচর আমর রড্রিকের ঘোড়ার ক্ষুরে লোহা লাগিয়ে দেয় যাতে তার পদচিহ্ন অনুসরণ করা যায়। ঐ পদচিহ্ন দেখে দেখে বদর ও মুহাব রড্রিকের পিছু নেয়। আবার এদিকে সেই বিশ্বাসঘাতক ব্যবসায়ী গোয়েন্দা রড্রিককে অনুসরণ করার কথাটি জানানোর জন্য একটি শক্তিশালী ঘোড়াসহ তার চাকরকে পাঠায় এবং সেই চাকর রড্রিককে সাবধান করে দেয়।
চিহ্ন অনুসরণ করতে করতে বদর ও মুহাব রড্রিকের যাত্রা বিরতির স্থানে পৌঁছে যায়। কিন্তু ওখানকার লোকেরা আগে থেকেই তাদের আগমনের খবর জানতে পেরে ওঁৎ পেতে থাকে এবং আক্রমণ করে তাদের দু’জনকেই জখম করে ফেলে। পরে আমর এসে তাদের সাহায্য করে এবং তারা পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। কিন্তু ধোঁকা দেয়ার জন্য রড্রিক আগেই অন্য ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কর্ডোভার দিকে। এদিকে বিশ্রামাগারের মালিক দূতের মাধ্যমে রড্রিককে জানিয়ে দেয় যে আন্দালুসিয়ার অশ্বারোহী আবার তার পিছু নিয়েছে এবং কবুতরের মাধ্যমে রানী ইসাবেলাকেও তা জানিয়ে দেয়। রানী ইসাবেলা রাজা ফার্ডিন্যান্ডকে বলে এবং সে রড্রিকের সাহায্যের জন্য সৈন্য পাঠায়।
বদর পিছু নিয়ে রড্রিককে ধরে ফেলে। এবং তাকে অস্ত্রযুদ্ধে পরাজিত করে ম্যাপ নিয়ে নেয় এবং তা এসিড দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এরপর রড্রিককে ছেড়ে দেয়। কিন্তু রড্রিক বলে যে, সে ম্যাপ মুখস্থ করে নিয়েছে! তাই বদর রড্রিককে আবার তলোয়ার তুলে মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু তখন রাজা ফার্ডিন্যান্ড এর পাঠানো সৈন্য এসে বদরকে ঘিরে ধরে ও আটকে ফেলে।
তখন বদর বলে, কী লজ্জা! তুমি কেমন যোদ্ধা, রড্রিক! তুমি যোদ্ধা হওয়ার যোগ্য নও, যোদ্ধারা নিজেদের শক্তিতে লড়াই করে, অন্যদেরকে তাদের সাহায্য করতে ডাকে না। তখন রড্রিক বলে, আমি নিয়ম জানি না, আমি বুঝি সত্যিকারের যোদ্ধা যে কোন উপায়ে যুদ্ধে জিততে চায়। তখন সে তার সাহায্যকারীদের বলে, তার গলা নামিয়ে দাও। তখন বদর বলে, না হে বেঈমান, আমার মাথা আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য নত হয় না।
ততক্ষণে মুহাব ও আমর ওখানে এসে যায় এবং আমর তীর দিয়ে রড্রিককে হত্যা করে। এভাবে শেষ পর্যন্ত সত্য ও ইসলামের জয় হয়। মুসলিমদের স্পেন থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ।
এভাবে যুগে যুগে অসংখ্য বীর ইসলামকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা ও লড়াই করে গিয়েছেন যা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার। তাদের মত আমরাও যেন সত্যের পথে অটল থেকে মিথ্যার বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করে যেতে পারি, আমিন।
ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস ও মুসলিমদের বীরত্ব গাথা এই কার্টুনটি অ্যাডভেঞ্চার, উত্তেজনা ও শিক্ষণীয় উপাদানে ভরপুর। এই অসাধারণ কার্টুনটি সিডি আকারে পাওয়া যাচ্ছে। ইউটিউব (https:/ww/w.youtube.com/watch?) থেকেও দেখা যেতে পারে। এ রকম আরো সুন্দর সুন্দর কার্টুন সম্পর্কে জানতে ও দেখতে এই ফেসবুক পেজটি লাইক করা যেতে পারে https:/ww/w.facebook.com/IslamiCartoon