রাফিউল ইসলাম
¯িপ্রন্ট ট্র্যাকে উসাইন বোল্ট। তাকে কেউ পেছনে ফেলছেন, বহুদিন তা নজরে পড়েনি অগণিত গতিপ্রেমীর। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের এই জ্যামাইকান কিংবদন্তিও বোধ হয় অপেক্ষায় আছেন কেউ তাকে পেছনে ফেলছে, তা দেখার জন্য? যদিও তার দেহ নামক ‘ইঞ্জিন’ এখনো যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে, তাতে শিগগিরই ওই আশা পূরণের সম্ভাবনা খুব কম।
ট্র্যাকে বোল্টের প্রতাপে অন্যরা কেবলই পেছনে দৌড়াচ্ছেন। ফলে সদ্য সমাপ্ত মস্কো অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের আসর থেকেও ট্রেবল (৩টি স্বর্ণ) সাথে করে দেশের পথ ধরেছেন তিনি। অবাক করার বিষয় হলো, ট্রেবল জয়ে তাকে সেরাটাও দিতে হয়নি। ১০০, ২০০ ও ৪ঢ১০০ মিটার রিলের স্বর্ণ উঠলো তার গলায়।
ট্রেবল জয়ের ঘটনা বোল্টের ক্যারিয়ারের প্রথম নয়। বেইজিংয়ের পর লন্ডন অলিম্পিকেও ওই তিন ইভেন্টের স্বর্ণজয়ের বিরল কৃতিত্ব গড়েন তিনি। তবে মস্কোতে তার ট্রেবল অর্জনের গুরুত্ব অন্য খানে। এখন অফিসিয়ালিই চ্যাম্পিয়নশিপ ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অ্যাথলেট তিনি। ৮ স্বর্ণ ও ২ রৌপ্য জয়ে সবাইকেই ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এখনো পদকের ক্ষুধা মেটেনি তার। জানিয়ে গেলেন, আসছে রিও অলিম্পিকের পদকও চাই!
মস্কোতে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় সোনাটি জিতে নিয়ে অনন্য এক ইতিহাস গড়েছেন জ্যামাইকার গতিমানব উসাইন বোল্ট। ৪ঢ১০০ মিটারের রিলেতে সোনা জিতে তিনি স্পর্শ করলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে কার্ল লুইস, মাইকেল জনসন ও অ্যালিসন ফেলিক্সের আটটি সোনা জয়ের অনন্য রেকর্ড।
রিলেতে প্রথম দুই ব্যাটন বদলানোর সময় এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ¯িপ্রন্টাররা। কিন্তু তাতে কি, চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে ব্যাটন যে হাতে নিয়েছেন বোল্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ¯িপ্রন্টারকে অনায়াসেই ছাড়িয়ে গেলেন তিনি। মোট সময় লাগলো ৩৭.৩৬ সেকেন্ড।
মস্কোতে এর আগে ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ের সোনা জিতেছিলেন বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্ট। আর ২০০৯ সালে বার্লিন চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার ২০০ মিটার ও ৪ঢ১০০ মিটার দৌড়ে সোনা জেতা বোল্ট ২০১১ সালের দেগু আসরে কেবল ১০০ মিটারের শিরোপা হারিয়েছিলেন ফলস স্টার্টের জন্য। ২০০৮ ও ২০১২ সালের অলিম্পিকেও ১০০ মিটার ২০০ মিটার ও ৪ঢ১০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছিলেন ২৬ বছর বয়সী এই গতিদানব।
রিলের এই সোনাসহ বিশ্ব চ্যম্পিয়নশিপের সব আসর মিলিয়ে বোল্টের সোনার সংখ্যা দাঁড়ালো ৮টিতে। বিশ্বসেরা হয়ে ওঠার আগে বিশ্ব চ্যম্পিয়নশিপে দুটি রৌপ্যপদকও জিতেছিলেন তিনি। সে হিসেবে বোল্টের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ১০টি পদক পাওয়া অ্যাথলেট আছেন একজনই, যুক্তরাষ্ট্রের নারী ¯িপ্রন্টার অ্যালিসন ফেলিক্স। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেলায় ছাড়িয়ে যাওয়া, নানা অঙ্গভঙ্গিতে দর্শকদের মন জয় করে নেয়া বোল্টই যে সর্বকালের সেরা অ্যাথলেট তাতে আর আপত্তি নেই কারোরই।
বর্ষসেরা অ্যাথলেট হলেন বোল্ট
ক্রীড়া সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থার (এআইপিএস) ২০১২ সালের বর্ষসেরা অ্যাথলেটের পুরস্কার পেয়েছেন জ্যামাইকার গতিমানব উসাইন বোল্ট। গত বছরের লন্ডন অলিম্পিকে অসাধারণ পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার পেয়েছেন ২৬ বছর বয়সী এই তারকা।
লন্ডন অলিম্পিকে ১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও ৪ঢ১০০ মিটারে টানা দ্বিতীয় আসরের মতো সোনা জিতেছিলেন বোল্ট। ১৭ আগস্ট মস্কোয় অনুষ্ঠানরত চতুর্দশ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ২০০ মিটারে টানা তৃতীয়বারের মতো সোনা নিশ্চিত করার পরপরই বোল্টের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন ত্রিনিদাদ এক্সপ্রেসের ক্রীড়া সাংবাদিক কোয়াম লরেঞ্চ।
এছাড়া লাতিন আমেরিকারও সেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হন বোল্ট।
অসামান্য এই সম্মান পেয়ে দারুণ খুশি অলিম্পিকের ছয়টির পাশাপাশি বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সে এ পর্যন্ত আটটি সোনাজয়ী বোল্ট। তিনি বলেন, “বেশ কয়েক বছর ধরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার উঠাবসা। তাই তাদের দ্বারা সেরা বিবেচিত হওয়াটা সবসময়ই ভালো লাগার।” কিছুটা কৌতুক করে তিনি বলেন, “তাহলে আমি তাদেরকে (সাংবাদিকদেরকে) যতটা খারাপ জানতাম, তারা ততটা খারাপ নয়।”