Home খেলার চমক ছন্দহীন ফুটবল এবং বাংলাদেশ

ছন্দহীন ফুটবল এবং বাংলাদেশ

হাসান শরীফ….

এবারের বাংলাদেশ লিগে নতুন দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশে আসছে বিশ্ব কাঁপানো আর্জেন্টিনা। প্রতিটিই দুর্দান্ত খবর। যেকোনো ইভেন্টের জন্য এর একটিই মাইলফলক বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু তবুও ফুটবলপ্রেমীরা খুব একটা উৎসাহিত হতে পারছেন না। ছন্নছাড়া ভাবটি এখন কমবেশি সবার মধ্যেই প্রচণ্ডভাবে চেপে বসেছে। কোনোমতে ঢাকাকেন্দ্রিক দুই একটা টুর্নামেন্টের আয়োজন, বাধ্যবাধকতার বেড়াজালে আটকে দুই একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলার মধ্যেই বাংলাদেশের ফুটবল সীমাবদ্ধ। ফুটবল যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয়, সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত খেলা, সেখানে আমরা শুধুই পিছু হটছি। ফুটবলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার কোনো চেষ্টাই নেই। পরিণতিতে ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। যে ফুটবল বিবেচিত বাংলাদেশের প্রাণের খেলা, সেই খেলাকে মেরে ফেলার সব রকম ব্যবস্থাই করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে এখন খেলাই হচ্ছে না। এক সময় প্রতিটি আনাচে-কানাচে ফুটবল হতো। প্রচণ্ড শীতে হতো, কুয়াশায় বল দেখা না গেলে হতো, গ্রীষ্মে হতো, বর্ষায় হতো। বৃষ্টিকে উপভোগ করার একটা মাধ্যমই ছিল ফুটবল। আমাদের মতো দেশের জন্য ফুটবল সত্যিই ভালো খেলা। যেকোনো আয়তনের খালি জায়গায় তা খেলা যায়। আবার একটা বল কিনলে গোটা বিশেক ছেলেকে অন্তত ছয় মাসের শরীরচর্চা আর বিনোদনের ব্যবস্থা করা যায়। যেকোনো খেলার চেয়ে এটাই সবচেয়ে সস্তা। অথচ এখন ঢাকায় দুই একটা টুর্নামেন্ট হলেও সারা দেশে বলা যায় ফুটবল বন্ধ হয়ে গেছে বা করা হয়েছে। এমনকি ঢাকাতেও আগে পাইওয়নিয়ার লিগ, তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ লিগগুলো হতো, সেগুলোও হচ্ছে না। সব বন্ধ। ফলে নতুন খেলোয়াড় বের হচ্ছে না। ফুটবল খেলতে না পেরেই তরুণরা হয় অন্য খেলায় ঝুঁকছে, কিংবা অন্য কোনো কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

শুধু খেলা না হওয়া নয়, খেলা হলেও নানা অভিযোগ থাকে। টুর্নামেন্টগুলো আকর্ষণীয় করার কোনো উদ্যোগ নেই। সবচেয়ে জঘন্য অভিযোগটি হলো পাতানো খেলা। অনেকটা খোলামেলাভাবে এই পাতানো খেলা হয়ে থাকে। অথচ কর্তৃপ দেখেও না দেখার ভান করে। জনপ্রিয়তা এমনিতেই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে খেলায়, সেখানে এই অভিযোগ খেলাটিকে আরো ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এবার নতুন দল হিসেবে খেলতে নেমেই শেখ জামাল চ্যাম্পিয়ন হলেও তাদের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগটি উঠেছে। এই অভিযোগ আছে বলেই তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েও বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে পারেনি। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও সেটা যে স্রেফ কথার কথা, সেটা সবাই সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে গেছে। এ ধরনের হুমকি-ধমকি অনেক েেত্রই দেয়া হয়, সেটা দিতে হয় বলেই দেয়া হয়, প্রয়োগ করার জন্য নয়, তা যারা দেন তারাও বোঝেন।

ফুটবলে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও আমাদের প্রতিবেশীরা কিন্তু অল্প অল্প করে এগিয়ে যাচ্ছে। মে মাসের ফিফা র‍্যকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৩-এ। আর ভারতের ছিল ১৪৫। এক সময় আমরা অতি সহজে যে দুই দলকে হারাতাম সেই নেপাল ও মালদ্বীপের অবস্থান যথাক্রমে ১৪৭ ও ১৪৮।

বাংলাদেশের ফুটবল কোচ নিয়েও আছে নানা জটিলতা। এখন পর্যন্ত ১৩ জন বিদেশী কোচও এসেছেন। কিন্তু কেউই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি, এমনকি তারা তাদের মনমতো করে দলকে শেখাতে পারেননি। নানা হস্তক্ষেপে অতৃপ্তি নিয়ে তাদের সরে যেতে হয়েছে। সবশেষে চলে গেছেন ক্রোয়েশিয়ার রবার্ট রুপচিচ। তার বিদায় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেক রহস্য। লকে প্রশিণের কাজ করতে না পেরে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে নয় মাসের মাথায় অনেকটা গোপনে বাংলাদেশ ছাড়েন তিনি। বাংলাদেশে নয় মাস অবস্থানকালে জাতীয় দলকে খুব কমই পেয়েছিলেন তিনি। ফলে সাফল্য তো দূরের কথা, দলের সদস্যদেরও ভালোভাবে চিনতে পারেননি। তার বিদায় নিশ্চিত হতে না হতেই মেসিডোনিয়ার জর্জি ইউভানোভস্কিকে কোচ নিয়োগের কথা ঘোষণা দেয় বাফুফে। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে তাকে নিয়েও সৃষ্টি হয় নানা অনিশ্চয়তা।

এতো কিছুর পরও বাংলাদেশের মানুষ ফুটবলকে ছাড়তে পারেনি, পারবেও না। প্রাণের তাগিদেই এদিকে থেকে যাবে।

বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য সবচেয়ে স্মরণীয় দিন হতে পারে ৬ সেপ্টেম্বর। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ঢাকায় সেদিন একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে। অবশ্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নয়, সোনালি ঈগলখ্যাত আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে। তবুও ম্যাচটি নিয়ে আকর্ষণ সৃষ্টির কারণ হলো সেটা হবে ঢাকায়। নিজ মাঠে বসে বিশ্বমানের একটা লড়াইয় প্রত্য করা কম গৌরবের নয়। নানা কারণে আমাদের দেশের খুব বেশি লোকের বিশ্বকাপ বা অন্য কোনো টুর্নামেন্টে মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ ঘটে না। এবার তাই সবার মধ্যেই সাড়া পড়ে গেছে। উভয় দেশই পূর্ণাঙ্গ জাতীয় দল নিয়ে আসবে। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠলেও কর্তৃপ জানিয়েছে, ওই ম্যাচ নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। ৪০ লাখ ডলারের চুক্তিও হয়ে গেছে। ঢাকায় আসার আগে ২ সেপ্টেম্বর আর্জেন্টিনা কলকাতায় একটি ম্যাচ খেলবে। সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে ভেনিজুয়েলা।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কি এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে খেলাটিকে এগিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করবে? করতে পারলে সবারই লাভ হবে।

SHARE

Leave a Reply