সে কালের  ঈদ   -কে জি মোস্তফা

সে কালের ঈদ -কে জি মোস্তফা

স্মৃতিকথা জুলাই ২০১৬

প্রথা ও ঐতিহ্য অনুসারে জীবনের প্রতিটি শুভক্ষণে উৎসব। নানান উৎসবের ঐতিহ্যে জনমানসের বিশেষ-বিশেষ সাংস্কৃতিক রূপবৈচিত্র্য ধরা পড়ে। উৎসবে মানুষের অকৃত্রিম আবেদন ও আপ্যায়ন মুগ্ধ করে অচেনা অজানাকে।
একাধিক ধর্মের দেশ বাংলাদেশ। নানা ধর্মাবলম্বী মানুষ তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে যথাযোগ্য মর্যাদায়। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। হিন্দুদের দুর্গাপূজা। খ্রিষ্টানদের গুড ফ্রাইডে। বৌদ্ধদের বৈশাখী পূর্ণিমা।
‘ও মন, রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ!’এক মাস সিয়াম সাধনার পর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ঈদুল ফিতর স্বর্গীয় আনন্দ বয়ে আনে। এ কথা সত্য।
ঈদের দিনটা নিয়ে আমার বুকের কোটরে যত কথা জমা আছে, সব বলতে গেলে বহু বছরের ওপার থেকে অন্যরকমের স্মৃতি ভেসে উঠবে। ভাবতে ভাবতে বেলা যাবে ফুরিয়ে। আমাদের সেই ছোটবেলার গ্রাম, সেখানকার গাছপালা, খাল-বিল, অবারিত মাঠ, আনন্দ-উৎসব, ফেলে আসা এত-এত বছর, দিনমাস-সমস্ত কিছুর জন্যই এখন মন কেমন করে।
আজ থেকে ৭০ বছর আগে আমার শৈশবকালের ঈদ-উৎসবের স্মৃতি। আজও  তেমন ম্লান হয়ে যায়নি।   বর্ষাকালে যখন রমজান মাস আসতো। রাতদিন ঝরঝর রিমঝিম বৃষ্টি। আশপাশ খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর।
ঈদের দিন আমরা রঙিন জামাকাপড় পরে মসজিদে হাজির হতাম। মসজিদের বয়োবৃদ্ধ ঈমাম সাহেবের সুললিত কণ্ঠের খোতবা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম। মোনাজাত শেষে বয়স্কদের কদমবুসি করতাম এবং সমবয়সীদের সাথে কোলাকুলি। কী যে এক মহা আনন্দে মেতে উঠতাম। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!
এরপর দলবেঁধে ছোট ছোট নৌকায় পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়িতে যাওয়া ছিল সনাতন রেওয়াজ। এক-এক বাড়িতে একাধিক পরিবার। প্রত্যেকের ঘরে গিয়ে সম্পর্কে দাদা-দাদি, চাচা-চাচি বা ভাই-ভাবি যাই হোক, সবাইকে কদমবুসি করতাম। তারপর পায়েস-ফিরনি খেয়ে খেযে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরতাম। প্রাণোচ্ছ্ল সে বয়সে আমাদের আবেগ ও উচ্ছ্বাস ছিল এমনিতর। গ্রামের লোকজন ছিল সহজসরল। জীবযাপন ছিল সাদাসিধে।
প্রসঙ্গত, সেই সময় মুদ্রার মান ছিল পয়সা, আনা, টাকার মানদন্ডে। এক টাকার মূল্য ছিল অনেক বেশি। মনে পড়ে এক ঈদে আমার জন্য মাত্র পাঁচ আনা দিয়ে কেনা হলো রঙিন জামা ও লুঙ্গি। একবার আমাদের যৌথ কোরবানির গরু কেনা হয়েছিল ২১ টাকায়। তাতেই সবার মাথা গরম! এত দাম! কী আকাল পড়ছে বাবা রে!
সে যাই হোক। কত কী যে একেবারে মুছে নিঃশেষ হয়ে গেছে জীবন থেকে। সে সব সয়ে নিয়ে এখন দিব্যি দিন কাটাচ্ছি। মন কেমন করে। কত কিছুর জন্যই তো এখন মন কেমন করে!
আপাতত ছেলেবেলার স্মৃতি নিয়ে লেখা আমার একটি গানের কথা দিয়ে শেষ করছি-
কোথায় গেলো হারিয়ে আমার বাঁশির দেশের মন
আহা আমার বেতস বনের লুকিয়ে থাকা ক্ষণ॥

সে যে আমার ঝাউয়ের বনে ছায়ায় লেখা গান
সে যে আমার পিউডাকা বাঁধা বুকের তান
পায়ে চলা পথের ধারে কিশোর জীবন-
কোথায় গেলো হারিয়ে আমার বাঁশির দেশের মন॥

সে যে আমার কাজল দীঘির কেঁপে ওঠা চাঁদ
সে যে আমার অবুঝ মনের পাগল করা সাধ
পদ্ম পাতায় জড়িয়ে থাকা মধুর স্বপন-
কোথায় গেলো হারিয়ে আমার বাঁশির দেশের মন॥
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ