পানাহার
কুরআনের আলো আগস্ট ২০১৯
পেটের ভেতর সাতরাজ্যের খিদে এসে হাহাকার তুলেছে আজ। যেন কত দিন ধরে খায়নি হাসীন! মনে হচ্ছে, ঘরের সকল খাবার সে একাই খেয়ে ফেলতে পারবে। আচ্ছা! খেতে না পারার কষ্ট কি তাহলে এমনই? স্কুল থেকে ফেরার পথে এভাবেই ভাবছিলো সে। বাসায় এসে দেখলো, আম্মু খাবার নিয়ে বসে আছেন। হাসীন কোনোরকম হাতটা ধুয়েই বসে পড়ল খাওয়ার টেবিলে। খাওয়ার শুরুতে সে ‘বিসমিল্লাহ’ তো বলেইনি, বরং খুবই তাড়াহুড়ো করছিলো। আম্মুর চোখ বলে কথা! তিনি সবই লক্ষ করলেন। একটু মমতার হাসি ফোটালেন ঠোঁটে। আর বললেন, বাবা! তুমি তো ‘বিসমিল্লাহ’ বলোনি। হাসীন চমকে উঠে বলল, ও হ্যাঁ! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। এখন কী হবে আম্মু? আম্মু বললেন, মহানবী (সা) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন খাবার খাবে, প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে।’ আর প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে বলবে, ‘বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’। (যার অর্থ হচ্ছে- ‘আল্লাহর নামেই খাওয়া শুরু এবং তার নামেই শেষ’)। (আবু দাউদ, তিরমিজি) হাসীন বললো, আচ্ছা আম্মু! খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না বললে কি কোনো সমস্যা হয়? আম্মু বললেন, হ্যাঁ। তখন ওই খাবারে শয়তানও অংশগ্রহণ করে। একবার এক লোক মহানবীর (সা) কাছাকাছি বসে খাচ্ছিলো। কিন্তু সে ‘বিসমিল্লাহ’ বলেনি। খাবারের শেষ লোকমা মুখে দিতে দিতে সে বললো, ‘বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’। এ দৃশ্য দেখে মহানবী (সা) মুচকি হাসলেন এবং বললেন, এতক্ষণ শয়তান তার সাথে খাচ্ছিলো। সে আল্লাহর নাম স্মরণ করার সাথে সাথেই শয়তান তার পেটের সবকিছু ফেলে দিলো। (আবু দাউদ, নাসায়ী) এ কথা শুনে হাসীন তাড়াতাড়ি দোয়াটি পড়ে নিলো এবং বললো, শয়তানকে তো আমার খাবার খাওয়ার সুযোগ দেয়া যায় না। আম্মু মুচকি হেসে বললেন, পানাহারের আরও কিছু আদব আছে, যা মহানবী (সা) আমাদের শিখিয়েছেন। যেমন, খাওয়ার শুরুতে ও শেষে হাত ধোয়া। ডান হাতে খাওয়া। এলোমেলোভাবে না খেয়ে সামনের দিক থেকে খাওয়া। কোনো অংশ পড়ে গেলে, তা ময়লা দূর করে খেয়ে নেয়া। খাওয়া শেষে আঙুল ও পাত্র চেটে খাওয়া- কারণ, খাবারের কোন্ অংশে বরকত আছে তা আমরা জানি না। আর মহানবী (সা) কিন্তু খাবারের কোনো দোষ ধরতেন না। পছন্দ হলে খেতেন, না হলে রেখে দিতেন। হাসীন বললো, মহানবী (সা) তো সত্যি এক মহান শিক্ষক ছিলেন! আম্মু বললেন, হ্যাঁ। তার শেখানো পথে চললে জীবনের প্রতিটি কাজই হয়ে ওঠে ইবাদত। সওয়াবমুখর। এমনকি পানাহারও। বিলাল হোসাইন নূরী
আরও পড়ুন...