Home নিয়মিত বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টি

বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টি

হাসান শরীফ
অবিস্মরণীয়, অবিশ্বাস্য ইতিহাসের জন্ম দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করেছে বাংলাদেশ। পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডকে মাটিতে নামিয়ে আকাশে উড়ছে বাংলাদেশ। এমন দৃশ্য আগে দেখা হয়নি। প্রতিটি বিভাগে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়ে স্বপ্নিল এক সিরিজ জয় করেছে টাইগাররা। সাকিব বাহিনীর হুঙ্কারে সত্যিই কেঁপে উঠেছে বিশ্ব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটাই এখন বাংলাদেশের সেরা সিরিজ, অনন্য অর্জন।
sakib al hasan in action
সাকিব-অনবদ্য ভঙ্গিমায়
এর আগেও টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার কথা বলতে হয়। তবে সেটি ছিল খর্ব শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে মতবিরোধের কারণে ক্রিস গেইলের দল মাঠে নামেনি। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অনেক জয় পেলেও তারা কোনো স্বীকৃত শক্তি নয়। নিউজিল্যান্ড একটি সম্পূর্ণ পেশাদার ও দুর্দান্ত শক্তির দল। সেই দলকে নাকানিচুবানি খাওয়ানো বিশাল এক কৃতিত্বের ব্যাপার। (এ প্রতিবেদন লেখার সময় শেষ ম্যাচটি হয়নি। সবাই আশা করছিল এটাতে জিতে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করবে বাংলাদেশ)।
চতুর্থ ম্যাচে কারো কারো আশঙ্কা ছিল শেষ মুহূর্তের খানিক শৈথিল্যে সাফল্য হাতছাড়া হয় নাকি! ম্যাচের শেষদিকে হার-জিতের পাল্লাটি পেন্ডুলামের মতো দুললেও তীরে এসে আর তরী ডুবায়নি সাকিবরা। ৯ রানের দুর্দান্ত জয়ে সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা। সাকিবের ৫ম সেঞ্চুরির সুবাদে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৮.১ ওভার ব্যাট করে সব ক’টি উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ২৫ রানে শেষ ৫ উইকেট না হারালে বাংলাদেশের সংগ্রহ আরো বড় হতে পারত। তবে সেটাই যে জয়ের মতো টার্গেট সেটা বাংলাদেশের বোলাররা ২০ ওভারের মধ্যেই দেখিয়ে দেন। ২০.২ ওভারে ৮০ রানে ৫ম উইকেট হারায় কিউইরা। বাংলাদেশের জয়টাকে তখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু ইলিয়টকে সাথে নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে শূন্য রানে আউট হওয়া উইলিয়ামসন ৭০ রানের জুটি গড়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন কিউইদের। হাঁটি হাঁটি পা পা করে গন্তব্যের পথে এগুতে থাকে কিউইরা। দুরু দুরু করতে থাকে টাইগার সমর্থকদের অন্তর। এই বুঝি হাতছাড়া হয় ম্যাচ! শেষ পর্যন্ত অঘটন ঘটেনি। ৩৭ ওভারের প্রথম বলে সাকিব ইলিয়টকে (২২) ফিরিয়ে দিলে ম্যাচে ফিরে আসে টাইগাররা। তবে নাথান ম্যাককুলামকে নিয়ে উইলিয়ামসন হারার আগে লড়াই করেছেন। রানার নিয়ে উইলিয়ামসন ১০৮ রানের যে ইনিংসটি খেলেছেন সেটা দর্শকরা মনে রাখবেন অনেকদিন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ৪৯তম ওভারে বদলি ফিল্ডার নাঈম ইসলামের ছুড়ে দেয়া বল সরাসরি স্ট্যাম্পে আঘাত করে দলীয় ২২৫ রানে ম্যাককুলামকে ফিরিয়ে দেন। পরের বলে টাফিকে আউট করেন সাকিব। জয়ের জন্য শেষ ওভারে কিউইদের দরকার ১৪ রান, বাংলাদেশের ১ উইকেট। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে সেঞ্চুরি করা উইলিয়ামসনকে (১০৮) আউট করে সব আশঙ্কা দূর করে দেন।
এই ম্যাচটা ছিল সাকিবময়। সাকিব তুলেছেন ১০৬ রান। বাকি ১০ জন এবং অতিরিক্ত ৯ রানের যোগফল ১৩৫। প্রথমে ব্যাট করে সংগ্রহ করা ২৪১ রান নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। আর সাকিবের এটি ৫ম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম। এ সেঞ্চুরির সুবাদে শাহরিয়ার নাফীসকে টপকে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন তিনি। নাফীসের ওয়ানডে সেঞ্চুরি ৪টি, আশরাফুল-তামিমের ৩টি করে। সিরিজের প্রথম থেকে সাকিবকে নিয়েই বেশি ভয় ছিল কিউইদের। তৃতীয় ওয়ানডেতে তেমন কিছু করতে না হলেও চতুর্থ ওয়ানডেতে ঠিক সময়ে জ্বলে উঠেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ৫৮ রান করে জানান দিয়েছিলেন এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতেও কিছু করতে চান। চাপে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তুলতে গিয়ে পেলেন নিজের ৫ম সেঞ্চুরি। ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে করেন ১০৬ রান। এ রান করতে খেলেছেন ১১৩ বল, মেরেছেন ১১টি চার ও ১টি ছয়।
Bangladesh wins over New zealandপ্রথম ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডকে ৯ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ২২৮ রান করেছিল। পরে বৃষ্টি এলে নিউজিল্যান্ডকে ২০৯ রান করতে বলা হয়। তারা শেষ পর্যন্ত ৩৭ ওভারে করে ২০০ রান। এই ম্যাচেও ম্যান অব দি ম্যাচ হন সাকিব আল হাসান। বৃষ্টিতে ভেসে যায় সিরিজের দ্বিতীয় খেলাটি। তৃতীয় ম্যাচে ৬০ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশ জিতে যায় ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। প্রথমে ব্যাট করে রস টেলরের হার না মানা অর্ধ-শতকের সুবাদে নিউজিল্যান্ড করে ১৭৩। পুরো ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি। খেলেছে মাত্র ৪২ ওভার ৫ বল। এটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে কম রান। দু’বছর আগে এই মাঠেই তাদের সর্বনিম্ন রান ছিল ২০১।
এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৩তম সিরিজ জয় সম্পূর্ণ করল। ভবিষ্যতে পূর্ণ শক্তির টেস্ট দলের বিপক্ষে এমন আরো অনেক জয় দেখার অপেক্ষায় পুরো দেশ।
বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার তামিম : নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে ইঞ্জুরির কারণে খেলতে না পারলেও দারুণ এক কৃতিত্ব অর্জন করেছেন বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল। ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাবান ম্যাগাজিন ‘উইজডেন’র ২০১০ সালের বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দ্র শেওয়াগ, জ্যাক ক্যালিসদের পেছনে ফেলে তিনি সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১০-এর ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৭ টেস্টে এই বাঁ-হাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ৫৯.৭৮ গড়ে ৮৩৭ রান করেন। ব্যাট হাতে এই দুর্দান্ত ‘পারফরম্যান্সের’ কারণেই তামিম এই মর্যাদা পান।
২০০৯ সালে উইজডেনের বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার হয়েছিলেন বাংলাদেশেরই আরেক ক্রিকেটার, সাকিব আল হাসান। অর্থাৎ টানা দু’বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা উইজডেনের বিচারে সেরা হলেন।
ম্যাগাজিনটি তামিমকে তুলনা করেছে ভারতের মারকুটে ব্যাটসম্যান শেওয়াগের সঙ্গে। বোলার বিধ্বংসী তামিমের মানসিকতাকে বুলডোজারের সঙ্গে মেলানো হয়েছে। তবে ইংল্যান্ড সিরিজে তামিমের আগ্রাসী শতকই উইজডেনকে মুগ্ধ করেছে বেশি।
উইজডেনের বিচারে বর্ষসেরা দ্বিতীয় টেস্ট ক্রিকেটার হয়েছেন ইংল্যান্ডের অফ-স্পিনার গ্রায়েম সোয়ান। তৃতীয় শেওয়াগ। এরপর একে একে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাইমন ক্যাটিচ, দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডেল স্টেইন ও মর্নে মর্কেল, ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও জহির খান, দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস ও ইংল্যান্ডের পেসার জেমস অ্যান্ডারসন।
কমনওয়েলথ গেমসে অস্ট্রেলিয়াই সেরা : সদ্য সমাপ্ত ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসে অস্ট্রেলিয়া ৭৪টি স্বর্ণসহ ১৭৭টি পদক নিয়ে শীর্ষস্থান অক্ষুণœ রাখে। স্বাগতিক ভারত ৩৮টি স্বর্ণ, ২৭টি রৌপ্য ও ৩৬টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১০১টি পদক নিয়ে হয় দ্বিতীয়। ইংল্যান্ড ৩৭টি স্বর্ণ, ৫৯টি রৌপ্য ও ৪৬টি ব্রোঞ্জসহ ১৪২টি পদক নিয়ে তৃতীয় হয়। বাংলাদেশের আশা ছিল একটি স্বর্ণ জয়। কিন্তু একটিমাত্র ব্রোঞ্জ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। সেই পদকটা এসেছে শুটিং থেকে।

SHARE

1 COMMENT

Leave a Reply