মৌলবি সাহেব   -আবদুল হালীম খাঁ

মৌলবি সাহেব -আবদুল হালীম খাঁ

স্মরণ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

তিনি সব সময়ই মাথায় টুপি পরতেন। এ জন্য কেউ কেউ তাকে মনে করতেন মৌলবি এবং তাকে মৌলবি সাহেব বলেই সম্বোধন করতেন। আসলে তিনি মৌলবি ছিলেন না। তিনি ছিলেন প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ। প্রিন্সিপাল তাঁর নামের সাথে এমনভাবে যুক্ত হয়েছিল যে, প্রিন্সিপাল বললে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সবাই ইবরাহীম খাঁকে বুঝতেন। এর কারণ অবিভক্ত বাংলা উড়িষ্যা, বিহার ও আসামের মুসলমানদের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম প্রিন্সিপাল। করটিয়া সাদত কলেজ প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘ বাইশ বছর তিনি এ পদের দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৪৮ সালে ইবরাহীম খাঁ ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন এবং সাথে পাঁচ বছর এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ সময় তিনি কলকাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ছিলেন।
তখনকার একটি ঘটনা।
ভারি চমৎকার ঘটনা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিক শ্রেণিতে দ্রুত পঠনের জন্য কয়েকটি ইংরেজি বই তাঁর কাছে পরখ করার জন্য দেয়া হয়েছিল। পরীক্ষক ছিলেন আরো দুইজন। বইগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইংরেজ লেখকের। অন্য দুইজন ইংরেজ লেখকের বইটিতে সর্বোচ্চ নম্বর দিয়ে প্রিন্সিপাল সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন :
এই বইটিতে কত নম্বর দিয়েছেন মৌলবি সাহেব?
তখনো ইবরাহীম খাঁর মাথায় টুপি ছিল। পরীক্ষক দুইজনই তাঁকে মৌলবি মনে করেছিলেন।
দশ নম্বরের মধ্যে বইগুলোর নম্বর দেয়ার কথা ছিল।
ইবরাহীম খাঁ জবাব দিলেন-দুই নম্বর দিয়েছি।
: অ্যা! মাত্র দুই নম্বর!
: হ্যাঁ।
: এতো কম?
: আমার বিবেচনায় তাই।
: বইটি যে ইংরেজ লেখকের। নামটি দেখেছেন তো!
: দেখবো না কেন? গ্রন্থের উপরেই স্পষ্ট লেখা আছে লেখকের নাম।
: তা হলে!
: তা হলে আর কি!
: দশের মধ্যে মাত্র দুই!
: আমি তো লেখকের নামের উপর নম্বর দেইনি।
নম্বর দিয়েছি বইয়ের উপর।
: ইংরেজি বই, তার উপর ইংরেজ সাহেবের লেখা। তাও এতো কম নম্বর দিয়েছেন মৌলবি সাহেব?
এবার প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ বললেন, দুই নম্বর দেবো না কেন? এদেশের ছেলেমেয়েরা বইটি পড়বে তো!
বইয়ের ভেতরে যতগুলো বিলাতি লোকের ছবি আছে তাদের সবাই সুন্দর সুবেশ। কিন্তু আমাদের দেশের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ। আমাদের কি সুশ্রী ও সুবেশের লোক নেই? তারা এ বইয়ে স্থান পেলো না কেন? লেখক আমাদের দেশ সম্পর্কে হয় অন্ধ অথবা পক্ষপাত দোষে দুষ্ট।
কী বলুন আপনারা? প্রিন্সিপাল সাহেবের মন্তব্য শুনে পরীক্ষক দুইজনে প্রথম আমতা আমতা করতে লাগলেন। একজন বললেন, আপনার কথাই ঠিক।
অন্যজন বললেন, তাইতো, তাই তো। ঠিকই বলেছেন।
প্রিন্সিপাল সাহেব আরো বললেন, দেখুন বইটির ছবির সঙ্গে বিষয়বস্তু মিলিয়ে লেখা হয়েছে। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের আত্মমর্যাদাবোধ ক্ষুণœ হতে পারে, এমন বই পাঠ্য হোক এটা আমি চাইতে পারি না। সে লেখক ইংরেজ হোক বা যেই হোক। অন্য দুইজন পরীক্ষক নির্বাক প্রিন্সিপাল সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন অনেকক্ষণ।
তারপর একজন মাথা নেড়ে বললেন : ঠিকই বলছেন মৌলবি সাহেব।
প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর স্বদেশ ও স্বদেশের মানুষের প্রতি ছিল এমনি দরদ ও ভালোবাসা।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ