(গত সংখ্যার পর)
আফরোজা পারভীন
নয়.
চুকনগরে খন্দকার সাহেবের খুব নাম। শুধু চুকনগর কেন আশপাশ দশ গ্রামে তার সুনাম। লোকে বলে মানুষ ধনী হলে নাকি তার আচার আচরণ বদলে যায়। কিন্তু খন্দকার সাহেবের বেলায় সে কথা খাটে না। বড় সাদাসিধে মানুষ এই খন্দকার। আর বড়লোক হওয়া কথাটা খন্দকারের বেলায় খাটে না। তিনি হালের বড়লোক না। তারা তিন-চার পুরুষ ধরে বড়লোক। মানুষ হিসেবে তার বড় সুখ্যাতি। দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসে তার কাছে পরামর্শ নিতে। গ্রামের মসজিদ কমিটি, স্কুল কমিটি থেকে শুরু করে সব সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের তিনি সভাপতি। দান খয়রাতও করেন মুক্তহস্তে। তার কাছে চেয়ে কেউ কখনও খালি হাতে ফিরছে এমন উদাহরণ নেই এ তল্লাটে। গরিবের অভাবে অভিযোগে দারিদ্র্যে খন্দকার সাহেব পাশে এসে দাঁড়ান। সাহায্য সহযোগিতা করেন। এ এলাকায় না খেতে পেয়ে কেউ মারা যায় না শুধু খন্দকার সাহেবের জন্য। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত খন্দকার সাহেবের বৈঠক বাড়িতে লোকজনের আগমন চলতেই থাকে। খন্দকার সাহেবও তার জন্য নির্ধারিত কাঠের খানদানি চেয়ারটাতে বসে ওদের বক্তব্য শোনেন। যাকে পরামর্শ দেয়ার পরামর্শ দেন, যাকে সাহায্য দেয়ার সাহায্য দেন। গ্রামের কতো মানুষের ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ যে জুগিয়েছেন খন্দকার সাহেব, কতজনের মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন, কত মরণাপন্ন লোককে চিকিৎসার খরচ দিয়েছেন, কত গরিব দুঃখীকে ঘর বেঁধে দিয়েছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। ব্যক্তিজীবনে খন্দকার সাহেব বড় সুখী। স্ত্রী আনোয়ারা তার যোগ্য সহধর্মিণী। তাকে গ্রামের ছেলে বুড়ো সবাই ডাকে কর্তামা। আর আনোয়ারা বেগমও মাতৃস্নেহে সবাইকে কাছে টেনে নেন। ছেলেমেয়ে দু’জনেই শহরে থেকে পড়াশুনা করে। মেয়ের ভালো একটা বিয়ের সম্বন্ধ আছে। তাদের মতোই চার কুলের ধনী পরিবার। ছেলে বিলেত থেকে ডাক্তারি পাস করে বড় চাকরি পেয়েছে বিলেতে। বিয়ে করে মেয়েকে বিলেতে নিয়ে যাবে। এ জন্য খন্দকার খন্দকারগিন্নি দু’জনেরই মন খারাপ। কিন্তু মন খারাপ করে থাকলে তো চলবে না। এ জেনারেশনের প্রথম বিয়ে। সমস্ত গ্রামের লোক দাওয়াত পাবে। মেয়েকে এমনভাবে সাজিয়ে দিতে হবে আশপাশ দশ গ্রামের কেউ কখনও যা সাজাতে পারেনি। শুধু খন্দকার বাড়ি না, গ্রাম জুড়ে তোড়জোড়। বিয়েতে কে কতো খাটবে তারই যেন প্রতিযোগিতা চলছে। শহর থেকে অর্ডার দিয়ে হীরের গয়না বানিয়ে আনা হয়েছে। কতো রকমের তো সেট। মুক্তা চুনি পান্না শুধু সোনা। খন্দকার আবার বলে বসলেন বানাচ্ছিই যখন ছেলের বিয়ের গয়নাও একই সাথে বানিয়ে ফেলি। তা সে গয়নাও এসেছে। দিন দুয়েকের মধ্যে মেয়ে বাড়ি আসবে। এরপর বিয়ের মাঝে আর মাত্র কয়েকটা দিন। এলাহি আয়োজন হয়েছে খাওয়া দাওয়ার। এ তল্লাটের সেরা বাবুর্চিকে খবর দেয়া হয়েছে আগে ভাগেই। যদি ওই দিন হাতে কোন কাজ তাকে তাহলে সর্বনাশ। বাবুর্চি খন্দকারের আশঙ্কা এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, একটা নয়, দশটা বায়না থাকলেও তা ফেলে দিয়ে আমি চলে আসবো। কর্তার মেয়ের বিয়ে বলে কথা! আর হ্যাঁ আমাকে যেন কেউ টাকা নিতে না বলে। কর্তার মেয়ের বিয়েতে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো রান্নাটা রেঁধে দেব এটাই আমার উপহার। গ্রামের মেয়েরা অন্দরমহলে সারাদিনই খাটা খাটুনি করছে। বিয়ে বাড়িতে কতো রকমের কতো কাজ। এরা কেউ এ বাড়িতে কাজ করে না। সবাই এসেছে মনের তাগিদে।
সব চলছে ভালো। মানুষের ভালোবাসা দেখে খন্দকার সাহেব অভিভূত। এতো ভালোবাসার কি তিনি যোগ্য! সেদিন খন্দকার সাহেব রাতের খাওয়ার পাট চুকিয়ে সবে একটা পান মুখে দিয়েছেন তখনই খাস চাকর রহমত এসে বলল, কর্তা ভিন গাঁ থেকে চারজন লোক এসেছে। আপনার সাথে দেখা করতে চায়।
আমি এখন বড় ক্লান্ত রহমত। ওদের বল কাল সকালে আসতে। বলেই কি যেন ভাবেন খন্দকার। না থাক। ওরা দূর থেকে এসেছে। নিশ্চয়ই ওদের জরুরি কোন বিষয় আছে। ফিরিয়ে দেয়া ঠিক হবে না।
খন্দকার পায়ে স্যান্ডেল গলিয়ে বৈঠক ঘরের দিকে অগ্রসর হন। ঘরে ঢোকা মাত্র ওরা বিনয়ের সাথে সালাম করে। খন্দকারও হাসিমুখে সালামের জবাব দিয়ে চেয়ারে বসেন। ওদের বসতে বলে। কিন্তু ওরা না বসে দাঁড়িয়েই থাকে।
দাঁড়িয়ে আছেন কেন, বসুন। একটু বিশ্রাম নিন। শুনলাম আপনারা ভিন গাঁ থেকে এসেছেন। নিশ্চয়ই খুব জরুরি কোনো ব্যাপার। বসুন, তারপরে বলুন এতো দূর থেকে এতো কষ্ট করে কেন এসেছেন?
ওরা চারজন খন্দকার সাহেবের চারপাশে ঘিরে দাঁড়া। খন্দকার তা বুঝতে পারেন না। চাকর রহমতের কি যেন সন্দেহ হচ্ছিল। খন্দকারকে ইশারায় সাবধান করতেও চাচ্ছিল। তার আগেই ঘটনা ঘটে যায়। ওদের একজন অস্ত্র উঁচিয়ে ধরে। অন্য তিনজন মুখ বেঁধে ফেলে খন্দকার আর রহমতের। একজন হিসহিসে কণ্ঠে বলে, আলমারি সিন্দুক যে ঘরে আছে সে ঘরে নিয়ে চল। সময় নষ্ট করার সময় আমাদের নেই। আমরা চাই টাকা পয়সা সোনা-দানা।
খন্দকার যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারেন না। এ তল্লাটের কেউ তার মুখে ওপর ছুরি উঁচিয়েছে এটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু এসব বলার সময় ওরা খন্দকারকে দেয় না। ধাক্কা দিতে দিতে নিয়ে চলে অন্দরমহলের দিকে। শয়নগৃহে ঢোকার পর এ অবস্থা দেখে গিন্নি চিৎকার করতে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তার মুখ চেপে ধরে ডাকাত। মুখ বেঁধে ফেলে। ওরা ঘুরে ঘুরে আলমারি দেখে সিন্দুক দেখে। অনেক বড় সিন্দুক।
মজবুত তালা সে সিন্দুকে।
আলমারি সিন্দুকের চাবি কোথায়? ছেলেমেয়ের বিয়ের গয়না কোথায়?
খন্দকারের চোখের ইশারায় বউ চাবি দিয়ে দেন। ওরা ওদের হাত-পা বেঁধে রেখে এক একজন এক একটা খুলতে থাকে। আলমারি খুলে ওদের চক্ষু চড়কগাছ। এক সঙ্গে এতো টাকা ওদের ডাকাতি জীবনে দেখেনি। সিন্দুক খুলে ওরা হাঁ। এ যে সাত রাজার ধন সোনা গয়না মণিমাণিক্য। তারা সব সময় বেছে বেছে টার্গেট করে ডাকাতি করে। ফলে ডাকাতি থেকে সব সময়ই তারা ভাল সম্পদ আয়ত্ত করে। কিন্তু এমনটি কখনও হয় না। এতো সম্পদ যে কারো বাড়িতে থাকতে পারে এটা অবিশ্বাস্য। এতো সোনাদানা টাকা পয়সা হাতে করে নেয়া সম্ভব না। বস্তা দরকার। রহমতের দিকে তাকিয়ে ওরা বলে, এইযে চাকর বাবাজি একটা বস্তা দাও তো।
রহমত হাঁটতে শুরু করে। ওরা সাথে গিয়ে বস্তা নিয়ে আসে। এবার তিনজন মিলে বস্তায় গয়না আর টাকা ভরতে থাকে। ডাকাত সর্দার শমসের তাদের কাভার দেয়। টাকা ভরতে ভরতে ডাকাত গামা বলে, সর্দারজি টাকা গয়না ছাড়াও বহু মূল্যবান জিনিস আছে। এই যে কাঁসা পেতলের জিনিসগুলো নেবো?
আরে না, কোন ভারী জিনিস ধরবি না। তাড়াতাড়ি কর।
কথা শেষ হওয়ার আগেই ঘটে যায় ঘটনাটা। খন্দকার সাহেব কিছুতেই মেনে তিনি পারছিলেন না যে তার গ্রামে এভাবে ডাকাতি হবে। তা সারা জীবনের অর্জন এভাবে বেহাত হয়ে যাবে। গ্রামের লোকজন যদি একবার বুঝতে পারে তার বাড়িতে ডাকাতি হচ্ছে তাহলে এদের তারা ছিঁড়ে ফেলবে। অগ্রপশ্চাৎ চিন্তা না করে সেই চেষ্টা করতে যায় খন্দকার সাহেব। আস্তে আস্তে হাতের বাঁধন খুলে ফেলেন। এবার টান দিয়ে মুখের বাঁধন খুলে ফেলে দৌড়ে চলে যান জানালার পাশে। কে কোথায় আছো ডাকাত পড়েছে আমার বাড়িতে। ডাকাত ডাকাত।
শমসের ডাকাত মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। তারপর ছুটে আসে খন্দকার সাহেবের দিকে। হাতের ছুরি দিয়ে তার বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়। সামান্য একটু আর্তচিৎকার করে ধপ করে পড়ে যান খন্দকার। এ দৃশ্য দেখার সাথে সাথে জ্ঞান হারায় তার স্ত্রী। আর রহমত পরিস্থিতির ভয়াবহতায় একেবারেই চুপ করে যায়।
এটা কী করলেন সর্দার। এতক্ষণ এটা ছিল শুধুমাত্র ডাকাতি। এখন এটা হয়ে গেল মার্ডার। কাল সকালে পুলিশ বাহিনী সারা এলাকাতে ধর পাকড় করবে। জনপ্রিয় লোক উনি।
কী করব চেঁচাতে শুরু করল যে। যাকগে নে তাড়াতাড়ি বস্তা উঠিয়ে ছোট। গ্রামের লোক শুনে থাকলে এখনই ছুটে আসতে শুরু করবে।
ওরা বস্তা কাঁধে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসে। একটু পর পর কাঁধ বদলায়।
এখন কোথায় যাবেন সর্দার? সকাল হলে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করবে যে।
তাইতো কোথায় যাওয়া যায়। দ্রুত পা চালা দেখি। পা চালা আর চিন্ত কর।
সবচেয়ে কম বয়সী ডাকাত মোহন বলে, সাত-আট মাইল দূরে একটা অতি প্রাচীন বাড়ি আছে। ও বাড়ি নিয়ে অনেক গল্প। ওই বাড়িতে গেলে কেউ নাকি আর ফেরে না। দারোগা, পুলিশও নাকি ভয়ে ওই বাড়িতে যায় না। ওখানে যাওয়া যেতে পারে।
কিন্তু আমরাও যদি না ফিরি?
আরে দুর আমাদের গায়ে কে টোকা দেবে।
তাহলে চল, তুই আগে আগে পথ দেখিয়ে নিয়ে চল।
আট মাইল পথ হেঁটে ওরা শেষ রাতের দিকে বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ায়। আকাশে খয়ে যাওয়া চাঁদ। তার ম্লান জোছনা বাড়িটার ওপর পড়ে এক আলো-আঁধারি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এতো রাতে দরজা খুলে শব্দ হওয়ার ঝুঁকি ওরা নেয় না। একে একে দেয়াল টপকায়। বিস্তীর্ণ উঠোন পেরিয়ে ওরা ঢুকে পড়ে মূল বাড়িতে। ঘরগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকার। সাথে মোম নেই বা কোন লণ্ঠনের ব্যবস্থাও নেই যে ওরা জ্বালাবে। ওরা একের পর এক দেশলাইয়ের কাঠি জ্বেলে ঘরগুলো পেরোতে থাকে। কোন ঘরই ওদের পছন্দ হয় না। ঘরগুলো সবই ব্যবহারের অযোগ্য। ঘর থেকে বেরিয়ে ওরা কাঠের সিঁড়িটার কাছে এসে দাঁড়ায়। মুহূর্তমাত্র চিন্তা করে তারপর তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় উপরে। সিঁড়ির মাথায় বড়সড় একটা করিডোর। তার দু’পাশে অনেকগুলা ঘর। দুটো ঘর পেরিয়ে তৃতীয় ঘরটাতে এসে ওরা থেমে যায়। এ ঘরটা বেশ বড়। ওরা অনেকগুলো দড়ি দেখে দড়িতে আগুন লাগিয়ে ঝুলিয়ে দেয়। ওরা কাঁধ থেকে বস্তাটা নামিয়ে ফেলে। শমসের ডাকাত বলে, খুলে দেখতো কী আনলাম। আর কিসের জন্য একটা মানুষ খুন করলাম।
এসব সোনাদানা মণিমুক্তো হীরে জহরত খন্দকারের বাড়িতে আগেও তারা দেখেছে। কিন্তু তখন এগুলো ছিল অনেক সম্পদ। এখন তাদের নিজস্ব সম্পদ।
করেছিস কী তোরা। এ যে কোটি টাকার সম্পদ। তিন পুরুষ বসে খেলেও ফুরোবে না। নে এখন ভাল করে মুখটা বাঁধ। এক কাজ করে। তোরা তাড়াতাড়ি ঘরটা পরিষ্কার করে ফেল। এ ঘরেই আমরা থাকব। কমপক্ষে আগামী তিন চার মাস এ বাড়িতে থাকতে হবে। কিন্তু খাবো কী সেটাই সমস্যা। এ বাড়িতে যদি কিছু পাওয়া যায় ভালো। নইলে কাল সকালে লুকিয়ে চুরিয়ে বেশ কিছু খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। বেশি করে চাল ডাল কিনে ফেলতে হবে যাতে তিন চার মাস কোন সমস্যা না হয়। চুকনগর থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। আশা করি এ গ্রামের কেউ আমাদের চিনবে না। তবে মাত্র একবারই বেরোবি। আর না। কি কি কিনতে হবে রাত্রেই লিস্ট করে ফেল। টাকার তো সমস্যা নেই। যতো লাগবে এখান থেকে নিয়ে নিবি।
চার-পাঁচ মাস আমরা এখানে থাকব। তাহলে আমাদের ব্যবসার কী হবে? আর যা কামালাম তার ভাগ বাটোয়ারারই বা কী হবে?
যে ব্যবসা করেছিস তাতে তিন-চার মাস আর ডাকাতি না করলেও চলবে। আগে পুলিশের হাত থেকে নিস্তার তো পা। আর ভাগ বাটোয়ারা। সময়টা একটু স্বাভাবিক হোক তারপর সব নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবো।
ঘরে পানি পর্যন্ত নেই। কী আর করা না খেয়েই ওরা ঘুমিয়ে পড়ে।
দশ.
রাজিব দরজার দিকে এগোয়। সোনার ভারে দুই পকেট ঝুলে পড়েছে। ছিঁড়ে না পড়লে হয়। রাজিব পকেট দুটোর নিচে হাত রেখে হাঁটতে থাকে। যে কোন মূল্যে এ সোনা মণিমুক্তা হীরে তাকে বাঁচাতে হবে। মনে মনে অবাক হয় রাজিব। সোনা এক অদ্ভুত জিনিস! তাইতো এতো মূল্যবান। এ অতি পুরাতন বাড়ির প্রায় সকল জিনিসই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। অথচ সোনা দানা মণি মুক্তার ঔজ্জ্বল্য আগের মতোই আছে। হয়তো থাকবে আরও হাজার বছর। সে কারণেই বোধ হয় অতি মূল্যবান জিনিসের উপমা দেয়া হয় সোনার সাথে। যে সোনা সে পেয়েছে তা যদি ঠিকমতো সে ঘরে নিয়ে তুলতে পারে তাহলে সাত পুরুষ রাজার হালে বসে বসে খেতে পারবে। আর যে ঘরে সোনাগুলো নিয়ে তোলার চিন্তা করছে রাজিব ওটা কী একটা ঘর। টিনের দু’খানা ছাপড়া। রাজিব নিজের একটা আলমারি এমনকি একটা ভাল সুটকেশ পর্যন্ত নেই। কোথায় রাখবে সে এই অমূল্য ধন! কালই সবার আগে একটা সিন্দুকের অর্ডার দিতে হবে। সিন্দুকের অর্ডার দিলে আবার সবাই সন্দেহ করবে না তো। কথা বলে ঘরের শত্রু বিভীষণ। সৎ বাবা আর সৎ ভাই বোনদের নিয়েও বড় ভয়। ওদের চোখ থেকে সোনাদানা লুকিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু কিভাবে? ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে রাজিব। মাটির মাঝে লুকিয়ে ফেললে কেমন হয়। মন্দ নয়। তবে মাটি খোঁড়া সোনা লুকানো সে-ও অনেক সময়ের দরকার। যদি কারো চোখে ধরা পড়ে যায়। আর এই সোনাই তো শেষ নয়। আবার আসবে, আবার নেবে। বারবার লুকাতে হবে। অমন সুবিধাজনক সময় কি সে পাবে বার বার? সবচেয়ে ভাল হয় মাকে সাথে নিয়ে আলাদা থাকতে পারলে। যতদিন সব সোনাদানা নিজের কাছে নিয়ে রাখতে না পারছে ততদিন বেশি দূরে যাওয়া যাবে না। মা কি রাজি হবে তার দ্বিতীয় স্বামী আর সন্তানদের ফেলে আসতে? একবার মনে হয় রাজি হবে পরক্ষণে মনে হয় রাজি হবে না। রাজিব একার জন্য সে নিশ্চয়ই তার সাজানো ঘর ভাঙবে না। আশ্চর্য পৃথিবী মার ভাগও অন্যকে দিতে হয়। মা কেন শুধুই মা হয় না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজিব। দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসে। সামনে রয়েছে বন্ধুর পথ। ওই বন্ধুর কাঠের সিঁড়ি দিয়ে তাকে আবার নামতে হবে। রাজিব সিঁড়ির দিকে এগোয়। শেষবারের মতো চোখ ফেলে পেছনের ঘরের দিকে। তখনই তার চোখ যায় আশপাশ ঘরে। সাথে সাথে তার মনে হয় একটা ঘরে সে এতো সোনাদানা পেয়েছে অন্য ঘরগুলোতে তো আরও মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে। এতো কাছে এসে না দেখে ফিরে যাওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছু না। কে জানে হয়তো পাশের ঘরেই রয়েছে দশ গুণ সম্পদ। রাজিব মুহূর্তে মন পরিবর্তন করে ফেলে। সে হেঁটে এসে পাশের ঘরটায় ঢোকে। বড় বড় ফার্নিচারে ঘরটা বোঝাই। এক সময় এগুলো নিশ্চয়ই খুব শৌখিন ফার্নিচার ছিলো। এখন ধুলোর আস্তরণে ফার্নিচারের আদল ছাড়া আর কিছু বোঝা যায় না। ওই ঘরে ঢোকামাত্রই ধুলো উড়তে থাকে। সর সর করে সরে যায় অনেকগুলো পোকা মাকড়। কিন্তু এবার আর কিছুতেই দমে যায় না রাজিব। সে ওই ধুলোভরা আলমারির পাল্লা ধরে টান দেয়। পাল্লা খোলে না। অর্থাৎ তালাবদ্ধ। তালাবদ্ধ দেখে আরও আশান্বিত হয়ে ওঠে রাজিব। নিশ্চয়ই মূল্যবান কিছু আছে আলমারিতে। না হলে কেন তালাবদ্ধ থাকবে। ও সর্বশক্তি দিয়ে আলমারির পাল্লায় ধাক্কা মারতে থাকে। আশ্চর্য এতো দিনের আলমারি তারপরও তালা ভাঙে না, পাল্লা খোলে না। রাজিবের বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়। নিশ্চয়ই মূল্যবান জিনিস আছে, তাই এমন শক্ত কাঠের আলমারি বানিয়ে তাতে রেখেছে। ছুরি কাঁচি লাঠিসোটা কিছু একটা পেলে হতো। রাজিব ঘরের চারপাশ খুঁজতে থাকে। খুন্তি জাতীয় একটা জিনিস পেয়ে যায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাজিব। খুন্তিটা পাল্লার মধ্যে ঢুকিয়ে চাপ দিতে থাকে। ফট করে খুলে যায় পাল্লা। রাজিব ঘুরে পড়ে আলমারি ওপর। এক একটা তাক থেকে জিনিস নামাতে থাকে। কিন্তু শুধুই যেন ধুলো ভরা আলমারিগুলো। রাজিব বোঝে এ আলমারিতে যে কাপড় চোপড় ছিল এখন তা জীর্ণ হতে হতে আর কাপড় বলে চেনার উপায় নেই। ধরামাত্র ঝুর ঝুর করে খসে পড়ছে। পরিণত হচ্ছে ধুলোয়। প্রথম তাকে এ অবস্থা দেখে হতাশ হলেও একেবারে আশা ছেড়ে দেয় না রাজিব। সে একের পর এক তাক খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোন লাভই নেই। কিছু টাকা বোধ হয় ছিল। সেগুলোও খসে পড়ে। দু’হাতে টেনে টেনে মেঝেতে জিনিস ফেলতে থাকে রাজিব আর হতাশায় চিৎকার করে। শেষ তাকটার জিনিস সরিয়ে হতাশায় ধপাস করে বসে পড়ে রাজিব। দারুণ বেগে ওঠানামা করছে তার বুক, ঘামছে। একটু পানি পেলে ভাল হতো। কিন্তু এখানে পানি পাবে কোথায়! হঠাৎ করে পায়ে কিসের কামড় তীব্র ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে রাজিব। তাকিয়ে দেখে অচেনা একটা পোকা কামড় দিয়ে দ্রুত সরে যাচ্ছে। একবার ভাবে পায়ের স্যান্ডেল ছুড়ে মারবে সে। পর মুহূর্তে চিন্তা বাতিল করে। অসংখ্য পোকার মাঝে এখন বসে আছে সে। কয়টাকে সে মারতে পারবে।
রাজিব দ্রুত তার হতাশা কাটিয়ে ওঠে। এক ঘরে কিছু পাওয়া যায়নি বলে অন্য ঘরগুলোতে পাওয়া যাবে নাÑ এমন কোনো কথা নেই। রাজিব উঠে দাঁড়িয়ে কাপড়ের ধুলো ঝাড়ার চেষ্টা করে। তাতে যেন চার পাশ ছেয়ে যায় মেঘে। হাত দিয়ে ধুলো তাড়াবার চেষ্টা করতে করতে পাশের ঘরের দিকে অগ্রসর হয়। ঘরের দরজাটা বন্ধ। চাপ দিতেই ওর গায়ের ওপর খুলে পড়ে একটা দরজা। একটুর জন্য রাজিবের মাথাটা বেঁচে যায়। আশ্চর্য একই সময়ের জিনিসপত্র দরজা জানালা অথচ কোনটা খুলতে নিদারুণ বল প্রয়োগ করতে হচ্ছে আবার কোনটা ধরার আগেই খসে পড়ছে। অবশ্য কারণ এটাই হতে পারে যে, এ দরজার কব্জায় জং ধরে আগেই নষ্ট হয়ে গেছ। কোন কোন দরজার কব্জা ভালো আছে। এ ঘরেও ধুলোর আস্তরণ। বেশ কয়েকটা আলমারি পাশাপাশি দেখে এগিয়ে যায় রাজিব। আলমারির পাল্লার ওপর হাত দিয়ে মনে হয় এগুলো কাচের আলমারি। রাজিব আঙুল দিয়ে আলমারির ওপর আঁচড় কাটে।
ধুলোর আস্তরণের মাঝে আঙুলের একটা লম্বা দাগ ফুটে ওঠে। তাহলে পাল্লাগুলো কাচের। রাজিব হাত দিয়ে ধুলো সরাতে থাকে। এবার আলমারির ভেতরটা স্পষ্ট হয়। তাকের ওপর থরে থরে সাজানো বই। অর্থাৎ এটা এ বাড়ির বাসিন্দাদের লাইব্রেরি। রাজিব ভাবে বইয়ের আলমারিতে মূল্যবান কিছু থাকার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সাথে সাথে রাজিব ভাবে, না তার এ চিন্তা সঠিক না।
রাজিব এক সাথে চার পাঁচটা করে বই তুলে ছুড়ে ফেলে মেঝেতে। একইভাবে ঝুর ঝুর করে খসে পড়ে বইয়ের পাতা। মলাটগুলো পাতাশূন্য হয়ে উড়ে গিয়ে একপাশে পড়ে। বইয়ের পর বই সরিয়ে যায় রাজিব। কিছুই তার নজরে পড়ে না। এক আলমারি শেষ করে অন্য আলমারি ধরে। সে আলমারিতেও একই অবস্থা। এক একবার রাজিব ভাবে এখন তার এ কাজে ইস্তফা দেয়া উচিত। একের পর এক আলমারিতে সে তো একই অবস্থা দেখছে। তাহলে এতোগুলো আলমারি ঘাঁটাঘাঁটি করার কী আছে। কিন্তু রাজিবের এ চিন্তায় সায় দেয় না মন। বলা যায় না যে আলমারিটা সে দেখবে না সেখানেই হয়তো রয়েছে মহা মূল্যবান কিছু। তাই রাজিব ক্লান্তিহীনভাবে একের পর এক আলমারি দেখেই চলে। এতক্ষণে ধুলোয় রাজিব ভূতের মতো চেহারা হয়েছে। তার মাথার চুল এখন ধূসর। সেখানে যে কখনও কালো চুল ছিল তা কেউ বিশ্বাস করবে না। তার মুখ, চোখ, হাত-পা এখন মাটির রঙ নিয়েছে কিন্তু পকেট বোঝাই সোনার কারণে রাজিবের চেহারায় এসেছে সজীবতা। রাজিবের কাছে কোন অসুবিধাই এখন ধর্তব্যের মধ্যে নাু। কিন্তু সবগুলো আলমারি খুঁজে কিছু না পেয়ে রাজিব এখন রীতিমতো হতাশ। এ বাড়িতে কি তাহলে আর কিছুই পাওয়া যাবে না। পাশে একটা চেয়ার দেখে ধপ করে বসে পড়ে রাজিব। আর বসেই বোঝে কত বড় ভুল করেছে। মট মট শব্দ করে ভেঙে যায় চেয়ার।
রাজিব পাশের ঘরটার দিকে এগোয়। ঘরের দেয়ালে অনেকগুলো বড় বড় পেন্টিং। কি জানি কি অবস্থায় আছে ওগুলো। ধুলো সরিয়ে দেখলে হয়তো বোঝা যাবে। কিন্তু পেন্টিং নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই রাজিবের। সে ভাবছে এতো বড় বড় পেন্টিং ঘরজুড়ে এ পেন্টিংয়ের পেছন গোপন খুপরি থাকতে পারে। সেখানে লুকানো থাকতে পারে ধনরতœ। রাজিব টান দিয়ে একটা একটা করে পেন্টিং নামায়। পেরেক শুধু নয়, দেয়ালে আস্তরসহ উঠে আসে পেন্টিং। ছুড়ে ছুড়ে মারে রাজিব। নেই নেই কোন খুপরির অস্তিত্ব। রাজিব মরিয়া হয়ে যায়। একটি করে পেন্টিং সরায়, হতাশ হয়, আরো বেশি জিদ চাপে তার। ভাবে এই পরের পেন্টিংটার পেছনে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। কিন্তু এক সময় সবগুলো পেন্টিং খসে পড়ে দেয়াল থেকে। রাজিব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেও দেয়ালে কোন খুপরির চিহ্ন খুঁজে পায় না। হতাশায় ওর কান্না পায়। এতো চেষ্টা সব বিফল। তাহলে শুধুই এক বস্তা ধনই তার সম্বল! এই কিছুক্ষণ আগে যে সম্পদকে অনেক বেশি মনে হচ্ছিল এখন তা তার কাছে খুবই সামান্য মনে হচ্ছে। এতো বড় বাড়ি করেছে কিন্তু ধনরতœ রেখেছে মাত্র এক বস্তা। বসে খেলে ওই ধনরতেœ তার কতদিন যাবে। তাছাড়া বেচতে গেলে সে নিশ্চয়ই ন্যায্যমূল্য পাবে না।
সেকেন্ডহ্যান্ড জিনিসের সবসময়ই চার ভাগের এক ভাগ দাম। তার ওপর চোরাই বলে সন্দেহ করতে পারে। মানুষের মুখ বন্ধ করতে কতো টাকা খরচা করতে হবে তা-ই বা কে জানে। রাজিবের কপাল বেয়ে ঘাম নামছে। ঘামের সাথে ধুলোর গুঁড়ো মিলিয়ে মনে হচ্ছে যেন কাদার গোলা নামছে। ও ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। তখন টেবিলটা দেখে। বেশ বড় বড় ড্রয়ার টেবিলে। রাজিবের মনে হয় নিশ্চয়ই এ ড্রয়ারে কিছু আছে। ওর বুক দুলে ওঠে। সে টান দিয়ে ড্রয়ার খোলে। একটি তারপর দু’টি। এখানেও সেই কাগজপত্র। ড্রয়ার সমেত ছুড়ে ফেলে রাজিব। বড্ড রেগেছে সে। সেই রাগ নিয়েই এগোয়। এসে দাঁড়ায় শেষ ঘরটার দরজায়।
এগারো.
চোখে আলো পড়ায় চোখ পিট পিট করে শমসের ডাকাতের। সরাসরি আলোটা পড়েছে চোখের ওপর। সে আলোর এতোই ধার যে বন্ধ চোখে আঘাত হেনে চোখ খুলিয়ে ফেলেছ। চোখ টিপ টিপ করে কিন্তু চোখ খুলতে ইচ্ছে হয় না শমসেরের। ইচ্ছে হয় না ঘুম থেকে উঠতে। ঘুমে যেন জড়িয়ে আছে সারাটা শরীর। গতকাল অনেক ধকল গেছে। সে ধকলের ছাপ সারা শরীরে। আর সেই ধকলের কারণে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে শমসের আর তার সঙ্গীরা। কিন্তু আলোটা যেন চোখে বিঁধছে। সুতরাং বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করে। শরীর খানিকটা টেনে তোলে। ধপ করে আবার শুইয়ে পড়ে। কিন্তু আর একটু যদি সে ঘুমাতে চায় আর যদি চায় ঘুমটা হবে নির্বিঘœ তাহলে অবশ্যই তাকে উঠতে হবে। আড়াল করতে হবে আলোটাকে। এবার সর্বশক্তি একত্র করে বিছানা থেকে ওঠে। আড়মোড়া ভাঙে তারপরই লাফ দিয়ে ওঠে। উঠেই দেখতে পায় সারাটা পৃথিবী যেন ভেসে যাচ্ছে আলোর বন্যায়। জানালা দিয়ে যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে ঝাঁক ঝাঁক আলো। এ আলো আড়াল করতে না পারলে ঘুমানো অসম্ভব। আর ঘুমাতে শমসেরকে হবেই। না হলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে। তাছাড়া ঘুম ছাড়া তাদের চারজনের করারই বা কী আছে। যা সোনাদানা পেয়েছে তিন পুরুষ বসে খেলেও ফুরোবে না। বাকি জীবনটা তাদের আর কাজ করতে হবে না। এখন তাদের একটাই কাজ। দুশ্চিন্তামুক্ত নির্ভেজাল ঘুম। শমসের এসে জানালার খোলা পাল্লাটা বন্ধ করে দেয়। আলোর তির্যক প্রবাহটা তাতে বন্ধ হয় বটে কিন্তু সারা ঘরে লুটোপুটি করে অজস্র আলো। জানালার কোনা কানাচি দিয়ে যে আলো আসে তা ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঘরটাকে। ভারী কিছু দিয়ে জানলাটা ঢাকা দরকার। শমসের খুঁজে খুঁজে একটা ভারী চাদর পেয়ে যায়। চাদর দিয়ে জানালাটাকে ভাল করে ঢাকে। সাথে সাথেই যেন আলো মরে যায়। এ মরা আলোয় ঘুমাতে বেশ মজা হবে। পেট চিন চিন করছে। ক্ষুধা জানান দিচ্ছে। কিন্তু ওই ক্ষুধাকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেয় না শমসের। সে আগে ঘুমাবে পরিপূর্ণভাবে তারপর অন্য কিছু। শমসের সঙ্গী তিনজনের দিকে তাকায়। ওরা ঘুমাচ্ছে বাঁকা ত্যাড়া হয়ে কারো কাপড় উঠে গেছে। কারো মুখ হাঁ হয়ে আছে। কিন্তু শমসের বার বার খেয়াল করে আলতুকে দেখলো না। এই অজানা অচেনা জায়গায় আলতু গেল কোথায়! হুমায়ুনের গায়ে মৃদু ধাক্কা দেয় শমসের। বিরক্তির সাথে পাশ ফিরে শোয় হুমায়ুন। কিন্তু শমসের এর বিরক্তিকে আমলে নেয় না। সে ডাকাত সর্দার। দলের অন্যদের ভালো মন্দ দেখা তার দায়িত্ব। কট্রোল করাও তার দায়িত্ব। কাজেই এবার একটু জোরেই ধাক্কা দেয় শমসের। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসে হুমায়ুন।
কী হল, হল কী? একটু ঘুমাতেও দেবে না। বলছে আর ঘুমে ঢুলছে হুমায়ুন।
আলতু কোথায় তাকে দেখছি না?
আর কোথায় বাথরুমে গেছে।
নিশ্চিন্ত হয় শসসের। আশ্চর্য এই সহজ কথাটা তার মাথায়ই আসেনি। ঘুম থেকে উঠে তো মানুষ বাথরুমেই যায়। কিন্তু বাথরুমটা কোথায়? সামান্য ক্ষণের জন্য তলপেটে চাপ অনুভব করে শমসের। কিন্তু এখন বাথরুম খোঁজার ধৈর্য তার নেই। তাই চাপ নিয়েই সে আবার শুয়ে পড়ে। আর সাথে সাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। অনেক অনেকক্ষণ পরে তার ঘুম ভাঙে। এবার শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে। যদিও পেটে প্রচণ্ড ক্ষিধে। সঙ্গীদের ঘুমাতে দেখে ও রীতিমতো বিরক্ত হয়। ওদের বয়স তার চেয়ে কম। তাহলে ওদের এতো ঘুম লাগে কেন?
হুমায়ুন ওঠ, আলতু ওঠ, ডলার ওঠ। আরে তোমরা কী ধরনের মানুষ। সাত দিন না ডাকলে তো সাত দিন ধরে পড়ে পড়ে ঘুমাবে।
শমসেরের উচ্চকণ্ঠে ওরা উঠে পড়ে। বাথরুম খুঁজতে থাকে। তখন শমসেরের আবারও চোখে পড়ে আলতু নেই। সকালে উঠে আলতুকে দেখেনি। এখন দুপুর পেরিয়ে প্রায় বিকেল। এখনও আলতুকে দেখছে না। তাহলে আলতু গেল কোথায়? সে অত্যন্ত দায়িত্ববান ছেলে। না বলে কোথাও যাবার মতো নয়। তাহলে, এই হুমায়ুন আলতু কোথায়? সকালে তুমি বললে আলতু বাথরুমে। এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল।
আলতুর দেখা নেই। আমাকে কি হলে বিশ্বাস করতে হবে ও সারাদিন বাথরুমে বসে আছে?
তাইতো তাইতো! মাঝরাতের দিকে ও একবার আমাকে বলেছিল বাথরুম কোথায়। আমি বলেছিলাম খুঁজে দেখ। এখন মনে পড়ছে তারপর থেকে ওকে আর দেখিনি। তোমরা দেখেছে?
না না। অন্য দু’জন মাথা নাড়ে।
তোমরা দেখবে কী করে তোমরা তো ঘুমিয়ে কাদা কিন্তু আলতু গেল কেথায়?
তবে কি ও খাবারের সন্ধানে গেছে?
একা একা এভাবে তার খাবারের সন্ধানে যাবার কথা না। তাছাড়া আমাকে না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে ও কখনই কোন কাজ করে না। ওকে খোঁজ, ভাল করে খোঁজ। হুমায়ুন তুমি নিচে গিয়ে নিচের ঘরগুলো খোঁজ। ডলার তুমি উপরের ঘরগুলো খোঁজ। আমি বাথরুমগুলো চেক করে দেখি।
হুমায়ুন চলে যায় নিচে। ঘরের পর ঘর খুঁজে চলে কিন্তু কিছুই পায় না। সে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে। ডলার উপরের ঘরগুলো একে একে খোঁজে। আশ্চর্য আলতু কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। শমসের ডাকাত বাথরুমগুলা একে একের চেক করে আর এগোয়। তার মন ভরাক্রান্ত। নিজের প্রতি প্রচণ্ড ধিক্কারও তার মনে জন্মেছে। কি ধরনের দলপতি সে যে মাত্র চারজনের একটা দলকেও ঠিকমতো চালাতে পারে না। ঠিকমতো সবার খেয়াল রাখতে পারে না। কাল রাতে অমন বেহুঁশ হয়ে ঘুমানো তার উচিত হয়নি। অজানা অচেনা জায়গা কতো কিছুই তো ঘটতে পারতো। ঘটলোও। না এভাবে আর সে দলপতি থাকতে চায় না। তার দলপতি হবার কোন যোগ্যতা নেই। বয়স হয়েছে। এবার এ দায়িত্ব সে দলের অন্য কারো হাতে দেবে। এক একটা করে বাথরুম পার হয় আর তার কপালে ঘাম জমতে থাকে। কোথায় গেল আলতু? ঠিক তখনই ডলারের চিৎকার শোনা যায়। ওই চিৎকারই বলে দেয়া মারাত্মক কিছু ঘটেছে।
সর্দার আলতুকে পাওয়া গেছে, সর্দার।
কথার শেষে ওর চিৎকারটা ভেঙে ভেঙে পড়ে। শমসের ওর চিৎকার লক্ষ্য করে ছুটে আসে। নিচ থেকে দ্রুত উঠে আসে হুমায়ুন। ওর কানেও ডলারের চিৎকারটা পৌঁছেছে। ওরা এসে দাঁড়ায় দোতলার সর্বশেষ ঘরে। এক মুহূর্ত দ্বিধা না করে দু’জনই ঘরে ঢুকে পড়ে। ঘরের শেষ প্রান্তে একটা টেবিল। টেবিলের পাশে মাটিতে চিত হয়ে পড়ে আছে আলতু। ওকে দেখে কাউকে বলে দিতে হয় না যে ও মারা গেছে। ওর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কোন ডাক্তারি পরীক্ষারও দরকার হয় না। সারাটা শরীর ফ্যাকাসে রক্তশূন্য বিবর্ণ। এক ফোঁটা রক্ত নেই যেন শরীরে। কেউ যেন নিংড়ে নিয়েছে ওর শরীরের সব রক্ত। চোখ দুটো বিস্ফারিত ভয়ার্ত। মুখটা অর্ধেক খোলা। যেন ভয় পেয়ে চিৎকার করার আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। আতঙ্কে ঠিকরে বেরুচ্ছে তার চোখ দুটো। শমসের তার হাত উঠায়। হাতটা যেন রবারের। হাড় নেই, রক্ত নেই। ধপ করে সে হাত পড়ে যায় মাটিতে। শোকের প্রথম ধাক্কা সামলে ওরা লাশটাকে ধরাধরি করে নিয়ে আসে যে ঘরে ওরা ছিল সে ঘরে। ডলার ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে। কতোগুলো বছর ওরা এক সাথে কাজ করেছে। ছুরি না, বন্দুক না, অসুখ বিসুখ না কিভাবে আলতু মারা গেল তা বোঝা পর্যন্ত গেল না। এ কেমন কথা। শমসেরের চোখে পানি না থাকলেও ভেতরে হচ্ছে রক্তক্ষরণ। সে দলপতি তার চোখে পানি শোভা পায় না। কিন্তু তাই বলে কি তার অন্তরাত্মা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে না! বিছানার ওপর শায়িত আলতুর লাশ ভাল করে লক্ষ্য করেও শমসের। সারা শরীরে কোথাও আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। কোন ক্ষত নেই। একটা আঁচড় পর্যন্ত নেই কোথাও।
শমসের উঠে দাঁড়ায়। তার অনুসন্ধিৎসু মন তাকে সতর্ক করে। নিশ্চয়ই এ বাড়িতে তারা ছাড়াও অন্য কেউ আছে। আলতুর লাশ দাফন করা দরকার। সেটা কোন সমস্যা না। এ বাড়িতে অনেক জায়গা। কিন্তু লাশ দাফনের আগে খুঁজে দেখা দরকার এ বাড়িতে অন্য কেউ আছে কি না। নইলে যে কোন মুুহেূর্তে আবার তারা বিপদে পড়তে পারে। শমসের বলে, ডলার তুমি সারাটা বাড়ির সামনে পেছনে নিচের ঘরগুলো তন্ন তন্ন করে খোঁজ। হুমায়ুন তুমি আলতু যে ঘরটাতে মারা গেছে ওই ঘরটা ভালো করে খোঁজ। এ বাড়িতে যদি অন্য কেউ থেকে থাকে আর সে যদি আলতুকে মেরে থাকে তাহলে তার কোন না কোন চিহ্ন ওই ঘরটাতে থাকবেই। খুনি যতো সতর্কই হোক না কেন সে কোন না কোন চিহ্ন ফেলে যায়। সারা পৃথিবীর হত্যা ইতিহাস একই কথা বলে। তোমরা না ফেরা পর্যন্ত আমি আলতুর লাশের কাছে আছি। তাড়াতাড়ি করবে। তোমরা ফিরলে আমরা আলতুকে দাফন করবো।
ওরা চলে যায়। শমসের লাশ নিয়ে বসে থাকে। সময় গড়িয়ে যায়। দু’জনের কারোরই ফেরার নাম নেই। কারো কোন আওয়াজ পর্যন্ত নেই। কী করছে ওরা এতক্ষণ ধরে। অধৈর্য হয়ে ওঠে শমসের। সে বারান্দায় এসে ঝুঁকে পড়ে ডাকতে থাকে, ডলার ডলার। ডলারের সাড়া নেই। কোথায় গেল ডলার? এতক্ষণ তো তার লাগার কথা না। তাহলে কি ওর কোন বিপদ হলো? হুমায়ুন ওপরে আছে থাক। ওকে নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা নেই। শমসের তর তর করে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামে। একটি একটি করে ঘর খোঁজে। নেই, ডলার নেই। বাড়ির আঙিনায় নেমে আসে শমসের। পেছনটা ঘুরে সামনে আসে।
কোথাও ডলার নেই। সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। তখনই চোখ পড়ে ডলার প্রধান ফটকের কাছ থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। রেগে যায় শমসেরÑ তোমার কোনা আক্কেল নেই। তোমার বন্ধু মরে পড়ে আছে। আর তুমি গদাই লস্করি চালে হেলে দুলে আসছ। এতো ডাকছি ডাক পর্যন্ত শুনছো না। এই বিপদের সময় সাবধান থাকা উচিত সেটুকু বোধও তোমার নেই। চল উপরে চলো।
দু’জনে সিঁড়ি ভেঙে উপরে আসে। ঘরে ঢুকে দেখে আতঙ্কিত দু’চোখ নিয়ে আলতুর লাশ একইভাবে পড়ে আছে। কিন্তু হুমায়ুন সেখানে নেই।
আশ্চর্য হুমায়ুনটা এখনও ফেরেনি। সামান্য একটা ঘর চেক করতে কত সময় লাগে! চলো দেখি হুমায়ুন কোথায়।
ওরা এগিয়ে যায় দোতলার সর্বশেষ ঘরের দিকে। এ ঘরেই একটু আগে মৃত পাওয়া গেছে আলতুকে। ওরা ঘরে ঢোকে। আর ঢুকেই যেন ধাক্কা খায়। আলতুর মতো একইভাবে পড়ে আছে হুমায়ুন। দেখলেই বোঝা যায় মৃত।
বারো.
দরজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাজিব। ঢুকবে কি ঢুকবে না এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে দুলতে থাকে। সে নিজেই বুঝতে পারে না এখন তার এই দোদুল্যমানতা। এর আগের ঘরগুলোতে ঢোকার আগে সে তো কোন দ্বিধা করেনি। চিন্তা ভাবনা ছাড়াই একের পর এক সে ঢুকে গেছে ঘরগুলোতে। আর তার ফল লাভও হয়েছে। এমন ধন সম্পদ সে পেয়েছে তিন পুরুষ বসে খেলও যা ফুরোবে না। এখানে এই শেষ দরজার পেছনে রয়েছে যে ঘর সেখানে হয়তো রয়েছে আরও গুপ্তধন বা সে চিন্তাও করতে পারছে না। তাহলে ওই ঘরে এখনই তার ঢোকা দরকার। ঘরের দিকে এক পা এগোয় রাজিব। সাথে সাথে তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সক্রিয় হয়ে ওঠে। দাঁড়িয়ে যায় রাজিব। ওই ঘরে কি তবে রয়েছে কোন বিপদের হাতছানি। তাই তার মন তাকে ওই ঘরে ঢুকতে সায় দিচ্ছে না।
যদি তেমন কিছু হয় নিজেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা রাজিবের নিজের সাথেই আছে। পকেটে রাখা ছুরিটা স্পর্শ করে রাজিব মনোবল ফিরে পায়। ছুরির বাঁটটা শক্ত করে ধরে আবারও তাকায় বন্ধ দরজার দিকে। মনে কিছুটা শক্তি সঞ্চিত হয়েছে রাজিবের। তার মন বলছে ওই ঘরে রয়েছে অজস্র ধনরতœ। কাজেই আর দেরি করা ঠিক হবে না। রাজিব দৃঢ় পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দেয়। আলগোছে খুলে যায় দরজা। পুরনো দরজা খুলতে যেমন ক্যাচ ক্যাচ শব্দ হবার কথা তেমন কোন শব্দই হয় না। মনে হয় এই দরজা যেন নিয়মিতই খোলা হয়। তাই বেশ অনায়াস। রাজিবের কপালে মৃদু কুঞ্চন পড়ে। এ বাড়িতে তো এমন হবার কথা নয়। ঘরে ঢুকে সে কুঞ্চন আরো বাড়ে আসবাবপত্র গুলো দেখে। শুধু আসবাবপত্রই বা কেন অন্য ঘরের পরিবেশ থেকে এ ঘরের পরিবেশ যে একেবারেই আলাদা। অন্য ঘরের মতো এ ঘরের আসবাবপত্রগুলো নষ্ট হয়নি। ঘুণে ধরেনি। অন্য ঘরের মতো মাকড়সার জাল, মোটা মোটা ইঁদুর এখানে অনুপস্থিত। তেলাপোকা নেই। এক কথায় কোন প্রাণের অস্তিত্ব নেই এ ঘরে। শ্যাওলা পড়া ভাব নেই মেঝেতে। দরজা জানালায় নেই কোন মরিচা। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে শুধু একটাই ব্যাপার। ধুলোয় ছেয়ে আছে আসবাবগুলো, মেঝেতেও ধুলো। কিন্তু তা-ও যেন অন্য ঘরের চেয়ে কম। রাজিব সামনে এক পাশে একটা বুক সেলফ দেখতে পায়। বুক সেলফে অগুণতি বই। রাজিব একটা বই টেনে বের করে। দীর্ঘ দীর্ঘকাল একইভাবে থাকতে থাকতে বইয়ের পাতাগুলো হলুদ হয়ে গেছে। কিন্তু পাতাগুলো আগের ঘরগুলোর বইয়ের মতো ধুলো হয়ে ঝরে পড়ে না। বইটা তাকে রেখে রাজিব এগিয়ে যায় সামনের টেবিলের দিকে। হঠাৎ কোথায় যেন একটা ফিস ফিস আওয়াজ শুনতে পায়। কেউ যেন ফিসফিস করে কিছু বলছে। তবে কি এখানে কেউ আছে? সে ঘুরে দাঁড়ায়, চারপাশে একবার তাকায়। কিন্তু কোথাও কাউকে না দেখে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে। তখনই গলার পাশে শীতল অনুভূতি হতে থাকে রাজিবের। গায়ের রোমগুলো খাড়া হয়ে যায় নিমেষেই। অজান্তে হাত চলে যায় পকেটে। মনে হয় তার গলার পাশে কেউ যেন ঠাণ্ডা কিছু চেপে ধরেছে। একটানে পকেট থেকে ছুরি বের করে রাজিব এক সেকেন্ডের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ায় এবং ছুরি চালাতে তাকে অন্ধের মতো। এক সময় ছুরি চালাতে চালাতে ক্লান্ত হয়ে সে থেমে যায়। দেখে যে কোথাও কেউ নেই। সে শান্ত হয়। আপন মনে হাসার চেষ্টা করে। কি বোকামিটাই না সে করছিল! কিন্তু এই ভাবনা শেষ হবার আগেই সে আবার তার ঘাড়ে পিঠে কিসের যেন স্পর্শ পায়। যেন একটা ঠাণ্ডা হাত তাকে ধরার চেষ্টা করছে। সে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবারও ছুরি চালায়। আবছাভাবে মনে হয় কিছু একটা যেন সে দেখেছে। জিনিসটা দ্রুত সরে যাবার চেষ্টা করে। সর্বশক্তি দিয়ে ছুরি চালায় রাজিব আর ঠিক তখনই অবাক হয়ে লক্ষ্য করে তার হাতটা যেন জাম হয়ে যাচ্ছে। নিজে না দেখলে সে বিশ্বাস করতো না এমনই একটা অকল্পনীয় ঘটনা ঘটে। তার হাতের ছুরির ফলাটা বেঁকে যেতে থাকে। ভয় পেয়ে ছুরিটা ফেলে দিয়ে বন্ধ দরজার দিকে ছুটতে থাকে সে। কিন্তু আশ্চর্য খোলা দরজাটা কখন বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি সে। বোঝার কথাও না। দরজা তো সে খোলাই রেখে গিয়েছিল। তাহলে কে বন্ধ করল। এই দরজা? তাহলে কি এখানে সে ছাড়া অন্য কেউ আছে। সর্বশক্তি দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করে রাজিব আর ঠিক তখনই আবারও সেই শীতলতা ছড়িয়ে যায় রাজিবের শরীরে। এবার আর শুধু গলা, পিঠ নয়, সারাটা শরীরেই যেন ছড়িয়ে পড়ে শীতলতা। রাজিব বুঝতে পারে এই শীতলতা যেন চিরকালের মতে গ্রাস করতে চাচ্ছে তাকে। মরে যাচ্ছে সে। অসহায় রাজিব আর্তনাদ করে ওঠে, তুমি কে আমি জানি না। তোমাকে চিনিও না। তোমার সাথে আমার তো কোন বিরোধ নেই। তবে কেন তুমি আমাকে হত্যা করতে চলেছে। আমাকে ছেড়ে দাও, নিষ্কৃতি দাও। আমাকে বাঁচতে দাও। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমার যদি কোন উপকারে লাগতে পারি লাগবো। তুমি যা করতে বলবে আমি তাই করবো।
কিন্তু শীতলতা তাতে কিছুমাত্র কমে না। এক সময় রাজিবের মনে হয় সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। বাঁচার নির্মম তাগিদে থামে না রাজিব। কাকুতি মিনতি করেই চলে। আর্তনাদ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়।
ফোঁপাচ্ছে, চোখ দিয়ে দরদর করে পানি ঝরছে। এই পৃথিবীটাকে শেষবারের মতো দেখতে ইচ্ছে হয় তার। অনেক কষ্টে চোখ খুলতে চেষ্টা করে, পারে না। বন্ধ হয়ে যায় চোখ। রাজিব যেন অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকে। আর ঠিক তখনই একটু একটু করে যেন কমতে থাকে শীতলতা। ধীরে ধীরে। তারপর যেন সারা শরীর থেকে বিদায় নেই শীতলতার আগ্রাসন। রাজিব ধীরে ধীরে দম নিতে থাকে।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
Thank you.onek kichu shikkha pelam ,allah apnader susto,sundor rakhe ,niraportar bebosta korun ei doa kori ..amin