সম্পদই সর্বনাশ করলো সা’লাবাকে -এস. এম রুহুল আমীন

সম্পদই সর্বনাশ করলো সা’লাবাকে -এস. এম রুহুল আমীন

বিশেষ রচনা সেপ্টেম্বর ২০২০

সম্পদ! অর্থকড়ি টাকা-পয়সারই অপর নাম। মানুষের সুন্দর স্বাস্থ্যও সম্পদ। সম্পদ বাড়ি গাড়ি পুত্র পরিজনও। এর পিছনেই মানুষ দৌড়ায় আর দৌড়ায়। ছুটে চলে অশ্ববেগে। পাওয়ার লোভে এগিয়ে যায়। কাউকে পেছনে ফেলে ল্যাং মেরে। আবার কারো সাথে প্রতারণা করে। আবার কেহ ইহা অর্জন করে কঠোর পরিশ্রম করে।
এটা পাওয়ার চেষ্টা সবাই করে। করে আমরণ। জীবনের শুরু থেকে মৃত্যু অবধি। মহান আল্লাহ সূরা আত-তাকাসুরে এ কথা বলেছেন। কবরে পৌঁছা পর্যন্ত এ চেষ্টা অব্যাহত থাকে। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন- বনি আদম কবরের মাটি খেলেও তার ক্ষুধা মিটবে না। পাওয়ার ক্ষুধা মিটবার নয় কখনো।
ধনী গরিব নির্বিশেষে সবারই চাওয়া আর পাওয়ার বিষয় সম্পদ। চাই আরও চাই। সম্পদ চাই আর সম্পদ চাই। কেহ কেহ সম্পদকে বলেছেন সকল সুখের মূল। আবার কেহ বলেছেন অর্থই অনর্থের মূল। সবই সঠিক। যদি ভারসাম্য রক্ষা না হয়। ঠিক পানি যেমন জীবন। তেমন মরণও বটে।
নাম সালাবা। তাগড়া যুবক। মদিনার অধিবাসী। আল্লাহ্র নবীর একজন সাহাবী। হঠাৎ সম্পদের লোভ জেগে উঠলো তার। মালিক হবে। হবে প্রচুর সম্পদের মালিক। আল্লাহ্র নবীকে অভিপ্রায় জানালো সা’লাবা। হে আল্লাহ্র নবী! আমার জন্য দু’আ করুন। আল্লাহ যেন আমার সম্পদ বাড়িয়ে দেন। মহানবী (সা.) বললেন। এটা তোমার উচিত হয়নি। ভেবে দেখো সা’লাবা।
অন্য আরেক দিন। রাসূল (সা.)কে আরজ করলেন সা’লাবা। হে আল্লাহ্র রাসূল! ভেবে দেখেছি। আমার জন্য আপনি দু’আ করুন। আল্লাহ যেন আমার সম্পদ বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ্র রাসূল (সা.) বললেন। হে সা’লাবা! তুমি কি আমার পথ থেকে সরে গিয়েছো? আমার পথ তো এটা নয়। তোমার ভেবে দেখা উচিত। তুমি নিশ্চয়ই জানো। আমি ইচ্ছা করলে ওহুদ পাহাড়কে স্বর্ণ বানিয়ে সাথে রাখতে পারি। কিন্তু এটা আমি করছি না। তুমি আরো ভেবে দেখো। হে সা’লাবা!
অন্য আরেক দিনের কথা। নাছোড়বান্দা। তৃতীয় বারের মতো সবিনয় অনুরোধ জানালো সা’লাবা। হে আল্লাহ্র প্রিয় হাবিব! আপনি দু’আ করুন আল্লাহ্র্ কাছে। আমি যেন সম্পদশালী হই। আমি ওয়াদা করছি। আমার সম্পদ ব্যয় করবো আল্লাহ্র পথে। গরিব দুঃখী আর অসহায় মানুষদের জন্য। মহান আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় হাবিবের ইচ্ছা অনুযায়ী। আমার সম্পদ হবে ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্যতম বাহন।
মহানবী (সা.) সা’লাবার ওয়াদার সম্মান জানালেন। আল্লাহ্র কাছে দু’আ করলেন। ইয়া আল্লাহ্! আপনি সা’লাবার জন্য ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করুন। আল্লাহ দু’আ কবুল করলেন। সা’লাবার সম্পদ বাড়তে লাগলো। বাড়তে লাগলো জ্যামিতিক হারে। আশ্চর্যজনকভাবে। বেশুমার সম্পদের মালিক হলেন সা’লাবা। উট ছাগল আর ভেড়া হলো অসংখ্য ও অগণিত।
সা’লাবা বাস করতেন মদিনায় মসজিদে নববীর খুবই কাছে। নামায পড়তেন পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের সাথে। সংস্পর্শ পেতেন আল্লাহ্র নবীর। দেখা হতো অনেক মুসলিমের সাথে। হতো কুশল বিনিময়। খোঁজ খবর নিতেন একে অপরের। রচিত হতো ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আর সাম্যের সুদৃঢ় মিনার।
বিপত্তি ঘটতে থাকলো সা’লাবার। সম্পদ বেড়ে যাচ্ছে তার। নিয়মিত আসতে পারেন না মসজিদে। আসেন মাঝে মধ্যে। পশুর খামার সরিয়ে নিলেন মসজিদ থেকে খানিক দূরে। এখন আসেন শুধু শুক্রবারে জুম’য়া পড়তে। পশুর খামার বাড়তেই লাগলো তার। সঙ্কুলান হয় না জায়গায়। চলে গেলেন মদিনার শেষ প্রান্তে। বলতে গেলে উপকণ্ঠে। পর্যায়ক্রমে চলে গেলেন মদিনার বাইরে। এখন সা’লাবা আসতে পারেন না জুম’য়ার নামাযেও।
কী করবেন সা’লাবা। সম্পদই যেন তার কাল হতে লাগলো। আল্লাহ্র রাসূল (সা.) খোঁজ খবর নেন সা’লাবার। আর দুঃখ করেন। কী ই বা করবেন তিনি। তার পরও খোঁজ নেন। আল্লাহ্র পথে ইস্তেকামাত থাকার জন্য। একদিন সাহাবারা জানালেন সা’লাবার অবস্থা। নামাযেও অনুপস্থিত থাকে। আল্লাহ্র রাসূল (সা.) শুধু বললেন। সা’লাবার জন্য আফসোস! সা’লাবার জন্য আফসোস! সা’লাবার জন্য আফসোস! এ কথাটি আল্লাহ্র নবী রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তিনবার বললেন।
ওহি এলো আল্লাহ্র কাছ থেকে। হযরত মুহাম্মদ (সা) এর কাছে। যাকাত দিতে হবে সম্পদের। আল্লাহ্র নবী দু’জন সাহাবাকে পাঠালেন বনি বুহায়লা ও বনি সুলাইম গোত্রের কাছে। সা’লাবা ও বনি সুলাইম গোত্রের আরো এক ব্যক্তির কাছে যাকাত আদায়ের জন্য। যাকাত আদায়কারী দু’জন প্রথমে গেলেন সা’লাবার কাছে। সা’লাবা সব শুনে বললো। এটা আবার কেমন কথা? যাকাত আবার কী? এটা কেমন যেনো হয়ে গেলো না? আচ্ছা তোমরা সুলাইম গোত্রের ব্যক্তির কাছ থেকে এসো। আমি ভেবে দেখবো বিষয়টি।
যাকাত আদায়কারী দু’জন চলে গেলেন বনি সুলাইম গোত্রের ব্যক্তির কাছে। তিনি সব শুনলেন এবং বললেন। আল্লাহ্র নবী পাঠিয়েছেন। এই সুন্দর সুন্দর পশুগুলো নিয়ে যাও। এটাই আমার পক্ষ থেকে যাকাত। তার পর যাকাত আদায়কারী দু’ব্যক্তি আসলেন সা’লাবার কাছে। সা’লাবা ভুলে গেল অতীত। ভুলে গেলো ওয়াদার কথা। দু’জনকে দেখেই ভ্রু কুঁচকালো। চেহারা কালো করে ফেললো। মনের ঝাল মিটিয়ে বলতে লাগলো। এটা কিসের যাকাত? এতো জিজিয়া হয়ে গেলো না? যা আদায় করা হয় ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের কাছ থেকে। আমি যাকাত দেব না। আমি দেখা করবো আল্লাহ্র নবীর সাথে।
বিষণœ বদন! যাকাত আদায়কারী দু’জন চলে গেলেন। আল্লাহ্র নবীর দরবারে। সব খুলে বললেন তারা। বললেন সা’লাবার ঘটনাও। কষ্ট পেলেন আল্লাহ্র নবী। শুধু বললেন। সম্পদই সর্বনাশ করলো সা’লাবাকে। আফসোস! সা’লাবার জন্য। সে তার কথা রাখলো না। সা’লাবা ভুলে গেলো তার ওয়াদা? তাহলে ঠিক আছে। তার থেকে যাকাত গ্রহণ করা হবে না। আল্লাহ্র রাসূল (সা.) তার যাকাত গ্রহণ করেননি কোন দিন। করেননি কোন দিন হযরত আবু বকর (রা.)। হযরত আবু বকরের (রা.) কাছে পেশ করা হলে তিনি বললেন- যা আল্লাহ্র রাসূল গ্রহণ করেননি তা আমিও করতে পারি না।
এভাবে মানুষ সম্পদের মোহে ভুলে যায় আল্লাহকে। অস্বীকার করে তার অতীতে করা ওয়াদাকে। যেভাবে করেছেন আল্লাহ্র নবীর সাহাবী সা’লাবা। পরিশেষে যা হবার তাই হলো। সা’লাবার লোভ ও সম্পদই ধ্বংস করলো তাকে। ক্ষতিগ্রস্ত হলো দুনিয়া ও আখিরাতে। হ

(সূরা আত-তাওবাহ অবলম্বনে)
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ