বেসবল খেলা অনেকটা ক্রিকেটের মতোই। একদল ব্যাটিং করে, আরেকদল করে বোলিং। ক্রিকেটের মতোই আম্পায়ারও থাকে। এতো মিলের মাঝেও অমিলটা হলো বল নিয়ে। ক্রিকেট খেলায় ব্যাটসমানরা ছক্কা পিটিয়ে বল গ্যালারিতে পাঠালে প্রতিবারই সেই বল মাঠে ফেরত পাঠাতে হয়। কিন্তু বেসবল খেলায় বল যদি গ্যালারিতে চলেই যায়; আর তুমিই যদি সেটা পেয়ে যাও, তাহলে নিশ্চিন্ত মনে ওটা সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে। ফেরত দিতে হবে না!
ক্রিকেট বলের ওজন ১৫৫.৯ গ্রাম থেকে ১৬৩ গ্রামের মধ্যে। অনেকেই বলে বলটা কাঠের তৈরি। আসলে কাঠ না, বলটা কর্কের। এই কর্ক অনেকগুলো ছোট ছোট টুকরা করা। যেগুলো একসঙ্গে জোরে চাপ দিয়ে আটকে রাখা হয়। সেই সঙ্গে সুতা দিয়ে সেলাইও করা হয়। তারপর মুড়িয়ে দেওয়া হয় চামড়া দিয়ে। আর চামড়ার সেলাইটাও করা হয় মজবুতভাবে। তবে এবার কিনা, সেলাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আঠাও লাগানো হয়। যা শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট বলকে একটা ধারালো আবহ এনে দেয়।
বলের ওপরের চামড়ার রঙটা বহুদিন ধরে শুধুই লাল রঙের ছিল। এরপর যখন দিবা-রাত্রি ক্রিকেট ম্যাচ শুরু হলো, তখন থেকেই সাদা রঙের বল ব্যবহারের শুরু। রাতের বেলা ফ্লাড লাইটের আলোয় লাল রঙের বল সহজে দেখা যায় না। সেজন্যই লালের বদলে অন্য কোনো রঙ খোঁজা হচ্ছিল। এজন্য হলুদ আর কমলা রঙের বল দিয়ে খেলা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত সাদাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। ১৯৭৯ সলের ২৭ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সিম্পনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম দিবা-রাত্রি ম্যাচ।
আম্পায়াররা অনেক সময়ই খেলা চলতে চলতে বল পরিবর্তন করেন। আগে নিয়ম ছিল, ওয়ানডেতে ইনিংসে ৩৫ ওভারের পরে, আর টেস্টে ৮০ ওভারের পরে বল পরিবর্তন করার। টেস্ট ক্রিকেটে এখনো পুরোনো নিয়ম বহাল আছে। তবে পাল্টে গেছে ওয়ানডে ক্রিকেটে বল পরিবর্তনের নিয়ম। এখন বল পরিবর্তন না করে একইসাথে দু’টো বল দিয়েই খেলা শুরু হয়। প্রতি ওভার শেষে উইকেটের প্রান্ত যেমন বদল করা হয়, একই সাথে বদল করা হয় বলও। এই বল পরিবর্তন করা হয় বলের সাইজ নষ্ট হয়ে যায় বলে। ভালো কথা, ক্রিকেটের বল কিন্তু পুরোপুরি গোল নয়! এর একদিকের পরিধি ২২৪ মিলিমিটার আর আরেক দিকের ২২৯ মিলিমিটার। আর সবদেশে কিন্তু একই ধরনের বল দিয়ে খেলা হয় না। তবে সব একদিনের ম্যাচ হয় অবশ্য কুকাবুরা বল দিয়েই। কিন্তু এই উপমহাদেশে যখন টেস্ট ম্যাচ হয়, তখন খেলা হয় এসজি ক্রিকেট বল দিয়ে। ইংল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচ হয় ডিউক ক্রিকেট বল দিয়ে। আবার অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট ম্যাচ হলে তখন আবার চলে আসে কুকাবুরা বল।
এসজি কিংবা ডিউক বল পেস বোলারদের বেশ সাহায্য করে। কারণ কুকাবুরা বলের তুলনায় এই বলের সিম (বলের উপরের সুতা) বেশ ভালো হয়। যা কিনা বাতাসে সুইং কিংবা পিচে পড়ে আরে ভালো সুইং করতে পারে। আর বল যতো পুরনো হতে থাকে, ফিল্ডাররা খুব ভালো করে শুধু একদিকেই ঘষতে থাকে। এতে করে বলের একদিক পুরনো হয়, অন্যদিক চকচক করতে থাকে। তাতেই ফাস্ট বোলাররা রিভার্স সুইং করতে পারে। কেন এই রিভার্স সুইং হয়? যে দিক চকচক করে, সে পাশে বাতাস খুব বেশি ঘষা খায় না। কিন্তু অন্যদিকে বাতাস অনেক বেশি ঘষা হয়। আর তাই, বল বাতাসেই ঘুরে যায়, মানে সুইং খায়। এটাই তো রিভার্স সুইং, তাই না?
বিশ্বের সবচেয়ে দামি বলটি তৈরি করা হয়েছিল ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে, শ্রীলঙ্কায়। বলটা ছিল পুরোটাই হীরার তৈরি! ওজন ৫৩.৮৩। আর বলটির সিম বানানো হয়েছিল পুরো ১২৫ গ্রাম খাঁটি সোনা দিয়ে।
জে হুসাইন