শেরপুর জেলা

শেরপুর জেলা

ফিচার ডিসেম্বর ২০১১

 

শেরপুর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা। এ জেলার রয়েছে অনন্য ইতিহাস। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ১৯৮৪ সালে পুরোপুরি জেলা পর্যায়ে উন্নীত হয় শের আলী গাজীর স্মৃতিধন্য এই জেলাটি।
ঐতিহাসিক পটভূমি
শেরপুর পৌরসভার দক্ষিণ সীমান্তে মৃগী নদী থেকে জামালপুর ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৮-৯ মাইল প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব নাম ছিল লৌহিত্য সাগর। নদের উভয় পাড়ের নিকটবর্তী লোকদের প্রায় সময়ই নৌকায় যাতায়াত করতে হতো। তারা খেয়া ঘাটের ইজারাদারের সাথে যাতায়াত মাশুল হিসেবে বার্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ১০ (দশ) কাহন কড়ি প্রদান করত। সে হিসেবেই এ অঞ্চলের নাম হয় দশকাহনিয়া। তৎকালে কড়ির মাধ্যমে বেচা কেনা আর্থিক লেনদেন করা হতো।
বাংলার নবাবী আমলে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী দশকাহনিয়া অঞ্চল বিজয় করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। এই শের আলী গাজীর নামে দশ কাহনিয়ার নাম হয় শেরপুর। তখনও শেরপুর রাজ্যের রাজধানী ছিল গড়জরিপা। বর্তমান গাজীর খামার ইউনিয়নের গিদ্দা পাড়ায় ফকির বাড়িতে শের আলী গাজীর মাজার এবং নকলা উপজেলার রুনী গাঁয়ে গাজীর দরগাহ অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে এবং পাকিস্তান আমলে নাম হয় শেরপুর সার্কেল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেরপুরকে ৬১তম জেলা ঘোষণা করা হলেও তা স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালে শেরপুরকে মহকুমা এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত করে জেলার ৫টি থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। জমিদারি আমলে ১৮৬৯ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়।
খনিজসম্পদ
শেরপুর জেলা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধিশালী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষিজ উৎপাদন, সস্তা শ্রম, ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাপ্ত খনিজসম্পদের ওপর ভিত্তি করে শেরপুর জেলাকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূিচ, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মসূচি, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসহ সরকারের সকল কার্যক্রমকে সফল করতে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
দর্শনীয় স্থান
শাহ কামাল মাজার, গজনী, মধুটিলা ইকোপার্ক, শের আলী গাজীর মাজার, জরিপ শাহ-এর মাজার, বার দুয়ারী মসজিদ, ঘাগড়া লস্কার খান মসজিদ, মাইসাহেবা জামে মসজিদ ইত্যাদি।
এক নজরে জেলা
ভৌগোলিক অবস্থান : ২৫ ডিগ্রি- ১র্৮-২র্৪র্  থেকে ২৪ ডিগ্রি- ৫র্২-৯র্- উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০ ডিগ্রি-১৮র্ -২র্র্৬র্ থেকে ৮৯ ডিগ্রি- ৫র্২-৫র্৬র্ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ, সীমানা : উত্তরে মেঘালয়, দক্ষিণ ও পশ্চিমে জামালপুর জেলা ও পূর্ব দিকে ময়মনসিংহ জেলা, আন্তর্জাতিক সীমানা : ৩০ কিলোমিটার, আয়তন : ১৩৬৩.৭৬ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা : ১৪০৭৪৬৮ জন, জন্মহার (প্রতি হাজারে ) : ২৪.৫, মৃত্যুহার (প্রতি হাজারে) : ৭.৬, জনসংখ্যার ঘনত্ব : ১০৩২, শিক্ষার হার : ৩৮.০৪%, মোট জমির পরিমাণ : ১০৬৪৬৭ হেক্টর (৩১২২৮৮১৪ একর), আবাদি জমির পরিমাণ : ১,০৬,০০৭ হেক্টর, অনাবাদি জমির পরিমাণ : ৪৬০ হেক্টর, বনভূমির পরিমাণ : ২০৪৯ একর, বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত : ২১১২ মিলিমিটার, গড় তাপমাত্রা : ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, প্রধান ফসল : ধান, গম, সরিষা, পাট, বাদাম, ভুট্টা, আলু ও মরিচ, উপজেলা : ৫টি, থানা : ৫টি (শেরপুর সদর, নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীবর্দী, ঝিনাইগাতী), পৌরসভা : ৪টি (শেরপুর, নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীবর্দী), ইউনিয়ন : ৫২টি, গ্রাম : ৬৭৮টি, নির্বাচনী এলাকা : ৩টি [শেরপুর-১ (শেরপুর সদর ১৪৩), শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী ১৪৪), শেরপুর-৩ (শ্রীবর্দী-ঝিনাইগাতী ১৪৫)], পাকা রাস্তা : ৫৯৭.৪৪ কিলোমিটার, আধাপাকা (হেরিংবোন) : ৪৪ কিলোমিটার, নদ-নদী : ব্রহ্মপুত্র, ভোগাই, নিতাই, কংশ, সোমেশ্বরী, মহারশি, মালিঝি।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ