Home খেলার চমক ফিরে দেখা- এশিয়া কাপ

ফিরে দেখা- এশিয়া কাপ

আল হেলালী

Cupক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তির ঘাঁটি দক্ষিণ এশিয়া। এই অঞ্চলের ক্রিকেটপ্রেমীদের আবেগ অনুভূতি যেন ক্রিকেট মানচিত্রে বিশ্ববাসীর প্রেরণার উৎস। আর তাই সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো যে মাটিতে প্রতিনিয়ত ক্রিকেটের সম্ভাবনার বারুদ ফিনকি দেয় সেখানে একটু আগুন ঢেলে দিতে ১৯৮৪ সালে প্রথম আয়োজন করা হয় এশিয়া কাপের। পাকিস্তান বনাম আইসিসির তৎকালীন নতুন সদস্য শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ম্যাচের উত্তাপ দিয়ে শুরু হয় এশিয়ার ক্রিকেট-মোদীদের প্রাণের উৎসব। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের নতুন সদর দফতর সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ শহরটি নেয়া হয়েছিল এর ভেনু হিসাবে। টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল রাউন-রবিন টুর্নামেন্ট। খেলা হয়েছিল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে। দুটি বিজয়ের সাথে ভারত পায় টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলের মুকুট। প্রথম আসরেই ক্রিকেটবিশ্বে এক সাড়া জাগানো ভালবাসায় সিক্ত হয় এশিয়া কাপ। এর পরের গল্প শুধুই এগিয়ে যাবার।
১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপের দ্বিতীয় আসর বসে। যার হোস্ট ছিল শ্রীলঙ্কা। আর এটা ছিল প্রথম কোন বহুজাতিক ক্রিকেট সিরিজ যা সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর মজার ব্যাপার হলো সেইবার বাংলাদেশ প্রথম যোগ দিয়েছিল এশিয়া কাপের আসরে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার সাথে আগের বছরের বিতর্কিত সিরিজের হীন ক্রিকেট সম্পর্কের কারণে ভারত সে টুর্নামেন্ট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ী হয়ে নিজ মাটিতেই ট্রফি ধরে রাখে।
তৃতীয় পর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে এটাই ছিল বাংলাদেশে প্রথম কোন বহুজাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। ফাইনালে ভারত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলে ৬ উইকেটে জয়ী হয়েছিল এবং একই সাথে দ্বিতীয়বারের মত কাপ জয় করে।
চতুর্থ পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ভারতে ১৯৯০-৯১ সালে। কিন্তু সেই বারের টুর্নামেন্ট পাকিস্তান বর্জন করে বের হয়ে গিয়েছিল ভারতের সাথে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে। অবশেষে ভারত টুর্নামেন্ট স্থগিত না করে শ্রীলঙ্কার সাথে ফাইনাল খেলে আবারও কাপ তুলে নেয়।
১৯৯৩ সালের টুর্নামেন্টটি বাতিল করা হয় ভারত ও পাকিস্তানের অমীমাংসিত হীন রাজনৈতিক কারণে।
তারপর ১৯৯৫ সালে পঞ্চম বারের মত টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর সিরিজটি আবার শারজাহতে ফিরিয়ে নেয়া হয়। কর্তব্যপরায়ণ খেলে পাকিস্তানের চেয়ে ভাল রান নিয়ে ভারত ও শ্রীলঙ্কা ফাইনালে পৌঁছেছিল। সেখানে তিনটি দলেরই পয়েন্ট ছিল সমান। ধারাবাহিকভাবে চতুর্থবারের মত এশিয়া কাপ ফাইনালে জয়ী হয় ভারত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলে।
ষষ্ঠ পর্বের টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলঙ্কাতে ১৯৯৭ সালে। ফাইনালে শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে ভারতের বিপক্ষে জয় নিয়ে কাপ নিজেদের ঘরে তোলে। আর দ্বিতীয় বারের মত কাপে জয়ী হয়ে ভারতকে ধারাবাহিক কাপ বিজয় থেকে রুখে দেয়।
২০০০ সালে দ্বিতীয়বারের মত বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া কাপের সপ্তম আসর। ভারত সেইবার মাত্র একটি ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশের বিপক্ষে। আর এরই সাথে প্রথমবারের মত ফাইনালে খেলার যোগ্যতা হারায়। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ফাইনাল খেলে প্রথমবারের মত এশিয়া কাপ জয়ী হয় পাকিস্তান।
দীর্ঘ চার বছর বিরতির পর ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কায় অষ্টম এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় এশিয়া কাপের টুর্নামেন্ট ফরম্যাটে পরিবর্তন আনা হয়। অন্যান্য এশীয় দল ইউই এবং হংকং অংশ নিয়েছিল প্রথমবারের মত। টুর্নামেন্টটি তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছিল। ‘গ্রুপ পর্যায়’, ‘রাউন্ড-রবিন সুপার ফোর’ এবং ফাইনাল।
শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান প্রত্যাশিতভাবে নিজেদের গ্রুপ সেরা হয়। ইউ এই হংকং গ্রুপ থেকে বাদ পড়ে যায়। বাংলাদেশ বড় ধরনের কোন টুর্নামেন্টে প্রথম বারের মত দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়। কিন্তু সুপার ফোরে খুবই দুর্বল খেলে বাদ পড়ে যায়। ভারত ও শ্রীলঙ্কা সুপার ফোরে সেরা হয়ে ফাইনালে মুখোমুখি হয়। ফাইনালে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ২৫ রানে ভারতকে হারিয়ে কাপ পুনরুদ্ধার করে।
২৪ জুন ২০০৮ এ আগেরবারের ফরম্যাট অপরিবর্তিত রেখে নবম এশিয়া কাপের আয়োজন করা হয় পাকিস্তানে। এবারের স্বাগতিক পাকিস্তান ‘গ্রুপ পর্ব’ এবং ‘সুপার ফোর’ এ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে আর এগোতে পারেনি। শ্রীলঙ্কা ও ভারত ফাইনালে পৌঁছে যায়। শ্রীলঙ্কা চারবারের মত এশিয়া কাপ ট্রফি বিজয়ী হয়ে ভারতে সমকক্ষতা অর্জন করে।
দশম পর্বের টুর্নামেন্ট ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। যা ছিল এশিয়া কাপের চতুর্থ বারের মত স্বাগতিক দেশের মর্যাদা। এটাতে শুধুমাত্র চারটি টেস্টের মর্যাদা পাওয়া রাষ্ট্র খেলেছে এবং মাত্র সাত ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ধারাবাহিকভাবে আবারো ভারত ও শ্রীলঙ্কা ফাইনালে মুখোমুখি হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর পর শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ভারত পঞ্চম বারের মত এশিয়া কাপ বিজয়ী হয়। যা সর্বাধিক চ্যাম্পিয়ন হবার কৃতিত্ব বয়ে আনে।
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে ২০১২ সালের ১১ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া কাপের একাদ্বশতম আসর। সেই বারই স্বাগতিক বাংলাদেশ প্রথমবারের মত ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান একটুর জন্য রোমাঞ্চকর ২ রানে বিজয়ী হয়। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর অধ্যায়।
প্রথমবারের মত টুর্নামেন্টের ইতিহাসে বাংলাদেশ ফাইনালে জায়গা করতে ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল। কিন্তু ফাইনালে মাত্র ২ রানের ব্যবধানে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছুঁয়ে দেখা হয়নি সাকিব তামিমদের। বাংলার কোটি ক্রিকেটপ্রেমীকে কাঁদিয়ে অবশেষে ২০০০ সালের পর দ্বিতীয়বারের মত এশিয়া কাপের ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করে মিসবাহ-উল হক, আফ্রিদিরা।
দুই বছর পর আবারো এশিয়া কাপের উত্তাপ গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। এরই সাথে চতুর্থ বারের মত এশিয়া কাপের স্বাগতিক দেশের মর্যাদা পেল বাংলাদেশ। এখন শুধুই অপেক্ষার পালা। টাইগাররা কি পারবে এশিয়ার ক্রিকেট অধিপতি হতে? দু’বছর ধরে যে কষ্ট কোটি দর্শক লালন করে বেড়াচ্ছেন এবার তা থেকে পরিত্রাণের স্বপ্নে বিভোর বাংলার কোটি কোটি ক্রিকেট ফ্যান।

SHARE

Leave a Reply