
তরজমা : জাফর তালুকদার
জ্যাক শুধু বোকা নয়, ওরা ছিল ভারি গরিব। গায়ে গতরে তাগড়া হলেও মায়ের কোনো উপকারেই আসত না সে। দুটো খাবারের জন্য মা রাতদিন খেটে মরলেও জ্যাক ঘুরে বেড়াত গায়ে ফুঁ দিয়ে। গরমকালে সে বাগানে বসে হাওয়া খেত। আর শীতকালে ঘরে বসে আরাম করত আগুনের ওমে বসে।
এক রোববার জ্যাককে মা ডেকে বললেন, ‘কাল কাজে গিয়ে কিছু টাকাকড়ি জোগাড় করে আনো। না হলে তোমাকে কিন্তু উপোস থাকতে হবে।’
জ্যাক বলল, ‘বেশ ভাল কথা। কিন্তু কোথায় কাজে যাব সেটা বলে দাও।’
‘মি. হোয়াইটের সঙ্গে দেখা করো। উনি বাগানের কোনো কাজে লাগাতে পারেন তোমাকে।’
সোমবার কাজে গেল জ্যাক। দিনের শেষে মি. হোয়াইট দুটো পেনি দিলেন তাকে। এ দিয়ে সে কী করবে ভেবে পেল না। কেননা এর আগে সে এ জিনিস দেখেনি কখনও। পাথরের টুকরোর মতো পেনি দুটো শূন্যে ছুড়ে মারল, আবার ধরল, এমনি লোফালুুফি করতে করতে হারিয়ে গেল এক সময়।
বাড়ি ফিরে এলে মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী টাকা কামাই করলে দেখি?’
জ্যাক ঝাটপট উত্তর দিল, ‘দুঃখিত, আমার কাছে কোনো টাকা নেই। মি. হোয়াইট দুটো পেনি দিয়েছিল, কিন্তু তা পথে পড়ে গেছে কোথাও।’
‘তুমি সেটা পকেটে রাখোনি কেন?’ মার চোখে মুখে বিস্ময়!
‘এরপর থেকে রাখব।’
মঙ্গলবার পুনরায় কাজে বেরোল জ্যাক। এবার সে কাজ পেল মাঠে গরু চরানোর। বেলা শেষে ফিরে এলে মালিক তাকে টাকা না দিয়ে কিছু দুধ দিল মজুরি বাবদ। আগের ভুলের কথা চিন্তা করে সে দুধের বাটিটা কোটের পকেটে ঢুকিয়ে দৌড়ে চলে এল বাড়িতে।
জ্যাক যখন বাড়িতে ফিরল তখন এক ফোঁটা দুধও অবশিষ্ট ছিল না।
মা চোখ কুঁচকে বললেন, ‘এভাবে দুধ কেউ পকেটে করে আনে বোকা ছেলে! তুমি এটা মাথায় করে আনোনি কেন?’
জ্যাকের সোজা উত্তর, ‘আর ভুল হবে না মা। পরেরবার ঠিকঠাকভাবে আনব তোমার কথা মতো।’
বুধবার জ্যাক আবার গিয়ে হাজির হলো কিষাণের বাড়িতে। দুধ দিয়ে মাখন বানানোর কাজে সে সাহায্য করল লোকটাকে। কাজ শেষ হলে টাকাকড়ির বদলে বেশ কিছু মাখন দেয়া হলো জ্যাককে।
মায়ের কথামতো জ্যাক এবার মাখনের বড় টুকরোটা তুলে নিল মাথায়। সময়টা ছিল গরমকাল। রোদের তেজে জ্যাকের মাথাও ছিল গরম। যার ফলে একটু পরই মাখন চুঁেয় লেপ্টে গেল সারামুখে।
জ্যাক যখন বাড়ি ফিরল তখন আর এক ফোঁটা মাখন অবশিষ্ট ছিল না। মা রেগেমেগে বললেন, ‘এভাবে কেউ মাখন মাথায় বয়ে আনে? তুমি এটা হাতে আনোনি কেন?’।
‘পরের বার আর ভুল হবে মা।’
বৃহস্পতিবার জ্যাক পুনরায় কাজে গেল মি: হোয়াইটের বাড়িতে। লোকটা আজ দুটো পেনি না দিয়ে একটা ছোট্ট কুকুর গছিয়ে দিলেন জ্যাককে।
মায়ের নির্দেশ মনে পড়ে গেল জ্যাকের। এবার সে কুকুরটাকে পকেটে পুরল না। মাথায়ও তুলে নিল না মাখনের মতো। বরং কাগজে মুড়ে হাতে নিয়ে রওনা হলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
মা ছেলের বোকামিতে ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, ‘ওরে হাবা, ওভাবে কুকুরটাকে না এনে কোমরের বেল্ট পেঁচিয়ে আনলেই তো ল্যাটা চুকে যেত।’
‘পরেরবার তোমার কথার আর নড়চড় হবে না মা।’
শুক্রবার সে কাজে গেল আবার। এবার কাজ নিল এক দোকানে। কাজ শেষে তাকে বড় একটা পনিরের টুকরো দিল দোকানদার।
মায়ের কথা মনে পড়ল জ্যাকের। আগের মতো ভুল না করে সে পনিরের টুকরোটা ঝুলিয়ে নিল বেল্টের সঙ্গে। যেতে যেতে গলতে শুরু করল পনির। এবং যখন শেষমেশ সে বাড়িতে পৌঁছুল ততক্ষণে ময়লা-আবর্জনা মেখে সেটা একেবারে খাবার অযোগ্য হয়ে পড়ল।
মা বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘হায়রে বোকা ছেলে, ওটা তুমি পিঠে বয়ে আনোনি কেন?’
‘আর কখনও ভুল হবে না মা।’
শনিবার আবার জ্যাক কাজ করতে গেল সেই খামারে। কাজ শেষ হওয়ার পর চাষি বলল, ‘তোমার মা পিঠে করে কাঠ নিয়ে যান শহরে বেচতে। এটা খুবই কষ্টের ব্যাপার। আমি তাকে একটা তাজা ঘোড়া দিচ্ছি। তাকে বলবে, এটা আমার পক্ষ থেকে উপহার, বুঝেছ।’
‘অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এটা পেয়ে নিশ্চয় খুশি হবেন মা।’
মায়ের শেষ কথাটা মনে গেঁথে ছিল জ্যাকের। তার শরীর-স্বাস্থ্য তাগড়া হলেও ঘোড়াটা পিঠে তোলা ছিল সত্যি কঠিন। বার বার চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত ওটা পিঠে তুলে রওনা হল বাড়ির দিকে।
ওই গ্রামে ছিল মস্ত এক ধনী লোক। ধনী হলে কী হবে, সুখ ছিল না লোকটার মনে। তার ফুটফুটে মেয়েটি কথা বলতে পারে না, কানেও শোনে না। তিনি এ নিয়ে বন্ধুদের কাছে দুঃখ করে বলতেন, ‘আমার টাকা-পয়সা কী কাজে আসবে যদি না মেয়েটা কথা বলতে পারে!’
এই শুনে তার এক চতুর ডাক্তার বন্ধু পরামর্শের গলায় বললেন, ‘একটা উপায় আছে যা তোমার মেয়ের উপকারে আসতে পারে। যে করে হোক ওকে হাসাতে হবে। হাসতে পারলেই হাসি ফুটবে ওর মুখে।’
সবাই মিলে শত চেষ্টা করেও হাসাতে পারল না মেয়েটাকে।
একদিন বাবার সঙ্গে বাগানে বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ সে একটা মজার জিনিস দেখতে পেল। সাধারণত ঘোড়ার পিঠে মানুষ চড়লেও এই ব্যাপারটা ছিল পুরো উল্টো। এখানে ঘোড়াটাই দিব্যি ঠ্যাং উঁচিয়ে শুয়ে আছে ছেলেটার পিঠে। ঘোড়াটাকে এভাবে পিঠে বয়ে নিয়ে যেতে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল মেয়েটা। হাসি আর কিছুতেই থামে না। একটু দম নিয়ে চেঁচিয়ে বলল, ‘বাবা দেখ অই ছেলেটা পিঠে করে ঘোড়া নিয়ে যাচ্ছে!’
‘ওহ: মাগো, তুমি কথা বলতে পারছ! কী যে খুশি লাগছে আমার।’ বাবা আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন।
রাস্তার কাছে এগিয়ে তিনি ছেলেটাকে ডেকে বললেন, ‘এই যে বাপু, কী নাম তোমার?
‘জ্যাক।’
হ্যঁ, এটা ছিল বোকা জ্যাকের কাণ্ড। কিন্তু তাকে এখন আর বোকা বলা যাবে না। কেননা সেদিন থেকেই তার শুরু হলো নতুন পরিবর্তনের পালা। ধনী লোকটা প্রচুর টাকা আর মালামাল উপহার দিল তাকে। জ্যাক নিয়মিত সাহায্য করত মাকে। এবং রোজ কাজে বেরোত ধনী লোকটার বাড়িতে। যখন সে পূর্ণ যুবক হলো তখন সেই-বাড়ির সুন্দরী মেয়েটিকে বিয়ে করে সুখে দিন কাটাতে লাগল।
খুব সুন্দর গল্প!
Onnnnnnnnnnnek valo legechhe
darun.golpo
ভাল লাগল
Very funny & nice story.
nice
varry varry good.
Yes, it is really nice story! I want more story.
Yes, it’s really nice story
খুব মজা পেলাম।
Darun laglo. Tnx admin
darun golpo.pode kob moja pelam.kishor kontho ke dhonnobad.
valo laglo
ভাল লাগল