পথশিশুরাই হোক পথের হাসি

পথশিশুরাই হোক পথের হাসি

প্রতিবেদন অক্টোবর ২০১৪

আব্দুল হাদী আল-হেলালী

‘[dropcaps round="no"]আজ[/dropcaps] যে শিশু পৃথিবীর আলো দেখেছে আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই’Ñ জনপ্রিয় এই গানটিতে শিশুদের জন্য পৃথিবীকে বসবাস উপযোগী করে তোলার কথা সুরে সুরে প্রকাশ পেয়েছে বহুবার। এই গানের কথাগুলো যাদের অন্তরে ধারণ করা উচিত সেই রাষ্ট্র, সমাজ কিংবা ব্যক্তিগতভাবে আমরা কতটুকু দায়িত্ববান শিশুদের ব্যাপারে। শিশুদের জন্য প্রকৃতির বাইরে সামাজিক সুযোগ সুবিধা গ্রহণে ও প্রদানে বেশ কিছু বৈষম্য রয়েই গেছে। সামাজিক বৈষম্যের শিকার এমন শিশুরা একাকী পথে প্রান্তরে ঝড়-বৃষ্টির মাঝে খেয়ে না খেয়ে রাত যাপন করে। এদের মধ্যে অনেকে পাগল, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অতি দরিদ্রÑ যারা সমাজে মানুষ হিসেবে পরিচিত। এই মানবসমাজে অবহেলিত মানুষগুলো কোন ওভার ব্রিজের নিচে, রাস্তার ধারে, ট্রেন লাইন ও বাস স্টেশনে কিংবা হাটখোলায় কোন ঘুপচি ঘরে বসবাস করে। আমরা যাদের টোকাই বা পথশিশু বলে থাকি। আমাদের তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার কাছে সৃষ্টির সেরা এই অবহেলিত মানুষগুলোর কোন সামাজিক মর্যাদা নেই। নেই কোন ভবিষ্যৎ। পথশিশুদের পারিবারিক কোন বন্ধন নেই। বাবা-মায়ের যে স্নেহ মমতার বুক ভরে ওঠে কানায় কানায় তা তাদের কপালে জোটে না। অভিভাবকহীন এসব শিশু তাই নিজের সিদ্ধান্তে জীবন চালাতে বাধ্য হয়। এসব শিশুকে নিয়ে করুণার নামে জঘন্য বিদ্রƒপ চলে হরহামেশাই। পথের পাশে উদাম দেহে কুকুরের সাথে ওদের নির্মম বসবাসের ঐ সব মুহূর্তগুলোর যেসব ছবি ফটোগ্রাফাররা তোলেন, সেটা নিয়ে প্রদর্শনী/ এক্সিবিশন হয় এবং আমরা সেগুলো বেশ টাকা খরচ করে দেখি এবং কিনেও আনি! আবার ঈদ কিংবা শীত এলে দেখি এসব শিশুর জন্য একদিনের ভালোবাসা প্রকাশে রাষ্ট্র কিংবা কিছু প্রতিষ্ঠান ফটোসেশনে ব্যস্ত হয়ে যায়। অসহায়দের মাঝে কম্বল বিতরণ, ঈদের পোশাক বিতরণের ছবি পত্রপত্রিকায় বা ফেসবুকে দেখি। মাঝে মাঝে ফটোগ্রাফাররা পুরস্কৃত হন কিন্তু পথের শিশুরা পথেই রয়ে যায়। অপর দিকে, সোস্যাল মিডিয়াতে এসব ছবি শেয়ার করে লাইক দিয়ে প্রদর্শন করা হয়। অনেকে আবার খুব কষ্ট পেয়েছেন বলে মন্তব্যও করেন। কিন্তু ধুলোমলিন এসব শিশুকে বুকে টেনে নিয়ে কেউ কি এক বেলা আহার করাচ্ছেন? তাহলে এসব প্রচারণা করে পথশিশুদের কী লাভ হচ্ছে? তাদের যাপিত জীবন আগেও কষ্টের মধ্যে ছিল এখনও আছে। আমাদের সংবিধানে প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু রাজনীতিবিদরা ব্যস্ত আছেন নিজের মৌলিক চাহিদাকে পূরণ করার নিমিত্তে। শুধু তাদের মৌলিক চাহিদা বললে হয়তো বড্ড ভুল হয়ে যাবে। আগামী চৌদ্দ পুরুষ যেন মৌলিক চাহিদাবঞ্চিত না হন সে লক্ষ্যে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। আর যাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পাওয়ার কথা ছিল তারা হচ্ছেন মূলত উপেক্ষিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ আদমশুমারিতে ভাসমান মানুষ সম্পর্কে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে, বাংলাদেশে চার লাখের মতো পথশিশু রয়েছে। যার অর্ধেকেই অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকাতে। অন্য দিকে বেসরকারি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী ইংরেজি ২০১৪ সালে বাংলাদেশে রাস্তার শিশুর সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ ৪৪ হাজার। অতএব, এ জরিপ দু’টির ফলাফলের ফারাক বলে দিচ্ছে সরকারিভাবে পথশিশুদের সুনির্দিষ্ট তো দূরে থাক আংশিক কোন হিসাব সরকারের জানা নেই। হিসেবে গরমিল বা কমবেশি যাই থাকুক কিন্তু ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য এটা ভয়ঙ্কর এক দুঃসংবাদ! এসব শিশুর প্রতি রাষ্ট্র বা সমাজের উদাসীনতার কথা এরপরও হয়তো আর চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে হবে না। এসব পথশিশুর উন্নয়নকার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শুরু হোক আমাদের সুন্দর বাংলাদেশের বাস্তবিক কার্যক্রম। আর এ কাজে শামিল হতে হবে সর্বস্তরের মানুষকে। কিশোর, যুবক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী সবাইকে। যারা আর্থিক সহায়তা দিতে অক্ষম তারা অন্তত ভালোবাসার চাদর দিয়ে মুড়িয়ে দেবে এসব শিশুকে। বিত্তশালীদের তো কথাই নেই। তাহলেই হয়ত পথশিশুরাই হবে পথের হাসি।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ