সেরা ধনী বাবাদের সন্তানেরা

সেরা ধনী বাবাদের সন্তানেরা

বিবিধ আহমেদ বায়েজীদ নভেম্বর ২০২৩

সুসান বাফেটের বয়স তখন ২২ অথবা ২৩ বছর। কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। বাস করতেন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাসকা অঙ্গরাষ্ট্রের ওমাহা শহরে। একদিন আমেরিকার বিখ্যাত পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পাতায় একটি লেখায় তার চোখ আটকে যায়। লেখাটি ছিলো সুসানের বাবাকে নিয়ে। বাবার সম্পর্কে পত্রিকায় লেখা দেখলে কোনো মেয়ে তা না পড়ে পারে! সুসানও খুব আগ্রহ নিয়ে লেখাটি পড়তে শুরু করে। পড়ে তো তার চক্ষু ছানাবড়া!

কেন? কারণ লেখাটির বিষয়বস্তু ছিলো সুসানের বাবার ব্যবসায়-বাণিজ্য নিয়ে। পত্রিকা পড়ে সুসান সেদিন জানতে পারে যে, তার বাবা একজন বিরাট ধনী মানুষ! শুধু আমেরিকা নয়, সারা বিশ্বের মাঝেই তিনি সেরা ধনীদের একজন; কিন্তু সুসান এতদিন এসবের কিছুই জানতো না। শুধু জানতো তার বাবা ব্যবসায় করেন, তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো; কিন্তু বিষয়টা যে এতদূর তা কল্পনা করতে পারেনি।

যার কথা বলছি, তার নাম সুসান বাফেট। তার বাবা বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন ওয়ারেন বাফেট। ওয়ারেন বাফেট বর্তমানে আমেরিকার বিখ্যাত একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। আরো অনেক সেক্টরে তার ব্যবসায় রয়েছে। ২০০৮ সালে বিল গেটসকে টপকে বাফেট বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় এক নম্বরে উঠে আসেন। ২০০৯ সালে ছিলেন দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী। এরপর থেকে সেরা ধনীদের ছোট তালিকায় বরাবরই তার নাম থাকছে। ২০১৮ সালে ৩৪০ কোটি মার্কিন ডলার দান করে দেয়ার পরও তিনি তালিকার তিন নম্বরে ছিলেন। ২০২৩ সালে তার অবস্থান ৫ নম্বরে। সম্পদের পরিমাণ ১২১ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার।

কিন্তু বাফেট তার জীবনযাপন- বিশেষ করে সন্তানদের এমনভাবে মানুষ করেছেন, যে তারা সেসবের কিছুই টের পেত না। বাবা সেরা ধনী সেই অহঙ্কার যাতে সন্তানদের অলস ও অকর্মণ্য করে না ফেলে সে কারণে তিনি সন্তানদের আর দশটা সাধারণ সচ্ছল পরিবারের মতোই মানুষ করতেন। সুসান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ছোটবেলায় আমাদের বাড়ির পরিবেশটা আর দশটা বাড়ির মতোই ছিলো। বাবা রোজ অফিসে যেতেন, আবার বাসায় আসতেন। ডিনারের টেবিলে রোজ আমরা তাকে পেতাম। এরপর তিনি নিজের রুমে গিয়ে পড়াশোনা করতেন।

সুসান জানান তাদের বাড়িটা বড় ছিলো; কিন্তু সেটা অতিরিক্ত বিলাসবহুল কিছু ছিলো না। তার বাবা এখনো সেই বাড়িতেই বাস করেন। এমনকি বিশে^র শীর্ষ ধনী হওয়ার পরেও তিনি ওই বাড়ি ছাড়েননি।

ওয়ারেন বাফেট সব সময় চাইতেন তার মতো তার সন্তানেরাও পরিশ্রম করে বড় হোক। বাবার প্রচুর সম্পদ আছে সেই আশায় যেন তারা নিজেদের দুর্বলভাবে গড়ে না তোলে। যে কারণে নিজের অর্জিত সম্পদের বেশির ভাগই মানবকল্যাণে নিয়োজিত বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করে দেন। এখন পর্যন্ত তিনি তার অর্জিত  সম্পদ থেকে ৫ হাজার কোটি ডলার দান করেছেন। পরিবারের সদস্যদের বলেছেন, তার মৃত্যুর পর মোট সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করে দিতে।

এবার শোনাবো আরেক শীর্ষ ধনী বিল গেটসের গল্প। কম্পিউটার জগতে বিপ্লব এনে দেয়া বিল গেটস মাইক্রোসফটের মালিক। তাকে হয়তো সবাই চেনে। অনেক দিন তিনি বিশে^র সেরা ধনী ছিলেন। (স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ায় তার সম্পদ ভাগ হয়ে যায়, তাই বর্তমানে তিনি ৭ নম্বরে নেমে গেছেন)।

বিল গেটসও তার সন্তানদের টাকার ‘গরম’ টের পেতে দিতেন না। সম্পদের প্রায় পুরোটাই দান করে দিয়েছেন ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের’ সেবামূলক কাজে। তিনি সব সময়ই চাইতেন তার সন্তানেরা বড় হোক নিজের চেষ্টায়, নিজের চেষ্টায় উপার্জন করুক। যে কারণে জীবন যাপনে আরাম আয়েশের ছোঁয়া থাকলেও সন্তাদের কখনো বিলাসী হতে দেননি গেটস। বাবার সম্পদ যাতে সন্তানদের অলস করে না ফেলে সেই চেষ্টা ছিলো তার আজীবন। যে কারণে বিল গেটসের ২১ বছর বয়সী ছোট কন্যা ফোবি গেটস পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ শুরু করছেন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। তার অন্য দুই ভাই-বোনও নিজ নিজ চাকরি বা ব্যবসায় শ্রম দিচ্ছেন।

ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের সেভাবে মানুষ করেছেন গেটস। নিজে প্রযুক্তি বিশারদ হলেও সন্তানদের স্কুলজীবন শেষ করার আগে মোবাইল ফোন কেনার অনুমতি দেননি। তারা দিনে কতটুকু সময় টেলিভিশন বা কম্পিউটার দেখতে পারবে সেটাও ছিলো রুটিন করা। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন রুটিন করে গেটসের সন্তানদের ঘরের কাজ করতে হতো। হয় মায়ের সাথে রান্নাঘরে থালা-বাসন ধোয়া অথবা নিজেদের জামা কাপড় ধোয়ার কাজে অংশ নিতে হতো তাদের। সন্তানদের নিয়মিত ধর্মীয় চর্চা ও বই পড়তে উৎসাহ দিতেন গেটস।

এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, বাচ্চাদের কাছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকাটা তাদের বিপথগামী করতে পারে। তাদের নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার পথে বাধা হতে পারে। তাই আমার বেশির ভাগ অর্থ গরিবদের জন্য দান করেছি। আমার সন্তানেরাও সেটা জানে, বিষয়টি নিয়ে তারা গর্বও করে।

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গও বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন। বর্তমানে সেরা ধনীর তালিকায় তিনি আছেন ৮ নম্বরে। বর্তমানে তার সম্পদ ১০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। জাকারবার্গ নিজে খুবই সাদামাটা জীবনযাপন করেন। সন্তানদেরও সেভাবেই মানুষ করতে চান। ২০১৫ সালে বড় কন্যা ম্যাক্সিমার জন্মের পর তার উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লেখেন জাকারবার্গ। সেখানে তিনি বলেছেন, ফেসবুকে তার মালিকানার ৯৯ শতাংশ শেয়ার মানবকল্যাণে দান করতে চান। যার আনুমানিক মূল্য ৪৫ বিলিয়ন বা ৪৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। বাবার সম্পদের আশায় না থেকে মেয়েকেও বড় হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং নিজের চেষ্টায় ক্যারিয়ার গড়তে অনুরোধ করেছেন জাকারবার্গ।

এরকম আরো অনেক ধনকুবেরকে আমরা দেখতে পাই- কিভাবে তারা তাদের সন্তানদের সাধারণ জীবনযাপন ও পরিশ্রমী হতে উৎসাহ দেন। তবে একটা জায়গায় সবার মাঝে মিল হলো, সবাই সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান।

বর্তমানে বিশে^র সেরা ধনী ইলন মাস্ক তো নিজের সন্তানদের জন্য আলাদা একটি গোপন স্কুলই প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানে তাদের বিশেষভাবে জ্ঞানার্জন ও ক্যারিয়ার গঠনের শিক্ষা দেয়া হয়। অর্থাৎ সম্পদ যতই থাক- তারা সন্তানদের শিক্ষা ও কর্মে উন্নত করেই গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন।

নিজেরা যেমন পরিশ্রম করে সেরা ধনী হয়েছেন, তেমনি তারা চান সন্তানেরাও সেভাবেই নিজেদের ভাগ্য গড়–ক। সন্তানেরাও বাবার সম্পদের আশায় চেয়ে না থেকে বড় হতে চেষ্টা করেছেন নিজেদের মতো। এবং তারা তাতে সফলও হয়েছেন।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ