শ্রমিকের ঘাম

শ্রমিকের ঘাম

কুরআনের আলো মে ২০১৬

আকাশ থেকে যেন সূর্যটা গলে গলে পড়ছে পিচঢালা পথের ওপর। এ যেন অগ্নিবৃষ্টি! গ্রীষ্মের এ উত্তপ্ত দুপুরে রিকশার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছে সায়েম। আশপাশে কোনো ছায়া নেই। কিছুদিন আগেও পথের দু’পাশে সারি সারি বৃক্ষ ছিল। সবুজছায়ায় কী প্রশান্ত এবং নিরিবিলি মনে হতো পথটাকে! রাস্তার পরিধি বাড়ানোর নাম করে সব কেটে ফেলা হয়েছে। যারা এ পথ দিয়ে আগে কখনো চলেছে তাদের কাছে এখন এ পথকে শুধু অচেনা কোনো মরুভূমিই মনে হবে।
যা-ই হোক, অবশেষে একটি রিকশা আসতে দেখে হাত উঠিয়ে কাছে ডাকল সায়েম। তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। সে রিকশায় উঠে বসতেই হুড তুলে দিলো রিকশাওয়ালা। যাক! এবার একটু বাঁচা গেল।
কিছুদূর যাওয়ার পরই হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি রিকশার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ। ধাক্কা লেগে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো সায়েমের। ভাগ্য ভালো, কোনো সমস্যা হয়নি কারোই। তবে, কার কী দোষ এটা বুঝে ওঠার আগেই বাজে কিছু শব্দ এসে ঢুকল সায়েমের কানে। দুই রিকশাওয়ালাই সমানতালে একে অপরকে দোষারোপ করে গালিগালাজ করছে। এ পরিস্থিতি অতিক্রম করে যেতে যেতে সায়েম রিকশাওয়ালাকে বলল, ভাই! একটু আগে যে ভাষায় আপনি কথা বলেছেন, তা কিন্তু ঠিক হয়নি।
এরপর আবার রিকশায় উঠে বসে সায়েম। রিকশা চলতে থাকে; কিন্তু রিকশাওয়ালার রাগ এখনও কমেনি। সায়েমই আবার শুরু করলো, ‘আপনাকে একটা সুসংবাদ দিচ্ছি। কষ্ট করে আপনারা যা আয় করেন, তার পুরোটাই হালাল। এ হালাল উপার্জন খেয়ে আল্লাহর ইবাদত করলে এবং খারাপ কাজ পরিহার করলে ধনীদের অনেক আগেই আপনারা পৌঁছে যাবেন জান্নাতে। এরপর সায়েম তাকে নবী-রাসূলগণ কিভাবে কষ্ট করে জীবিকা আহরণ করেছেন তার গল্প শোনায়। রিকশাওয়ালা মাঝে মধ্যে পেছনে ফিরে সায়েমের দিকে তাকায়। তার চোখে-মুখে কিছুটা স্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিসের যেন একটা আলো জ্বলে উঠল তার বুকে।
সায়েমের পথ শেষ। রিকশা থেকে সে যখন নামছে, রিকশাওয়ালা তখন রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। চোখ দুটো যেন সূর্যের বর্ণ ধারণ করেছে। গামছা দিয়ে ঘাম মুছছে আর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছে। রাসূল (সা)-এর একটি হাদিসের কথা মনে পড়ল তার। “আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।” (ইবনে মাজাহ) দেরি না করে সায়েম নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও অতিরিক্ত কিছু টাকা তুলে দিলো রিকশাওয়ালার হাতে। তার মনে বেশ আনন্দ, কারণ সে একটা হাদিসের ওপর আমল করতে পেরেছে। অবাক বিস্ময়ে রিকশাওয়ালাও তাকিয়ে থাকল সায়েমের পথের দিকে, যতদূর চোখ যায়...!
বিলাল হোসাইন নূরী
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ