সৎ কাজের নির্দেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ..
বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা) নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) বলেছেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে লোককে বিরত রাখবে নতুবা তোমাদের ওপর শিগগিরই আল্লাহর গজব নাজিল হবে। অতঃপর তোমরা তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য দোয়া করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের দোয়া কবুল হবে না।
(তিরমিযী শরীফ)
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ পৃথিবী ও মানবতাকে সৃষ্টি করার পর সামগ্রিকভাবে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আলাদা কোনো জীব মানব শৃঙ্খলা বিধানের জন্য সৃষ্টি করেননি। প্রত্যেক মানবকে বুদ্ধি-বিবেক দিয়ে পরিপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। বিবেকসমৃদ্ধ মানুষগুলোকে পরস্পরের মধ্যে সামগ্রিক দিকগুলো সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য পরস্পরের জন্য পরস্পরকে সৎ কাজের নির্দেশ দান করেছেন। এ কাজটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে রাসূল (সা) আল্লাহর নামে শপথ করেই বলেছেন, তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে লোকজনকে বিরত রাখবে। কারণ মানবীয় দুর্বলতা ও শয়তানের প্ররোচনার শিকার হয়ে মানুষ নানা অপরাধ ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়তে পারে যা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের জন্য অশান্তি বয়ে আনে।
আজকে সমাজব্যবস্থা তার বড় প্রাণ। অথচ একজন ব্যক্তি বা একটি সমাজ একদিনেই খারাপ হয়ে ওঠেনি। নানা অপরাধ, অপকর্মে সে দিন দিন জড়াতে জড়াতে আজ অনেক বড় পাপী, সন্ত্রাসী বা দুর্নীতিবাজে পরিণত হয়েছে। তাই প্রাথমিক অবস্থা থেকে একজন ছাত্র অপর ছাত্রকে, বন্ধু অপর বন্ধুকে, কর্মকর্তা তার অধীনস্থদের, শিক্ষক তার ছাত্রদের, প্রধান শিক্ষক অন্য শিক্ষকদের, নেতা তার কর্মীদের, মা-বাবা তার সন্তানদের, বড় ভাই-বোন ছোটদের যদি সদুপদেশ দেন এবং সর্বাগ্রে নিজে মেনে চলেন তাহলে ব্যক্তি বা সমাজ এতটা খারাপ হতে পারে না। তাই রাসূল (সা) সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে ব্যক্তি ও সমাজকে কলুষমুক্ত রাখার জন্য আদেশ দিয়েছেন যেন প্রত্যেকে সৎকাজের উপদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে নিজেও বিরত থাকে, অপরকেও বিরত রাখে। রাসূলের (সা) এ নির্দেশ পালনের মাঝেই সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নির্ভরশীল। নচেৎ কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সমাজ সংশোধন করা যাবে না। ফলে সমাজ, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংসের তলানিতে গিয়ে পৌঁছবে। আর তখনই আল্লাহর গজব নেমে আসবে। মাত্রাতিরিক্ত অপরাধের কারণে তখন মুক্তির জন্য দোয়া করলেও তা হবে নিষ্ফল।
আল্লাহ আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে পরস্পরকে ভালো কাজের আদেশ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার ও থাকার তৌফিক দিন- আমিন।
গ্রন্থনায় : মিজানুর রহমান