হায়রে কপাল মন্দ

হায়রে কপাল মন্দ

রম্যগল্প মোহাম্মদ লিয়াকত আলী অক্টোবর ২০২৩

ব্যবসা বড়ো হউক বা ছোটো হউক, বাকিতে বেচা-কেনা, কেউ পছন্দ করে না। এক সময় দোকানের ক্যাশ বাক্সে শোভা পেত, আজ নগদ কাল বাকি, বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না। বাকির নাম ফাঁকি। 

কেউ কেউ কবিতার ছন্দে সুন্দর ভাষায় লিখে রাখতো, বাকিতে মনে কষ্ট, চাইলে বন্ধুত্ব নষ্ট।

গ্রামের মুদিদোকানি মোতালেব মিয়ার বহু দিনের শখ, শহরে গিয়ে চাইনিজ খাবে।

বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীদের বড়ো বড়ো আশা।

- মনে বড়ো আশা ছিল যাবো মদিনায়।

আশা থাকলেও মদিনায় যাওয়ার শক্তি মোতালেব মিয়ার কোনোদিন হবে না,

তা সে ভালো করেই জানে। শহরে গিয়ে চাইনিজ খাবে, তাও কপালে সইলো না।

যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। খেয়ে না খেয়ে টাকা জমিয়েছে। গাড়ি ভাড়া দিয়ে শহরে গিয়েছে। তবু চাইনিজ খেতে পারলো না। উল্টা নাকানি-চুবানি খেয়ে ফিরতে হয়েছে।

এমনটিতো হওয়ার কথা ছিল না। বাসে চড়ে মনের সুখে গাইতে গাইতে এসেছে;

- মনে বড়ো আশা ছিল, একদিন চাইনিজ খাবো, এতদিনে আশা হবে পূর্ণ।

কিন্তু পোড়া কপাল, আশার গুড়ে ইট বালি সিমেন্ট সব লেপ্টে গেছে।

বাস থেকে নামতেই চোখে পড়ে নিয়ন সাইন, হাই ফাই চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। লোকমুখে শুনেছে, চাইনিজের গেটে বেঁটে সাইজের দারোয়ান মোড়া পেতে বসে থাকে। সেরকম কোনো বামন আশপাশে কোথাও নেই। পাশাপাশি দুটি দরজায় লেখা, এসি রুম, নন-এসি রুম।

গরমে ঘামে ভিজে চাইনিজ খায় কোন পাগলে?

এসি রুমে ঢুকে পড়ে মোতালেব। সামনে আবার দুই দরজা। দেশী খাবার, চাইনিজ।

দেশী খাবার খেতে কেউ চাইনিজে আসে?

বাধ্য হয়েই চাইনিজ লেখা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে।

দরজার আর শেষ নেই। নগদ খাবেন,

বাকিতে খাবেন।

এক কাপ চা-ও কেউ বাকিতে খাওয়াতে রাজি হয় না। অথচ বাকিতে চাইনিজ খেতে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে? এমন সুযোগ হাত ছাড়া করে কোন পাগলে?

পরখ করে দেখাই যাক, হাই ফাইয়ের কেমন স্বাদ। বাকি আদায়ের সিস্টেমও শিখে নেওয়া যাবে।

বাকিতে খাওয়ার দরজা ঠেলে পা ফেলতেই হতবাক মোতালেব। সে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। উল্টা দিকের দেয়ালে লেখা :

-আপাতত হাওয়া খেতে খেতে বাড়ি যান। শহরে গরম হাওয়া ছাড়া বাকিতে কিছুই মেলে না।

-তোর চাইনিজের খেতা পুরি। বাকি খাওয়ার গুষ্টি মারি।

বুক ভরা যন্ত্রণা নিয়ে মোতালেব ফিরিয়া চলে, চলিতে চলিতে বলে,

-ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়। কত মানুষ মনের সুখে চাইনিজ খেয়ে বুক ফুলিয়ে হাঁইট্টা যায়। ফাইট্টা যায়। ফাইট্টা যায়।

গ্রামে ফিরে দোকান খুলে নিজের লেখা নোটিশের দিকে তাকায়;

-বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না।

গত জুমায় হুজুরের বয়ান শুনেছে :

-এমন কথা তোমরা কেনো বলো, যা নিজেরা করো না। এটা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় কাজ।

একেবারে খাঁটি কথা। এমন কথা সে কেনো লিখে রাখলো, যার আমল সে করতে পারলো না?

-হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ। লোভে পইড়া ঘুইরা মরলাম, চাইনিজ খাইলাম না।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ