শীতের আনন্দ

শীতের আনন্দ

তোমাদের গল্প খাদীজাতুল কোবরা জীম ডিসেম্বর ২০২৩

রাফি খুব দুরন্ত ছেলে। সে এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা মায়ের সব কথা মেনে চলে। শিক্ষকদের সাথে খুব আদবের সাথে কথা বলে। সালাম দেয় ও সম্মান করে। শিক্ষকরাও রাফির আচরণে মুগ্ধ হন। তার জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করেন। একদিন ক্লাসে বাংলা স্যার শীতের সকাল রচনা পড়ান। সেই থেকে রাফির মনে কৌতূহল জাগে। সে শীতের সকালটা গ্রামে অনুভব করতে চায়। তার নানা, নানু, মামা আর খালামণির সাথে। সে ক্লাসে বসেই ভাবতে থাকে যেভাবে হোক আম্মুকে রাজি করাবে। বাসায় গিয়ে রাফি খুব আবেগে তার মায়ের কাছে কথাগুলো বলে। তার মা আদুরে স্বরে বলল, সামনে তোমার বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হলেই যাবো। একথা শুনে তার যে কী আনন্দ। হাসিমুখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। দেখতে দেখতে বার্ষিক পরীক্ষা এসে যায়। পরীক্ষা শেষে সে অনেক দিনের ছুটি পায়। বাসায় গিয়ে আম্মুকে বলে আজ থেকে স্কুল ছুটি। কাল সকালেই গ্রামে যাবো। তার মা তাতে সম্মতি জানাল। রাফির দিন যেন শেষ হতে চাইছে না। কখন রাত পোহাবে। সকাল হবে। সকাল হলেই রওনা দিবে নানা বাড়ির উদ্দেশ্যে।

সকল ভাবনার অবসান ঘটিয়ে সকাল হলো। সকালের নাস্তা সেরে রাফি তার বাবা মায়ের সাথে রওনা হলো নানা বাড়ির উদ্দেশ্যে। তার মনে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের হাসি। রাফি গাড়িতে ওঠে সফরের দোয়া পড়ে নিলো। ‘সুবহানাল্লাজি সাখখরা লানা হা-যা ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরিনিন। ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুন ক্বলিবুন।’ তারপর যখন গাড়ি গ্রামের দিকে অগ্রসর হতে লাগল, তখন সে অনুভব করতে লাগল শীতের উষ্ণতা জানালার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেল সোনালি সরষে খেত। সবুজ সবজি বাগান, মাচায় ঝুলছে লাউ, কুমড়ো, শিম।  ছোট ছোট গাছে বেগুন ধরে আছে। ফুলকপি আর বাঁধাকপি বাগান দেখে সে তো অবাক। এ যেন সবুজ আর সাদা ফুলের মেলা। শহুরে পরিবেশ ছাড়িয়ে গ্রামের পরিবেশ দেখতে দেখতে চলে যায় নানা বাড়ি। গিয়ে দেখে সবাই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। নানাভাই চাদর মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে আছে মামা, খালা আর মামাতো ভাই অমি। সবার ভলোবাসা পেয়ে রাফি যেন আকাশের চাঁদ ছুঁয়েছে। সন্ধ্যায় মুড়ি খেতে খেতে অনেক গল্প শুনে নানার কাছে। রাতে সে মামাতো ভাই অমির সাথে ঘুমাতে যায়। অমি তার সমবয়সী। একই ক্লাসে পড়ে।  ভোর বেলা নানার ডাকে তার ঘুম ভাঙে। নানার হাত ধরে সে মসজিদে যায় ফজরের নামাজ পড়তে।  সেখানে অনেক মুসল্লি এসেছেন নানার মতো চাদর মুড়ি দিয়ে। কয়েকজনের সাথে তার কথাও হয়। নামাজ শেষে দেখে মসজিদের পাশে বকুল গাছ থেকে অনেক ফুল ঝরেছে। সে কিছু ফুল কুড়িয়ে নেয় এবং মিষ্টি গন্ধ অনুভব করতে থাকে। বাড়ির পথে আসার সময় দেখে রাস্তার দু’পাশে সারি সারি খেজুর গাছ। সেখানে ঝুলছে রসের হাঁড়ি। আর পুরো গ্রাম ঘিরে আছে ঘন কুয়াশা। সে মাঝে মাঝে দুষ্টামি করে কুয়াশার ভেতর হারিয়ে যায়। বাড়ি এসে সূরা ইয়াসিন পাঠ করে নানাকে শুনায়। নানা তার খুব প্রশংসা করেন। এদিকে মামা তার জন্য কাঁচা খেজুর রস নামিয়ে আনে। খালামণি গ্লাস  ভরে পান করতে দেয়। অপূর্ব স্বাদে সে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। বায়না ধরে কাল তাকে সাথে নিয়ে খেজুর রস নামাতে হবে। আবার এদিকে নানু খেজুর রস জাল দিয়ে ঘন করে তুলে। রাফির জন্য পিঠা বানাবে বলে। মা তাতে সাহায্য করে। নানু তার জন্য বানালেন ভাপা, রস চিতই, পুলি পিঠা আর খেজুর রসের চুই পিঠা। এসব খেতে খেতে রাফি বলে আমি আর শহরে যাবো না। অমির সাথে স্কুলে ভর্তি হবো আর নানা-নানির সাথে থাকব। রাফির বাবা মা একথা শুলে মুচকি হাসেন। একটু পর সে নানার সবজি বাগানে গেল।  সেখানে শীতকালীন সব রকম সবজি আছে। রাফি তো এসব দেখে আনন্দে আটখানা হয়ে পড়ে। দুপুরে সে যায় মামার সঙ্গে পুকুরে মাছ ধরতে। পুকুরের পানি ভীষণ ঠান্ডা। বিকেলে সে ঘুরতে বের হয় গ্রামের দৃশ্য দেখার জন্য। আল্লাহর দেয়া নিয়ামত দেখে রাফি নিজের অজান্তেই বলে ওঠে আলহামদুলিল্লাহ।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ