হতাশ করেনি বাংলাদেশ
হাসান শরীফ
ফাইনালে ভারত হারে- প্রায় প্রবাদে পরিণত হওয়া এই কথাটি নিয়ে সাম্প্রতিককালে কিছুটা সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছিল। কিন্তু ঢাকায় তার সত্যতা ফের মিললো আইডিয়া কাপ তিন জাতি ক্রিকেটের ফাইনালে ধোনিদের পরাজয়ে। শিশির যেখানে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে, তখন টসে জয়েই ম্যাচ জয় হয়ে যায়, সেখানে ১৩ জানুয়ারির ফাইনালে শ্রীলঙ্কার জয় অবধারিতই ছিল। কিন্তু যে টুর্নামেন্ট বিশাল বিশাল স্কোর দেখে আসছিল কিংবা ব্যাটে-বলে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রত্যাশা সেটা আসল ম্যাচটিতে দেখা যায়নি। শ্রীলঙ্কা অনায়াসে জেতেনি, প্রায় পুরোটা সময়ই তাদের খেলতে হয়েছে, কিন্তু একবারের জন্যও ভারত ফাইনালে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। ফলে নিরানন্দ ফাইনালের মধ্য দিয়েই শেষ হতে হয়েছে টুর্নামেন্টটিকে।
অবশ্য টুর্নামেন্টটির শেষদিকের ম্যাচগুলোতে প্রথমে ব্যাট করা দলগুলো কিছুটা সমস্যায় পড়েছে খেলার শুরুতেই উইকেট হারিয়ে। কিন্তু তবুও শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের সুবাদে প্রতিবারই রান অন্তত দুই শ’ পার করিয়ে নিতে সক্ষম হয়। ফাইনালেও ভারত তা-ই করেছে। ৬০ রান তুলতেই ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও তারা ২৪৫ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কাকে ৪৮ ওভার পর্যন্ত আটকে রেখেছিল। আর সেটা হয়েছিল সুরেশ রায়নার সেঞ্চুরির সুবাদে। অবশ্য, ভারতীয় বোলাররাও একটু উদ্দীপ্ত ছিলেন। ভারতের রান আরেকটু হলে হয়তো আরো কঠিন অবস্থায় পড়তে হতো শ্রীলঙ্কাকে। কিন্তু শেষে ব্যাট করা দলই জেতে-এই আইডিয়া কাপের এই আইডিয়ারই জয় হলো।
এই জয়ের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা শিরোপা জয়ের পাশাপাশি আরো কয়েকটি হিসাব মিলিয়ে নিলো। আগের মাসে ভারতের মাটিতে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পারলো। তা ছাড়া একদিনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে উভয় দল ১৪টি করে খেলে ৬টি করে জিতেছিল (২টি পরিত্যক্ত হয়েছিল), এবার শ্রীলঙ্কা এগিয়ে গেল।
নতুন বছরের শুরুর টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচেও জয় পায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আইডিয়া কাপ তিন জাতি ক্রিকেটে এক ম্যাচ আগেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছিল তারা। ফলে ফাইনালে নিছক দর্শক হয়েই থাকতে হয়। গত বছরটা দুর্দান্ত খেলার পর আরেকটু সাফল্য আসতেই পারতো। কিন্তু তবুও বলা যায়, বাংলাদেশ খুব খারাপ খেলেছে, তা নয়। বিশেষ করে প্রথম দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও ভারতকে খুব একটা খারাপভাবে মোকাবেলা করেনি।
প্রতিটি ম্যাচেই বাংলাদেশ দলের কিছু না কিছু অর্জন ছিল। ভারতের বিরুদ্ধে ২৯৬ রান করতে পেরেছিল। কোনো টেস্ট প্লেয়িং দেশের বিরুদ্ধে এটাই সর্বোচ্চ রান। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা প্রমাণ করেছেন, তারা চাপ সামলানোর বিষয়টি অনেকটাই আয়ত্তে এনেছেন। টপ অর্ডারে বিপর্যয় ঘটলেও তারা অনেকটাই সামাল দিতে পারেন। অবশ্য বোলাররা আরেকটু সাফল্য দেখাতে পারলে বাংলাদেশের ম্যাচগুলো আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারতো। তবে চারটি ম্যাচেই বাংলাদেশকে খেলতে হয়েছে শিশিরভেজা মাঠে। বাংলাদেশের মূল শক্তি স্পিনাররা এ থেকে কোনো সুবিধাই করতে পারেননি। তবে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে টসে জিতেও প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত প্রশ্নবোধকই থেকে গেছে।
আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশকে বেশ কিছু কঠিন ম্যাচ খেলতে হবে। তার পর শুরু হবে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। ফলে আরো ভালো করতে হবে বাংলাদেশকে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু হবে ২০১১ সালে। কিন্তু কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে এবং তা হয়েছে ঢাকায় বিশ্বকাপ ট্রফি উন্মোচনের মধ্য দিয়ে। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসর শুরুর ৪০৪ দিন আগে ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানটি হোটেল শেরাটনে গত ৯ জানুয়ারি বেশ সাড়ম্বরেই অনুষ্ঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল এবং চার আয়োজক ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি হয়।
আয়োজক হিসেবে পাকিস্তানের নামটি থাকলেও সেখানে কোনো খেলা হবে না। সন্ত্রাসে জর্জরিত দেশটিকে হতাশাতেই থাকতে হবে। ফলে বিশ্বকাপ হবে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। এর মধ্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ আয়োজনের অভিজ্ঞতা থাকলেও বাংলাদেশের এবারই প্রথম।
লংকা বাহিনি বলে কথা।