বিশ্বকাপের লড়াই

বিশ্বকাপের লড়াই

প্রচ্ছদ রচনা আবু আবদুল্লাহ অক্টোবর ২০২৩

এই লেখা যখন তোমাদের হাতে পৌঁছবে ততদিনে হয়তো শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপের লড়াই। ১০ দলের এই আসর এবার বসছে ভারতের মাটিতে। প্রায় ৫০ বছর হতে চললো ক্রিকেট বিশ্বকাপের বয়স, তবু কেন ১০ দল নিয়ে খেলা হচ্ছে তার উত্তর আমাদের জানা নেই। ২০২৬ সাল থেকে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ হবে ৪৮ দল নিয়ে। সেখানে আইসিসি দলসংখ্যা আরো কমাচ্ছে। ২০০৭ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ হয়েছিলো ১৬টি দল নিয়ে।

২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে খেলে ১৪টি দল। ২০১৯ সাল থেকে কমিয়ে দল সংখ্যা ১০ এ নিয়ে এসেছে আইসিসি।

কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দুর্বল দলগুলো সমান তালে লড়াই করতে পারে না। তাই বিশ্বকাপের আকর্ষণ কমে যায়। যদিও ইতিহাস বলছে, ২০০৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মতো দলকে বিদায় করে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিলো বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। সমালোচকরা বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মতো দলগুলো শুরুতে বিদায় নিলে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে পারে না বিশ্বকাপ। তাই দল সংখ্যা কমিয়ে লিগ পদ্ধতিতে খেলা হয়। যাতে সেমিফাইনালের আগে কোনো বড় দল বাদ না পড়ে। হয়তো এই বাণিজ্যিক চিন্তার কারণেই মাত্র ১০ দলের একটি টুর্নামেন্টকে বিশ্বকাপ নাম দেয়া হচ্ছে।

এই ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়াই হচ্ছে বিশ্বকাপ। প্রথম দুই আসরের (১৯৭৫ ও ১৯৭৯) চ্যাম্পিয়নরা এবার বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়েছে। এছাড়া টেস্ট খেলুড়ে দেশ আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েও নেই এবারের বিশ্বকাপে। অবশ্য এ জন্য দলগুলোর বাজে পারফরম্যান্সেরও দায় আছে। তাদের টপকে সুযোগ করে নিয়েছে নেদারল্যান্ডস।

প্রথম রাউন্ডে দলগুলো লিগ পদ্ধতিতে সবাই সবার বিপক্ষে খেলবে। অর্থাৎ প্রতিটি দল ৯টি করে ম্যাচ খেলবে। তারপর সেরা চারটি দল যাবে সেমিফাইনালে।

শুরুর কথা

ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্ম ১৯৭১ সালে। বৃষ্টির কারণে টেস্ট ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় দর্শকদের কথা চিন্তা করে খেলা হয়েছিলো একটি সীমিত ওভারের ম্যাচ। সেটা পরবর্তীতে এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে চার বছর পর ১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করে আইসিসি। ১৯৭৫ সালে (৭-২১ জুন) ইংল্যান্ডে বসে বিশ্বকাপের প্রথম আসর। অফিশিয়াল নাম ছিলো প্রুডেন্সিয়াল বিশ্বকাপ ক্রিকেট।  অংশ নেয় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, ভারত, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব আফ্রিকা দল। বর্ণবাদের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাউথ আফ্রিকা অংশ নিতে পারেনি।

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানে পরাজিত করে শিরোপা জেতে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর থেকে প্রতি চার বছর পর পর বসছে এই আসর। এবারের আসরটি বিশ^কাপের ১৩তম আসর। আয়োজক হয়েছে ভারত।


বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

১৯৯৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নেয় বাংলাদেশ। সেটি ছিলো এদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের বহুদিনের স্বপ্নপূরণ। তখন বাংলাদেশ আইসিসির সহযোগী সদস্য। আকরাম খানের নেতৃত্বে কোচ গর্ডন গ্রিনিজের অধীনে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যোগ্যতা অর্জন করেছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খেলার। বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

বাংলাদেশের গ্রুপে ছিলো নিউজিলান্ড, অস্টেলিয়া, স্কটল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। ইংলিশ কন্ডিশন ছিলো প্রতিকূলে। হাড়কাঁপানো শীতের সাথে জোরালো বাতাস ছিলো মাঠে। চেমসফোর্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১১৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ডাবলিনে ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৮২ রানে অলআউট। তবে সেদিন বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন ওপেনার মেহরাব হোসেন অপি (১২৯ বলে ৬৪ রান)।

দুই ম্যাচে হারের পর তৃতীয় ম্যাচ ছিলো বাংলাদেশের মতোই নতুন বিশ্বকাপ খেলতে আসা স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১৮৫ রান করে বাংলাদেশ। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু অপরাজিত ৬৮ রান করেন। স্কটল্যান্ড ১৬৩ রানে অলআউট হলে ২২ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে আমাদের প্রথম জয় সেটি।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচে হারলেও চমকটা যেন শেষ ম্যাচের জন্য জমিয়ে রেখেছিলো বুলবুল বাহিনী। নর্দাম্পটনে টুর্নামেন্টের টপ ফেবারিট পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। তারকায় ভরা ওয়াসিম আকরামের দলের বিপক্ষে ৬২ রানে জিতে বিশ্বকে চমকে দেয় বাংলাদেশ। ২২৩ রানের জবাবে সাঈদ আনোয়ার, শহীদ আফ্রিদিরা অলআউট হয় ১৬১ রানে। ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন খালেদ মাহমুদ সুজন। এই জয়টি বাংলাদেশের ক্রিকেটের গতিপথ পাল্টে দেয়। সহজ হয় টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া।

২০০৩ সালে খালেদ মাসুদ পাইলটের দল সাউথ আফ্রিকায় দর্শকদের হতাশ করে। দুর্বল কানাডার বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু। পরের দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে যথাক্রমে ১২৪ ও ১০৮ রানে অলআউট। এরপর নিউজিল্যান্ড ও কেনিয়ার বিপক্ষে পরাজয় নিয়ে দেশে ফেরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচটি বৃষ্টিতে বাতিল হয়ে যায়।

২০০৭ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের বি গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গী ছিলো ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বারমুডা। প্রথম ম্যাচে তারকাসমৃদ্ধ ভারতকে হারায় টাইগাররা। মাশরাফির দুর্দান্ত বোলিং আর তামিম, সাকিব, মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরিতে কুপোকাত হয় শচীন, সৌরভ, দ্রাবিররা। সেদিনই বিশ্ব প্রথম চিনেছিলো তামিম ইকবাল নামের এক সাহসী ওপেনারকে।

পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে বড় ব্যবধানে হারলেও শেষ ম্যাচে বারমুডাকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যায় হাবিবুল বাশারের দল। সুপার এইটে কয়েকটি ম্যাচ বড় ব্যবধানে হারলেও সাউথ আফ্রিকাকে হারায় তারা। তবে এরপর দুর্বল আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায় এই আনন্দ স্থায়ী হয়নি।

২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সাথে যৌথভাবে স্বাগতিক দেশ হয়েছিল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতেও টাইগারদের বিশ্বকাপটা ভালো যায়নি। ইনজুরির কারণে ছিলেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা। দলকে নেতৃত্ব দেন সাকিব আল হাসান। ভারত ও আয়ারল্যান্ডের কাছে হারের পর তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা। পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অবশ্য কিছুটা সান্ত¡না আসে। এরপর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতলেও সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে আবার ৭৮ রানে অলআউট। প্রথম রাউন্ডেই শেষ হয় বিশ্বকাপ যাত্রা।

২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ছিলো বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। এবার প্রথম বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে খেলে বাংলাদেশ। দলকে নেতৃত্ব দেন মাশরাফি। এ গ্রুপে আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে হারায় তারা। ওই আসরে পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান তিনিই।

কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আম্পায়ারদের বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গিয়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ম্যাচ হেরে যায় টাইগাররা। যে ঘটনায় ক্রিকেট বিশ্বে অনেক তোলপাড় হয়েছে।

২০১৯ বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ৩ তিনটি জয় নিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ। সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আফগানিস্তানকে হারায় মাশরাফির দল। সে আসরে বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০ রান ও ১০ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়েন সাকিব। ৮ ম্যাচে ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট নেয়া সাকিবের স্থান হয় আইসিসির ঘোষিত বিশ্বকাপের সেরা একাদশে।

এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সাফল্যের নতুন নজির গড়বে বাংলাদেশ সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ