স্বপ্নের সাইকেল দুঃস্বপ্নের চোর!   -মাহিন মুবাশশির

স্বপ্নের সাইকেল দুঃস্বপ্নের চোর! -মাহিন মুবাশশির

উপন্যাস এপ্রিল ২০১৬

গত সংখ্যার পর

পাঁচ.
কথাটি শোনামাত্র আমি একেবারে মুষড়ে পড়লাম। কাঁদতে চেয়েও কাঁদতে পারছি না। আমি নির্বাক হয়ে ভাবলাম, এও কি সম্ভব! রাতের আঁধারে বাড়ির দেয়াল টপকে রীতিমতো চুরি? কেউ টের পেলো না? এও কি বিশ্বাস করা যায়? আমার হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিছুতেই কাঁদতে পারছি না। কারণ কোনো কিছু না শুধুমাত্র সাইকেলটা চুরি গেছে। সাইকেল! হ্যাঁ, আমার প্রাণের সাইকেল! যে সাইকেল কথা বলতো! আহ! ইস! আমি আর সহ্য করতে পারছি না। কিছুতেই আমার মন ভালো হচ্ছে না। কেননা সাইকেলের জন্য যতটা না আমার খারাপ লাগছিলো, তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগছিলো এ ভেবে যে- আমি জামি আঙ্কেলকে কী জবাব দিবো। তার সামনে কিভাবে গিয়ে দাঁড়াবো। লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছিলো। তাঁর গবেষণার প্রযুক্তি আমি রক্ষা করতে পারিনি। ভাবতে ভাবতে সহসা দু’চোখ বেয়ে বৃষ্টি ধারার পানি ঝরতে শুরু করলো। আমি কাঁদছি। হাউমাউ করে কাঁদছি।  মা- আমাকে সান্ত্বনা দিলেন। বাবা- আমাকে আরেকটি নতুন সাইকেল কিনে দেবার আশ্বাস দিলেন। আমার পাশে সিয়াম ছিলো। সেও আমাকে সান্ত্বনা দিলো। সে বললো-
“দ্যাখ্ কাব, মন খারাপ করিস না। তোর তো কোনো দোষ নেই। এখন চুপ কর। দেখিস চোরকে আমরা ঠিকই খুঁজে বের করে শায়েস্তা করবো। ওঠ কান্না থামা।”
সিয়ামের কথা শুনে আমার কান্নার গতি ধীরে ধীরে থেমে এলো। ফোঁফাতে ফোঁফাতে আমি শান্ত হলাম। বুঝতে পারলাম কেঁদে-কেটে মনটা একটু হালকা লাগছে।

ছয়.
দু’দিন হলো সাইকেল খোয়ানোর শোক সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠেছি। কিন্তু মনে মনে চোরকে খুঁজে বের করার অভিসন্ধি জিইয়ে রেখেছি। ইতোমধ্যে একদিন জামি সায়েন্টিস্ট আমাকে ডাকলেন। আমি মনের মাঝে কিছুটা ভয় আর লজ্জা নিয়ে তার সামনে উপস্থিত হলাম। জামি সায়েন্টিস্ট আমার এহেন অবস্থা বুঝতে পেরে অদ্ভুতভাবে হাসলেন। হেসেই আমার পিঠে একটা চাপড় মেরে বললেন-
“সাবাস বেটা!”
আমি তার এ কৌতুকের আগা-গোড়া কিছুই বুঝতে পারলাম না। বিস্ময়ে ‘হাঁ’ করে এক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
জামি সাহেব আবার হাসতে হাসতে বললেন-
“খুব ভালো করেছো কাব, তোমার সাইকেলটা প্রিয়জনকে দিয়ে দিয়েছো।”
আমি তাঁর কথার মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলাম না। মনে মনে সামান্য ক্ষোভ হতে লাগলো। তাই একটু রাগতস্বরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম-
“প্রিয়জনকে দিয়েছি মানে?”
“তাহলে তোমার শত্রুকে দিয়েছো? সেও ভালো..... হা! হা! হা!”
আমার মাথায় তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি কি পাগল হয়ে গেলাম! না জামি আঙ্কেল পাগল হয়েছেন? নাঃ, কিছুই ভাবতে পারছি না!
“কী হলো এতো আপসেট কেন? কী ভাবছো?”
আমি চমকে উঠলাম। বললাম-
“না-মানে-ইয়ে- বলছিলাম যে, আপনার মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“আমার মাথা-মুন্ডু? হা! হা! হা!”
“না-না ংড়ৎৎু! আপনার কথার মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“বুঝবে-বুঝবে কেননা- যাহা মাথা, তাহাই মুন্ডু।”  জামি সাহেব কৌতুক করলেন। আমার হাসি পেলো। আমি খিল খিল করে হেসে বললাম-
“সব কিছু কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কিছুই বুঝতে পাচ্ছি না!”
“বোঝার কথাও না।”
“মানে?”
“মানেটা অতি সহজ। পানির মতো তরল। দুধের মতো সরল।”
“কেমন? বুঝিয়ে বলুন!”
“যেমন তোমার সাইকেল চুরি গেছে এ কথা ঠিক?”
“হ্যাঁ, ঠিক।”
“হু!”
“কিন্তু আপনি যে বলছেন- প্রিয়জন....?”
“হ্যাঁ, প্রিয়জন বা আপনজন। আমি যা বলছি সব সঠিক। আজগুবি কিছুই না। তাছাড়া ডাহা মিথ্যা কথা বলার মানুষ আমি নই, তা তুমি ভালো করেই জানো।”
“তা ঠিক। তা ঠিক।”
“আর এ কথাও ঠিক যে- তোমার সাইকেল তোমার নিজের কেউ, অর্থাৎ তুমি যাকে অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করো, যার জন্য তোমার প্রাণটা দিয়ে দিতেও কুণ্ঠিত হবে না- সেই রকম তোমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কেউ অথবা হতে পারে সবচেয়ে দূরের কেউ- যে তোমার শত্রু কিন্তু তোমার সামনে ভালো মানুষ সেজে থাকে। এ রকম কেউ না কেউ তোমার বাড়ি থেকে সাইকেলটা চুরি করেছে। মনো সায়েন্স এ  কথা বলে।”
“কোন সায়েন্স?”
“মনো সায়েন্স। অর্থাৎ মনোবিজ্ঞান।”
“আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন?”
“কেন এতক্ষণ বোঝালাম তার কিছুই বোঝনি?”
“হ্যাঁ, তা অবশ্য কিছুটা বুঝেছি। তবে আমি চাচ্ছিলাম প্রমাণসমেত বুঝতে।”
“ও আচ্ছা, এই কথা! ঠিক আছে। কিছুদিন অপেক্ষা করো তুমি নিজে নিজেই প্রমাণ পেয়ে যাবে।”
জামি আঙ্কেলের এহেন মন্তব্য শুনে আমার  মাথাটা হঠাৎ কেমন যেন ভন ভন করে ঘুরতে লাগলো। মুহূর্তেই সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে ফেলতে লাগলাম। না:! কিছুই ভালো লাগছে না। দেরি না করে জামি আঙ্কেলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।

রাতে ভালো ঘুম হলো না। সকালে চটজলদি মুখ-হাত ধুয়ে স্কুলে রওনা হলাম। স্কুলের গেটে ঢুকতেই দেখি রাস্তার পাশে একটা বিশাল জটলা বেঁধেছে। আমি এর কারণ জানতে জটলার দিকে এগিয়ে গেলাম। ভিড়ের লোকদের কাছাকাছি হতেই শুনতে পেলাম সবাই বলছে-‘দ্যাখ, দ্যাখ সাইকেল কথা বলছে! কী সুন্দর! কী মিষ্টি! বাহ,বাহ!’ আমার কৌতূহল আরো বেড়ে গেলো। আমি জনতার ভিড় ঠেলে ভেতরে গেলাম। হঠাৎ আমার চোখে ধাঁধা লেগে গেলো। একি দেখছি আমি! আমার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছি না। আহা! আমার সেই সাইকেল। প্রিয় সাইকেল! যে সাইকেল কিছুদিন আগে চুরি হয়ে গিয়েছিলো। আমি রীতিমতো ভিরমি খেয়ে যাচ্ছি। না না আমি স্বপ্ন দেখছি। না স্বপ্ন তো নয়। বাস্তব। কিন্তু এ ছেলেটা কে? চেনা চেনা লাগছে! কিছুটা আমার প্রাণপ্রিয় দোস্ত জয়ের মতো দেখতে। হুঃ! তবে বয়স ওর চেয়ে দুই-তিন বছর কম মনে হচ্ছে। আমি ওকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম। আকস্মিক ভিড় ঠেলে জয় এসে সাইকেলটা নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্ধত হলে আমি ওকে ইশারা করলাম। কিন্তু ও যেন আমাকে চিনতেই পারলো না এমন ভাব করে- ছেলেটিকে সাইকেলের পেছন ক্যারিয়ারে বসিয়ে ছোঁ মেরে চলে গেলো। লোকমুখে শুনতে পেলাম ওরা দু’ভাই। শুনে আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো। আমি আহত হলাম। ডানাকাটা পাখির মতো আমার বুকের ভেতরটা তড়পাতে লাগলো। এই কি আমার বন্ধু! যাকে নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করেছিলাম। আপন ভাইয়ের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছিলাম। হায়রে বন্ধু! ভাঙা কাচের মতো আমার কচি মন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। যা কোনোদিন জোড়া লাগানো যাবে না। মনের অজান্তে কল্পনা থেকে ভেসে এলো “বিশ্বাসঘাতক!”

সাত
আমি বুঝতে পারছি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু জাহিদুল জয় আমার সর্বনাশ করেছে। আমার অতি প্রিয় কথা বলা সাইকেলটি সেই চুরি করেছে। যা আমি গতকাল হাতেনাতে ধরেছি। কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না। এখন ও নেই। ভাঙা মন নিয়ে আমি বসে বসে আফসোস করছি। অমনি আমার মোবাইল ফোনটি বেজে উঠলো। আমার ভাবনার সুতা কেটে গেলো। আমি ডায়ালে দেখতে পেলাম সিয়াম আমাকে কল করেছে। দেরি না করে ফোন রিসিভ করলাম।
“হ্যালো, ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো। তুমি কেমন?”
“ভালো। তোমার সাইকেল চোরকে কি ধরতে পেরেছো?”
“পেরেছি! কিন্তু-”
“কিন্তু কি? থেমে গেলে কেন? বলো-”
“সে আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন!”
“বল কী? তোমার বন্ধু?”
“হ্যাঁ- ঠিক ধরেছো। আমার বন্ধু জয়।”
“আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। যাকে তুমি এতো বিশ্বাস করতে সেই নাকি তোমার এতো বড় ক্ষতি করলো!”
“আর বলো না। পৃথিবীটাই এরকম হয়ে গেছে। যাকেই বিশ্বাস করা যায় সেই ছুরি মারে।”
“যাহোক যা হবার তা হয়েছে। তুমি এ নিয়ে মোটেও চিন্তা করো না।”
“আমার মন ভালো নেই। তুমি কবে বেড়াতে আসছো? তুমি আসলে ভালো লাগতো।”
“দেখি আব্বুকে বলি। যদি আসতে দেন- আসবো। আমিও ভাবছি তোমাদের বাড়িতে কিছু দিন ঘুরে আসি। সেই সাথে তোমার সাইকেলের একটা সুরাহা করে আসি।”
“হ্যাঁ সিয়াম, তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো। সাইকেল চোরকে আচ্ছা মতো জব্দ করতে হবে। তোমার সহযোগিতা দরকার। ”
“ঠিক আছে। তাহলে আমি কালই আসছি। আজ রাখি। আঙ্কেল- আন্টিকে আমার সালাম জানিয়ো। রাখছি। আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
সিয়ামের সাথে মোবাইলে কথা বলে আমার বেশ ভালো লাগছে। মনের কষ্টগুলো যেন উবে গেছে। আমি এবার সাইকেল চোরকে শায়েস্তা করার জন্য মনে মনে জল্পনা-কল্পনা করছি। কিন্তু কিভাবে ওকে শায়েস্তা করা যায়। ভেবে পাচ্ছি না। না, কিছুতেই কোন প্ল্যান মনে আসছে না। থাক সিয়াম আসুক, ওকে সাথে নিয়ে প্ল্যান-প্রোগ্রাম করা যাবে। রাত বাড়ছে। এবার ঘুমিয়ে যাওয়াই ভালো।

পরের দিন। ফজর ওয়াক্তে ঘুম থেকে উঠলাম। নামাজ-কুরআন পড়ে রোজকার মতো পড়ায় মন দিতে চাইলাম। কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারলাম না। ধীরে ধীরে স্কুলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো। তাই সকালের নাস্তা খেয়ে স্কুলে রওনা দিলাম। স্কুলে এসে জয়ের মুখোমুখি হলাম। কেউ কারো সাথে কথা বললাম না। যথারীতি ক্লাস শুরু হলো। কিন্তু আমি ক্লাসেও মন দিতে পারলাম না। তাই টিফিন ব্রেকে হেড মাস্টারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। এসে দেখি সিয়ামের মা আর সিয়াম আমাদের বাসায় এসেছে। আমি মামীমণিকে সালাম দিলাম। কুশলাদি জিজ্ঞেস করলাম। সিয়ামের সাথেও কুশল বিনিময় করে দু’জনে আমার রিডিং রুমে চলে এলাম।
সিয়াম বললো,
“তো বলেছিলাম না- আমি আসছি। দেখলে তো?”
“ভালো করেছো। তোমার কথাই ভাবছিলাম।”
“বুঝেছি।”
“তোমাকে তো বলেছি জয় আমার বিশ্বাসকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে।”
“তা- তো তোমাকে দেখেও বোঝা যাচ্ছে।”
“আমি এর শোধ নেবোই।”
“থাক- শোধ নিয়ে কী হবে? তাতে কী তোমার হারানো সাইকেল তুমি ফিরে পাবে?”
“তাহলে কী করতে বলো?”
“এমন কিছু করতে হবে যাতে তোমার সাইকেল ও যেভাবে যেখান থেকে নিয়েছে স্ব-ইচ্ছায় যেন সেখানে আবার রেখে যায়।”
“কী বলছো এসব? পাগল হয়েছো নাকি? তাই কি সম্ভব?”
“সম্ভব!”
“কী করে?”
“প্রথমে বের করো ওর দুর্বল পয়েন্ট কোনটি? সেখানে আঘাত করতে হবে।”
“ইন্টারেস্টিং! এ দেখছি সিনেমাটিক ব্যাপার-স্যাপার।”
“সিনেমা নয়। বাস্তব।”
“আমি যতটুকু জানি ওর সবচেয়ে বড় দুর্বল পয়েন্ট হচ্ছে ওর ভয়।”
“কিসের?”
“ভূতের!”
“হাঃ! হাঃ! হাঃ! এ বিজ্ঞানের যুগেও ভূতের ভয়। যা হোক এটাই ওকে দুর্বল করার একমাত্র হাতিয়ার আমাদের।”
“কেন, তুমি কী করতে বলো?”
“তোমার কোন লাল রং আলখাল্লা আছে।”
“নেই। তবে বানাতে পারবো।”
“চলো তাহলে তা-ই বানাই।”
“তা না হয় বানাবো। কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না। সবাই ভূতের ভয় দেখাতে সাদা কাপড়ের আলখাল্লা ব্যবহার করে। আর তুমি করতে চাইছো লাল রং?”
“এটা হচ্ছে নতুনত্ব। ভূতের আধুনিকায়ন।”
“হাঃ! হাঃ! হাঃ! বেশ ভালো ভালো। চলে তবে কালকেই সানমুন টেইলার্স থেকে আরজেন্ট বানিয়ে আনি।”
“ঠিক আছে।”
আমরা পরদিন সানমুন টেইলার্সের আব্দুল আউয়াল ভাইয়ের কাছে আমাদের বর্ণনা দিলে তিনি তা বুঝে অর্ডার নিলেন। এর একদিন পরে আমরা আলখাল্লা হাতে পেলাম। তাই আমাদের সময় ঘনিয়ে এলো। আমরা প্ল্যান মতো জয়ের বাড়ির আমবাগানে ওঁৎ পেতে থাকলাম। রাত যতই বেশি হচ্ছে আমরা ততই সজাগ হচ্ছি। এর আগে আমরা জয়ের শোবার ঘরের জানালার একটি দরজা কৌশলে ভেঙে আলাদা করে লুকিয়ে রেখেছিলাম। যাতে জয় শুতে যাওয়ার সময় জানালার কপাট লাগাতে না পারে। এসব কিছুই সিয়ামের প্ল্যান মতো করেছি। অতঃপর এলো মাহেন্দ্রক্ষণ। রাত বারোটা বাজতেই আমি আর সিয়াম ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়লাম জয়ের বেড রুমে। জয় ও ওর ছোট ভাই এক খাটে ঘুমিয়ে আছে। সিয়াম তার হাতে চাপ দিয়ে টেপরেকর্ডারে রেকর্ডকরা ভূত এফ এম বাজিয়ে দিলো। ওমনি জয়ের ঘুম ভেঙে গেল। আমি ওর ঘরের ধরনা ধরে ঝুলে পড়লাম। সিয়াম ঝুলে পড়লো দরজা বরাবর। জয় আমাদের দু’জনকে দেখে ভূত ভেবে ভয়ে জোরে চিৎকার দিতে গেলো কিন্তু চিৎকার তার কণ্ঠ দিয়ে বের হলো না। একটু পরে ওর ছোট ভাই বিজয়ও ঘুম থেকে জেগে উঠলো। সেও ভয়ে আঁতকে গেলো। কারো কণ্ঠ দিয়ে কোনো ধ্বনি বের হলো না। ভয়ে ওরা যেন বাক হারিয়ে ফেলেছে। আমরাও আমাদের ভূতের মুখোশ পরা বিকৃত চেহারা আর দাঁত দিয়ে বিভিন্নভাবে ভেংচি কেটে ওদের ভয় দেখাচ্ছি। এদিকে বেড়ে চলছে ভূত এফ এম এর ভূতুড়ে সব শব্দ-ধ্বনি। জয়ের ভাই হঠাৎ চোখ উল্টিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। জয় তাতে আরো ভয় পেয়ে যেন বাক ফিরে পেলো।  চেঁচিয়ে বললো :
“ভূ-ভূ-ভূত! বাঁচাও। মেরো না। আমাকে মেরো না!”
সিয়াম বললো:
“না- তোকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তুই পাপী।”
আমি বললাম
“তুই বিশ্বাসঘাতক! তুই তোর বন্ধুর বিশ্বাসে আঘাত দিয়েছিস।”
সিয়াম বললো,
“তুই তোর বন্ধুর শখের কথা বলা সাইকেল চুরি করে মহাপাপ করেছিস। তার শাস্তিস্বরূপ তোকে আমরা মেরে ফেলবো।”
“না- না- আমাকে রেহাই দাও। আমি পাপী। আমি সত্যি বড় অন্যায় করেছি। আর করবো না।”
সিয়াম বললো,
“তাহলে শোন আজ রাতেই ওর সাইকেল যেখান থেকে চুরি করেছিস সেখানে রেখে আসবি। নইলে আমরা আবার আসবো। এবারের মতো তোকে মাফ করে দিলাম। তোর ছোট ভাইকেও মাফ করে দিলাম।”
আমি টুক করে কারেন্টের সুইচ অফ করে দিলাম। আর সিয়াম জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। আমিও বেরিয়ে গেলাম। ওদের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে জানালার ভাঙা অংশটা আবার লাগিয়ে রেখে গেলাম। যাতে কেউ সন্দেহ না করে। জানালার ভাঙা অংশ লাগাতে গিয়ে দেখলাম জয় জ্ঞান হারিয়েছে। যাক এতে ধরা পড়ার হাত থেকে বাঁচলাম।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনতে পেলাম জয় ও ওর ভাই নাকি হাসপাতালে। ওদের নাকি গতকাল রাতে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছে ওর বাবা-মা। ডাক্তার আশরাফুল ওদের অজ্ঞান হওয়ার কারণ বুঝতে পারছেন না। ওদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পেছনে মানসিক ভয়কে দায়ী করেছেন। কিন্তু কি দেখে ওরা ভয় পেতে পারে ওর বাবা-মা কিছুই বুঝতে পারছে না। ডা. আশরাফ বললেন-
“ভয়ের কোনো কারণ নেই। ওদের জ্ঞান ফিরেছে। ওরা বিপদমুক্ত।”
জয়ের মা বললেন-
“ডাক্তার সাব, ওদের আসলে কী হয়েছিল?”
“রোগটা আসলে কি বলা মুশকিল। তবে ভয় থেকেই অথবা তীব্র শোক থেকে মূর্ছা যাওয়ার ঘটনা ঘটে বলে আমরা জানি। আমার ধারণা এর যেকোনো একটা হতে পারে।”
“ঠিক আছে। ধন্যবাদ।”
“ঙশ! আপনারা ওদের আগামীকাল বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু এমনটি যেন পুনরায় না হয়- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ”
“আচ্ছা।”
একটু পর জয়ের বাবাও জয় বিজয়ের জ্ঞান ফিরে পাওয়ার কথা শুনে কেবিনে চলে এসেছেন। এমন একসময় আমি আর সিয়াম একগুচ্ছ রজনীগন্ধা ফুল আর কিছু ফলমূল নিয়ে ওদের দেখতে হাজির হলাম  ১০৪  নম্বর কেবিনে। আমাকে দেখে জয় কাঁদো কাঁদো হলে আমি ওকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা খুঁজে পেলাম না। মনে মনে নিজের প্রতি কেমন যেন ঘৃণা হতে লাগল। মনে মনে ভাবছি-
‘আমি কি গত রাতে কাজটা ঠিক করেছি। আমাদের জন্যই ওদের এ অবস্থা। যাহোক এতো দরদ আসছে কোত্থেকে?  উচিত শিক্ষা হয়েছে! ওর প্রাপ্য ও পেয়েছে। এতে আত্মবিলাপের কিছু নেই।’
জয় আমাকে ইশারা করলে আমি ওর কাছাকাছি গেলাম। ও আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
“দোস্ত আমাকে মাফ করে দিস। আমি তোর সাথে বেঈমানী করেছি। তোর সাইকেলটি তুই নিয়ে যাস।”
“বাদ দে তো সাইকেলের কথা। আগে তুই সুস্থ হয়ে ওঠ।”
“নাÑনা সাইকেল তোকে ফিরিয়ে নিতেই হবে।”
আমার প্রচন্ড হাসি পেতে থাকলো। কিন্তু অনেক কষ্টে হাসি। ভাবলামÑ‘এখন বাগে এসেছো। এ কথা আগে ভাবতে কি হয়েছিল।’
ও আমার ভাবনার মাঝে বাধা দিয়ে বলল,
“কিরে কী ভাবছিস?”
“না- তেমন কিছু না। যাক বাদ দে শোন সাইকেলটি তোকে দিলাম তুই নিয়ে নে।”
“না ও কথা বলিস না। তোর জিনিস তুই ফিরিয়ে নে ভাই।”
“না- না।”
সিয়াম আমাকে খোঁচা দিয়ে বললো,
“ফিসফিস করে কি বলছিস তোরা।”
আমি ওর কানে কানে বললাম,
“সাইকেলটি ফেরত দিতে চাচ্ছে। কি করবো?”
সিয়াম আমার কানে আস্তে করে বললো,
“ফেরত নিস না। খেলা জমবে দেখবি।”
আমিও জয়কে না- না করে জয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। সিয়ামও বিকালের ট্রেন ধরে ওদের বাড়ি চলে গেলো।

আট
সুস্থ হয়ে জয়রা বাড়ি চলে এসেছে। কিন্তু ওদের মনের ভয় এখনও কাটেনি। তাই মাঝে মাঝেই ঘুমঘোরে জয় দুঃস্বপ্ন দেখে। দুঃস্বপ্ন দেখে ওর ভাই বিজয়ও। একদিন জয় একা ওর বেডে ঘুমিয়ে আছে। বাড়িতে ওর মা-বাবা, ভাই কেউ নেই। ঘুমঘোরে কি একটা বিকট আওয়াজ করে জেগে উঠল ও। কিন্তু কেউ তার শব্দে ছুটে এলো না। পরক্ষণেই জয় বুঝতে পারলো ও বাড়িতে একা। তাই আরো বেশি ভয় করতে লাগলো ওর। এক সময় এমন এক পর্যায়ে গেলো যে সেদিনের রাতের কথা মনে করে ও  আরো বেশি ভয় পেলো এবং আবার অজ্ঞান হয়ে গেলো। সকালে মা-বাবা আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরে এলে দেখলো ওর এ অবস্থা। তাই দেরি না করে আবার যথারীতি ডাক্তারের শরণাপন্ন হলো। ডাক্তার এসে ট্রিটমেন্ট দিয়ে গেলেন। কিন্তু জয়ের মার মন কিছুতেই মানছে না। তিনি ডাক্তারের চিকিৎসায় আর ভরসা পাচ্ছেন না। জয়কে বললেন,
“বাবা জয়, তোমার কি মাঝে মাঝে এমন ভয়-ভয় করে?”
জয় কাঁদো কাঁদো হয়ে মাকে বললো,
“জানো আম্মু- আমি না প্রতিদিন রাতেই খুব ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখি!”
“বলো কি? এতদিন আমাকে বা তোমার বাবাকে তা বলোনি কেন?”
“আসলে আম্মু, আমি মনে করেছিলাম একাই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা আর হয়নি। বলবো বলবো করেও বলা হচ্ছে না।”
“না-না তুমি এটা ভারী অন্যায় করেছো। তোমার আগেই বলা উচিত ছিল। যাক সে কথা আজ তোমার বাবাকে দিয়ে কবিরাজ জারজার খাঁকে মোবাইল করতে বলবো। সে এসে তোমার চিকিৎসা করবে।”
“ঠিক আছে আম্মু, তুমি যা ভালো মনে কর তাই করো।”

বিকাল নাগাদ জয়ের বাবা কবিরাজ জারজার খাঁকে কল করলেন। জারজার খাঁকে অনেক অনুনয় করলে আসছে রোববার  আসতে রাজি হলেন জয়দের বাসায়।
দেখতে দেখতে রোববার এসে গেলো। জারজার খাঁ যথাসম্ভব সকাল সকাল জয়দের বাড়ি এসে হাজির।
জয়ের বাবা-মাতো তাকে খাতির-যত্ন করতে কোন কমতি করলেন না।
সকাল দশটা বাজতে  জয়কে নিয়ে সালিসে বসলেন।
“বল তুই কোন গাছের পেত্নি? কোন গাছের ভূত? কোন মায়ের পুত? বল কইতাছি! বল্!”
জয়তো হতভম্ব ও পেত্নি বা ভূত হতে যাবে কেন? অবাক হয়ে বললো,
“আমি কোন পেত্নি না। অমি জয়। আমার করছে খুব ভয়।”
“ও, ছড়া কেটে কথা কওয়া ভূত তুই?”
কবিরাজ কঠোর হয়ে ওর গাঁয়ে চাবুক মারা শুরু করে। ঘোড়ার লেজের লোম আর টাটকা চামড়া দিয়ে বানানো চাবুক। ওর এক-একটি ঘা যেন সাপের এক-একটি ছোবল। তাই চাবুকের প্রচন্ড ব্যথা সহ্য করতে না পেরে জয় মিছে মিছি বলে উঠে,
“আমি এই বাড়ির আমগাছের মগডালে থাকি।”
কবিরাজদের এটা একটা সহজ কৌশল যে, শারীরিক ও মানসিক আঘাত করে কথিত রোগীকে বাধ্য করে তাদের নির্দেশনামতো কাজ করতে বা কথা বলতে। তাই রোগীরাও তাদের সাথে সাই দিয়ে কথা বলে।  যেমনটি জয়ের বেলায় ঘটছে।
কবিরাজ জয়কে বাগে পেয়ে আবার চাবুক দিয়ে আঘাত করে বললো,
“বল, বল কেন তুই জয়ের কাঁধে ভর করেছিস?”
জয় বানিয়ে বানিয়ে কবিরাজের সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলতে থাকলো। যাতে তার চাবুকের আঘাত থেকে নিজের পিঠকে রক্ষা করতে পারে।
জয় যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বললো,
“ও ওর বন্ধুর সাথে বেঈমানী করেছিল। তাই ওর কাঁধে ভয় করেছি।”
“কি রকম বেঈমানী?”
“ওর বন্ধু কাবের কথা বলা সাইকেল  চুরি করে ও বন্ধুর সাথে বেঈমানী করেছে।”
“আচ্ছা চোরতো তুই!” বলেই কবিরাজ ওর গাঁয়ে আরেকটি চাবুকের আঘাত করলো। আঘাত সহ্য করতে না পেরে জয় মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
জয়ের মা-বাবা এসে ওকে উঠাতে নিয়েছে ওমনি জারজার খাঁ তাদের বাধা দিয়ে বললো:
“সাবধান! সাবধান! ছারখার হয়ে যাবি। ধ্বংস হয়ে যাবি। ধরবি না বলছি। ধরবি না।”
জয়ের মা-বাবা ভয় পেয়ে পিছিয়ে এলো। জয়কে আর ধরতে গেলো না। তারপর কবিরাজের নির্দেশ মতো উঠানের তপ্তরোদে ওকে শুইয়ে দিলো। জয় যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো।
কবিরাজ জয়ের মা-বাবার উদ্দেশে বললো,
“আজ এবং আগামীকাল মোট ৮ ঘন্টা করে ও এই উঠানে রোদে পুড়বে। কেউ বাধা দিতে যাবেন না। এ অবস্থায় ওকে কোনো দানা-পানি দেয়া যাবে না। ওর নির্ধারিত ৮ ঘন্টা শেষ হলে ও খাবে। এরপর পরদিন ৮ ঘন্টা একই নিয়মে রোদে পোড়ালে ওর পেতিœ-ভূত সব বিদেয় হবে।”
জয়ের মা-বাবা হাঁ করে  কবিরাজ জারজার খাঁর কথা শুনলো, তাদের বলার কিছুই রইলো না। এ জন্য কবিরাজের কথামতো জয়কে টানা তিন দিন রোদে পোড়ালো। কোন দানা দিলো না। ফলে ওর মানসিক-শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলো। এদিকে কবিরাজ ওর ভূত চলে গিয়েছে এ কথা বলে জয়ের বাবার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা-পয়সা নিয়ে পলায়ন করলো।

জয়ের অবস্থার অবনতি দেখে জয়কে আবার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দিল বাবা। এমনিতেই অনেক টাকা-কড়ি নষ্ট করে ফেলেছিল কবিরাজের পেছনে। আবার হাসপাতালের ঝামেলা পোহাতে তাকে রীতিমতো বেগ পেতে হলো। তবু ছেলে বলে কথা। এটি তাকে যে করতেই হবে। হাসপাতালের ডাক্তাররা জয়ের কবিরাজি চিকিৎসায় জয়ের বাবা-মাকে শাসিয়ে দিলেন। বর্তমান বৈজ্ঞানিক যুগেও যে তাদের মতো আহাম্মক থাকতে পারে ডাক্তাররা ভেবে অবাক হলেন। তাই তাদের ভালোমতো জব্দ করে জয়ের চিকিৎসা শুরু করলেন। টানা ৮ দিনের ট্রিটমেন্টে জয় সুস্থ হয়ে উঠলো এবং মনে মনে পণ করলো- আর কোনো দিন চুরির মতো অপরাধ করবে না। কোনদিন বন্ধুর সাথে বেঈমানী করবে না। তার পাপের শাস্তি সে হারে হারে পেয়েছে।

বেশ কিছু দিন পর। জয় তখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। তাই আর দেরি করেনি ও। আমার সাইকেলটা নিয়ে সরাসরি আমাদের বাড়ি চলে এসেছে। আমাকে বাড়ির গেটে অনেক ডেকেছে। কিন্তু যখন কারো সাড়া পায়নি, তখন বাড়ির ভেতর চলে এসেছে। যদিও ও এর আগে এ বাড়িতে হরহামেশাই আসতো। কিন্তু ওর এহেন অপরাধ করার পর এখন বাড়িতে আসতে লজ্জা পেয়েছে বলে আমার ধারণা।
আমি ঘরে বই পড়ছিলাম। ও আমাকে ডাকলো,
“কাব, তোমার কোনো সাড়া নেই। ঘরের ভেতর থেকেও আমার ডাক শুনতে পাওনি?”
“না- আসলে আমি বই পড়ায় মগ্ন ছিলাম বলে তোমার কথা শুনতে পারিনি।”
“তোমার সাইকেল তুমি নাও। আমি নিয়ে এসেছি।”
“কেন- কেন তোমাকে তো আমি বলেছি- সাইকেল আমার লাগবে না।”
“না, কেন লাগবে না? তোমার শখের সাইকেল! তুমি নাও। আমাকে রেহাই দাও।”
“কেন আমি আবার কী করলাম?”
“তুমি কিছু করোনি। কিন্তু আমার নিয়তিই আমাকে শাস্তি দিচ্ছে।”
“বল কি?”
“সত্যি বলছি!”
“সত্যি- মিথ্যা যাই বলো যে সাইকেল একবার তুমি নিয়েছো তা আর আমি ফেরত নিতে পারবো না।”
“নেবে না?”
“না তুমি নিয়ে যাও।”
আমি কিছুতেই জয়ের কাছ থেকে সাইকেল গ্রহণ করলাম না। সে মন খারাপ করে চলে গেলো। তার মুখের দিকে চেয়ে আমার হাসি পেলো, কিন্তু তার সামনে হাসলাম না। সে চলে গেলো হা হা করে হাসলাম। হাসতে হাসতে আমার পেটে খিল এঁটে গেলো। হাসি থামছে না। হঠাৎ আম্মু আমার হাসি শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন। বললেন,
“কিরে তোর কি হলো? এত হাসসিস কেন?”
“না- মা এমনি, তুমি যাও রান্না করগে।”
“না না- নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। বল আমাকে বল?”
আম্মুর পীড়াপীড়িতে আমি সব খুলে বললাম। আম্মুও শুনেও সে কি হাসা। হাসি হো হাসি। হো হো হাসি। তার হাসিও থামছে না। হাসছেন। আমিও হাসছি। দু’জনে যেন পাল্লা দিয়ে হেসে চলেছি, হাসা থামছেই না। ইতোমধ্যে বাবাও এসে উপস্থিত। তিনিও আমাদের পাগলের মতো কান্ডজ্ঞানহীনভাবে হাসতে দেখে অবাক হলেন। বললেন,
“কি ব্যাপার কি হলো তোমাদের। এতো হাসছো কেন?”
মা হাসির কারণ ব্যাখ্যা করলেন। বাবাও শুনে  হাসছেন। তার হাসিও আর থামছে না। এ যেন পাগলের আড্ডাখানা বসেছে। আমরা তিনজনেই হাসছি। হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল লেগে যাচ্ছে।
অবশেষে হাসি থামিয়ে বাবা বললেন,
“যাক- তাহলে তোর বন্ধুর বেশ শিক্ষা হয়েছে! কি বলিস?”
আমি বললাম,
“হ্যাঁ তা একটু হয়েছে!”
বলেই আবার হাসি। আবার তিনজনের হাসিতে বাড়িটা গম গম করে উঠলো।

রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতে ঘুমঘোরে স্বপ্ন দেখছিÑ আমি পাহাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে আছি। আর জয় নিচে। সে আমাকে অনেক অনুনয়-বিনয় করছে তাকে পাহাড়ে উঠিয়ে নিতে। আমি বারবার তাকে পাহাড়ে উঠাতে চেয়েও উঠাতে পারছি না। হঠাৎ দেখি জয় উড়ছে। আমি ওকে ডাকছি। ও আমার কথা শুনতে পারছে না। ও উড়ে একেবারে আকাশে মিলিয়ে গেলো। আমারও ঘুম ভেঙে গেলো।
ঘুম থেকে উঠে পয়-পরিষ্কার হয়ে ওজু করে ফজরের নামাজ পড়তে গেলাম। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বাড়ি এসে দেখিÑ আমার ঘরের সামনে সাইকেল। আমার অবাক হওয়ার কথা থাকলেও আমি অবাক হলাম না। কারণ আমি জানি জয় যেখান থেকে যেভাবে সাইকেলটি নিয়েছিল সেখানে, সেভাবেই সাইকেলটি ফিরিয়ে দিয়েছে। ফিরিয়ে দিয়েছে ওর ভালোর জন্যই। কারণ ও বুঝতে পেরেছে চুরির ফল ভালো হয় না। আমিও আমার সাইকেলটি এভাবে পেয়ে খুশি হলাম। আসলে আমি মনে মনে এভাবেই সাইকেলটি ফিরে পেতে চেয়েছিলাম। কারণ আমি আর সিয়াম এমন পরিকল্পনাই তো করেছিলাম যেনÑ যেখান থেকে ও সাইকেল নিয়েছিলো সেখানেই ও রেখে যাবে। তা-ই হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা সফল হয়েছে। আমি জয়ের আনন্দে উত্তেজিত হয়ে দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ওপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে বললামÑ ‘ইয়েস!’
(সমাপ্ত)
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ