মেঘের ভেতর নাম

মেঘের ভেতর নাম

হাদীসের আলো বিলাল হোসাইন নূরী আগস্ট ২০২৩

‘নারকেলের ওই লম্বা মাথায় হঠাৎ দেখি কাল, ডাবের মতো চাঁদ উঠেছে ঠান্ডা ও গোলগাল’- নানাবাড়িতে পা রাখলেই এ কবিতাটা মনে পড়ে যায় খালিদের। এ দু’টি লাইন তার ঠোঁটে লেগেই থাকে তখন। কারণ, অসংখ্য নারিকেল গাছ চারদিকে। পুরো বাড়িটাই যেন নারিকেলকুঞ্জ! নানা নিজ হাতে লাগিয়েছিলেন এসব। এখন তিনি নেই। কিন্তু তার গাছের ছায়া যেন মায়া বিছিয়ে রেখেছে আজও। 

নারিকেল পাড়ার দিন উৎসব নেমে আসত যেন। নানা পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে উপহার দিতেন। গরিব-দুঃখীদের ঘরে ঘরেও পৌঁছে যেত নানার নারিকেল। খালিদ একবার বলেছিল, সব তো মানুষদেরই দিয়ে দিচ্ছ নানা! নানা একটি গল্প বলেছিলেন শুধু-

একদিন এক লোক সফর করছিলেন কোনো এক মরুভূমিতে। এমন সময় মেঘের ভেতর তিনি আওয়াজ শুনতে পেলেন- ‘অমুকের বাগানে পানি দাও!’ সাথে সাথে ওই মেঘমালা একদিকে সরে যেতে লাগল। এরপর তা বৃষ্টি ঝরাল এক পাথরময় ভূমিতে। সেখানকার নালাসমূহের একটি নালা সে পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠল। লোকটি পানির অনুসরণ করে চলল। যেতে যেতে সে এক লোককে নিজ বাগানে দাঁড়ানো দেখতে পেল, যে কোদাল দিয়ে সবখানে পানি ছড়িয়ে দিচ্ছে। 

সে তাকে বলল, আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কী? সে বলল, আমার নাম অমুক। এ নামটিই সে মেঘমালার মধ্যে শুনতে পেয়েছিল!

বাগানের মালিক তাকে প্রশ্ন করল, আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম জানতে চেয়েছ কেন? জবাবে সে বলল, এ পানি যে মেঘের, তার মাঝে আমি আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। তোমার নাম নিয়ে বলছে- ‘অমুকের বাগানে পানি দাও!’ আচ্ছা, তুমি এর জন্য কী আমল করো? 

মালিক বলল, তুমি যেহেতু জানতে চেয়েছ, তাই বলছি। আমি এ বাগানের উৎপাদিত ফসলের হিসাব করি। এরপর এর তিন ভাগের একভাগ সাদাকাহ্ করি। এক ভাগ আমি ও আমার পরিবার-পরিজন আহার করি। এবং একভাগ বাগানের কাজেই খরচ করি। (মুসলিম)। 

খালিদ সেদিন বুঝতে পেরেছিল সাদাকাহ্র সীমাহীন বরকতের কথা। এখন মামারাও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

ভেজা চোখে খালিদ কেবল দোয়া করছে- সাদাকাহ্ জারিয়ায় নানার কবরটাও উৎসবমুখর হয়ে উঠুক। রহমত নেমে আসুক মেঘভাঙা বৃষ্টির মতোই।

বিলাল হোসাইন নূরী

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ