বকরি ঈদ

বকরি ঈদ

ফিচার ডিসেম্বর ২০১০

এ কে এম সামসুল ইসলাম
ঈদ মানে খুশি বা আনন্দ। বছরে দু’টি ঈদ আমাদের মাঝে আসে। একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও অপরটি ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ইসলাম ধর্মের মহান উৎসব ঈদ। প্রতি বছরই এই ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে আমাদের মধ্যে। রোজার ঈদের প্রায় আড়াই মাস পরই কোরবানির ঈদ আসে। এই ঈদ হজরত ইসমাইল (আ)-এর সময় থেকেই আসে। একদিন আল্লাহপাক হজরত ইবরাহিম (আ)কে স্বপ্নযোগে দেখালেন যে, তুমি কোরবানি কর। সে অনুসারে হজরত ইবরাহিম (আ) গরু, মহিষ, ভেড়া, বকরি কত যে আল্লাহর নামে কোরবানি করলেন, কিন্তু কোন ফল হলো না। আবারও দ্বিতীয় দিন তদ্রƒপই স্বপ্নে দেখালেন এবং হজরত ইবরাহিম (আ) অনুরূপ করলেন, তবুও কোন ফল লাভ হলো না। তৃতীয় দিনই তাই দেখালেন যে তোমার প্রিয়বস্তু কোরবানি কর তা হলেই সার্থক হবে তোমার কোরবানি। মনে মনে চিন্তা করলেন যে, ইসমাই (আ) তো আমার একমাত্র প্রিয়, তা ছাড়া অন্য কেউ নয়। তাই পরদিন পুত্র ইসমাইল (আ)কে গোছল করালেন ভাল করে, এরপর নিয়ে যেতে লাগলেন এক বিরাট প্রান্তরে। শিশু ইসমাইলের মনে ভয়ের সঞ্চার হলো। তিনি পিতাকে বললেন, আব্বা আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? পিতা বললেন, আল্লাহ আমাকে স্বপ্নে দেখালেন যে তোমার প্রিয় পাত্র ইসমাইলকে কোরবানি করো। তাই অবশ্যই আল্লাহ পাকের আদেশ পূরণ করতে হয়।
কিন্তু পুত্র খুশি মনে রাজি হয়ে গেলেন এবং পিতাকে বললেন, তাই করা হোক। তখন পুত্র হজরত ইসমাইলকে মাঠে শোয়ায়ে তার গলায় ছুরি বসিয়ে দিলেন পিতা হজরত ইবরাহিম (্আ)। কিন্তু কোন ফল হলো না, জোরে ছুরি চালাতে লাগলেন তবু বালক ইসমাইল কোরবানি হলো না। পুত্র ইসমাইল (আ) তার পিতাকে বললেন, আপনার দুই চক্ষু মোটা কাপড় দিয়ে বেঁধে নেন, তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে জোরে ছুরি চালান তবেই আমি কোরবানি হবো। পুত্রের কথামতো তাই করা হলো। পরে বালক ইসমাইলের পরিবর্তে এক মোটাশোটা দুম্বা কোরবানি হয়ে গেল। চোখ খুলে দেখেন পিতা। একি! বাহ পুত্র ইসমাইল গেল কোথায় মহান আল্লাহর কী কুদরত! এখান থেকেই প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ওপর পশু কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে গেল। তাই এই রীতিনীতি সম্বন্ধে কুরআনেও অনেক জায়গায় হজরত ইসমাইল (আ) সম্বন্ধে কোরবানির কথা বলা হয়েছে। সচ্ছল ব্যক্তিরা প্রতি বছরই তাওফিক অনুযায়ী গরু-ছাগল কোরবানি করে থাকে একমাত্র আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য। লোক দেখানোর জন্যও নয়, গোশত খাওয়ার জন্যও নয়। সমাজের যারা নিঃস্ব, গরিব-মিসকিন বা আত্মীয়দের মধ্যে থাকলেও এমন কিছু লোক গরিব অসহায় তারাই এই গোশত একমাত্র তিন ভাগের দুই ভাগই ভক্ষণ করতে পারবে আর বাকি এক ভাগ নিজে খেতে পারবে। বাকি দুই ভাগ গরিব-নিঃস্ব ও প্রতিবেশীর হক। তাই এই হালাল কোরবানির গোশত তারাই ভক্ষণ করবে। তাই আল্লাহপাক খুশি, স্রষ্টার খুশিই সব কিছু আল্লাহর রাজি খুশি সব শান্তি। নবী করিম (সা) বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য দু’টি উত্তম দিন দান করেছেনÑ একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতরা অপরটি ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। (আবু দাউদ) আর এ থেকে মুসলিম জাহানের ঈদের পবিত্র উৎসব চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। সব দিক দিয়ে আনন্দ, মানবকল্যাণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য অনন্য। ঈদের দিন সাজসাজ রব উঠে যায় ছুরি দা ধার করা, হুজুর, হাফেজ মাদ্রাসার ছাত্ররা দলে দলে কোরবানির জন্য ব্যস্ত প্রায়, চামড়া কালেকশনে মাদ্রাসার দানের জন্য এই মূল্যবান চামড়া একমাত্র মাদ্রাসার গরিব এতিম ছাত্ররাই প্রাপ্য। আতর গোলাপের ঘ্রাণে একটা পবিত্র ভাব সৃষ্টি হয়। খুশির জোয়ার বইতে থাকে। ধনী, গরিব আর সবাই সমান। সবাই ভাই ভাই, হিংসা-দ্বেষ ভুলে মনের শত কালিমাকে ভুলে গিয়ে সবাই নতুন জামা পরে কোলাকুলি করে। মরুব্বিদের সালাম ও কদমবুসি করে। ঈদের দিন সাধ্যমত সবার ঘরেই ভালো খাবার তৈরি হয়। ঈদের দিন দাওয়াত ছাড়াই একে অন্যের ঘরে মেহমান হয়ে মিষ্টিমুখ করে হাসিমুখে।
eid ul azha in Bangladeshঈদের এই পবিত্র দিনে আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাহদের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট ও খুশি থাকেন। আর দোয়া মাফের একমাত্র উত্তম দিন এমনকি কবরের আজাবও মাফ করে দেয়া হয়। এদিন মৃতব্যক্তির কবরগাহে ছুটে যায়, ফাতেহা পাঠ করে আল্লাহপাকের দরবারে দু’হাত তুলে তাদের নাজাতের জন্য দোয়া করে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করলে তা বিফলে যায় না। আল্লাহপাক পরম দয়ালু, তিনি কবরবাসীর গুনাহ মাফ করে দেন।
দিন ভিখারি গরিব মিসকিন দলবেঁধে গোশত কালেকশন করে। শুধু আনন্দ আর আনন্দ দিনভর মশগুল থাকে। ছোট ছেলেরা দলে দলে মাঠে বা বাসার সরু গলিতে গুল্লি বা লাট্টু খেলায় নতুন জামা পরে। কী অনাবিল সুখ-শান্তি, এদিন কেউ কিছু তাদের বলে না। তাদের গোশত কাটাকুটি শেষ হলে শুরু হয় আত্মীয়স্বজনদের গোশত দেয়া। ফকির-মিসকিনদেরকেও দেয়া গোশত। কী এক মহা আনন্দ! হজরত ইসমাইল (আ) থেকে আসা এই শিক্ষাকে যেন আমরা কোন দিন ভুলে না যাই, এই একটি আদর্শ জীবন যেন গড়ে তুলতে পারিÑ সৃষ্টিকর্তার কাছে মুনাজাত করি। নির্মল আনন্দ আর খুশির জোয়ার প্রবাহিত হোক জীবনের সর্বক্ষেত্রে।
এই হোক প্রত্যাশা, এই হোক কামনাÑ এ শিক্ষা যেন সবার হৃদয়ে অম্লান থাকে সেই কামনা করি। আমিন। ঈদ মোবারক।

ওকেবকরি ঈদএ কে এম সামসুল ইসলামঈদ মানে খুশি বা আনন্দ। বছরে দু’টি ঈদ আমাদের মাঝে আসে। একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও অপরটি ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ইসলাম ধর্মের মহান উৎসব ঈদ। প্রতি বছরই এই ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে আমাদের মধ্যে। রোজার ঈদের প্রায় আড়াই মাস পরই কোরবানির ঈদ আসে। এই ঈদ হজরত ইসমাইল (আ)-এর সময় থেকেই আসে। একদিন আল্লাহপাক হজরত ইবরাহিম (আ)কে স্বপ্নযোগে দেখালেন যে, তুমি কোরবানি কর। সে অনুসারে হজরত ইবরাহিম (আ) গরু, মহিষ, ভেড়া, বকরি কত যে আল্লাহর নামে কোরবানি করলেন, কিন্তু কোন ফল হলো না। আবারও দ্বিতীয় দিন তদ্রƒপই স্বপ্নে দেখালেন এবং হজরত ইবরাহিম (আ) অনুরূপ করলেন, তবুও কোন ফল লাভ হলো না। তৃতীয় দিনই তাই দেখালেন যে তোমার প্রিয়বস্তু কোরবানি কর তা হলেই সার্থক হবে তোমার কোরবানি। মনে মনে চিন্তা করলেন যে, ইসমাই (আ) তো আমার একমাত্র প্রিয়, তা ছাড়া অন্য কেউ নয়। তাই পরদিন পুত্র ইসমাইল (আ)কে গোছল করালেন ভাল করে, এরপর নিয়ে যেতে লাগলেন এক বিরাট প্রান্তরে। শিশু ইসমাইলের মনে ভয়ের সঞ্চার হলো। তিনি পিতাকে বললেন, আব্বা আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? পিতা বললেন, আল্লাহ আমাকে স্বপ্নে দেখালেন যে তোমার প্রিয় পাত্র ইসমাইলকে কোরবানি করো। তাই অবশ্যই আল্লাহ পাকের আদেশ পূরণ করতে হয়। কিন্তু পুত্র খুশি মনে রাজি হয়ে গেলেন এবং পিতাকে বললেন, তাই করা হোক। তখন পুত্র হজরত ইসমাইলকে মাঠে শোয়ায়ে তার গলায় ছুরি বসিয়ে দিলেন পিতা হজরত ইবরাহিম (্আ)। কিন্তু কোন ফল হলো না, জোরে ছুরি চালাতে লাগলেন তবু বালক ইসমাইল কোরবানি হলো না। পুত্র ইসমাইল (আ) তার পিতাকে বললেন, আপনার দুই চক্ষু মোটা কাপড় দিয়ে বেঁধে নেন, তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে জোরে ছুরি চালান তবেই আমি কোরবানি হবো। পুত্রের কথামতো তাই করা হলো। পরে বালক ইসমাইলের পরিবর্তে এক মোটাশোটা দুম্বা কোরবানি হয়ে গেল। চোখ খুলে দেখেন পিতা। একি! বাহ পুত্র ইসমাইল গেল কোথায় মহান আল্লাহর কী কুদরত! এখান থেকেই প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ওপর পশু কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে গেল। তাই এই রীতিনীতি সম্বন্ধে কুরআনেও অনেক জায়গায় হজরত ইসমাইল (আ) সম্বন্ধে কোরবানির কথা বলা হয়েছে। সচ্ছল ব্যক্তিরা প্রতি বছরই তাওফিক অনুযায়ী গরু-ছাগল কোরবানি করে থাকে একমাত্র আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য। লোক দেখানোর জন্যও নয়, গোশত খাওয়ার জন্যও নয়। সমাজের যারা নিঃস্ব, গরিব-মিসকিন বা আত্মীয়দের মধ্যে থাকলেও এমন কিছু লোক গরিব অসহায় তারাই এই গোশত একমাত্র তিন ভাগের দুই ভাগই ভক্ষণ করতে পারবে আর বাকি এক ভাগ নিজে খেতে পারবে। বাকি দুই ভাগ গরিব-নিঃস্ব ও প্রতিবেশীর হক। তাই এই হালাল কোরবানির গোশত তারাই ভক্ষণ করবে। তাই আল্লাহপাক খুশি, স্রষ্টার খুশিই সব কিছু আল্লাহর রাজি খুশি সব শান্তি। নবী করিম (সা) বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য দু’টি উত্তম দিন দান করেছেনÑ একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতরা অপরটি ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। (আবু দাউদ) আর এ থেকে মুসলিম জাহানের ঈদের পবিত্র উৎসব চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। সব দিক দিয়ে আনন্দ, মানবকল্যাণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য অনন্য। ঈদের দিন সাজসাজ রব উঠে যায় ছুরি দা ধার করা, হুজুর, হাফেজ মাদ্রাসার ছাত্ররা দলে দলে কোরবানির জন্য ব্যস্ত প্রায়, চামড়া কালেকশনে মাদ্রাসার দানের জন্য এই মূল্যবান চামড়া একমাত্র মাদ্রাসার গরিব এতিম ছাত্ররাই প্রাপ্য। আতর গোলাপের ঘ্রাণে একটা পবিত্র ভাব সৃষ্টি হয়। খুশির জোয়ার বইতে থাকে। ধনী, গরিব আর সবাই সমান। সবাই ভাই ভাই, হিংসা-দ্বেষ ভুলে মনের শত কালিমাকে ভুলে গিয়ে সবাই নতুন জামা পরে কোলাকুলি করে। মরুব্বিদের সালাম ও কদমবুসি করে। ঈদের দিন সাধ্যমত সবার ঘরেই ভালো খাবার তৈরি হয়। ঈদের দিন দাওয়াত ছাড়াই একে অন্যের ঘরে মেহমান হয়ে মিষ্টিমুখ করে হাসিমুখে। ঈদের এই পবিত্র দিনে আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাহদের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট ও খুশি থাকেন। আর দোয়া মাফের একমাত্র উত্তম দিন এমনকি কবরের আজাবও মাফ করে দেয়া হয়। এদিন মৃতব্যক্তির কবরগাহে ছুটে যায়, ফাতেহা পাঠ করে আল্লাহপাকের দরবারে দু’হাত তুলে তাদের নাজাতের জন্য দোয়া করে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করলে তা বিফলে যায় না। আল্লাহপাক পরম দয়ালু, তিনি কবরবাসীর গুনাহ মাফ করে দেন। দিন ভিখারি গরিব মিসকিন দলবেঁধে গোশত কালেকশন করে। শুধু আনন্দ আর আনন্দ দিনভর মশগুল থাকে। ছোট ছেলেরা দলে দলে মাঠে বা বাসার সরু গলিতে গুল্লি বা লাট্টু খেলায় নতুন জামা পরে। কী অনাবিল সুখ-শান্তি, এদিন কেউ কিছু তাদের বলে না। তাদের গোশত কাটাকুটি শেষ হলে শুরু হয় আত্মীয়স্বজনদের গোশত দেয়া। ফকির-মিসকিনদেরকেও দেয়া গোশত। কী এক মহা আনন্দ! হজরত ইসমাইল (আ) থেকে আসা এই শিক্ষাকে যেন আমরা কোন দিন ভুলে না যাই, এই একটি আদর্শ জীবন যেন গড়ে তুলতে পারিÑ সৃষ্টিকর্তার কাছে মুনাজাত করি। নির্মল আনন্দ আর খুশির জোয়ার প্রবাহিত হোক জীবনের সর্বক্ষেত্রে। এই হোক প্রত্যাশা, এই হোক কামনাÑ এ শিক্ষা যেন সবার হৃদয়ে অম্লান থাকে সেই কামনা করি। আমিন। ঈদ মোবারক।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ