আসাদুজ্জামান অসাদ রানা
এক অনাবিল অকাক্সক্ষা নিয়ে স্কুল থেকে গেলাম শিক্ষাসফরে। এটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম শিক্ষা সফর। আমি কোনদিন এ সফরের কথা ভুলব না।
আমাদের শিক্ষা সফরে যাওয়ার স্থান হল নাটোরের রাজবাড়ী ও বগুড়া মহাস্থানগর। বগুড়ার নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলÑ সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগারা খান ১২৭৯ থেকে ১২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। আর তাঁর নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে বগরা বা বগুড়া।
আমরা স্কুলে বন্ধুরা প্রায় বাহান্ন ও আমাদের তিনজন শিক্ষক আমাদের সাথে গিয়েছিলেন। তাঁরা আমাদের প্রতি খুব যতœ রেখেছিলেন। আমরা সকালে সাতটা ত্রিশ মিনিটে বাসে করে রওনা দিলাম। বাসে প্রচুর হৈ হুল্লোর করলাম। বাসটি খুব জোরে চলছিলনা। তার প্রধান কারণ বাস চালক খুব একটা অভিজ্ঞ ছিল না। তাই আমাদের নাটোরের রাজবাড়ী পৌঁছাতে একটু দেরি হলো। প্রায় তখন দশটা পনের বাজে। আমরা সবাই বাস থেকে নামলাম। আর সেখানেই আমাদের নাস্তার ব্যবস্থা। কিন্তু আমরা সঙ্গে করে নাস্তা নিয়ে গিয়েছিলাম তাই আর দেরি হয়নি। আমার এবং সবার প্রিয় শিক্ষক আব্দুল কাদের স্যার সবার হাতে একটি করে নাস্তার প্যাকেট দিলেন। এতে ছিল একটি পাউরুটি, কলা, মিষ্টি, সেদ্ধ ডিম। বেশ ভালই লাগল। আর তাছাড়া আমরাতো সেখানে ঘুরতে গেছি। খাওয়া খুব বড় কথা নয়।
চারিদিক ঘুরলাম। বন্ধুরা মিলে বেশ ছবি তুললাম। এক বিশাল জায়গা। দেখে খুব ভাল লাগল। এখানে আর বেশিক্ষণ থাকলাম না। কারণ, আমাদের আসল গন্তব্যস্থান মহাস্থানগড়। আমরা এগারোটা পনের মিনিটে রওনা দিলাম। আমাদের পৌঁছাতে প্রায় একটা ত্রিশ বাজে। গিয়ে দেখি অন্যান্য পর্যটক যারা এসেছে তাদের খাওয়া প্রায় শেষ। সে যাই হোক আগেই বলেছি ঘুরতে এসেছি খাওয়া দাওয়া খুব বড় ব্যাপার নয়।
স্যার আমাদের বললেন (আবদুল কাদের) যাও তোমরা পাঁচ ছয়জন করে ভাগ হয়ে চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখ।
আমরা সবাই বেরিয়ে পড়লাম। আমার সাথে ছিল আমার প্রিয় বন্ধুরা। তারা হলো, সিহাব আনোয়ার নিয়ামত, ফয়সাল ও নূরফিরোজা আমরা আশপাশটা একটু দেখলাম। তারপর চলে গেলাম বেহুলার বাসর ঘর দেখতে। বেহুলার বাসর ঘর দেখার ইচ্ছাটা আমার ছিল বেশি। কিন্তু আমার বন্ধুদেরও কিন্তু কম ছিল না। যাইহোক একটা অটোরিকশা ভাড়া করে চলে গেলাম। দশটাকা দিয়ে টিকেট কেটে আমরা সেখানে ঢুকলাম।
বেহুলার বাসরঘর হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম কোপে গোকুল কেমধ বা মেড়ে।
অনেক ছবি তুলেছি। আমারা সেখান থেকে চলে আসি সরাসরি গোবিন্দ ভিটায়। সেখানে পাঁচ টাকা দিয়ে টিকিট কাটলাম। এপর মিউজিয়ামে ঢুকলাম। টিকিটের মূল্য দশ টাকা নিল। প্রধান গেট দিয়ে ঢুকেই দেখলাম অনেক ধরনের ফুলে গাছ। বাহ! কি মজাই না লগাছিল। মিউজিয়ামের ভিতর দেখে এসে আবারো ছবি তুলতে মেতে গেলাম। এরপর আমরা আমাদের ক্যাম্পে ফিরে এলাম। প্রায় পাঁচটা বাজে। আমরা দুপুরের খাবার খেলাম। বেশ ভালই হয়েছিল রান্নাটা। পোলাও গোশত, শশা দই, তার সাথে ঠাণ্ডা পানীয়।
এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমরা সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সেখান থেকে রওনা দিলাম। সারাদিনে সবাই যেন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সবাই চিৎকার শুরু করলাম। অবশেসে আমরা আমাদের স্কুল হরিমোহনে পৌঁছালাম প্রায় পৌনে বারটায়। সবাই নিজেদের বাসায় চলে গেল একের অপরজনকে বিদায় জানিয়ে। বাসায় আসলাম বারটা দশটা মিনিটে। এসে ড্রেস পাল্টিয়ে লম্বা এক ঘুম। সফরটা ছিল একদিনের কিন্তু এই সফরের কথা চিরদিন মনের মাঝে স্মৃতি হয়ে থাকবে।