ধোঁকা

ধোঁকা

তোমাদের গল্প জুবাইর আল হাদী নভেম্বর ২০২৩

সকাল থেকে জাবির ঘরে নেই। এতটুকু ছেলে, কোথায় যে গেল? সবেমাত্র ক্লাস টুতে পড়ে। ছেলেটা কি একা একা কোথাও গেল, নাকি কারো সাথে গেল-কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ঘরের সবকিছু ঠিকই আছে। শুধু মেইন গেইটটা খোলা ছিল। এখন মাদরাসা বন্ধ। আত্মীয়-স্বজনদের বাসা, হাসপাতাল ইত্যাদি সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কোথাও নেই। 

মা-বাবার একমাত্র সন্তান জাবির। তাই ভালোবাসাটা একটু বেশি। জাবিরের মা তো কান্না করতে করতে একটু পর পর-ই হুঁশ হারিয়ে ফেলছেন। এদিকে জাবিরের বাবার অবস্থাও শোচনীয়। কী করবেন, কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন; কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।

দিন গড়িয়ে রাত নেমে এলো। সারাদিন খাওয়া-দাওয়া তো দূরের কথা; এক ফোঁটা পানিও পান করেননি জাবিরের মা-বাবা। তারা দুজনেই ভেঙে পড়েছেন। জাবিরের চাচা থানায় বলে এসেছিল। তারা-ও কোনো খবর পায়নি। 


রাত প্রায় ১২টা বাজে। হঠাৎ জাবিরের বাবার ফোনটা বেজে উঠল। অপরিচিত নাম্বার। হন্ত-দন্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করলেন। ওপাশ থেকে ভেসে এলো জাবিরের মায়াভরা কণ্ঠ- ‘আব্বু’!

খুশিতে জাবিরের বাবার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। তিনি বললেন- ‘কেমন আছো বাবা? কোথায় আছো?’

জাবির বললো- ‘আমি আমার সহপাঠী আবদুর রহিমদের বাসায় আছি। খুব ভালো আছি।’ 

আবদুর রহিমদের বাসা জাবিরের বাবা চেনে। তিনি বললেন- ‘ওখানেই থাকো বাবা! আমি আসছি।’ 

তাদের বাসায় ফিরতে রাত ১টা বেজে গেল। কলিং বেল বাজতেই জাবিরের মা দরজা খুললেন। জড়িয়ে ধরলেন জাবিরকে। মনে হচ্ছে, তিনি তার সন্তানকে কয়েক যুগ যাবৎ দেখেননি। 


অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল এমন করে। জাবিরের মা জাবিরকে খেতে দিলেন তার পছন্দের সব খাবার। মা-বাবার চেহারা দেখে সারা দিনের অবস্থা কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছে। তাই সে চুপচাপ খাচ্ছে। 

কিছু সময় পর জাবিরের বাবা নীরবতা ভাঙলেন। বললেন-‘জাবির, এরকমটি কেন করলে?’

জাবির বললো- ‘এমনিতেই করেছি! তোমাদেরকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর জন্য।’ 

বাবা বললেন- ‘শোনো! ধোঁকা দেয় বোকারা। কিন্তু তুমি তো ভদ্র ছেলে। ভালো মানুষেরা কখনও কাউকে ধোঁকা দেয় না। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়। 

আর ধোঁকা দিলে মানুষ কষ্ট পায়। মানুষকে কষ্ট দেওয়া তো মহাপাপ। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘যারা বিনা অপরাধে মুমিনগণকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ 

যার ওপর মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল অসন্তুষ্ট, সে কি চিরসুখের স্থান জান্নাত পাবে? তুমিই বলো বাবা! 

জাবির নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তার মা বললো- ‘থাক! যা হবার, তা হয়ে গিয়েছে। তুমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। এখন থেকে প্রতিজ্ঞা করো, কাউকে ধোঁকা দেবে না বা কষ্ট দেবে না।’ 

সেই থেকে জাবির প্রতিজ্ঞা করল; জীবনে আর কাউকে কখনো ধোঁকা দেবে না, কষ্ট দেবে না।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ