সোহেল আজিজ
সুস্থ ও সবল দেহের জন্য দাঁত ও মাঢ়ির তথা মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা একান্ত প্রয়োজন। দাঁত এবং মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করে নীরোগ জীবন আশা করা যায় না।
দাঁত ও মুখগহ্বরের প্রধান রোগ
১. দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ
২. মাঢ়ির প্রদাহ বা পেরিও ডেন্টাল ডিজিজ
৩. আক্কেল দাঁতের প্রদাহ বা পেরি করোনাইটিস
৪. মুখগহ্বরের সাদা ক্ষত বা অ্যাপথাস আলসার
৫. ড্রাই সকেট বা এলভিওলার বোনের প্রদাহ
৬. ডেন্টাল সিস্ট
৭. গাম ইপুলিস
৮. গ্রানুলোমা ইত্যাদি।
চিনি জাতীয় খাদ্য আমাদের মুখের ভেতরে এক ধরনের জীবাণুর সাথে মিশে অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিড দাঁতের ওপরে শক্ত আবরণ এনামেলকে ক্ষয় করে এবং পরবর্তীকালে গর্তের সৃষ্টি করে। এ রোগটির নাম দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ (উবহঃধষ ঈধৎরংব)।
শিশুদের দাঁত ওঠার পর থেকেই দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, এমনকি অনেক ছেলেমেয়েদের মাঢ়ির রোগ বা জিনুজিভাইটিসও লক্ষ করা যায়। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কারের মাধ্যমে প্লাগমুক্ত রাখা যায়। অর্থাৎ দাঁত ও মাঢ়ির ওপর, নিচে ও চারপাশে ব্রাশের সাথে পেস্ট দিয়ে ভালোভাবে সঠিক পদ্ধতিতে নিয়মিত দু’বেলা সকালে ও রাতে দাঁত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। খাদ্যদ্রব্য যেন দাঁতের গায়ে বা মাঢ়ির ফাঁকে লেগে না থাকে। দাঁত পরিষ্কারের জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো টুথব্রাশ ও টুথপেস্টের ব্যবহার।
যখনই শিশুর প্রথম দাঁতটি ওঠে তখন থেকেই তার দাঁত পরিষ্কারের কাজ শুরু করা উচিত। তবে প্রথম অবস্থায় পরিষ্কার ফ্লানেলের মতো নরম কাপড় বা তুলো দিয়ে দাঁতগুলো পরিষ্কার করে দিতে হবে এবং ধীরে ধীরে দাঁতের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ছোটদের জন্য তৈরি টুথব্রাশ ও ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত পরিষ্কারের কায়দা-কুনুন শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে। পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো শিশু ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার করল কিনা, তা লক্ষ রাখা এবং হাতে-কলমে আয়নার সামনে দেখিয়ে দেয়া।
দাঁত পরিষ্কারের জন্য ফ্লুরাইডের ব্যবহার
ফ্লুরাইড দাঁতের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে। ফ্লুরাইড এনামেলের সাথে মিশে এনামেলকে আরো শক্তিশালী করে ও অ্যাসিডের আক্রমণ থেকে দাঁতকে বাঁচায়। আমাদের দেশে ফ্লুরাইড অত্যন্ত সহজভাবে পাওয়ার একমাত্র উপায় ফ্লুরাইড যুক্ত টুথপেস্ট।
খাদ্যের ভূমিকা
দৈনন্দিন আহার গ্রহণের মধ্যকর্তী সময়গুলোতে কোনো আঁঠালো মিষ্ট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ না করাই ভালো। যেমনÑ চকোলেট, টফি, লজেন্স, মিষ্টি বিস্কুট, আইসক্রিম ইত্যাদি। কারণ শর্করা জাতীয় খাদ্য অনেক সময় মুখে অবস্থান করলে অ্যাসিড তৈরি করবে ও দাঁতের ক্ষয় প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে নোন্তা বিস্কুট, সালাদ ও আমলকী, আমড়া, লেবু ইত্যাদি খাওয়া ভালো।
প্রতিরোধ
দাঁত নষ্ট হয় আমাদের বদ অভ্যাস এবং অনিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করার কারণে। তবে এ কথা সত্য যে, সবারই রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা সমান থাকে না। যারা নিয়মিত দাঁতের যতœ করেন ও দাঁত নিয়মিত পরীক্ষা করান তারাই ভাগ্যবান। বছরে অন্তত দু’বার একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের কাছে মুখ ও দাঁত পরীক্ষা করানো ভালো। কারণ দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা গেলে চিকি/সা (ফিলিং) করিয়ে দীর্ঘদিন দাঁতটি বাঁচানো সম্ভব। তেমনি মাঢ়ির রোগও প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে স্কেলিং করালে দাঁত নড়ে না বা ফেলে দিতে হয় না। যাদের দাঁত ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে তাদের মনে রাখা উচিত দেহের কোনো অংশের যতœ নেয়ার দরকার বা প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় না। অস্বাভাবিক দাঁতকে যেভাবেই হোক চিকিৎসা অথবা টিকিয়ে রাখাই শ্রেয়। আজকাল চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে দন্ত চিকিৎসার প্রয়োগ ও প্রসার অনেক অনেক গুলে বেড়ে গেছে। তাই একটি মূল্যবান দাঁতকে ফেলে দেয়ার আগে একটু ভেবে দেখা দরকার নয় কি?
Alhamdulillah.poramosser jonno dhonnobad.