Home সায়েন্স ফিকশন রেডিমেস

রেডিমেস

মহিউদ্দিন আকবর..

বাহ! নাশতার টেবিলটা বেশতো সাজিয়েছে রেডিমেস। গরম গরম পরাটা, ডিমের ওমলেট, নিরামিষ, কাটলেট, ধোঁয়া ওঠা পাস্তা, ফালুদা আবার এক মগ কফিও! কিন্তু এত খাবার খাবে কে? তা ছাড়া মাত্র এক ঘণ্টায় এত আয়োজন! আসলে রেডিমেসটা পারেও। অর্ডার দিতে বাকি- তৈরি করতে বিলম্ব নেই। পাঁচজন বাবুর্চির কাজ একা রেডিমেসই করতে পারে। তা ছাড়া ওর সেন্সও ভালো। অবিকল মানুষের মতো বুদ্ধি খাটাতে পারে। কখনও মানুষকেও ফেল করিয়ে দেয়। এ জন্যই রোবোকশনিস্ট প্রফেসর ড. ইমরান আর সব রোবটের মতো রেডিমেসকে রফতানি করে দেননি। রেডিমেস তার খুবই প্রিয়। একদিনের জন্যও তিনি রেডিমেসকে হাতছাড়া করতে রাজি নন।
একা মানুষ ড. ইমরান। সারাক্ষণ ল্যাবেই পড়ে থাকেন। সময়মতো এটা ওটা দিয়ে সাহায্য করা, খাবার তৈরি এবং পরিবেশন- সবই করে তার রেডিমেস। কাজ না থাকলে ল্যাবের নিরাপত্তা এবং পাহারাদারির কাজটাও রেডিমেসের। এমন উপকারি রোবটকে কি কেউ হাতছাড়া করতে চায়? আবার তাকে হাতে পেতেও তো অনেকের লোভ। ড. ইমরানের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রফেসর ড. রামপালিশতো উঠে পড়েই লেগেছিলেন একবার। যে করে হোক রোবটটা তার চাই-ই চাই। অনেক বড় অংকের টাকাও অফার করেছেন ড. ইমরানকে। ইমরান রাজি হন নাই। আর তিনি রাজি না হওয়ায় ড. রামপালিশও বাড়াবাড়ি করেননি। তবে রেডিমেসের একটা ক্লোন তিনি করবেন- এ কথা জানিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন। অবশ্য তিন বছর পার হলেও ডা. রামপালিশ কোনো ক্লোন করতে পারেননি।
ড. ইমরান এ খবর জেনে গর্ব বোধ করেন। তিনি মাঝে মাঝে রেডিমেসের মেটালিক মাথায় হাত রেখে স্নেহ করেন। আদরমাখা কণ্ঠে বলেন, তুমি আমার প্রিয় বন্ধু। কোনো কিছুর বিনিময়েই আমি তোমাকে হাতছাড়া করতে চাই না। কেউ যেন তোমার ক্লোনিং করতে না পারে আমি তা-ই চাই।
রেডিমেস ড. ইমরানের সব কথা বুঝতে পারে। ও বিনয়ের সাথে মাথা ঝুঁকিয়ে রোবোকণ্ঠে বলে, আমিও আপনাকে ছেড়ে যেতে চাই না। আমি আপনার সেবাতেই নিজেকে নিযুক্ত রাখতে চাই।
রেডিমেসের কথায় ড. ইমরান আনন্দিত হয়ে বলেন, সাবাস রেডিমেস! তোমার আনুগত্যে আমি মুগ্ধ।

দুই.
আজ সকাল থেকে ড. ইমরানের ল্যাবের পাশে একটা বিড়ালছানা চিৎকার করে চলেছে। এক সময় দয়া করে ড. ইমরান বিড়াল ছানাটাকে ল্যাবের ভেতরে নিয়ে আসেন। রেডিমেসকে বলেন, ওকে একটু মিল্ক পাউডার গুলে খাওয়াতে।
বিনাবাক্য ব্যয়ে রেডিমেস বিড়ালছানাকে দুধ তৈরি করে খেতে দেয়। কিন্তু কী অবাক কাণ্ড! একটু দুধ পান করেই বিড়ালছানাটা একটা মস্ত বিড়ালের রূপ ধারণ করে। অমনি রেডিমেস খপ করে বিড়ালের গলা চেপে ধরে ড. ইমরানের সামনে নিয়ে এসে সব বৃত্তান্ত খুলে বলে। ড. ইমরানের মাথা কাজ করতে চায় না ব্যাপারটা নিয়ে। তিনি ভাবেন, এটা কী করে সম্ভব? তাহলে এটা কি ভিনগ্রহের কোনো আগন্তুক? নাকি এটাও একটা কৃত্রিম বিড়াল! যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। তিনি দ্রুত জামার হাতা গুটিয়ে তার বায়োনিক রিস্ট ওয়াচের আল্ট্রাম্যাগনেটিক স্ক্যান চালু করে দেন। তারপর ঘড়ির ডায়ালের ডান পাশের মাইক্রটাচ বাটন স্পর্শ করতেই বিড়ালটা রেডিমেসের হাত ফসকে ঝড়ের বেগে ছুটে গিয়ে ম্যাগনেটিক ট্যাম্পার্ড ওয়ালে আঠার মত সেটে থাকে। ড. ইমরান দ্বিতীয় আরেকটা বাটন টাচ করতেই বিড়ালের শরীরটা ঝন ঝন আওয়াজ তুলে চুরমার হয়ে ট্যামপার্ড ওয়াল থেকে ঝরে পড়ে। এরই মধ্যে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে বিড়ালটার নকল খোলস। আর ভেতরের যান্ত্রিক কাঠামোর নাট-বল্টু খুলে সব আলাদা আলাদা হয়ে গেছে। ততক্ষণে রাগ ক্ষোভ আর উত্তেজনায় কাঁপছেন ড. ইমরান। দাঁতে দাঁত চেপে কম্পিউটার অন করে দ্রুত হাতে কী সব সার্চ দিয়ে অবশেষে হাসিমুখে রেডিমেসকে জানালেন, শোন হে, প্রিয় সহচর! কুকুরের লেজ কখনোই সোজা হতে পারে না। এটা মূলত ড. রামপালিশের একটা কারসাজি। তিনি কমপ্রেসড সুটকেস ফাইল আকারে একটা দুর্ধর্ষ রোবোক্যাটকে পাঠিয়েছিলো তোমাকে ধরে নেয়ার জন্য। আর এটাও আমি শিওর যে, এটা তার ব্যর্থতা ঢাকবার একটা কৌশল। সে পরাজয় মানতেই রাজি নয়। তোমার ক্লোন তৈরির সব চেষ্টা তার ভেস্তে গিয়েছে বলেই এবার তোমাকে শেষ করে অথবা কিডন্যাপ করে সে তার জ্বালা মেটাতে চাইছে। তুমি আরও সাবধান হও রেডিমেস। যে কোনো সময় তুমি কিডন্যাপ হয়ে যাবে।
ড. ইমরানের কথায় রেডিমেস কোনো জবাব দেয় না। নীরবে ল্যাবের বাইরে লনের দিকে চলে যায়। ড. ইমরান মুচকি হাসেন। কিন্তু মাত্র পঞ্চাশ সেকেন্ডের মাথায় রেডিমেস যখন ফিরে আসে তখন প্রফেসর ড. ইমরান বিস্ময়ে থ হয়ে যান। তিনি অবাক দৃষ্টিতে দেখেন রেডিমেসের সাঁড়াশি হাতে মুঠোয় গলাচাপা হয়ে ঝুলছেন প্রফেসর ড. রামপালিশ! কিন্তু কোনো টুঁ শব্দটিও করতে পারছেন না। কেবল হাঁস-ফাঁস করছেন।
ড. ইমরান ব্যস্ত হয়ে বললেন, আহা করছো কী রেডিমেস! প্রফেসর সাহেব তো তোমার হাতে মারা পড়বেন। ছাড়ো। ওনাকে ছেড়ে দাও।
কিন্তু না রেডিমেস শুনলো না ড. ইমরানের আদেশ। ও গন গনে মেটালিক ভাইব্রেশন ছড়িয়ে বললো, না। ছাড়বো না। আগে ওনার মুখের ভেতর থেকে মাইক্রসনিক ন্যানো রিমোটটা বের করে আমার হাতে দিতে বলুন। না হলে আর মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড তিনি বেঁচে থাকবেন। এ কথা বলেই রেডিমেস কাউন্ট ডাউন শুরু করলো- থার্টি, টুয়েন্টি নাইন, টুয়েন্টি এইট, টুয়েন্টি সেভেন…।
ব্যাস আর গুনতে হলো না। ড. রামপালিশ তার মুখে আঙুল ঢুকিয়ে একদলা থুতুসহ বের করে দিলো ন্যানো রিমোট। অমনি রেডিমেস ওর হাতের সাঁড়াশি হালকা করে দিতেই ড. রামপালিশ ধপাস করে মেঝেতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। ড. ইমরান এতক্ষণে চেয়ার ছেড়ে উঠে দৌড়ে এলেন ড. রামপালিশের কাছে। আবার দৌড়ে প্রসাধন কক্ষ থেকে পানি এনে পানির ঝাপটা দিয়ে সুস্থ করে তুললেন ড. রামপলিশকে। ড. পালিশ লজ্জিত হয়ে ধীরে ধীরে বললেন, আপনি এ কেমন দানব তৈরি করেছেন ড. ইমরান! আরেকটু হলে ওতো আমাকে মেরেই ফেলতো। ভাগ্যিস রিমোটটা গিলে ফেলিনি, ওটা ওর হাতে দিয়ে তবেই বাঁচোয়া। আসলে আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিলো রেডিমেসকে কিডন্যাপ করে নিয়ে ওর একটা ক্লোন বানিয়ে তবেই ওকে ছেড়ে দেবো। ওকে শেষ করে ফেলবো না। কিন্তু ওর যে প্রোটেকশন ক্ষমতা তাতে ওকে কিডন্যাপ করা সম্ভব নয়। মাঝখান থেকে আমার দীর্ঘ দিনের সাধনার ফল রোবোক্যাটটাকে হারালাম। আমার খুব ক্ষতি হয়ে গেলো ড. ইমরান। আপনার কাছে লজ্জাও পেলাম প্রচণ্ড। এখন ভাবছি, প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসার পথটা বিজয়ের পথ নয়। আমি আপনার সাথে আপস করতে চাই। বন্ধুত্ব চাই। আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন।
ড. ইমরান হো হো করে হেসে বললেন, তাহলে আপনার আর কোনো টেনশন রইলো না। আমিই রেডিমেসের একটা ক্লোন তৈরি করে আপনাকে উপহার দেবো, যা হবে আমাদের মৈত্রীর স্মারকচিহ্ন।
ড. ইমরানের কথায় ড. রামপালিশ আনন্দে উল্লাস করে উঠলেন- হুররে!
ততক্ষণে রেডিমেসও মেটালিক কণ্ঠে চিৎকার করে উঠলো- আপনাদের লড়াই শেষ, আই অ্যাম অ্যা রোবফ্রেন্ড মাস্টার রেডিমেস।

SHARE

8 COMMENTS

Leave a Reply