রোবটের দ্বীপে

রোবটের দ্বীপে

তোমাদের গল্প সাগর আহমেদ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

প্রশান্ত মহাসাগরে ছোট্ট জাহাজে চড়ে ভানুয়াতু দ্বীপে যাচ্ছে কিশোর দলের তিন সদস্য অপু, তিয়ান ও টিয়ানা। সাথে রয়েছে টোকন মামা। আসলে টোকন মামা-ই ওদেরকে নিয়ে এসেছেন- লক্ষ্য তিমি শিকার। ভানুয়াতু দ্বীপে পৌঁছে ওরা শক্তিশালী স্পিডবোট ভাড়া করল। স্পিডবোটে চড়ে ওরা যাবে তাহিতি দ্বীপের কাছাকাছি খোলা সাগরে। ওখানে তিমির দল ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায়। তিমি শিকারের জন্য ওরা সাথে নিয়েছে হারপুন গান ও ট্রাংকুলাইজার গান। আর এই দূরের পথে বিপদ আপদ ঠেকাতে টোকন মামার কাছে আছে দুই ব্যারেলের শটগান। তাহিতি দ্বীপের কাছাকাছি আসতেই সমুদ্রে মাঝারি ধরনের সুনামি সৃষ্টি হলো, সাথে জলোচ্ছ্বাস। তখন রাত। জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় ওদের স্পিডবোট ভেসে চলল অজানা গন্তব্যে। সকাল হতে হতে সুনামি ও জলোচ্ছ্বাস থেমে গেল। অপু, তিয়ান ও টিয়ানা দেখল অথৈ সাগরে ওরা একটা দ্বীপের কাছে এসে পৌঁছেছে। একদম কাছাকাছি আসতেই অপু দেখল, একটা লোহার প্লেট দ্বীপের প্রবেশমুখে লাগানো। লেখা: ব্যক্তি মালিকানাধীন দ্বীপ। প্রবেশ নিষেধ।

টিয়ানা বলে উঠল, ‘দেখো! দেখো! দ্বীপের মাঝখানে একটা দুর্গ, দুর্গের চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।’

টোকন মামা বললেন, ‘এই রহস্যময় দ্বীপে দেখছি প্রবেশ নিষেধ, কিন্তু আমাদের তো উপায় নেই, বাঁচতে হলে এই দ্বীপেই আশ্রয় নিতে হবে।’

তিয়ান বলল, ‘হ্যাঁ মামা, আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’

ওরা দ্বীপের ভেতরে এগিয়ে চলল। হঠাৎ ভীষণ লম্বা কানওয়ালা এক লোক ওদের সামনে এসে পড়ল। কোনো কথা না বলেই সে অপুর দিকে লেজারগান দিয়ে মারাত্মক গামারশ্মি ছুঁড়ে দিলো। অপু এক ঝটকায় সরে গিয়ে কোনোরকমে বাঁচল। তৎক্ষণাৎ মামা শটগান দিয়ে লোকটিকে গুলি করল। কী আশ্চর্য! সাথে সাথে লোকটি ভেঙে গিয়ে নাট-বল্টু, বৈদ্যুতিক সার্কিট ও ব্যাটারি বেরিয়ে এলো। কিশোর দলের সদস্যরা বুঝল ওটা একটা যুদ্ধবাজ রোবট। ওরা দুর্গের দিকে এগিয়ে চলল। আরো কিছুদূর যেতেই একই রকম দেখতে আরেকটা রোবটের দেখা মিলল। অপু সাথে সাথে রোবটটিকে ক্যারাটে স্টাইলের ফ্লাইং কিক মেরে বসল। রোবটটা পড়ে গেল, কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই উঠে দাঁড়াল। অপু রোবটটিকে এক হাতে ওপরে তুলে ধরে আরেক হাত দিয়ে মারল আছাড়। রোবটটি পড়েই রইল। সার্কিট নষ্ট হয়ে গেছে ওর। টোকন মামা, অপু, তিয়ান ও টিয়ানা এবার একটু ঘুরে দুর্গের পেছনে চলে এলো। টোকন মামা বললেন, ‘চলো, দুর্গের পেছনের দেওয়াল বেয়ে ভেতরে প্রবেশ করি। আমাদের বের করতে হবে ওরা এখানে ভেতরে কি করছে।’

দেওয়াল বেয়ে সবচেয়ে উঁচুতে থাকা চারতলার ব্যালকনি দিয়ে ওরা ভেতরে ঢুকল। ঢুকেই দেখে সেখানে থরে থরে সাজানো নানা ধরনের অস্ত্র ও প্রাণঘাতী বোমা। ওরা বুঝল এখানে গোপনে অবৈধ অস্ত্র ও বোমা তৈরি করা হয় এবং এই চারতলাটা হলো গোডাউন। মামা সাথে সাথে সেখান থেকেই একটা টাইম বোমা নিয়ে বিস্ফোরণের জন্য দশ মিনিট টাইম সেট করে নিচে চলল। তিন তলায় গিয়ে দেখল পুরোটাই ভর্তি অস্ত্র ও বোমা তৈরির সরঞ্জামে। এরপর ওরা দোতলায় আসতেই কয়েকটি রোবট ওদের ঘিরে ধরল। একটি রোবটের ছোড়া গামা রশ্মি এড়াতে টিয়ানা নিচু হতেই, গামা রশ্মি তার চুল কিছুটা পুড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল। টিয়ানা হারপুন গান দিয়ে  হারপুন ছুড়ে রোবটটার বুকের সার্কিট ভেঙে ফেলল। সাথে সাথে ঐ রোবটটা অচল হয়ে গেল। এদিকে অপু আরেকটি রোবটকে কারাতের প্যাঁচে কাবু করেছে। টোকন মামা শটগান দিয়ে আরো দুটি রোবটকে ধ্বংস করলেন। এরপর ওরা নিচতলায় নেমে আসতেই দেখল একটা রোবট পালানোর  চেষ্টা করছে। তিয়ান ভালো করে লক্ষ করে দেখল, ওটা তো রোবট নয়, ওর কান ছোটো। রোবটগুলোর মতো দেখতে একটা জ্যান্ত মানুষ! তিয়ান বুঝে ফেলল, এই লোকটিই এই রোবট রাজ্যের নাটের গুরু। সে সাথে সাথে ট্রাংকুলাইজার গান দিয়ে ওকে গুলি করে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। আর টিয়ানা এসে ওকে বেঁধে ফেলল। টোকন মামা বললেন, ‘চল, তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাই, টাইম বোমাটা এখনি ফাটবে!’

ওরা বের হয়ে কিছুদূর যেতেই টাইম বোমার বিস্ফোরণে দুর্গটা ধসে পড়ল। চারিদিকে প্রচণ্ড শব্দ। টোকন মামা ও কিশোর দল বন্দি লোকটিকে নিয়ে সমুদ্র তীরে পৌঁছতেই দেখল বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তাহিতির নৌবাহিনীর একটি জাহাজ দ্বীপের দিকে এগিয়ে আসছে। ওরা এসে কিশোর দলের সদস্যদের উদ্ধার করল আর দুষ্টু লোকটিকে বন্দি করল। তাহিতির আদালতে অবৈধ অস্ত্র কারখানা স্থাপন ও অস্ত্র উৎপাদনের দায়ে তার বিচার হবে।

তাহিতি দ্বীপ থেকে টোকন মামা ও কিশোর দল দেশে ফিরে আসলো। সেবারের মতো তিমি শিকার করা তাদের আর হলো না।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ