সাংবাদিক

সাংবাদিক

তোমাদের গল্প দীদার মাহদী আগস্ট ২০২৩

অভি খুব খুশি আজ। বাড়ির অন্যদের সামনে ভাব নিয়ে হাঁটে। কথা বলে। কাউকেই আজ তোয়াক্কা করছে না। খেলার সাথিদেরও না। সময়ের ব্যবধানে যাদের সাথে মিশতে হবে। কথা বলতে হবে। ঝগড়া করতে হবে। তাদের কাউকেই যেন ও চিনছে না। কারণটা কী? মামা এসেছেন ওদের বাসায়। বেড়াতে। মা রাজি হলে মামার সাথে নানাবাড়ি বেড়াতে যাওয়া যেতে পারে। 

মামার হাত ধরে হাঁটতে বেরিয়েছে হাসান। এতদিন ঘটে যাওয়া এলাকার কিছু কাহিনি শুনাচ্ছে সে মামাকে। মামা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে ভাগ্নের কথা। ‘মামা জানো সেদিন কী ঘটেছে?’ এই বলে মামার দিকে তাকালো অভি। মামা রাকিব হাসান ভাগ্নের দিকে মুখ করে বললেন, ‘কীভাবে জানবো। তুই তো বলিসনি।’ মামার আঙুলটা টাইট করে ধরে বললো, ‘আমি আর তানু মিলে একটা ঘুড়ি বানিয়েছি। সেটা দেখতে পুরো চঙ্গা ঘুড়ির মতো। তবে ছোটো। তানু আম্মুর কাঁথা সেলাই করার সুতো নিয়ে এসেছে। চুরি করে। 

ও মামা! আম্মুর বা ঘরের কিছু না বলে নিলে চুরি হবে? মামা ভাগ্নের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির দিকে তাকালো। বললো, ‘আগে দেখতে হবে জিনিসটা কী? যদি এমন জিনিস না বলে নিস যেটা খুব বেশি মূল্যবান না। অথবা না বলে নিলে আব্বু আম্মু রাগ করবেন না। তাহলে সেটা চুরি হবে না। যেমন আম্মুকে না বলে পানি খেলি। ভাত  খেলি। কোনো ফল খেলি নিজেদের গাছের। আর যদি এমন জিনিস হয়, যেটা মূল্যবান। এমনকি সেটার জন্য তারা হা হুতাশ করবে, কে নিলো তা খুঁজবে। তাহলে সেটা চুরি হবে। যেমন আম্মুর ভেনিটি ব্যাগ থেকে না বলে একশ টাকা নিলি। আব্বুর পকেট থেকে পাঁচশ টাকা না বলে নিলি। নেওয়ার সময় কিন্তু তোর নিজেকে চোর চোর মনে হবে। এগুলো চুরি হবে।’ 

না, মামা আমি টাকা নিইনি কখনো। এই একটু সুতো টুতো নিই। আম্মুর ওই সুতো দিয়েই ছেড়েছিলাম ঘুড়িটা। অনেক দূর উঠেছিল। আমার সে কী আনন্দ! তানু আনন্দে লাফাচ্ছিলো। মামা অভির কথার মধ্যে বাম হাত ঢুকিয়ে দিলেন। ‘তুই তানিয়াকে বারবার তানু বলিস ক্যা? ও এতে রাগ করে জানিস না?’ মামা বললেন। থাক মামা ওকে আর তানু বলবো না। বলা শুরু করলো অভি। মামা তারপর না, ঘুড়িটা খুব টানতে শুরু করলো। ভাবলাম আরো সুতো চাচ্ছে বোধ হয়। তানিয়াকে বললাম, যাও আপু আম্মুর আরো একটু সুতো নিয়ে আসো। আম্মু দেখে না যেন। ও দৌড় দিলো। নাটাই আমার হাতে। হঠাৎ মাঝখান থেকে সুতো ছিঁড়ে ঘুড়ি হাতছাড়া হয়ে গেল। আমি চিল্লান দিলাম তানু বলে। ঘুড়ি গেছে। ঘুড়ি গেছে। তানিয়া বাড়ি পৌঁছতে পারেনি। আমার ডাক শুনে চলে আসলো। 

আমরা দেখলাম, ঘুড়িটা উড়তে উড়তে গাছগাছালির ওপর দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেল। তানিয়া বললো, ‘ভাইয়া এই ঘুড়ি লাইলন সুতো দিয়ে উড়ায়।’ ‘ঘুড়ি খুঁজতে গিয়েছিলি?’ মামা বললেন। ‘হু, মামা। শোনই। আমরা দু’জন ইন্নালিল্লাহ পড়তে পড়তে নিশানা ঠিক করে খুঁজতে লাগলাম। আম্মু বলেছেন কিছু হারিয়ে গেলে ইন্নালিল্লাহ পড়ে খুঁজলে পাওয়া যায়। তার টেস্ট করছিলাম। একটা বাড়ি পেরিয়ে আরেক বাড়ি যেতেই দেখি গাছের মাথায় সুতোর মতো। লাল সুতো। এই তো আম্মুর সুতো। আরেকটু সামনে এগুলাম। বাহ! দেখলাম ঘুড়ি ব্যাটা টান হয়ে শুয়ে আছে। তানিয়া ঘুড়িটা নিলো। আমি সুতো বটতে লাগলাম।’

মামা-ভাগ্নে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এসেছে। ‘তুই বড়ো হলে কী হবি?’ মামার প্রশ্ন। ‘সংবাদিক হমু।’ এক কথায় জবাব অভির। ‘কেন? সাংবাদিক হবি কেন?’ মামার প্রশ্ন। ‘আরে তুমি দেখছি বোকা। আমাদের মতো ছোটোদের জীবনে কত ভয়াবহ ঘটনা ঘটে তা কোনো সাংবাদিক লেখে না। পত্রিকায়ও দেখি না। তারা ছাপে না। আমার জীবনেই তো কত ঘটনা ঘটলো। কোনো সাংবাদিক এলো? রিপোর্ট করলো? করেনি। আমি এসব তুলে ধরবো সাংবাদিক হয়ে।’ ‘বেশ। সমাজের অসঙ্গতি, দেশ ও জাতি নিয়ে লিখবি না?’ ‘হু। ওটা তো এমনিতেই লিখতে হবে। এটা হলো মূল।’ ‘হলুদ সাংবাদিক হোস না যেন।’ ‘সেটা কেমন? হলুদ নিয়ে লেখালেখি করা? নাকি হলুদ রঙ নিয়ে?’ ‘আরে না। হলুদ সাংবাদিক হলো, যারা সাদাকে কালো। আর কালোকে সাদা বানায়। আসল ও সত্য তথ্য গোপন বা এড়িয়ে গিয়ে মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে রিপোর্ট করে। আর সাংঘাতিকও হইস না।’ ‘তুমি বেশি কথা বলো মামা। আমার নিয়ত খাঁটি। ওসব না।’ ‘ওই দেখ তোর মা ডাকছে খেতে। চল... 

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ