মৌমাছির বাসা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত!
মৌমাছি সাধারণত ফুলের পরাগ রেণু থেকে এক ধরনের বিশেষ সুস্বাদু পানীয় সংগ্রহ করে থাকে। তবে বিশেষ ওই সুস্বাদু পানীয় যে সবসময় সমানভাবে পাওয়া যায়, তা কিন্তু নয়। আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত এবং খরার ওপর তা অনেকটা নির্ভর করে। আবহাওয়া যদি উষ্ণ থাকে, প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় কিংবা যদি খরাভাব দেখা দেয়, তা হলে মৌমাছির সুস্বাদু পানীয় সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়ে। বসন্তকালে প্রকৃতি সবচেয়ে বেশি সজীব থাকে। কিন্তু তার আগে বা পরে যখন ফুলের পরাগরেণু থেকে সুস্বাদু পানীয় সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে যায় অথবা অতি দূর থেকে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতে হয়, তখন বেশিরভাগ মৌমাছি বসে বসে গৃহস্থালির কাজকর্ম করে।
মৌমাছি অত্যন্ত পরিশ্রমী। সুস্বাদু পানীয় যা থেকে মধু উৎপাদিত হয়, তা সংগ্রহ করতে মৌমাছি গড়ে তেতাল্লিশ হাজার মাইল পথ চষে বেড়ায়। মজার ব্যাপার হলো, এত পথ ঘুরে ঘুরে মৌমাছি গড়ে মাত্র এক পাউন্ড মধু সংগ্রহ করতে পারে। মৌমাছিগুলো তাদের বাসা পরিপূর্ণ করতে এর সঙ্গে আরও পানি সংগ্রহ করে থাকে। মধু ভাণ্ডারজাত করার জন্য এই পানি খুব কাজে দেয়। অর্থাৎ শীতল করতে সাহায্য করে থাকে। সংগৃহীত পানি বাষ্পাকারে ছড়িয়ে দেয় পুরো মৌচাকে। ফলে চাকের ভেতরটা ক্রমে শীতল হতে থাকে। কাজটি করে খুব দ্রুতগতিতে আর এ কারণে সুস্বাদু পানীয়ও ক্রমে জমাট বাঁধতে থাকে। মৌমাছির এই শীতলীকরণ যন্ত্রটি কিন্তু বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়!
রাতে সঙ্কুচিত হয় ফুলের পাপড়ি
উদ্ভিদরাজির মধ্যে অধিকাংশ বৃক্ষেই ফুল ফোটে। এসব ফুলের মধ্যে বেশিরভাগ ফুল দিনে ফোটা অবস্থায় দেখা গেলেও রাতে পাপড়িগুলো সঙ্কুচিত বা গুটিয়ে যায়। অর্থাৎ আর ফোটা অবস্থায় পাওয়া যায় না। কিন্তু ফুলের পাপড়িগুলো রাতে সঙ্কুচিত হয় কেন? গবেষকদের তথ্যানুযায়ী, কিছু ফুলের ক্ষেত্রে এমনটি হয় মূলত আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে। অবশ্য অভ্যাসবশতই বেশিরভাগ ফুল রাতে গুটিয়ে যায়।
সাধারণত তাপের কারণে ফুলের অভ্যন্তরের উপরিভাগের পাপড়ি বৃদ্ধি পায়। সুতরাং যখন তাপমাত্রা কমে যায়, তখন পাপড়িতেও তার প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ ফুলের অভ্যন্তরের উপরিভাগ ক্রমে সঙ্কুচিত হতে থাকে। এভাবে তাপমাত্রা যত কমে যায়, পাপড়িও তত সঙ্কুচিত হয়। উদাহরণ হিসেবে ক্রোকাসের [হেমন্তকালে ফোটা এক ধরনের ফুল] নাম নেওয়া যায়। এই ফুলটি দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাপড়িও ক্রমে ছড়িয়ে দেয়। আবার বিকেলে তাপমাত্রা যখন কমে আসতে শুরু করে, তখন পাপড়িদলও আস্তে আস্তে গুটিয়ে যেতে শুরু করে। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, রোদ ওঠার চার ঘণ্টার মধ্যেই পাপড়ি পুরোপুরি ফুটে যায়। আবার বিকাল শুরু হওয়ার পর থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি পাপড়ি গুটিয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো, উদ্ভিদরাজির সব ফুলের পাপড়িই যে রাতে সঙ্কুচিত হয়ে যায়, তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো ফুলের ক্ষেত্রে এর উল্টো ঘটনাও ঘটে। মুনফ্লাওয়ার ও নাইট-ব্লুমিং সেরাস নামে ফুল দু’টি দিনে মোটেও ফোটে না। পাপড়িগুলো সঙ্কুচিত অবস্থায় থাকে। কিন্তু সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের পাপড়িগুলো ধীরে ধীরে ফুটতে থাকে। রাত যত গভীর হয়, পাপড়িগুলোও তত পূর্ণতা পায়।
কলাগাছ গাছ নয়!
তোমাকে যদি বলা হয়, কখনও কি কলাগাছ কিংবা কলা চাষ দেখেছ? নিশ্চয়ই হ্যাঁ সূচক জবাব দেবে। সাধারণত কলা ধরে গাছটির ওপরের অংশে। কিন্তু কলাগাছকে যতই গাছ হিসেবে অভিহিত করা হোক না কেন, ত্রিশ ফুট উচ্চতার দৈত্যাকৃতি গাছ কিংবা আমরা যতই ঔষধি উদ্ভিদ বলে মনে করি না কেন, এটি মোটেও কোনো গাছ নয়। বড় জোর এটিকে শক্ত ডাঁটাহীন লতা বলে অভিহিত করা যায়। বস্তুত কলাগাছ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাণ্ড ছাড়া উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদের পাতা খুব পুরু হয়।
উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে, ভারতবর্ষ ও চীন হচ্ছে কলার আদিভূমি। অনেকে আবার পাক-ভারত ও মালয়কে কলার উৎপত্তিস্থল বিবেচনা করেছেন। এটি একটি বীরুৎ শ্রেণীর উদ্ভিদ। আবার একবীজপত্রী উদ্ভিদ বলে অভিহিত করা যায়। অধিকাংশ জাতের গাছই বহুবর্ষজীবী । মাটির নিচে রাইজোম বা কন্দ এবং মাটির ওপরে একটি ছদ্মকাণ্ড বা সিউডোস্টেম নিয়ে এ গাছ গঠিত। কাণ্ড ও পাতা উভয়ই সবুজ হয়। কাঁচা কলার রঙ হয় সবুজ। তবে পেকে গেলে হলুদ রঙ ধারণ করে।
কলাচাষিরা ফলের জন্যই মূলত কলার চাষ করে। গাছের জন্য নয়। এ জন্য আমরা কলাগাছকে গাছ বলতে পারি না। কলাগাছে কলা ধরে গুচ্ছ গুচ্ছ করে। সাধারণত একটি কলার তোড়ায় দশটি গুচ্ছ থাকে। পুরো তোড়ায় কমপক্ষে ১৫০টি পুষ্ট কলা পাওয়া যায়। কলাগাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের তথ্যানুযায়ী, প্রতি রাতে কমপক্ষে এক ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পায়। তবে কলাগাছকে গাছ বলি আর না বলি, কলা কিন্তু অসম্ভব উপকারী। কলা খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়, হজমে সহায়তা করে, পরিপাকতন্ত্রের অতিরিক্ত অম্লত্ব নিরসন করে। শুধু তাই নয়, পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালের আস্তরণের ওপর একটি আবরণ সৃষ্টি করে আলসারের উত্তেজনাকে প্রশমন করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে। পেটের ক্ষতিকর জীবাণুকে উপকারী ব্যাকটেরিয়ায় রূপান্তরিত করে। বাতের চিকিৎসায় কলা এক মহৌষধ। উচ্চ পরিমাণ আয়রন থাকায় অ্যানিমিয়া চিকিৎসার জন্যও উপকারী। কারণ, কলা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
চায়ের গুণাগুণ
নষ্ট করে দুধ
চায়ের মধ্যে এমন উপাদান আছে যা শরীরের চর্বি কমাতে সহায়ক। কিন্তু যারা দুধ-চা পান করেন তাদের জন্য একটি খারাপ খবর আছে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের সঙ্গে দুধ মেশালে চায়ের প্রকৃত গুণাগুণ নষ্ট হয়। বিশেষ করে চর্বি কমাতে চায়ের যে ভূমিকা তা অনেকখানিই হ্রাস পায়। দুধ মেশানোর কারণে থিফ্লেভিনস ও থিরুভিগিনস নামের উপাদানগুলোর কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যায়। একজন ভারতীয় বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে গবেষণাটি করা হয়েছে। দুধের মধ্যে বিদ্যমান প্রোটিনের কারণে চায়ের চর্বিরোধী উপাদানগুলো কার্যক্ষমতা হারায়।
মাথার ওপর মশারা ওড়ে কেন?
সন্ধ্যার দিকে মাঠে বা নদীর পাড়ে হাঁটার সময় মশারা চারপাশ থেকে এসে দলবেঁধে মাথার ওপর জড়ো হয়। ফানেলের আকার ধারণ করে ঘুরপাক খেতে থাকে। হাত দিয়ে তাড়াতে চাইলেও ওরা যায় না। একটানা ভনভন শব্দ করে উড়তে থাকে। আমরা হাঁটাহাঁটি করলে মশার দলও সেই ফানেলের আকৃতি অবিকৃত রেখে মাথার ওপরেই ঘুরন্ত অবস্থায় চলতে থাকে। কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস মশাকে আকর্ষণ করে বলেই এ রকম হয়। আমাদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে এই গ্যাস বেরোয়। মশারা যে মানুষ চেনে, সেটা ওই কার্বন ডাই-অক্সাইড দিয়েই। দিনের আলো মশারা সহ্য করতে পারে না। তাই ওরা সন্ধ্যায় বেরোয়। এ সময় আমরা মাঠে হাঁটাহাঁটি করলে নিঃশ্বাসের সঙ্গে বের হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের আকর্ষণে মশারা মাথার ওপর জড়ো হয়। বলা যায়, আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসই তাদের টেনে আনে আমাদের মাথার ওপর। অনেক সময় মশা ছাড়াও অন্য কোনো পোকা বা একজাতীয় খুদে মাছি মাথার ওপর জড়ো হয়। এরা আসলে ঠিক আমাদের মাথা লক্ষ্য করে আসে না। আমাদের প্রশ্বাস ও শরীরের উষ্ণতাকে ওরা কোনো জলাভূমি থেকে উঠে আসা গ্যাস বা জলীয়বাষ্প বলে ধরে নেয়। সে জন্য সেখানে তারা জড়ো হয়। কারণ, জলাভূমিতে তাদের খাদ্য থাকে। শুধু খাদ্য নয়, জলাভূমি তাদের আদর্শ প্রজনন ক্ষেত্রও বটে। সেখানে দলবেঁধে উড়তে থাকে তাদের স্ত্রীজাতীয় সঙ্গীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। আকৃষ্ট হয়ে সঙ্গীরা ছুটে এসে তাদের সঙ্গে মিলিত হয় এবং সেখান থেকে সোজা জলাভূমিতে চলে যায় ডিম পাড়ার জন্য।
Finger Print এর ইতিহাস
প্রতিটি মানুষ যেমন ভিন্ন, তেমনি আঙুলের ছাপও ভিন্ন। আঙুলের ছাপ সংক্রান্ত এই তথ্যটি আবিস্কার করেন ইতালির শরীরবিদ মারসেলো মালপিমির। ১৮৮৬ সালে তিনি এই তথ্যটি আবিষ্কার করেন।
একদিন তিনি মাইক্রোসকোপের নিচে আঙুল রেখে দেখেন যে, আঙুলের অগ্রভাগ ঝালরের ভাঁজের মতো ও কুণ্ডলীর মতো প্যাঁচানো। সেদিন থেকেই এই পদ্ধতিটির আবিষ্কার ঘটে। কয়েক বছর পরের কথা, আঙুলের ছাপ কিভাবে নেয়া হবে এই নিয়ে শুরু হলো প্রথম পরীক্ষা-নিরীক্ষা। শেষে স্থির হলো, আঙুলের অগ্রভাগকে হালকাভাবে কালিতে ডুবিয়ে নিয়ে ছাপ দেওয়া যেতে পারে। এ পদ্ধতির ব্যবহার এখনও রয়েছে। ১৮৮০ সালে ইংরেজি বিজ্ঞানী সার ফ্রান্সিস গ্যালটন আঙুলের ছাপকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করতে নেমে পড়েন। আঙুলের ছাপের ব্যবহার প্রথম শুরু হয় ইউরোপে এবং সেটি সরকারিভাবে। প্রথমে কয়েদীদের ছাপ নেওয়া হতো শনাক্ত করার কাজে। তারপর থেকে প্রায় সব ধরনের শনাক্তকরণের কাজে আঙুলের ছাপ ব্যবহৃত হতে লাগল। বিশেষ করে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। আমাদের দেশে সাধারণত পূর্ব থেকেই অশিক্ষিত জনসাধারণের নিকট থেকে আঙুলের ছাপ গ্রহণ করা হতো। কালের বিবর্তনে কিছু দিন আগেও ধারণা করা হচ্ছিল হাতের আঙুলের ছাপের দিন মনে হয় শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কম্পিউটারের সাহায্যে হাতের ছাপ পরীক্ষা করার নিয়ম উদ্ভাবনের পর এই পদ্ধতিটির নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বর্তমান সময়ে সকল কাজে আবার ব্যাপকভাবে আঙুলের ছাপ গ্রহণের প্রচলন শুরু হযেছে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা আঙুলের বা হাতের ছাপ নিযে আরো গবেষণা করছেন। ধারনা করা হয় ভবিষ্যতে হতের ছাপ বা স্টাম প্যাড সম্পর্কে আরো নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কৃত হবে।
হ জে হুসাইন