১৬ বছর পর অবশেষে...

১৬ বছর পর অবশেষে...

খেলার চমক মে ২০১৫

 মোহাম্মদ হাসান শরীফ#

একটি জয়ের জন্য প্রতীক্ষা ছিল ১৬ বছর ধরে। সেই ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো হয়েছিল। তারপর কত ম্যাচ এলো গেল। কত দলের বিপক্ষে জয় পাওয়া গেল। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে হারানো হলো। নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তো হোয়াইটওয়াশই করা হলো। ভারত, শ্রীলঙ্কা তো আছেই। জিম্বাবুয়ে তো পাত্তাই পায় না। কিন্তু পাকিস্তান যেন প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়াল। এই দলটির বিপক্ষে কোনো ফরম্যাটেই পারা যাচ্ছিল না। না। আর নয়। অবশেষে সোনার হরিণ ধরা দিলো। আর যখন ধরা দিলো, তখন উজাড় করে সব হাতে এলো। কেবল একটি ম্যাচ নয়, সিরিজ জয় সম্পন্ন হলো। একদিনের ব্যবধানে দু’টি ম্যাচে জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয় করল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে যে দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল, তার ধারাবাহিকতা হোম সিরিজে পুরোপুরি প্রদর্শন করল। ভারতের দাদাগিরি না থাকলে এবারের বিশ্বকাপে যে বাংলাদেশ অনায়াসে অন্তত সেমিফাইনালে যেতে পারত, ওই ম্যাচে ভারতকে হারানো যে অসম্ভব ছিল না, সেটাই প্রমাণ করলেন টাইগাররা। এবার সবকিছুই ছিল বাংলাদেশের অনুকূলে। একদিকে বাংলাদেশ উজ্জীবিত, সব খেলোয়াড়ই কমবেশি দারুণ ফর্মে রয়েছেন। আবার বিপরীতে পাকিস্তান যাচ্ছে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে। তাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছে ইনজুরিতে, নিষেধাজ্ঞার গ্যাঁড়াকল কাটিয়ে সাইদ আজমল ফিরলেও সেই ধার নেই, এমনকি অধিনায়কেও এসেছে পরিবর্তন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে সুযোগটি দেখা দেয় বেশ বড়ভাবেই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দিবা-রাত্রির প্রথম ম্যাচে টস কথা বলেছে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের পক্ষে। টস যেহেতু পক্ষে কথা বলেছে, সেহেতু আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র চিন্তা করতে হয়নি সাকিবকে। সৌম সরকার ও মাহমুদুল্লাহ ব্যর্থ হলেও তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশকে বড় ভিত গড়ে দেন। এই প্রথম একই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিয়ানের দেখা পেলেন টাইগাররা। আরো কয়েকটি রেকর্ড গড়ে ফেলেন তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ফলাফলে হেরফের হয়নি। শুরুতেই বাংলাদেশী বোলারদের দাপটে গুঁড়িয়ে যায় পাকিস্তান। আর খেলায় ফিরতে পারেনি। এই ম্যাচেও তামিম ইকবাল সেঞ্চুরি করে সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। তামিম-মুশফিকের রেকর্ড জুটি পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ব্যাট মাটিতে রেখে আর দেরি করেননি, গ্লাভস জোড়া খুললেই পশ্চিমমুখী হয়ে হাতের ইশারায় কী যেন বোঝাতে চাইলেন বাংলাদেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তার এই ক্রিকেটীয় আবেগ বুঝতে কারো দেরি হওয়ার কথা না। দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত ক্রিকেট খেলতে না পারায় তাকে ঘিরে বইছিল সমালোচনার ঝড়। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি সমালোচনার জবাবটা দিলেন ব্যাটে। জানিয়ে দিলেন, ‘আমাকে নিয়ে আর সমালোচনা নয়, মুখটা এবার বন্ধ করুন প্লিজ!’ এর আগেও এশিয়া কাপ ক্রিকেটে চার হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তামিম আঙুলের ইশারায় থামিয়ে দিয়েছিলেন সমালোচকদের। তামিমের কাছ থেকে এমনটিই যেন সবার প্রত্যাশা। দীর্ঘ দুই বছর পর আবার সেঞ্চুরিতে ফিরে তামিম বুঝিয়ে দিলেন নিজের দিনে তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। এখানেই শেষ নয়, মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে গড়লেন রেকর্ড জুটি, ১৭৮ রান। একই সাথে একদিনের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্কোর ৩২৯ রান। একদিনের ক্রিকেট ইতিহাসে জোড়া সেঞ্চুরিও প্রথম করলো বাংলাদেশ। তামিমের পর সেঞ্চুরি হাঁকালেন মুশফিকুর রহিমও। সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৩২৯ রান করে ওয়ানডে ক্রিকেটে দলীয় সর্বোচ্চ রানের স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। এই নিয়ে অষ্টমবারের মতো তিন শতাধিক রানের কোটা স্পর্শ করে বাংলাদেশ। আগের দলীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি পাকিস্তানের বিপক্ষেই গড়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এনামুল হকের সেঞ্চুরি ও ইমরুল- মোমিনুল-মুশফিকুরের হাফ- সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে ৩২৬ রান করেছিলেন টাইগাররা। পরে জয়ের কাছে গিয়েও ৩ উইকেটে ম্যাচ হারতে হয় স্বাগতিকদের। আশরাফুলের পাশে তামিম বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুত হাফ-সেঞ্চুরির তালিকায় নিজের নামকে যৌথভাবে চতুর্থ স্থানে লিখিয়েছেন তামিম ইকবাল। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩১ বলে হাফ-সেঞ্চুরির তুলে নিয়ে মোহাম্মদ আশরাফুলের পাশে বসেছেন তামিম। এই তালিকায় যৌথভাবে সবার ওপরে আছেন আশরাফুল-আব্দুর রাজ্জাক। ২০০৫ সালে নটিংহ্যামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন আশরাফুল। আর ২০১৩ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়েতে ২১ বলে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান রাজ্জাক। ২৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০০৭ সালে মিরপুরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬ বলে ৫০ রানের কোটা স্পর্শ করেন মাশরাফি। আর এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে চলতি সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করে আশরাফুলের সাথে যৌথভবে তৃতীয় স্থানে নাম লেখালেন তামিম। ২০০৪ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন আশরাফুল। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরি বল    খেলোয়াড়     প্রতিপক্ষ ২১    মোহাম্মদ আশরাফুল    ইংল্যান্ড ২১    আব্দুর রাজ্জাক    জিম্বাবুয়ে ২৬    মাশরাফি বিন মর্তুজা    স্কটল্যান্ড ৩১    তামিম ইকবাল    পাকিস্তান ৩১    মোহাম্মদ আশরাফুল    হারারে

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ